| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লিংকন বাবু০০৭
ভালবাসি বই পড়তে আর পছন্দ করি টুকটাক লিখতে, ভালো লাগে বুদ্ধিমানদের সাথে আড্ডা দিতে। কোনো কুসংস্কারে আমার বিশ্বাস নেই। দেশটাকে ভালোবাসি। সৎ-পরিশ্রমীদের শ্রদ্ধা করি। । আমার ব্লগ নিয়ে অনেক আগ্রহ আছে। কিন্তু কিছু জানি না। তাই জানতে চাই
"তিন গোয়েন্দার খুঁটিনাটি"-
রকিব হাসান থ্রি ইনভেস্টিগেটরস সিরিজ থেকে তিন গোয়েন্দাকে রুপান্তর করেছিলেন খুবই নিপুনভাবে। সিরিজের মূল খুঁটিনাটি জিনিস যেমন তুলে ধরেছেন তেমনি মূল বইয়ের বাইরে গিয়েও অনেক শৈল্পিকভাবে বিভিন্ন শব্দ কিংবা স্বভাব ঢুকিয়ে দিয়েছেন বইয়ে, যেমন "খাইছে।"
তিন গোয়েন্দার গল্পগুলো খুবই যত্নের সাথে লিখলেও কিছু কিছু ব্যাপার রকিব হাসান সন্তর্পনে এড়িয়ে গিয়েছেন। যেমন- তিন গোয়েন্দার বয়স, তাদের উচ্চতা কিংবা তাদের প্রিয় রঙ, জন্মদিনের নির্দিষ্ট তারিখ।
মূলত রকিব স্যার চেয়েছিলেন প্রতিটি পাঠক যেন নিজেদের মতো কল্পনা করেই তিন গোয়েন্দা পড়তে পারে।
তবে বিভিন্ন বইতে কিছু খুঁটিনাটি বিষয় চলে এসেছে, লক্ষ্য করলে বুঝা যায়। বিভিন্ন সময়ে আজ অবধি আমি তিন গোয়েন্দার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা নিয়ে কনফিউশন দেখেছি সেগুলো হচ্ছে-
কিশোরের বাবা-মা সম্পর্কিত তথ্য, রবিনের চশমা, তিগোর জন্মদিন, কিশোরের দেশের বাড়ি।
আজকে বইয়ের আলোকে কয়েকটা দ্বিধা দূর করার চেষ্টা করি।
১. কিশোরের বাবা-মা-
কিশোরের বাবা মা কি করতেন সে সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য কোনো গল্পেই উল্লেখ করা নেই। যেটুকু তথ্য সরাসরি উল্লেখ আছে সেটুকু হলো, কিশোরের বাবার নাম জাহেদ পাশা। উনি রাশেদ পাশার সাথে যৌথভাবে স্যালভেজ ইয়ার্ডের ব্যবসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু রাশেদ পাশা যেমন গোয়েন্দাগিরি করতেন তেমন স্পষ্ট আর কোনো তথ্য উল্লেখ নেই।
কিশোরের মায়ের নাম কোনো গল্পেই পাওয়া যায়নি। তবে আরও কিছু জিনিস রকিব স্যার উল্লেখ করেছেন।
কিশোরের বাবা মায়ের মৃ/ত্যু হয়েছিল হলিউড থেকে ফেরার পথে। গাড়ির নিয়ন্ত্রন হারিয়ে। সে রাতে কিশোর গাড়িতে ছিল না। তারমানে কিশোরের বাবা মায়ের "পাগল সংঘ" এর শোতে কিশোরকে সাথে করে নিয়ে যাওয়া বাদেও হয়তো হলিউডে যাতায়াত ছিল।
দ্বিতীয়ত, কিশোরদের বাড়িতে প্রায়ই যাতায়াত করতেন ওর বাবার একজন চিত্রপরিচালক বন্ধু। যে বন্ধুই মূলত কিশোরকে পাগল সংঘের মোটুরাম চরিত্রে অভিনয়ে ঢুকিয়েছেন।
কিশোরের বাবার হলিউড থেকে ফেরা, চিত্রপরিচালক বন্ধু এসব হলিউডের দিকে নির্দেশ করছে, তাই একটা সম্ভাবনা থাকতে পারে যে কিশোরের বাবা/মা হলিউডে কোনো পোস্টে চাকরি করতেন।
আবার হয়তো কোনো সম্পর্কই নেই, অনেকের এমনিতেও চিত্রপরিচালক বন্ধু থাকে। তাই কিশোরের বাবা-মা আসলে কি করতো সেটা বলা যায় না, যেহেতু রকিব হাসান কোনো গল্পেই স্পষ্ট উল্লেখ করেননি কিছু। এবং বইয়ের রেফারেন্সই মেইন।
তবে মূল থ্রি ইনভেস্টিগেটর লেখক সম্ভবত চেয়েছিলেন জুপিটারের বাবা মায়ের ডে/থ নিয়ে ডিটেইল মিস্ট্রি ক্রিয়েট করতে, কারন "গাড়িটা কেন নিয়ন্ত্রন হারিয়েছিল সেটা জানা যায়নি" লাইন এমন কিছুই নির্দেশ করে।
তবে ভাগ্যিস রকিব হাসান এমন রহস্য লিখেননি! কারন কিশোরের বাবা মাকে নিয়ে রহস্য ক্রিয়েট হলে সেটা পড়তে আমার ব্যক্তিগতভাবে ভালো লাগতো না। যেমন- হ্যানসনকে নিয়ে লেখা রহস্যের গল্পটা ভালো হলেও হ্যানসনের অতীত নিয়ে হওয়ায় গল্পটা আমার পছন্দ না। কিছু চরিত্র মূল বই অনুযায়ী রহস্যময় থাকাই ভালো।
২. রবিনের চশমা
থ্রি ইনভেস্টিগেটরসের রবিনের মূল চরিত্র, অর্থাস বব এন্ড্রুস চশমা পড়ে। এই তথ্যটা দেখে অনেকেই কনফিউড হন যে রবিন সম্ভবত চশমা পড়ে।
আচ্ছা খেয়াল করে দেখুন, রকিব হাসান খুবই নিপুনভাবে তিগোর ক্যারেক্টার বিল্ড আপ করেছেন। কিশোরের পেটের মধ্যে কথা চেপে রাখা, মুসার ভয় পাওয়া, প্রত্যেকটা বৈশিষ্ট্য উনি ফুটিয়ে তুলেছেন। সেখানে রবিনের চশমা পড়ার ব্যাপারটা ওনার চোখ এড়িয়ে গিয়েছে বলে কোনোভাবেই মনে হয় না।
বরং, উনি এই বৈশিষ্ট্যটা ইচ্ছে করে এড়িয়ে গিয়েছেন। তিন গোয়েন্দার ১-৫৫ পর্যন্ত ভলিউমের কোনো গল্পেই রকিব হাসান রবিনের চশমা পড়ার কথা উল্লেখ করেননি। শুধুমাত্র, বিমান দুর্ঘটনা গল্পে আছে রবিনের লেন্স পড়ার কথা। রকিব স্যার চাইলেই এখানে রবিনকে চশমা পড়া দেখাতে পারতেন চোখের সমস্যার জন্য, কিন্তু দেখাননি। অর্থাৎ রকিব স্যার ইচ্ছাকৃত ভাবে মূল চরিত্র ববের চশমার ব্যাপারটা রবিনকে দেননি।
এখন পরবর্তী বিভিন্ন চিলার বা সেবার বাইরের অন্যান্য প্রকাশনীর কিশোর মুসা রবিনের গল্পে রকিব হাসান নিজে কিমুরের অনেক বৈশিষ্ট্য ঠিক রাখতে পারেননি। সেক্ষেত্রে চিলার গল্পে রবিনের চশমা পড়াটা ওনার বেখেয়ালির জন্যই এসেছে। যেহেতু মূল ৫৫টা ভলিউমে রবিনের চশমার উল্লেখ নেই তাই শা.ন অথবা চিলারের কোনো তথ্যকে মূল রেফারেন্স হিসেবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না।
৩. তিন গোয়েন্দার জন্মদিন
এই ব্যাপারে সম্ভবত আগেও বিভিন্ন পোস্টে ক্লিয়ার তথ্য দিয়েছেন অনেকে। তবে আমি আবারও বলছি, যেহেতু এই পোস্টে কয়েকটা জিনিস একসাথে ক্লিয়ার করছি।
মুসার জন্মদিন কবে এই সম্পর্কিত কোনো তথ্য তিন গোয়েন্দার কোনো বইতে নেই। এমনকি মুসার জন্মদিন কোন মাসে সে সম্পর্কিত তথ্যও নেই।
রবিনের জন্মদিন নভেম্বর মাসে। এই তথ্যটা পাওয়া যায় "গেল কোথায়" গল্পে।
এখন আসি কিশোরের জন্মদিনে। সময় সুড়ঙ্গ গল্পে দেখা যায় কিশোরের জন্মদিনের পর নয়মাস নিখোঁজ ছিল সে, তারপর তাকে পাওয়া যায় এপ্রিল মাসে। তাই হিসেব করলে কিশোরের জন্মদিন হয় আগস্টে।
কিন্তু আরেকটা ইনফরমেশন স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অনেকের আগোচরে থেকে যায়। পিশাচকন্যা গল্পে কিশোরই পরে উল্লেখ করে মেরিচাচী ভুল দিনে তার জন্মদিন পালন করেছিল, তারমানে আগস্টে কিশোরের জন্মদিন না।
এখন প্রশ্ন করতে পারেন ভুল তারিখে, কিন্তু মাস তো ভুল না? মাসও ভুল। কারন ভলিউম ৪৭ এর "নেতা নির্বাচন" গল্পে দেখা যায় কিশোর তার বন্ধুদের বলে তার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তাকে উপহার না দিয়ে নগদ টাকা দিতে। আরও উল্লেখ আছে বড়দিনের ছুটিতে কিশোর গ্রীনহিলস আসে, এবং ছুটির সময়ই গ্রীনহিলসের বাড়িতে তার জন্মদিন পালন হয়।
এখন বড়দিনের ছুটি ডিসেম্বর মাসে হয়। তারমানে কিশোরের জন্মদিন ডিসেম্বর মাসে।
৪. তিন গোয়েন্দার দেশের বাড়ি
কিশোরের দেশের বাড়ি বাংলাদেশের কোন জেলায় এই সম্পর্কিত কোনো তথ্য সরাসরি নেই। কিশোরের মামার বাড়ি ঢাকার উত্তরায়, কিশোরের দূর-সম্পর্কের এক দাদার বাড়ি কুমিল্লায়। এবং কিশোরের আত্মীয়র মধ্যে তার মায়ের বোন অর্থাৎ "আয়না খালা"র কথা পাওয়া যায় "অপারেশন কক্সবাজার" গল্পে। কিন্তু রাশেদ পাশা বা জাহেদ পাশার দেশের বাড়ি কোন জেলায় সেটা স্পষ্ট করে কোনো গল্পেই পাওয়া যায়নি।
রবিনের দেশের বাড়ি আয়ারল্যান্ডে। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের স্পেসিফিক কোনো জায়গা উল্লেখ করা নেই। রবিনের আন্টির খোঁজ পাওয়া যায় কিছু গল্পে, যেখানে রবিনের আন্টি নিউইয়র্ক শহরে থাকেন।
মুসার দেশের বাড়ি আফ্রিকায়, কিন্তু জায়গা উল্লেখ করা নেই কোনো গল্পেই।
৫. তিন গোয়েন্দার অন্যান্য কিছু তথ্য
কিশোর- গান গাইতে পারে না, গানের গলা একদমই ভালো না। কিন্তু ভালো মাউথ অর্গান বাজাতে পারে, "বাঁশি রহস্য" গল্পে আছে। কিশোর ভালো গিটারও বাজায় এটার উল্লেখ আছে। (গল্পের নাম আমি ভুলে গেছি, কিন্তু এটা শিওর ওই গল্পে জিনা আছে)
রহস্য, পড়াশোনা, ইলেকট্রনিক্স, প্রকৃতি ভালোবাসে। প্রিয় খাবার ব্লুবেরি প্যানকেক (সম্ভবত সময়সুড়ঙ্গ গল্পে উল্লেখ আছে)
খেলাধুলা, কায়িক শ্রম, নাচ এসব নরমালি পছন্দ করে না। অভিনয়ে দক্ষ। ভালো ছবি আঁকে।
আর হ্যাঁ, কিশোর পাশা একটা জিনিসে ভয় পায়, সেটা হলো ওজন বাড়া।
মুসা- খেলাপাগল, ব্যয়াম পছন্দ, খেতে ভালোবাসে। প্রিয় খাবার সবই। ভুতে ভয় পায়। ভালো কারাতে জানে। গাড়ি প্রিয়, গাড়ির খুঁটিনাটি বিশেষজ্ঞ।
এছাড়াও কিছু গল্পে ক্রিমশ, অণুবীক্ষণ যন্ত্র, ভেষজ খাবার নিয়ে তার আগ্রহ দেখা যায়।
রবিন- বই পাগল, পাহাড়ে চড়তে পছন্দ করে, গান পছন্দ করে। স্টাইল বা নিজের appearance সম্পর্কে সচেতন। রবিনের কোনো ভীতির কথা স্পষ্ট করে কোথাও উল্লেখ নেই। ডার্ক চকলেট পছন্দ করে না একদম।
অসুখ-
খাবারে বি/ষ গল্পে উল্লেখ আছে কিশোরের পেটের সমস্যার কথা। মুসার ভয় পেলে মনে হয় ঘরের ছাদ এবং দেয়াল চেপে আসে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, গোরস্থানে সাবধানে উল্লেখ পাওয়া যায়।
রবিনের মাথার আঘাতের কারনে প্রায়ই হ্যালুশিনেশনের কথা উল্লেখ আছে বেশ কয়েকটি বইয়ে, স্পেশালি "জবরদখল", "ছদ্মবেশী গোয়েন্দায়"।
এছাড়াও ভলিউম ৫৭ এর "ভয়াল দানব" গল্পে উল্লেখ আছে রবিনের শ্বাসকষ্টের কথা। কিন্তু যেহেতু এটা চিলার তাই এটাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে রেফারেন্স হিসেবে মনে করি না। কারন স্বাভাবিকভাবে বিভিন্ন গল্পে রবিনকে ছুটতে দেখা যায়, পাহাড় বাইতে দেখা যায়। শ্বাসকষ্ট থাকলে এতো ইজিলি এই কায়িক শ্রম করতে পারতো না, আর এছাড়াও থাকলে অন্য গল্পে উল্লেখ থাকতো ব্যাপারটা। যেহেতু নেই তাই বাদ।
কিশোরের হাইট-
শামসুদ্দীন নওয়াব "আমিই কিশোর" গল্পে উল্লেখ করেছেন কিশোরের উচ্চতা পাঁচ ফিট আট ইঞ্চি।
যেখানে রকিব হাসান উচ্চতা নিয়ে কোনো স্পেসিফিক তথ্য দেননি (এমনকি রবিনের উচ্চতার ক্ষেত্রেও বলেছেন তার ছয় ফিট বাবার মতো উচ্চতা এখনও হয়নি) তাই শা.ন এর চিলার গল্পে দেওয়া কিশোরের উচ্চতাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে রেফারেন্স বলে মনে করি না।
আরও কিছু টুকিটাকি জিনিসের মধ্যে রয়েছে, তিগোর মধ্যে একমাত্র মুসা এবং কিশোর কোনো না কোনো সময় মেয়ের ছদ্মবেশ নিয়েছে (কিশোর "সোনার খোঁজে" গল্পে, মুসা "নিখোঁজ সংবাদ" রবিন নেয়নি।
এবং যতোদূর মনে পড়ছে কিশোর কখনো গু/লি খায়নি। রবিন গু/লি খেয়েছে "দক্ষিণ যাত্রা" গল্পে এবং মুসা গু/লি খেয়েছে "গোপন ফর্মূলা" গল্পে।
আপাতত এটুকুই মনে পড়ছে। আপনাদের তিন গোয়েন্দাকে নিয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে কমেন্টে করতে পারেন, আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব ইন শা আল্লাহ।
-মেহনাজ নওমী
©somewhere in net ltd.
১|
০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭
সৈয়দ কুতুব বলেছেন: তিন গোয়েন্দা ছোট বেলার সংগী ছিলো।