নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্রোতের বিপরীতে চলা মানুষ

স্রোতের উল্টো দিকে ভেসে চলা আজও ফুরায়নি আমার। পারিনি মোহের কূলে নোঙ্গর ফেলতে; যাইনি ডুবে কোন আঁধার অতলান্তে। রচেছি শুধুই আপন দহনের পারাবার।

একজন একা

একা একা পথ চলা; একা একা কথা বলা...

একজন একা › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ "দায়"

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১২:২৪

‘অ্যাই শান্তনু!’
‘হু?’

রায়হানের ডাক শুনে ফিরে তাকালো শান্তনু। পরমুহূর্তেই আবার দৃষ্টি ফেরালো সারি দিয়ে দাঁড়ানো রিকশাগুলোর দিকে। কিন্তু যাকে দেখার জন্য তাকালো তাকে আর দেখলনা। “চলে গেছে..!” মনে মনে ভাবলো সে।
‘কি ভাবছিস? দেরী হয়ে যাবে। চল চল..’ তাগাদা দিলো রায়হান।

তড়িঘড়ি করে ওরা ভার্সিটির বাসে উঠে পড়লো। কিন্তু শান্তনুর মাথায় ভাবনাটা রয়ে গেলো। ও যেমন রইস সাহেবকে দেখেই চিনে ফেলেছে; রইস সাহেবও কি তাকে চিনেছে? মনে হয় চিনেছে। কারন দু’জনেরই যখন চোখাচোখি হয়েছিলো, মনে হলো যেন রইস সাহেব একটু চমকে গিয়েছিলেন। তাইতো এমন জলদি জলদি ওখান থেকে সরে পড়লেন।

কলেজে পড়াকালীন সময় থেকেই মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে শান্তনু স্টুডেন্ট পড়াতো। ভার্সিটিতে ভর্তি হয়ে নিজেই তিলপাপাড়ায় ছোট্ট একটা রুম ভাড়া নিয়ে ব্যাচে পড়ানো শুরু করলো। হাইস্কুলের বিভিন্ন ক্লাসের ছেলেরা ইংরেজি পড়তে আসে বিকেল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত। এমনই এক স্টুডেন্ট তানভীর।

ক্লাস এইটে পড়ুয়া শান্তশিষ্ট তানভীর পড়াশুনায় যে খুব আগ্রহী তা শান্তনু প্রথম দিনেই বুঝে নিয়েছিলো। প্রথমদিন.. যেদিন ওর বাবা এসে ওকে পড়ানোর অনুরোধ করলো; সেদিনই কেন জানি মাঝবয়সী মানুষটার চেহারায় জীবনযুদ্ধের ছাপ দেখে শান্তনুর নিজের বাবার কথা মনে পড়ে গিয়েছিলো। তখনো কি শান্তনু জানতো ধূসর রঙের মাঝেও ছায়া আছে!

তানভীর পড়াশোনায় মনোযোগী হলেও ওর মাঝে কেমন যেন একটা আড়ষ্ট ভাব আছে। ব্যাচের কারো সাথেই তেমন একটা মেশেনা। নিজেকে সবার থেকে আলাদা আলাদা করে রাখে। এতদিন শান্তনু এই ব্যাপারটাকে ততটা গুরুত্ব দেয়নি। কিন্তু আজ সকালে ভার্সিটির বাসে উঠার আগের ঘটনাটা শান্তনুকে তানভীরের প্রতি মনোযোগী করে করে তোলে। শান্তনু বুঝে ফেলে, তানভীরের এই আড়ষ্টতার পেছনের কারন হচ্ছে দরিদ্রের সহজাত হীনম্মন্যতা!!

তানভীরের মাঝে আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার জন্য শান্তনু মাঝে মাঝে তাদের ব্যাচে পড়ানোর সময় বিভিন্ন নামকরা ব্যাক্তিত্বদের গল্প শুনাতো যাদের শৈশব কেটেছে চরম দারিদ্র্যের মাঝে। স্টিভ জবস একসময় কলেজ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলো টিউশন ফী না দিতে পারায়; প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন প্রথম জীবনে মুচি ছিলেন.. কিন্তু নিজেদের যোগ্যতার গুণে তাঁরা হয়ে উঠেছেন স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত। এমনি নানান গল্প শুনে তানভীরের মাঝে যেন কিছুটা পরিবর্তনও এলো।

মাস খানেক পর এক বৃষ্টির দিনে শান্তনু তার পড়ানোর ঘরটিতে বসে একমাত্র জানালাটা দিয়ে বাইরে তাকিয়েছিলো। একটু পর ক্লাস এইটের ব্যাচ আসার কথা। কিন্তু যা বৃষ্টি নেমেছে.. মনে হয়না কেউ আসবে। ভাবতে ভাবতেই তানভীর চলে এলো। শান্তনু অবাক হলো না। যেন জানতো এমনটাই হবে। আর কেউ না এলেও তানভীর ঠিকই আসবে। এই সুযোগে শান্তনু তানভীরের কাছে কিছুক্ষন ওর ফ্যামিলির কথা শুনতে চাইলো। যা শুনলো তা বড় কষ্টের কিন্তু তার চাইতেও বড় বাস্তবের।

ছোট্ট একটা টিনের ঘরে ওরা চারজন থাকে। টিনের চালার ফুটো দিয়ে কখনো নামে বৃষ্টির ধারা; কখনো নামে মাঘের শীত। ছোট বোনটা একটা এনজিও স্কুলে পড়ে। এই পড়ার খরচ চালাতে গিয়ে মাঝে মাঝে ওদের এক বেলা খেয়ে থাকতে হয়। বছরে দুইটা নতুন জামাও জোটেনা। গরীবের আসলে এত পড়াশুনার শখ থাকলে চলেনা। কিন্তু তানভীরের বাবার বড় শখ তাঁর ছেলেমেয়েরা সমাজের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। তাঁর মতন জীবন তাঁর ছেলেমেয়েদের হোক এটা তিনি চান না।

শান্তনুর ভিতরেও কেমন যেন হাহাকার ওঠে। এত পরিচিত এই বাস্তবতা, তবু কেন যে এমন বিষাদময়!! ওইদিন আর সে পড়ালোনা। তানভীরকে বিদায় দেয়ার আগে বললো, ‘তোমার বাবাকে একবার এসে আমার সাথে দেখা করতে বইলো’।

তার একদিন পর তানভীরের বাবা রইসউদ্দিন এলেন। শান্তনু তখন রুম বন্ধ করে বের হবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। তৃতীয়বারের মতো তাদের দেখা হলো। দু’মাসের বেতন বাকি ছিলো। সে টাকা মুঠো করে ধরা হাতটা একটু যেন কাঁপছিল।

তিনি বললেন, ‘স্যার, ছেলেটার পড়ার এত ইচ্ছা। কিন্তু একটু ভালো কইরা যত্ন নিতে পারিনা’।
ছেলের গৌরবে পিতার মুখ ঝলমল করার বদলে চোখের কোণে বিষাদের কালো ছায়া দেখে শান্তনু তার নিজের মাঝে এক গভীর বেদনা অনুভব করলো। এমন সময় বাইরে ঝমঝম করে আবার বৃষ্টি নামলো।

শান্তনু নিজেকে কোনরকমে স্বাভাবিক রেখে রইসউদ্দিনকে বলল, ‘এই টাকা দিতে হবেনা..’।
‘কেন স্যার? আমি রিকশা চালাই বলে?’ রইসউদ্দিনের কণ্ঠে হতাশা। চোখে আশংকা।

শান্তনুর বড় সংকোচ হয় কথাগুলো মুখ ফুটে বলতে। তবু একটু নিরুপায় হয়েই যেন বলে ফেলে, ‘দেখুন, আপনি কি করেন তাতে আমার কিছু যায় আসেনা। আপনি সৎ পেশায় আছেন এটাই আমার জন্য যথেষ্ঠ। এত কষ্ট করে আপনি ছেলেকে পড়াচ্ছেন এটা জানার পরও আমি যদি আপনার উপকারে না আসি তাহলে আমার বিবেকের দায় থেকে যে আমি মুক্তি পাবোনা’।..

রইসউদ্দিন স্থান, কাল, পাত্র ভুলে শান্তনুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। কান্নার মাঝেও বুঝি লুকিয়ে থাকে এমন পরম নির্ভরতা! বাস্তবতার কশাঘাতে রুক্ষ হয়ে যাওয়া শান্তনুর চোখেও কেমন করে যেন পানি চলে এলো। মনে হলো তার বাবাই যেন তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। আর.. অসমবয়সী এই মানুষ দু’টির অশ্রুসঙ্গী হয়ে প্রকৃতিও যেও কেঁদে চললো ঝমঝম ঝমঝম শব্দে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৫

কাল্পনিক_ভালোবাসা বলেছেন: মন্দ নয়!

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৪৭

একজন একা বলেছেন: তার মানে ভালোও নয় :(

২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:৪১

বনমহুয়া বলেছেন: ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১১:৪৭ ০
লেখক বলেছেন: তার মানে ভালোও নয় :(

হা হা

মন খারাপ কইরেন না। ভালোই হইসে।

১৩ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৫

একজন একা বলেছেন: এটা আমার লেখা প্রথম গল্প। পরিচিত একজনের জীবনের সত্য ঘটনা অবলম্বনে লিখেছি। লেখার পর বুঝেছি আমাকে আরো অনেক শিখতে হবে।

ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.