![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
লেখালেখি হল নীরবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ
গতকাল আমি আর আমার এক বন্ধু ফুয়াদ ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির পাঁচ নাম্বার বিল্ডিং-এর সামনে চা খেতে খেতে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন ৩ টা ছেলে আসলো আমাদের কাছে কি ব্যাপারে যেন সাইন নিতে। জিজ্ঞেস করলাম ব্যাপারটা কি এবং যে উত্তরটা শুনলাম তাতে মাথার চান্দি গরম হয়ে গেল। উত্তরটা হল আমাদের ভার্সিটি অথরিটি ঠিক করছে মেয়েরা আর হিজাবের নামে মুখ ঢাকতে পারবেনা। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যারা যারা আছে তাদের সাইনই ওই ছেলেগুলা নিচ্ছিল এবং পরে তা নিয়ে অথরিটির সাথে যোগাযোগ করেছিল
আমাদের ভার্সিটিতে কিছু মেয়ে আছে হিজাব করে। কেউ কেউ হিজাবের নামে যা করে তা বাইচলামি ছাড়া আর কিছু না। আর খুবই অল্প কিছু আছে যারা সত্যিকার অর্থেই হিজাব করে, ঠিক যেভাবে করা উচিৎ সেভাবে। মুখ ঢাকে, কালো ঢিলাঢালা বোরখা পরে। তাদের চোখ ছাড়া আর কিছুই চোখের নাগালে আশে না। আমাদের 'মাননীয়' ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি অথরিটি নাকি ঠিক করেছে তাদের এভাবে হিজাব করতে দেয়া হবে না। তারা ভার্সিটিতে মুখ ঢেকে হিজাব করতে পারবে না!!! মেয়েরা মুখ ঢেকে হিজাব করে ইউনিভার্সিটিতে আসলে অথরিটির সমস্যাটা কোথায় ব্যাপারটা আমার মাথায় ঠিক খেলতেছে না।
মেয়েরা এখন বলতে গেলে একদমই হিজাব করেনা। যা কিছু আছে বাবা মায়ের চাপে পড়ে করে তাদের হিজাব ঠিক হিজাবের মধ্যেও ধরা যায়না। কিছু আছে যারা খুব ইসলামিক ভাব ধারার ফ্যামিলি থেকে উঠে আসে বলেই তারা নিজে থেকে হিজাবে উৎসাহিত হয়। অবশ্য খারাপ ভাবে বললে বলা যায়, তাদের চক্ষু লজ্জা আছে বলেই তারা হিজাবে উৎসাহিত হয়েছে। যারা নিজেদেরকে এখন মডার্ন বলে প্রকাশ করতে চায় তারাই নিজেদেরকে যতটা সম্ভব আপিলিং করে উপস্থাপন করতে চায়। এতে হয়ত তাদের লজ্জা করেনা তবে রাস্তায় নামলে ছেলেদের মাথা কিন্তু ঠিকই আউলা ঝাউলা হয়ে যায়। আর মেয়েদের এই আপিলিং আত্ম-উপস্থাপনকেই হয়তবা সব ধরণের অপরাধের মূল বলে ধরে নেয়া যায়। তাই আমাদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল-কুর'আন এ আল্লাহ্ বলেছেন, "এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।" (সূরা আহযাব, ৩৩:৫৩)
আমাদের ধর্মে মেয়েদের নিজেদের শরীর আবৃত করে রাখার এই ব্যাপারটা শুধু মেয়েদের জন্যই না, ছেলেদের জন্যও ভাল। ছেলেদের জন্য ভাল কোন দিক থেকে এইবার সেইটা বলি। আমাদের আশে পাশে সবসময় এমন কিছু বাজে ছেলেপেলে থাকে যাদের প্রধান এবং এক মাত্র কাজই হল আশে পাশের মেয়েদের দেখলেই উত্যক্ত করে যাওয়া। ব্যাপারটা আসলেই খুবই খারাপ এবং শাস্তি যোগ্য অপরাধ কিন্তু মাথা ব্যাথার ওষুধ কি মাথা কেটে ফেলে দেয়া? অবশ্যই না। আশে পাশের অইশব পোলাপান তাড়ালেই ইভ-টিজিং বন্ধ হবে বলে আশা করাটা বোকামি বৈ কিছুই না। এক হাতে যেমন তালি বাজে না তেমনি এইটাও একা সম্ভব না। দুই পক্ষই দায়ি। আর এর সল্যুশনও আমাদের আল-কর'আনের সূরা আহযাবে দেয়া আছে। সেখানে আল্লাহ্ বলেছেন, "হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" (সূরা আহযাব : ৫৯)।
অর্থাৎ শুধু এক পক্ষ থেকে ব্যাপারটা দেখলে তো সমস্যার সমাধান হবে না। বাইড়াইয়া সোসাইটি থেইকা আউল ফাউল পোলাপান ভাগাইলাম আর সোসাইটি শুদ্ধ হয়ে গেল, ব্যাপারটাতো অত সোজা না। নিজেরে মধু মাখায়ে উপস্থাপন করলেতো পিঁপড়া আসবেই। মধু না মাখাইলেই হয়।
যা হোক, আসল কথায় ফেরত আসি। আমাদের পবিত্র কুর'আনে আছে, "(হে নবী!) মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আভরণ প্রদর্শন না করে।" (সূরা নূর : ৩১)। তো কেউ যদি নিজ থেকে নিজের লজ্জাস্থান আড়ালে রাখতে চায় তাহলে তাকে তা করতে না দেয়াটা কোন ধরণের বেয়াদবি? তারা ধর্মের ১০০ মানতে পারুক বা না পারুক কিন্তু চেষ্টাতো অন্তত করতেছে। আমরা সেই চেষ্টায় বাঁধা দেয়ার কে? একটি মুসলিম দেশে মুসলমানদের রীতিনীতি পালন করতে না দেয়া বা সেটা পালনে অনুৎসাহিত করাটা কি অপরাদের পর্যায়ে পড়ে না? অবশ্যই পড়ে।
শেষ কথা, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি অথরিটি যা ঠিক করছে মেয়েদের এই হিজাব না করার ব্যাপারে, আমি তার সাথে একমত না। আমি চাই এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হোক, যার যার ধর্ম তাকে ঠিক মত পালন করতে দেয়া হোক। আমরা এইখানে পড়াশুনা করতে আসছি, নিজের ধর্ম পালনে বাধাপ্রাপ্ত হইতে আসি নাই।
©somewhere in net ltd.