নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

The Demon known as Beelzebub is a Semitic deity that was worshiped in the Philistine city of Ekron. In Biblical sources he appears as a demon and the name of one of the seven princes of Hell.

লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস

Demon prince Beelzebub aka Baal; lord of the flies, driver of the plague, representer of immense hunger.

লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাইভেট কোচিং

২৯ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:১৩

ভার্সিটিতে চান্স পেলাম। পরিচিতজনেরা বিশ্বাস করতে শুরু করল যে আমি আসলেই ভালো ছাত্র। মাসে দুই হাজার টাকার বিনিময়ে পাশের বাসার এক পিচ্চিকে প্রাইভেট পড়ানোর দায়িত্ব নিলাম। ছাত্র মতিঝিল আইডিয়ালে ক্লাস ফোরে পড়ে। ভদ্র নিরীহ প্রকৃতির, পড়ালেখায়ও খারাপ না। তাই পড়াতে কোন ঝামেলা হচ্ছিল না। কিন্তু সমস্যা হল অন্য জায়গায়। ছাত্র একদিন জানাল তার গুণ অংক সঠিক হওয়া সত্ত্বেও টিচার কেটে দিয়েছেন। তার খাতায় দেখলাম টিচার গুণচিহ্ন কেটে ডট চিহ্ন দিয়ে রেখেছেন। বীজগণিতে এক্স আর গুণচিহ্ন যাতে না গুলিয়ে যায় সেজন্য ডট ব্যবহার করতাম। কিন্তু ক্লাস ফোরের পাটীগণিতেও ডট ব্যবহার করতে হবে আর সেজন্য অঙ্ক কেটে দিবে তা পুরোপুরি অযৌক্তিক। কি আর করা, টিচারের যেমন মর্জি। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার খাতা দিল। যথারীতি আমার ছাত্রের গুণ অংক সব কাটা পড়ল। ঘটনা কি? যেগুলিকে ডট ভেবেছিলাম সেগুলি আসলে ছোট ছোট রসগোল্লা। গুণচিহ্নের জায়গায় ছোট ছোট রসগোল্লা দিতে হবে। ছাত্রকে সেই গুণী টিচারের কাছে ভর্তি হবার পরামর্শ দিয়ে কোচিং ক্যারিয়ারের ইতি টানলাম।

প্রাইভেটে ছাত্র টানার জন্য শিক্ষকরা এরকম অনেক অদ্ভুত কাজকর্ম করে থাকেন। এক্ষেত্রে এগিয়ে আছেন নামীদামী স্কুলের শিক্ষকরাই। কার কাছে কয়জন ছাত্র পড়তে আসে এটা দিয়ে তাদের মধ্যে মর্যাদার লড়াই চলে। নোংরা কাদা ছোঁড়াছুড়ি পর্যন্ত হয়। স্কুল কর্তৃপক্ষ এখন অনেক স্মার্ট। নিজেরাই শিক্ষকদের মধ্যে ছাত্র বণ্টন করে দেন। কার কাছে কয়জন স্টুডেন্ট পড়ছে তার খতিয়ান হিসাব পর্যন্ত রাখা হয়।
আমার মামাতো বোন ইডেন থেকে অনার্স পাস করে এক স্কুলে জয়েন করেছিল। মাসে বেতন সাড়ে তিন হাজার টাকা। স্কুলের দারোয়ান আর পিয়নের বেতন পাঁচ হাজার টাকা। এ কেমন বিচার? প্রিন্সিপাল জানালেন প্রথম সাময়িক পরীক্ষার পরেই তার বাসায় বিশজন স্টুডেন্ট পাঠিয়ে দেয়া হবে। প্রথম সাময়িকে সবাইকে গণহারে ফেল করানো হল। গার্জিয়ানদের ডেকে প্রিন্সিপাল বললেন,
- বাচ্চাদের অবস্থা খারাপ। টিচারদের বাসায় না পাঠালে কিছু শিখবে না।
- জ্বি ম্যাডাম। অমুক আপার কাছে বাচ্চাকে পড়াব ভাবছি।
- অপুক আপার ব্যাচে এখন জায়গা নেই। তমুকের কাছে পড়ান। নতুন এসেছে। খুব ভালো পড়ায়।

বোন বিবাহের পর টিচিং ক্যারিয়ার থেকে অবসর নিয়েছে। এখন নিজের বাচ্চা নিয়েই কোচিংয়ে দৌড়ায়। তাকে বললাম, আপু আপনি শিক্ষিত মানুষ নিজে পড়ালেই পারেন। আপু বললেন, স্কুলের টিচারদের কাছে না পড়লে ছেলে ক্লাসের প্রথম সারিতে আসতে পারবে না। ঢাকার শিক্ষিত মূর্খরা ক্লাসে প্রথম সারিতে থাকাটাকে অনেক বড় কিছু মনে করে। রেডিমেড নোট আর পরীক্ষার আগে শর্ট সাজেশন পেয়ে প্রথম সারিতে থাকা ছাত্ররা পরবর্তীতে অনেক পিছিয়ে পড়ে এটা চিরন্তন সত্য।

শুরু করেছিলাম নিজের প্রাইভেট পড়ানোর কাহিনী দিয়ে। শেষ করছি ভার্সিটির বন্ধুর কাহিনী বলে। সে বন্ধু ছিল ক্লাসে সবচেয়ে গোবেচারা টাইপের ছাত্র। প্রেজেন্টেশনের দিন ভয়ে ক্লাসেই আসত না। তো এলাকার এক ধনবান ব্যক্তি সুন্দরী মেয়ের জন্য একজন বিশ্বস্ত হিসাববিজ্ঞান শিক্ষক খুঁজছিলেন। আমার গোবেচেরা বন্ধুর কথা জানতে পেরে তাকে জোরপূর্বক পড়াতে রাজি করালেন। মেয়ে পড়ালেখায় দারুণ অমনোযোগী। টেনেটুনে জিপিএ চার পেয়ে এইচএসসি পাস করল। কোন পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স না পাওয়ার পর মেয়ের বাবা বুঝতে পারলেন একে দিয়ে আর পড়ালেখা হবে না, শীঘ্রই বিয়ে দিতে হবে। কিন্তু মেয়ে কোন কারণ ছাড়াই তার হিসাববিজ্ঞান শিক্ষককে মন দিয়ে বসে আছে। ভদ্র পরিবারের শিক্ষিত ভালো ছেলে। অমত করার কারণ নেই। সমস্যা একটাই ছেলে বেকার আর এই যুগে এমন হাবাগোবা লোকের চাকরি পাওয়াও কঠিন। হবু শ্বশুরের লবিংয়ে বন্ধু এলাকার স্কুলে ঢুকে গেল। প্রায় তিনবছর পর গতকালকে তার সাথে দেখা করলাম। বন্ধুর বাসায় গিয়ে দেখি পুরো রমরমা অবস্থা। সে এবং আরেক টিচার নীচতলা ভাড়া নিয়ে কোচিং বাণিজ্য চালাচ্ছে। আগের স্কুলেই আছে। গতবছর থেকে কলেজ শাখায় ক্লাস নিচ্ছে। সিটি কলেজে অফার পেয়েছিল কিন্তু এলাকায় তার সুনাম যাত্রাবাড়ীর ময়লার মতো ছড়িয়ে গেছে। তাই নতুন জায়গায় গিয়ে মার্কেট হাতছাড়া করতে চায় না। জানতে চাইলাম কোচিং ব্যবসা থেকে কেমন রোজগার হয়। সে জানাল, বেশি না। ভাড়া বিল মিটিয়ে মাসে ৬০-৭০ হাজার থাকে।

শালার! ব্যাংকে খামাখাই কামলা দিচ্ছি। এর চাইতে টিচার হলেই ভালো করতাম।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০১

সাকিন সিকদার (জেন) বলেছেন: এটাই বাংলাদেশের বাস্তবতা আর কি!!! সেদিন আর বেশি দিন নেই্‌, যেদিন শিক্ষার মান আর সারটিফিকেট দিয়ে যাচাই করা সম্ভব হবে নাহ্‌, তাই অনতি বিলম্বে সরকারের এসব ব্যাপার গুলো আমলে নেওয়া উচিত X((

২৯ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:১৩

লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস বলেছেন: আমলে নিবে কি? সব স্কুলের কমিটিতেই সরকারি দলের নেতা, পাতিনেতারা আছেন। তাদের বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনেরাই তো টিচার হচ্ছে।

২| ২৯ শে জুলাই, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৫৯

ক্যানভাসের রঙ বলেছেন: আমাদের শিখানো হয় তুমি নিজের চরকায় তেল দাও, একাই এগুও। কিন্তু এটা শিখানো হয়না যে সবাই মিলেও একসাথে এগুনো যায়

৩| ২৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৫৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: চলমান নির্মম সত্য!

শিক্ষক নামের কলংক আর শিক্ষা ব্যবস্থার হাল ওপেন সিক্রেট হলেও কারো কোন মাথা ব্যাথা নেই!
দু চারটে বিবৃতি ব্যাস শেষ..

বাচ্চা গুলোর যত জ্বালা!!!!!!!! ভবিষ্যত সব নষ্ট করে দিচ্ছে অংকুরেই!

+++

২৯ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:৩৭

লর্ড অফ দ্য ফ্লাইস বলেছেন: অভিভাবকদের দোষটাই বেশি।

৪| ১১ ই আগস্ট, ২০১৭ সকাল ৭:৪০

চেংকু প্যাঁক বলেছেন: এরা টিচার না, বরং চিটার

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.