নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সততাই আমার জীবনের এক মাত্র লক্ষ।

bogra

সত্যবাদিতাই আমার জীবনের এক মাত্র ভাষা।

bogra › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার প্রিয় ফুফি

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৫:০৩



পবিত্র ৩রা জুমাদাল উখরা শরীফ ১৪৪০ হিজরী চলে গেলেন
--------------------------------------------------------------------------------
আমার প্রিয় ফুফি
--------------------------------------------------------------------------------
ফুফি। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আমার ফুফিকে আমি ও আমার ভাইয়েরা কখনোই তুমি বা তু্ই বলতাম না । আমরা ও আমার ভাই ও বোনেরা সবাই ফুফিকে আপনি বলে ডাকতাম। ভাই বোনদের মাঝে আমিই বড়। আমি আমার বড় ফুফি ও ছোট ফুফিকে দেখেছি। মেঝ ফুফি আমার জন্মের অনেক পূর্বেই ইন্তেকাল করেছেন। আমি সকলের এক চেটিয়া প্রিয়পাত্র ছিলাম। আমার লাজুকতাই আমাকে সকলের কাছে প্রিয়পাত্র করে তোলার একটি বিশেষ কারণ। আমার ছোট ফুফিকে আমি একটু বেশী ভালোবাসি। আমাদের ফুফিগণ আমার বাবা, চাচাদের চেয়ে বয়সে অনেক বড় ছিলেন। আমার বাবা উনার ভাই বোনের মাঝে সবার ছোট। আমি বাবার বড় ছেলে। আমার ফুফি আমাদের বাড়ীতে বেড়াতে আসলেই আমার নাম ধরে ডাকতেন। আমি সাধারণত ঘরকুনো হিসেবে সবার কাছে পরিচিতি লাভ করেছিলাম। আমার ফুফি আমাদের বাড়িতে আসার সময় অবশ্যই উনার বাড়ী থেকে আমাদের জন্য অনেক কিছু নিয়ে আসতেন। আশ্চর্যের বিষয় আমার ফুফু আমার হাতেই সবকিছু দিতেন। আমাকে সবসময় বাপ বলে ডাকতেন। আমাকে আদর করতেন আমার কপালে চুমুও খেতেন। বলতেন- বাপজান! তোমার এ মেয়ের কথা কী তোমার মনে পরে না। আমি পথ চেয়ে চেয়ে থাকি কখন আমার বাবারা আসবে। আহারে! আর আমার বাবারা তার মেয়েকে একটু দেখতেও যায়না। তিনি বলতেন আর কাঁদতেন। আমাকে উনার পাশে বসাতেন। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতেন। আমি একটু কম কথা বলতাম। চুপচাপ থাকতাম। উনি এক নাগাড়ে প্রশ্ন করেই চলতেন। আমি মাথা নিচু করে থাকতাম। আমার লাজুকতার কারনে আমি আসলে কী জবাব দিব তা খুজে পেতাম না।

আমার ফুফি বাসায় আসলেই আমাদের পাশের ঘরে আমার ফুফু থাকতেন। আমরা সাধারণত রাত আটটার মধ্যেই সবাই ঘুমিয়ে পরতাম। অনেক গভীর রাতে আমার ঘুম ভাঙ্গত আমার ফুফির কুরআন শরীফ তিলিওয়াতের সুমধুর সুরে অথবা আমি বুঝতে পারতার আমার ফুফু মুনাজাত করছেন আর কাঁদছেন। উনার কান্নার আওয়াজ আজো আমার কানে বাজে।

আমার ফুফি খুব সহজ সরল মানুষ ছিলেন। উনার সরলতা আমাকে প্রায়ই বিমোহিত করতো। আমার ফুফুর বাড়িতে আমি যখন বেড়াতে যেতাম। আমার পায়ের শব্দ শুনেই আমার ফুফু দৌড়ে আসতেন। আমার বাপ এসেছে! আমার বাপ এসেছে!! বলে বাড়ীর সবাইকে জানান দিতেন। আমার ফুফাতো ভাইয়েরা সবাই ছুটে বের হয়ে আসতো। বাড়ীর উঠানে আমার জন্য শুধু আমার জন্য চেয়ার নিয়ে আসতো। আমাকে ঘিরে রাখতো সবাই। একেকজন একেক প্রশ্ন করতো। আমি স্বাভাবিক মার্জিত ভাষায় জবাব দিতাম। অনেক কথা হতো সবার সাথে।

আজানের সময় হলেই আমার ফুফু সবাইকে আদেশ করতেন নামাজ পড়ার জন্য বিশেষ করে আমাকে নামাযে ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। কখনো বা তিনি নিজেই জায়নামাজ বিছিয়ে দিতেন। আমি নামায পড়তাম। আমার ফুফাতো ভাইয়েরা একপ্রকার আহ্লাদের স্বরেই ফুফুকে বলতেন-”তোমার বাপ আসছে। আর তো আমাদের কথা তোমার মনেই থাকবে না। আহারে! যেই বাপকে এত ভালোবাসো আর তোমার সেই বাপ আসেই না। আজ অমুক কাজ। মামা পাঠিয়েছেন তাই আসছে। না হলে তোমার বাপ আসতোই না।”

আমার প্রিয় ফুফি আমার জন্য যে কত কিছুই রান্না করতেন তার শেষ নেই। আমার ফুফাকে বলতেন- ‘’শাহীন আইছে! বাজার থেকে এটা আনবেন!! সেটা আনবেন!!’’ আমাকে নিজ হাতে বারবার খাইয়ে দিতে চাইতেন কিন্তু আমার লাজুকতার কারণে সবাই নিষেধ করতো। বলতো- ”দেখছো না শাহীন লজ্জা পাচ্ছে?” আমার ফুফি এটা নাও সেটা নাও ইত্যাদি বলতেন। আর বলতেন- বাবা ঝাল বেশী হইছে? তুমি খেতে পারতেছ না? স্বাদ হয় নাই?
আমি লজ্জা পেতাম। বলতাম না ফুফি স্বাদ ভালোই হইছে। আমি খাচ্ছি তো।”

খেতে খেতে আমার নাকের ডগাটা ঘাসে ভিজে যেত। আমার ফুফি তা দেখে বলতেন আমার বাবার বউ ”অনেক সুন্দর হবে। আমার বাবাকে খুঊব ভালোবাসবে।” আমি লজ্জায় মাথা নিচু করে থাকতাম।

আমার বাড়ীতে আসার কথা শুনলেই আবার কান্না শুরু করতেন।
আমাকে আসতে দিতে চাইতেন না। আমার ফুফা ও ফুফাতো ভাইয়েরা নানা ভাবে আমাকে বুঝানোর চেষ্টা করতো যাতে আমি বাড়ী না যাই। অবশেষে আমি হেরে যেতাম। সেদিন আর যেতে পারতাম না। একবার তো আমি আমার ফুফির বাড়ীতে ১৪ দিন ছিলাম।

আমার ফুফি আমাকে তার বাবা বানিয়েছিলেন। কিন্তু আদৌ আমি উনার বাবা হতে পারিনি। আমার দাদা আমার ফুফিদের যে ভালোবাসতেন তার ধারে কাছেও আমার যাওয়া সম্ভব নয়। উল্টো আমিই আমার ফুফির আদর সোহাগ লাভ করতাম।আমি আজ ঘোষনা করছি- ”ফুফি আমি তোমার বাবা নই ! ভাতিজা কখনো বাবা হতে পারে না। বাবা বাবাই থাকে আর ভাতিজা ভাতিজাই। আমি স্বার্থপর। আমি পাষান হৃদয়ের একজন ব্যক্তি।”

আমার ফুফির অনেক বয়স হয়ে গিয়েছিলো। কয়েক বছর পূর্বে
বগুড়াতে জিয়া মেডিকেলে আমার ফুফিকে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি বগুড়াতেই থাকতাম। আমি আমার ফুফুকে দেখতে আসি। আইসিইউতে আমার ফুফিকে রাখা। কিছুক্ষন পর আমার ফুফিকে আমার সাথে সাক্ষাত করতে দেওয়া হলো। আমার প্রিয় ফুফি শরীর কেমন শুকিয়ে গেছে! আমি সাইয়্যিদুনা হুজুর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদাতুনা হযরত আম্মা হুজুর ক্বিবলা আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদুনা খলিফাতুল উমাম আলাইহিস সালাম,সাইয়্যিদাতুনা নাক্বিবাতুল উমাম আলাইহাস সালাম,সাইয়্যিদাতুনা নিবরাসাতুল উমাম আলাইহাস সালাম, সাইয়্যিদুনা শাফিউল উমাম আলাইহিস সালাম,সাইয়্যিদুনা হাদিউল উমাম আলাইহিস সালাম, সাইয়্যিদাতাল উমাম আলাইহিমাস সালাম উনাদের মহাসম্মানিত নাম মুবারকে দরুদ শরীফ পরে আমার ফুফির মুখে ফু দেই এবং সেই ফূ কে খেতে বলি আর পানিতে ফু দিয়ে সেই পানি বারবার খেতে বলি। আর আমার দুই ফুফাতো বোনকে আমি বলি দুই পাশে দাড়িয়ে আস সালামু আলাইকুম ইয়া রাসুলাল্লাহ। আস সালামু আলাইকুম ইয়া মামদুহ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম পাঠ করতে থাকুন। আর আমি আমার ফুফিকে মনে মনে মামদুহ মামদুহ বলতে বললাম।
দুই দিন পর সে যাত্রায় ফুফিকে বাড়ী নিয়ে যাওয়া হলো। সবার মুখে একটিই কথা ”শাহীন যে দোয়া শিখিয়ে দিয়েছে তার বদৌলতেই মা বাড়ীতে আসছে।”
কয়েকদিন আগে হঠাৎই আমি আমার এক ফুফাতো ভাইকে ফোন দেই। জানতে পারি আমার ফুফি এনায়েতপুুর হাসপাতালের আইসিইউতে আছে। তবে অবস্থা বেশী ভালো নয়। আমি বাড়ীতে ফোন করলাম- বাড়ী থেকে জানানো হলো ”তোমার ছোট ফুফির অবস্থা ভালো নয়। তোমার ছোট ফুফি তোমাকে দেখতে চায়। তুমি কবে আসবে?” আমি হতাশ হয়ে পরলাম। আমি চিন্তা করলাম কী করা যায়??
অবশেষে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম যে- আমাকে ৮ ই জুমাদাল উখরা ১৪৪০ হিজরীতে বিশেষ প্রয়োজনে সিরাজগঞ্জ তো যেতে হবেই, ভেবেছিলাম তখন কাজটি শেষ করে আমার প্রিয় ফুফিকে দেখতে যাব।
হায়! আফসুস আমার জন্য!! আমার প্রিয় ফুফু আমাকে দেখতে চেয়েছেন সে জন্য নয় আমার কাজের দিনের অপেক্ষা আমার কাছে বড় হয়ে গেল????!!!!!
আমার ফুফু আমার জন্য আর অপেক্ষা করলেন না। গতরাত (৩রা জুমাদাল উখরা শরীফ ১৪৪০ হিজরী) তথা লাইলাতুছ সাবত থেকেই আমার মনে বড় ধরণের অস্থিরতা কাজ করছিলো তার মধ্য দিয়েই আমি কাজ করছিলাম। ইয়াওমুছ সাবত পবিত্র যোহর নামাযের সময় মোবাইল সাইলেন্ট করে রেখেছি। নামায শেষে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র নিয়ে মাদরাসা অফিসে কাজ করছিলাম। কোন কারণে ফোনটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। আমি ফোন চালু করলাম। সাথে সাথে ই আমার ফোনে ফোন আসলো- ”আপনার ফোন বন্ধ কেন???? আপনার ফুফু তো মারা গেছেন দুপুর দুইটার দিকে।আপনি কখন আসবেন?? রাত আটটায় জানাযার নামায হবে।” আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। ওহ! আফসুস!! এখনতো সোয়া চারটা বাজে।

আমি আর আমার প্রিয় ফুফির প্রিয় চেহারা দেখতে পাবো না। আমার প্রিয় ফুফি কথায় কথায় কাঁদতেন। আজ আমার প্রিয় ফুফি নেই। কিন্তু কী আশ্চার্য!! আজ আমিই কাঁদছি অঝর নয়নে নিয়ন্ত্রনহীন ভাবে। ফুফি আপনি আজ দেখুন আপনার প্রিয় বাবা আজ কাঁদছে। আমাকে মাফ করে দিয়েন ফুফু। আসলে ভাতিজা কখনোই বাবা হতে পারে না। মহান মালিক ও মওলা আপনাকে ভালো রাখুন অনন্ত অনাদীকালের জন্য। ওপারে আপনি ভালো থাকুন এটাই আপনার বাবা চায়। আপনাকে কবুল করুন। আপনাকে মহান মালিক ও মওলা অতি উচ্চ মাকাম দান করুন। আপনার মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিন। এটাই আপনার বাবার একমাত্র চাওয়া। হে আমার প্রিয় ফুফি! আমার কান্নার অশ্রুবিন্দু ছারা আর দোয়া করা ছারা আমার আর দেওয়ার কিছুই নেই। আমাকে মাফ করে দিন। আমীন!!!

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ভোর ৫:০৬

bogra বলেছেন:

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.