![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একা একা পথ চলা; একা একা কথা বলা...
'শোন কাজল চোখের মেয়ে;
আমার দিবস কাটে, বিবশ হয়ে, তোমার চোখে চেয়ে'।
এমনি এক কাজল চোখের মেয়ের নাম আরশি। আরশির চোখের মায়ায় বাঁধা পড়া এই জগতের আরেক নাম আরশিনগর। ভালো আর মন্দের মিশেলে এই আরশিনগর আমাদের নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেয় একটি জন্ম কতটা প্রতীক্ষিত হতে পারে.. একটি মৃত্যু কতটা হাহাকারের হতে পারে...।
"...এই জগত আয়নার মতন। উল্টোজগত। এখানে সবকিছু উল্টো। এই উল্টোজগতের নাম আসলে আরশিনগর।"
আরশিনগর পড়তে গিয়ে উল্টো নিয়মের এই উল্টোজগতের সত্যিটা যেন আবারো আবিষ্কার করলাম। উপন্যাসটির প্রতিটি দৃশ্যপট বহু চেনা; তবু যেন নতুন করে চিনতে হলো। এমনি একটি দৃশ্য --
"..তুমুল বৃষ্টিতে ভেসে যাওয়া চরাচরে বাবার কাঁধের দু'পাশে পা ছড়িয়ে বসে আছে নীল ফ্রক পরা ছোট্ট এক মেয়ে। তার হাতে বিশাল ছাতার মতোন এক গাড় সবুজ কচুপাতা। সে সেই কচুপাতা ধরে আছে মাথার ওপর। ..হঠাত হঠাত কোথাও বজ্রপাত হচ্ছে, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। মজিবর মিয়া সঙ্গে সঙ্গে মেয়েকে কাঁধ থেকে নামিয়ে বুকের সঙ্গে চেপে ধরে আড়াল করার চেষ্টা করছে। ..জগতে এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কি আছে! এরচেয়ে প্রগাঢ় বন্ধনের আর কি আছে? এর চেয়ে গভীরতম অনুভূতির ছুঁয়ে যাওয়া আর কী আছে!..."
আরশিনগরের প্রতিটি পাতায় আছে সরল জীবনের জটিল সমীকরণ। আছে মানুষে মানুষে সম্পর্কের চড়াই-উতরাই। আরশি'র ছোট্ট জীবনের বিশাল শুন্যতা যেমন পাঠককে কাঁদায়; তেমনি লতু মিয়া, লাইলীর মতন কদাকার চরিত্র অন্তরে ক্রোধের জন্ম দেয়। আবার আম্বরি বেগম, শুকরঞ্জন ডাক্তারের মতন মানুষগুলো স্নেহের চাদর দিয়ে দুঃখ ঢেকে রাখে। আর উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু মজিবর মিয়া প্রতিমুহূর্তে পাঠককে উপলদ্ধি করিয়ে দেয়- জীবন কখনো থেমে থাকবার নয়...।
লেখক তাঁর এই প্রথম দীর্ঘ উপন্যাসটি অনেক যত্ন নিয়ে লিখেছেন বোঝাই যায়। কাহিনীর প্রয়োজনে অনেক চরিত্র প্রভাবক হিসেবে এসেছে আবার যথাসময়ে চলেও গিয়েছে। কিন্তু সাদাত ভাই কোন চরিত্র অঙ্কনে অবহেলা করেননি। এই ব্যাপারটি আমাকে সত্যিই ভীষণ মুগ্ধ করেছে। যদিও উপন্যাসে তিনি সময়কালের উল্ল্যেখ করেননি; কিন্তু আমার মনে হয়েছে তিনি ৯০ দশকে বাংলাদেশের রাজনীতির পালাবদলের অস্থির সময়টিকে কাহিনীবন্দী করেছেন। সাথে ভিলেজ পলিটিক্সের কুৎসিত চেহারাটিকেও খুব প্রানবন্তভাবে তুলে ধরেছেন।
খুব নগন্য দু'একটি অসঙ্গতি বাদ দিয়ে বলবো "আরশিনগর" খুবই পরিণত এবং জীবনঘনিষ্ঠ একটি সাহিত্যকর্ম। আমি লেখকের ভক্ত আগেই ছিলাম। এখন আমি অন্ধভক্ত। আর আমার বিশ্বাস, এই ভক্তি বাড়তেই থাকবে; কমবেনা। বইটির অসংখ্য প্রিয় অংশ থেকে আরেকটি বলে শেষ করছি-
"..আয়না আর চোখের ভেতর একটা অদ্ভুত কিন্তু খুবই গভীর সম্পর্ক রয়েছে। জগতের দৃশ্যমান প্রায় সবকিছুকেই দেখার ক্ষমতা রয়েছে চোখের, অথচ সে নিজেই নিজেকে দেখতে পায় না। নিজেকে দেখার ক্ষমতা নেই তার। নিজেকে দেখতে হলে যেতে হয় আয়নার কাছে!
কি অদ্ভুত সমীকরণ।।..."
বিঃদ্রঃ এই লেখাটি কোন বুক রিভিউ নয়। একজন সাধারন পাঠকের অনুভুতি মাত্র।
১৩ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:১০
একজন একা বলেছেন: ধন্যবাদ।
পড়ে কেমন লেগেছে জানাতে ভূলবেননা কিন্তু...
২| ১৩ ই মে, ২০১৫ রাত ১২:৫২
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: সাদাত হোসেন কি সামুতে লিখতেন উনি? তাহলে পড়ে দেখব।
১৩ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯
একজন একা বলেছেন: এখনও লিখেন। http://www.somewhereinblog.net/blog/sadat99 । উপন্যাসটি পড়বার মতনই।
৩| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৩
নিমগ্ন বলেছেন: তাহলে পড়া যায়। রকমারিতে পাব নিশ্চয়ই?
১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:০৭
একজন একা বলেছেন: জ্বী, রকমারিতে পাওয়া যাবে। এবারের বইমেলায় লেখকের আরেকটি মাস্টারপীস এসেছে। নাম "অন্দরমহল"।
©somewhere in net ltd.
১|
১২ ই মে, ২০১৫ রাত ৯:৪৭
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন: অল্প কথায় অসাধার লিখেছেন।+++
আপনার পাঠপ্রতিক্রিয়ায় আমার বইটি পড়তে আগ্রহ লাগছে।