নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের কথাগুলো বলে ফেলার জন্যে এসেছি

লিসানুল হাঁসান

নিতান্তই সাধারণ মানুষ

লিসানুল হাঁসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

হারমোনিয়াম ও অতৃপ্ত আত্মা

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৩



প্রিয়র এস এস সি পরীক্ষা শেষ। এখন সামনে প্রায় মাস দুয়েক অবসর। ভাবছে কি করবে। তার বাবা বলল, হাতে সময় যখন আছে তখন ইংলিশ স্পিকিং কোর্সে ভরতি হও। মা বলল, কম্পিউটার ও শিখতে পারিস। প্রিয়র কিন্তু ভিন্ন ইচ্ছা। সে বলল, আমি ঠিক করেছি গান শিখবো। একটা হারমোনিয়াম লাগবে। মা হটাৎ বলে, ও ভালো কথা, আমাদের হারমোনিয়ামটার খবর কি?বাবা বলে, ঐ লোকটাতো দিবে দিবে বলে ও দিচ্ছে না। হারমোনিয়াম এর কথা শুনলেতো খালি বলে ওটা গোডাউন থেকে খুঁজে আনলেই দিবে। প্রিয়র বাবা ভালো গান করত। বছরখানেক আগে ওদের ঘরের হারমোনিয়ামটা ঠিক করতে দেয়। তারপর হটাৎ করে টাকার টানাটানি পড়ে যাওয়ায় আর ওটা আনা যায়নি।

পরদিন প্রিয়র বাবা দোকানটাতে গেলেন। রাতে ফিরে এসে জানালো, লোকটা বলেছে আগামী শুক্রবারে দিবে। পরের শুক্রবারে যখন হারমোনিয়ামটা আনা হল তখন প্রিয়তো অবাক। এটা কার হারমোনিয়াম? আমাদেরটাতো বাদামী ছিল,এটাতো কালো। বাবা বলল, লোকটা বলেছে রং করাতে এই অবস্থা হয়েছে। কি আর করা এটা দিয়েই চালাও তোমার গানবাজনা। সা রে গা মা তো প্রিয়র জানাই ছিল। ও তাই বাজাতে লাগলো। কিন্তু শব্দগুলো কেমন ভোঁতা লাগে। তাই সে বিরক্ত হয়ে রেখে তখনকার মত রেখে দিল। রাতে পাশের বাড়ির তুষার ভাইয়ার কাছ থেকে ধার করে আনা একটা হরর গল্পের বই পড়তে বসল। কারেন্ট নেই। বেশ মজার পরিবেশে মোমবাতি জ্বালিয়ে বইটা পড়ল। বইটা বেশ রগরগে । এক পিশাচসিদ্ধ জাদুকর কিভাবে তার নিজের পিশাচগুলোর হাতে মারা পড়ে সেই কাহিনি।বই পড়তে পড়তে বেশ রাত হয়ে গেল। বাতিটা নিভিয়ে ও শুয়ে পড়ল। প্রায় সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ল।

মাঝরাতে হটাৎ প্রিয়র ঘুম ভেঙে গেল এক অদ্ভুত সুরে। এক চমৎকার সুর। অপূর্ব ও অপার্থিব। আর শব্দটা এত ক্ষীণ যে ঠিক বোঝা যায়না কোথা থেকে আসছে। হটাৎ করে ও একটা নীলাভ আলো দেখতে পেল। বুকশেলফটার ওপর আলোটা যেন নেচে বেড়াচ্ছে। প্রিয় ভাবল কি হতে পারে। সে উঠে দাঁড়ালো আর যা দেখল তাতে ভয়ে হিম হয়ে গেল। একটা হাতের কব্জি। আঙুলগুলো ওখানে রাখা হারমোনিয়ামের রিডগুলোর ওপর নেচে বেড়াচ্ছে। এক অপার্থিব সুরের ঝঙ্কারে পুরো ঘর ভরে আছে। সুরের মূর্ছনায় প্রিয় আবিষ্ট। এরপরে কখন যে প্রিয় জ্ঞান হারাল তা সে নিজেই বলতে পারে না।

সকালে ঘরের সবাই তাকে আবিষ্কার করল হারমোনিয়ামের ওপর মাথা রাখা অবস্থায়। প্রিয় কিছুই বলতে পারলোনা । সে কিভাবে সেখানে এলো তা সে জানে না।পর পর তিনরাত এমন হল। প্রিয় যথারীতি কিছু বলতে পারে না। শেষে প্রিয়র বাবা বেশ রেগে গেলেন। সকালে নাস্তার টেবিলে বললেন ,প্রিয়, এসব কি হচ্ছে বাবা? তুমি গান ভালোবাসো তা ঠিক আছে। তোমাকে হারমোনিয়াম ও এনে দেওয়া হল। তুমি তাই বলে কি মাঝরাতে হারমোনিয়াম বাজাবে? গত তিনরাত আমি তোমার ঘর থেকে মাঝরাতে হারমোনিয়ামের শব্দ শুনেছি। এমনকি গতরাতে তোমার মাকেও শুনিয়েছি। তিনদিন তোমাকে সকালে হারমোনিয়ামের ওপর মাথা রাখা অবস্থায় ঘুম থেকে জাগানো হয়েছে।

প্রিয় হটাৎ ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠে বলল, বিশ্বাস কর বাবা আমি কিছু জানি না। প্রিয়র বাবা ওকে আর কিছু বললেন না। এরপর কয়েকদিন প্রিয়কে বেশ আনমনা দেখা গেল। পরের শনিবারে ওর বাবা ওকে বিখ্যাত মানসিক ডাক্তার আলাউদ্দিন ফরহাদের কাছে নিয়ে গেলেন। ডাক্তার প্রিয়কে প্রশ্ন করে তেমন কোন অস্বাভাবিকতা পেলেন না। দেখলেন ছেলেটা বেশ বুদ্ধিমান ও বটে। প্রিয়র বাবা ওনাকে আগেই সব খুলে বলেছিলেন। শেষে তিনি প্রিয়কে বললেন, বাবা দেখ, তোমাকে প্রশ্ন করে দেখলাম তুমি বেশ বুদ্ধিমান। তোমার ঘরে রাতে হারমোনিয়ামের শব্দ শোনা যায় সকালে হারমোনিয়ামের ওপর মাথা রাখা অবস্থায় তোমার ঘুম ভাঙ্গে অথচ তুমি কিছুই জাননা। তা কি করে হয়? আমার ধারনা তুমি রাতে ঘুম থেকে উঠে হারমোনিয়াম বাজাও। সম্ভবত তোমার স্লীপওয়াকিং এর অভ্যাস আছে।এক কাজ কর। কয়েকদিন তুমি হারমোনিয়াম বাজিয়োনা আর অন্য ঘরে ঘুমাও।

প্রিয় নিশ্চুপ হয়ে সব শুনল। আসলে সে ডাক্তারের কাছে সব কথা বলে নি। প্রথম রাতের কথাও ও এড়িয়ে গেছে।

বাসায় ফিরে সে রাতে প্রিয় পাশের আপুর ঘরে মেঝেতে বিছানা পেতে ঘুমাল। মাঝরাতে তার ঘুম ভেঙে গেল। প্রিয় শুনতে পেল সেই অপার্থিব সুর। কি অদ্ভুত ও অথচ মধুর সে সুর! আপু কি শুনতে পাচ্ছে সে সুর? আপুর দিকে তাকাতেই দেখতে পেল ডিমলাইটের আলোয় আপুর ভয়ার্ত মুখ। প্রিয় ফিসফিসিয়ে বলল,আপু শুনতে পাচ্ছ?আপু বলল, হ্যাঁ, অনেকক্ষণ ধরে শুনছি। প্রিয় বলল, চল দেখি ঐ ঘরে গিয়ে। প্রিয়ন্তি রাজি হল না। প্রিয়ন্তি নিঃশব্দে উঠে ঘুলঘুলি দিয়ে যা দেখল তাতে সে জমে পাথর হয়ে গেল। একটা নীলচে আভায় দেখা গেল একটা হাত হারমোনিয়ামের রিডগুলো টিপছে।

পরদিন সকালে দুই ভাইবোন বাবা মাকে সব জানালো। মা বলল, এ নিশ্চয় কোনো ভূতের কারসাজী। কোন অভিশপ্ত প্রেতাত্মা আমার সোনার সংসারে অশান্তির আগুন জ্বালাতে এসেছে। তুমি আজই গিয়ে পুরুত মশাই কে নিয়ে আস।বাবা বলল, পুরত মশাইতো নাই। উনি কোথায় জানি গেছে । দুই দিন পরে আসবে। এই দুই দিন তাদের চাপা ভয়ে কাটল। রাতে ঐ ঘরে শব্দ শোনা গেলেও কেউ আর ওমুখো হয় নি।পুরোহিত এসে সব শুনল। শেষে বাড়ি বন্ধ করে ধ্যানে বসলেন। তারপর বলতে লাগলেন, এই হারমোনিয়াম তোমাদের না। সম্ভবত তোমাদেরটা হারিয়ে যাওয়ায় দোকানি মিথ্যা বলেছে। এই হারমোনিয়ামটা প্রচারবিমুখ এক উঁচুস্তরের সুরস্রষ্টার। তার সুর ও গানের খাতা হাত করার জন্য একদল খারাপলোক তার পিছু লাগে। তারা শেষ পর্যন্ত তার হাতের আঙুল কেটে ফেলে, তাকে মেরে ফেলে।ঘর তন্নতন্ন করে খুঁজে তারা সেই খাতা পায়নি। সেই খাতা এই হারমোনিয়ামের মাঝে লুকানো। সেই সুরস্রষ্টার আক্ষেপ তার এত অমূল্য সৃষ্টি শ্রোতারা শুনতে পেলনা। তাই তার অতৃপ্ত আত্মা প্রতি রাতে এসে হারমোনিয়াম বাজায়। তোমরা খাতাটা উদ্ধার করে ‘জাতীয় সঙ্গীত একাডেমী’ তে দিয়ে দিয়ো। তাহলে তার আত্মা শান্তি পাবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.