নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
২১ অধ্যায়: Click This Link
তোমাকে বলেছিলাম
----নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
"তোমাকে বলেছিলাম, যত দেরীই হোক,
আবার আমি ফিরে আসব।
ফিরে আসব তল-আঁধারি অশথগাছটাকে বাঁয়ে রেখে,
ঝালোডাঙার বিল-পেরিয়ে
হলুদ-ফুলের মাঠের উপর দিয়ে
আবার আমি ফিরে আসব।
আমি তোমাকে বলেছিলাম।
আমি তোমাকে বলেছিলাম, এই যাওয়াটা কিছু নয়।
আবার আমি ফিরে আসব।
ডগডগে লালের নেশায় আকাশটাকে মাতিয়ে দিয়ে
সূর্য যখন ডুবে যাবে,
নৌকার গলুইয়ে মাথা রেখে
নদীর ছল্-ছল্ জলের শব্দ শুনতে-শুনতে
আবার আমি ফিরে আসব।
আমি তোমাকে বলেছিলাম।
আজও আমার ফেরা হয়নি।
রক্তের সেই আবেগ এখন স্তিমিত হয়ে এসেছে।
তবু যেন আবছা- আবছা মনে পড়ে,
আমি তোমাকে বলেছিলাম"।
দীপু ল্যাপটপের পর্দায় ভেসে ওঠা এ কবিতা তন্ময় হয়ে পড়ে! কবিরা কেমন করে লেখে এমন!
আজ এত বছর পরে লীনাকে মেইল করতে বসেছে সে। ছেলেকে ভর্তি করিয়ে আগেই তো সংগ্রহ করেছে দিলরুবা ম্যাডাম মানে লীনার ইমেইল ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বার। লীনার সাথে মোবাইলে কথা বলা কঠিন লাগছে! এই পৃথিবীতে লীনার মত কাছের আর কে আছে তার! অথচ সেই সবচেয়ে দূরের, ধরা ছোঁয়ার বাইরে। সবই নিয়তি!
আজ এই মেইল লিখে এখুনি পাঠিয়ে দেবে দীপু, আর দেরী নয়!
আবার কবিতার ঐ লাইনটা মনে আসছে দীপুর " আজও আমার ফেরা হয়নি "!
আসলেই ফেরা হয়নি, ফেরা যায় না; সব পথ রুদ্ধ। আমারও তো আর ফেরা হোল না তোমার কাছে লীনা! জীবনের মোড়গুলো এমনি করে আঁকা যে বার বার ঘুরে ঘুরে তোমার থেকে সরে যায় কেবলই। কবির যেমন আবছা আবছা মনে পড়ে কি বলেছিল আমারও তাই। তাছাড়া চোখের জ্যোতিও গিয়েছে কমে, ঝাপসা চোখে একমাত্র তোমাকেই দেখি পরিষ্কার, এই দূরদেশ থেকেও তোমাকে দেখি সেই আগের মত একইরূপে! হয়তো ভালবাসাহীন জীবন নাটকে তোমাকে কল্পনায় দেখে ছন্দ মেলানোর চেষ্টা, মানুষকে কিছু একটা নিয়ে তো সুখী থাকবার ভান করতে হয়, বেঁচে থাকবার উপকরণ।
তোমার জীবনে সুখ এলো কি এলো না কোনদিন জানতে চাই নি, চাইবো না। কি প্রয়োজন! আমি যে তোমার কাছে হালকা এক টুকরো চন্দন কাঠ। তোমার দুঃখ তাকে জ্বালিয়ে নি:শেষ করুক সেটা চাওনা তাই দুঃখ তাড়িয়ে বেড়াও । এটাও শুনেছি সুখে থাকবার অভিনয় তুমি খুব ভাল করছো। যাই কর না কেন আমি সব টের পাই, নিভৃতে যতনে যে আমি তোমাকে পড়তে পারি।
যাই হোক্ যেটা লিখতে বসেছি এবং পাঠিয়ে দেব, তোমাকে মনোযোগ দিয়ে পড়বে।
চারপাশ সামলে অনেক ভেবে বড় ছেলেকে তোমার ওখানে পড়তে পাঠিয়েছিলাম, আমার পালিয়ে যাওয়া যেন শেষ কথা না হয় তোমার আমার জীবনে সে কথা ভেবে। আমার ছেলে লেখা পড়ার বিষয়ে সচেতন, তারপর তুমি আছো ওখানে এ আমার কেমন স্বস্তি বল!
তুমি ওর মা নও, কিন্তু তুমি ওর আকাশ ভরা আলো, তুমি ওর পাশে থাকা ছায়া, ওর মমতাময়ী মায়ের এক রূপ তুমি ।ওর বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময়ে তোমার সাথে দেখা করিনি আমি, চাইলে করতে পারতাম, কি লাভ? কতগুলো নীরব প্রশ্ন দু'জনের চোখে স্তব্ধ হয়ে থাকত, জবাব গুলো বুকের ভেতর আছড়ে পড়েত! ইচ্ছে করে এড়িয়ে গিয়েছি। বয়স হয়ে গিয়েছে যদি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ি! দেখা হলেই কি কিছু বদলায়? ছেলেটা লেখাপড়া শেষ করে এদেশে ফিরেছে, ভালো ফলাফল নিয়ে ফিরেছে। আরো মূল্যবান কিছু নিয়ে ফিরেছে সাথে; তোমার প্রতি একরাশ শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং তোমার মাতৃরূপে ওর মুগ্ধতা আমার কাছে অনেক দামী, সে তুমি বুঝবে না।
যাই হোক্ তোমার ইমেইল ঠিকানা আগেই সংগ্রহ করেছিলাম, আজ মনে হোল জানিয়ে দেই যা মনে জমা, কত বিষয়ে দেরী করে কত না ভুল করেছি।
আমি সত্যিই তোমাকে ভালবেসেছিলাম। অনেকে ভালবেসে কত কি করে, হাত ধরে এগিয়ে নিয়ে যায়; আমি পারিনি। ভালবেসেছিলাম বলে তোমার সুখে থাকবার কথা ভেবেছি আগে; তোমাকে পাবার চেয়ে। সেই সময়ে আমার ছাত্র জীবনে আমি তোমার কিইবা যত্ন নিতে পারতাম! জীবনে তোমাকে পাইনি পরিচয়ের পাতায়, সে দৈন্য আমার ঘুচে গেছে। আমি তোমাকে ভালবেসে এতটাই অন্ধ যে পৃথিবীর কোন নারী আমার চোখে পড়ে না। সংসার করছি বটে সংসারের নিয়মে, আমি তো যন্ত্র ! তোমার বিষয়ে কিছু কথা বলেছিলাম বিয়ের পর পরই আমার স্ত্রীকে, তার ঝড় প্রায়ই আঘাত হানছে এত বছর ধরে আর তখন তোমার অদৃশ্য অস্তিত্ব আরো প্রবল হয়, আমাকে শান্ত রাখে। ভাগ্য ভালো আমার অসাড়তা কিছু ওলট পালট হতে দেয় না। তোমাকে ভালবেসে আমি যে শক্তি অর্জন করি সেটা আমার ভারসাম্য ঠিক রাখে,আমাকে চলমান রাখে আর এই সাত সমুদ্র পার থেকে হলেও সে শক্তি তোমাকেও ভাঙ্গতে দেয় না, কেমন উজ্জ্বল করে তোমার ব্যক্তিত্ব! কতজনের কাছে তোমার প্রশংসা শুনি, মন ভরে যায় আমার। লীনা তুমি আমার আনন্দ, পথ চলবার অদৃশ্য সঙ্গী।
ভালো থেকো সবদিন, ভাল রেখো এই আমাকে।
তুমি আমার
গোপন প্রিয়া
"পাইনি ব’লে আজো তোমায় বাসছি ভালো, রানী,
মধ্যে সাগর, এ-পার ও-পার করছি কানাকানি!
আমি এ-পার, তুমি ও-পার,
মধ্যে কাঁদে বাঁধার পাথার
ও-পার হ’তে ছায়া-তরু দাও তুমি হাত্ছানি,
আমি মরু, পাইনে তোমার ছায়ার ছোঁওয়াখানি".......
.............,............... ..................................দীপু৷
চলবে.......
২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:০৮
মেহবুবা বলেছেন: এত আগের! নিজেই অবাক হচ্ছি। আমার বিশ্রাম চলছে আর আমার বিচ্ছু ধরনের স্কুল বান্ধবী আমার দূর অবস্থা দেখে বললো লেখালেখি করতে। যা করছি তা মোবাইলে, একটু কষ্ট তো হবে। আপনাদের ভাল লাগলে সার্থক। আপনি কেন বলছেন? আমি কি আপনার চেয়ে বয়সে বড় হয়ে গেলাম,
২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:২২
মেহবুবা বলেছেন: ২০০৮ এ নয় ২০১০ এর ২৩ এপ্রিল শুরু।
২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:২৯
এসো চিন্তা করি বলেছেন: শুভকামনা আপু
আমার লেখাগুলো পড়ার আমন্ত্রণ রইলো
ধন্যবাদ ☺️
২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:১০
মেহবুবা বলেছেন: শুভকামনা আপনার জন্য। আপনি লিখতে থাকুন। অনেককে যদি এমনি করে অনুরোধ করেন তো ভাল দেখায়৷ না। যে যখন সময় পাবে বা ইচ্ছে করবে পড়বে আপনার লেখা।
৩| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৫
শায়মা বলেছেন: বাহ !! আপুনি!!!!!!!!!!!!
অনেক অনেক ভালো লাগা!!!
তারপর কি হলো শিঘরী লেখো।
মিররমনি আর একলব্যভাইয়ুকেও খবর দিতে হবে। তারা সিরিজ গল্পের ফ্যান!
৪| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৫১
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: অনেক ভালো লাগলো। অবশ্য আগের কোন পর্ব পড়িনি। উন্নত মানের লেখা।
৫| ২৬ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ২:০৪
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: সুন্দর গল্পের ভেতরে গিয়ে পড়তে হলো। শুভ কামনা রইলো পরের পর্বও পাবো বলে আশাই রইলাম।
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:২৫
জুল ভার্ন বলেছেন: সম্ভবত ২০০৮ সালে লেখা আপনার "অসমাপিকা" গল্প সিরিজের কথা এখনো মনে আছে। এবার বাড়তি পাওনা গল্পের মধ্যে কবিতা। অসাধারণ সুন্দর শুরু। শুভ কামনা নিরন্তর।