নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কংক্রিটের জঞ্জালে একজন সাধারণ মানুষ।

অগ্নিপাখি

প্রতিদিন হাজারো মানুষ হারিয়ে যায়, আমি সেই হারিয়ে যাওয়া মানুষদেরই একজন। ভালবাসি বই পড়তে, বই সংগ্রহ করতে, স্ট্যাম্প জমাতে, ভাল চলচ্চিত্র দেখতে, মাঝে মাঝে লেখালেখি করতে, ভালবাসি কবিতা আর ভালবাসি একা একা পুরনো ঢাকায় ঘুরে বেড়াতে। হুমায়ুন আহমেদ আমার প্রিয় লেখক। এছাড়া অন্যান্য লেখকদের বইও ভালো লাগে। অন্যান্য লেখকদের মধ্যেঃ আহমদ ছফা, রশিদ করিম, মুনতাসির মামুন, মোহাম্মদ জাফর ইকবাল, আনিসুল হক, নিমাই ভট্টাচার্য, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, জাহানারা ইমাম, সৈয়দ মুজতবা আলী, শহীদ জহির রায়হান, সত্যজিৎ রায়, তারাশঙ্কর, বিভূতিভূষণ, সুনীল, সমরেশ , খূশবন্ত সিং, এলান পো, এরিখ মারিয়া রেমার্ক, মার্ক টোয়েন, ম্যাক্সিম গোর্কি, ভিক্টর হুগো, ফ্রাঞ্জ কাফকা, পাওলো কোয়েলহো, হারুকি মুরাকামির লেখাও অনেক বেশী ভালো লাগে। মন খারাপ থাকলে কবিতায় ডুবে যাই। আবুল হাসান, শহীদ কাদরি এবং জীবনানন্দ আমার খুব প্রিয় কবি। মুক্তিযুদ্ধ আমার অন্যতম পছন্দের একটা বিষয়। মুক্তিযুদ্ধের উপর লেখা যে কোন বই পেলে কিনে পড়ি। ঘৃণা করি যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের। এইতো এই আমি।

অগ্নিপাখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

দ্যা প্লেগঃ মহামারীর এক করুণ আখ্যান

২৮ শে মে, ২০২১ ভোর ৪:০৪

আলজেরীয় বংশোদ্ভূত ফরাসী দার্শনিক ও সাহিত্যিক আল্বেয়ার কাম্যু (১৯১৩-১৯৬০) এর লেখার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিলো তাঁর বহুল পঠিত "L'Étranger (The Stranger) এর বাংলা অনুবাদ (অধ্যাপক মুনতাসির মামুন, প্রকাশিত ১৯৮৩, ঢাকা) পড়বার মাধ্যমে। কাম্যুর "অ্যাবসারডিজম" এর সাথে তখনই পরিচয়।


কাম্যু- স্থির আলোকচিত্র

পুরো বিশ্ব কাম্যুকে তাঁর "L'Étranger (The Stranger) উপন্যাস এর মাধ্যমে চিনলেও তাঁর Magnum Opus হিসেবে বিবেচনা করা হয় ১৯৪৭ এ প্রকাশিত উপন্যাস “La Peste” (The Plague) কে। তিনি এ উপন্যাস এর বিষয়বস্তু গোছাতে শুরু করেছিলেন জানুয়ারি ১৯৪১ সাল থেকেই- যখন তিনি আলজেরিয়ার (তৎকালীন ফরাসী উপনিবেশ) বন্দর নগর ওরান এ অবস্থান করছিলেন। যদিও নাৎসিদের কবল থেকে ফ্রান্স (ভিচি ফ্রান্স) এর স্বাধীনতার পরেই তিনি মনোযোগ দেন এ উপন্যাস এর দিকে এবং ১৯৪৭ এ শেষ করেন অসাধারণ এই আখ্যান।


আমার সংগ্রহে থাকা দ্যা প্লেগ উপন্যাস (পেঙ্গুইন সংস্করণ)


আলজেরিয়ার বন্দরনগরী ওরান

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সেরা ইউরোপীয় উপন্যাস এর তকমা দেয়া হয় কাম্যুর "দ্যা প্লেগ" কে। লেখক এই উপন্যাসে সুনিপুনভাবে দেখিয়েছেন মহামারীকালীন সময়ে মানুষের অসহায়ত্ত্ব, একাকীত্ব, ভয়, গুজব ও স্রষ্টার কাছে আত্মসমর্পণ। মানব ইতিহাসে মহামারী কোন নতুন বিষয় নয়। চতুর্দশ শতকে "ব্ল্যাক ডেথ" এর কবলে পরে মৃত্যু হয়েছিলো প্রায় ৫ কোটি মানুষের। ১৬৩০ সালে ইতালির প্লেগে মৃত্যু হয় ২,৮০,০০০ মানুষের, ১৬৬৫ সালে লন্ডনের প্লেগ এবং ১৮ ও ১৯ শতকের মহামারী শহরগুলোকে পরিণত করেছিলো মৃত্যুপুরীতে। এ উপন্যাসের বিষয়বস্তু বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক। গত ১ বছর ৫ মাস ধরে চলা এ মহামারীতে বিশ্ব এখন পর্যন্ত ৩০,০০,০০০ এর উপর মৃত্যু দেখেছে- সামনে হয়ত এ সংখ্যা আরও বাড়বে। টিকাদান শুরু হলেও- আছে টিকা নিয়ে রাজনীতি, গরিব ও অনুন্নত দেশগুলোর টিকা সংকট- যা এই মহামারীকে আরও দীর্ঘায়িত করবার আশংকাই দৃঢ় করছে।


সুইস চিত্রশিল্পী আর্নল্ড বকলিন এর আঁকা "প্লেগ"

উপন্যাসের পটভূমি আলজেরিয়ার বন্দরনগরী ওরান আর সময়কাল উপন্যাসের বর্ণনাকারীর ভাষায়ঃ

"The peculiar events that are the subject of this history occured in 194_ in Oran... At first sight Oran is an ordinary town, nothing more than a French prefecture on the coast of Algeria."

সময়ের প্রেক্ষাপটটা লেখক খোলাসা করে বলে না দিলেও পাঠকের বুঝতে কষ্ট হয় না- লেখক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময়কেই নির্দেশ করেছেন।

লেখকের বর্ণনাতেই আমরা জানতে পারি ওরান শহরটি শ্রীহীন ঃ

"How can one convey, for example the idea of a town without pigeons, without trees or gardens where you hear no beating of wings or rustling of leaves- in short a neutral place."

এ বিষণ্ণ শহরেই প্যারিস থেকে আলজেরীয় আরব অধিবাসীদের খবর সংগ্রহ করবার জন্য আগমন ঘটে Raymon Rambert (র বেয়া) এর । কিন্তু সেই খবর তার আর সংগ্রহ করাই হয়নি।

ঠিক সেই একইদিন, ১৬ এপ্রিল, ১৯৪_ এ ওরান শহরের জনপ্রিয় চিকিৎসক Dr. Bernard Rieux (বারনার্ড রিউ) অপারেশন শেষে ফেরার পথে একটি মরা ইঁদুর দেখতে পান। পরবর্তীতে ইঁদুরের মৃত্যু আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং একসময় এ মৃত্যু শেষ হলে সেই ভয়ংকর জীবাণু মানুষকে আক্রান্ত করা শুরু করে যার প্রথম শিকার হয় দারোয়ান মিশেল।

জ্যামিতিক হারে মানুষের মৃত্যু বাড়তে থাকে এবং একসময় ঔপনিবেশিক সরকার থেকে নির্দেশ এলো শহরের প্রধান ফটক বন্ধ করে দেবার জন্য। ভয়ংকর প্লেগ ওরানবাসীকে ঠেলে দিলো এক নির্বাসিত ও বিচ্ছিন্ন জীবনে। শহরময় ছড়িয়ে পরে গুজব। সামগ্রিক হতাশায় ডুবে যায় পুরো শহর।

প্লেগের এ করুণ আখ্যান এ লেখক অনেক চরিত্রের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। শহরের প্লেগের সময়ের বর্ণনা ফুটে উঠেছে উপন্যাসটির কথক ডাক্তার বারনার্ড রিও এর মাধ্যমে (উপন্যাস এর একদম শেষে পাঠক ব্যাপারটা ধরতে পারবেন)। এছাড়াও উল্লেখযোগ্য চরিত্রের মধ্যে বলা যেতে পারে ফাদার প্যানেলু, তারিউ, অথন, মিশেল, ডাক্তার ক্যাসেল, রেমণ্ড র'বেয়া, জোসেফ গ্র, কতার্ড এর কথা।

ব্যাক্তিগত ভাবে উপন্যাসটি পড়া শেষ করবার পর আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছে ডাক্তার বারনার্ড চরিত্রটি। অমানুষিক পরিশ্রম করে প্লেগ রোগীর চিকিৎসা করবার পরও নিজেকে কখনও "নায়ক" মনে করেননি- উল্টো উপন্যাস এর এক পর্যায়ে তাকে বলতে শোনা যায়ঃ

"The whole thing is not about heroism... It may seem a ridiculous idea... but the only way to fight the plague is with decency."

অবশেষে এক বছর পর নগরে প্লেগ এর সঙ্ক্রমণ শেষ হয়। শহরজুড়ে তখন উল্লাস, মুক্ত ও বন্দিহীন ভাবে চলবার উল্লাস। কিন্তু ডাক্তার বারনার্ডকে সে উল্লাস স্পর্শ করে না। উপন্যাস এর শেষে আমরা দেখতে পাই তার কাছের বন্ধু তারিউ তার সামনেই প্লেগ এর অসহ্য যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণ করে। ডাক্তার এর প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত্যুসংবাদ এর টেলিগ্রাম এসে পৌঁছে শহরের বাইরের হাসপাতাল থেকে। এছাড়াও ম্যাজিস্ট্রেট অথন এর ছেলের প্লেগে অসহ্য যন্ত্রণায় মৃত্যুও পাঠকের মনে প্লেগ এর ভয়াবহ পরিনতি মনে করিয়ে দিবে।

শহরজুড়ে যখন প্লেগ থেকে মুক্তির উচ্ছ্বাস- তখন ডাক্তার বারনার্ড এর মনে অজানা এক আশঙ্কা যা সবসময় প্রাসঙ্গিকঃ

".... As he listens to the cries of joy that rose above the town, Rieux recalled that this joy was always under threat...the plague bacillus never dies of vanishes entirely...it can remain dormant for dozens of years in furniture or clothing, that it waits patiently in bedrooms, cellars, trunks, handkerchiefs & old papers & that perhaps the day will come when for the instruction or misfortune of mankind the plague will rouse its rats & send them to die in some well contended city...

Everyone has it inside him/herself this plague...because no one in the world...no one is immune.


নাৎসি জার্মানির ফ্রান্স অধিকার এর পর অ্যাডলফ হিটলার

নাৎসি অধিকৃত ফ্রান্স

"দ্যা প্লেগ" কে কি একটি রূপক উপন্যাস এর উপমা দেয়া যায় ? সচেতন পাঠক যদি উপন্যাসের সময়কাল লক্ষ্য করেন তাহলেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যায়। উপন্যাসের সময়কাল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালীন সময় - যখন নাৎসিদের জয়জয়কার। লেখকের "প্লেগ" কি তাহলে ফ্রান্সে নাৎসি দখলদারিত্ব ? অথবা সাংবাদিক র'বেয়ার তার প্রেমিকার সাথে বিচ্ছিন্নতা কি আলজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনকেই তুলে ধরে- যেখানে আলজেরিয়াতেই "প্লেগ" এর ভুমিকায় অবতীর্ণ ফরাসী ঔপনিবেশিক শাসক গোষ্ঠী। (১৮৩০ সালে ফরাসীরা আলজেরিয়া দখল করে উপনিবেশ স্থাপন করে। ১৯৪৪ এ স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু হলেও ১৯৬২ থেকে ফরাসী শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয় আলজেরিয়া)।

কাম্যুর ভাষাতেই বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উথেঃ

"দ্যা প্লেগ এ আমি চেয়েছিলাম বইটির নানা স্তরিক পাঠ চলুক। তার মধ্যে শনাক্ত করা যায় এমন বিষয়ও রয়েছে।"

কাম্যুর প্লেগ এর আবেদন তাই এখনও প্রাসঙ্গিক। আর করোনা মহামারীকালীন এই অন্ধকার সময়ে উপন্যাসটি অবশ্য পাঠ্য ।

আগ্রহী পাঠকদের বলবো- উপন্যাসটির ইংরেজি অনুবাদটা পড়তে। একটু ধীরে ধীরে পড়লে উপন্যাস এ ঢুকে পড়তে পারবেন।


১। অ্যাবসার্ড লিটারেচার সম্পর্কে দেখতে পারেন এই লিংকেঃ Absurdist fiction

২। নাৎসি জার্মানির ফ্রান্স অবরোধ সম্পর্কে দেখতে পারেন এই লিঙ্কেঃ

Paris is liberated after four years of Nazi occupation


মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৮ শে মে, ২০২১ সকাল ৮:৩৬

শেরজা তপন বলেছেন: দ্যা প্লেগ' উপন্যাস নিয়ে আপনার সুদীর্ঘ আলোচনা ভাল লেগেছে।
ডঃ বারনার্ড এর মত মানুষ আসলেই বিরল! এধরেনের মহামানব পৃথিবীতে যুগে যুগে আসে বলেই মানুষ এখনো মানুষ হিসেবে পরিচয় দিতে পারে!!!

ধন্যবাদ আপনাকে -ভাল থাকুন

২৮ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:৩৪

অগ্নিপাখি বলেছেন: আপনিও ভালো থাকবেন। আমাদের এখন ডাঃ বারনার্ড এর মতো নিবেদিত সৈনিক দরকার- করোনা মহামারীকে সমূলে উৎপাটন করবার জন্য।

২| ২৮ শে মে, ২০২১ সকাল ১০:০৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: নোবেল বিজয়ী আলবের কাম্যুর লেখা উপন্যাস 'দ্যা প্লেগ' পড়তে ব্লগারদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে। অনেক কম বয়সে উনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন। আপনার সুন্দর বর্ণনার জন্য বইটা পড়ার আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। বাংলা অনুবাদটা কেমন হয়েছে বলে আপনার মনে হয়? বই মাতৃভাষাতে পড়তেই সবচেয়ে ভালো লাগে। মূল বই মনে হয় ফরাসী ভাষাতে ছিল।

২৮ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:৩৮

অগ্নিপাখি বলেছেন: আমার কাছে বাংলা অনুবাদটা থাকলেও পড়িনি। কিন্তু আমি বলবো - আপনি ইংরেজি অনুবাদটা পড়ুন। আমি বলবোনা খুব ফাস্ট পেইসড উপন্যাস- তবে একটু ধীরে ধীরে সময় নিয়ে পড়তে হবে। আমার ১ সপ্তাহ লেগেছিল শেষ করতে ( যেখানে মারিও পুজোর "দ্যা গডফাদার" শেষ করেছিলাম মাত্র ২ দিনে)

"দ্যা প্লেগ"- মূল উপন্যাসটি ফরাসিতে লেখা।

৩| ২৮ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:১০

রাজীব নুর বলেছেন: দ্য প্লেগ - আমি পড়েছি।
এটা বিশ্বসাহিত্যের সেরা একটা বই।

২৮ শে মে, ২০২১ দুপুর ১:৩৯

অগ্নিপাখি বলেছেন: "এটা বিশ্বসাহিত্যের সেরা একটা বই"- সহমত।
ভালো থাকবেন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.