![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এই প্রথম আমাকে ভারতের লোকসভা নির্বাচন নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত করেছে ।১৯৮৯ সালের লোকসভা নির্বাচন থেকে আমি মোটামুতিভাবে ভারতের নির্বাচন নিয়ে খবরাখবর রাখার চেষ্টা করেছি । তবে সেবারে আমি ভিপি সিংয়ের সমর্থক ছিলাম, এবারে যেমন নির্বাচনে অন্যতম শ্লোগান হচ্ছে ‘হর হর মোদি’ সেবারে শ্লোগান ছিলো ‘ গলি গলি মে শোর হে , রাজীব গান্ধী চোর হে’ যার ব্যাপক প্রভাবে কংগ্রেস পরাজিত হয়েছিলো। যাই হোক মুল আলোচনায় ফিরে আসি যে কারণের জন্যে আমি এবারকার ভারতের লোকসভা নির্বাচন খুব বেশি শংকিত তাঁর কারণ শুধু বিজেপির মতো একটি উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল ক্ষমতায় বসবে সেকারণে নয়, গণতন্ত্রের সুফল বা কুফল যাই বলি না কেনো স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার জনগণের আছে ,যদিও অনেক সময় এর ফলে হিটলারের মতো ফ্যাসিষ্ট শাষকের জন্মও হয়েছিলো, যার ফল ছিলো মানব ইতিহাসের ভয়াবহ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ,আজো তার ভয়াবহতা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসিকার মানুষকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। যদিও অতদুরে যাওয়ার দরকার নেই, বর্তমানে বাংলাদেশের মানুষইতো গণতন্ত্র নামক নব্যসংস্ক্রণের সুফল হাড়ে হাড়ে টের পেতে শুরু করেছে। এবারে আসি কেনো আমি ভারতের সদ্য অনুষ্ঠিত লোকসভা নির্বাচন নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত , তার কারণ হচ্ছে এবারের নির্বাচনে খুব পরিকল্পিতভাবে ভারতের বৃহত্তম কর্পোরেট গ্রুপগুলো রাজনীতির ময়দানে একজন ব্যাক্তিকে পণ্য হিসেবে তুলে ধরেছে।যা অত্যন্ত সফলভাবে ‘মোদি’র বিজয়ের মধ্যে দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে বলে বিভিন্ন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইতিমধ্যে ফলাফল ঘোষনায় দেখা গেছে বিজেপি তাদের রাজনৈতিক ইতিহাসের সর্বাধিক সফলতা লাভ করেছে। এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হয় কর্পোরেট গ্রুপগুলো সবসময়ই নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। সেই ১৯৪৭সালেও ‘বিড়লা’ টাটা’র মতো ব্যবসায়ীও দিয়েছিলো কিন্তু তা ছিলো দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে রাজনৈতিক দলকে সাহায্য করার জন্য , যার সাথে ব্যাবসায়িক স্বার্থ জড়িত ছিলো না, দেশপ্রেম বা আদর্শই ছিলো সেই সাহায্য প্রদানের ক্ষেত্রে প্রধান নিয়ামক। এমনকি অপ্রাসঙ্গিকভাবে একটি বিষয় আমি উল্লেখ না করার লোভ সামলাতে পারছি না , গান্ধীজী তাঁর জীবনের শেষ দিন গূলো ‘বিড়লা’র তৈরী একটি বাংলোয় অনেক অনুরোধের পরে আশ্রম বানিয়ে থাকতে রাজী হয়ে ছিলেন। সুতরাং ব্যবসায়ীদের সাথে রাজনীতিকদের সম্পর্ক যে নতুন তা নয় কিন্ত এবারের নির্বাচনে কর্পোরেট গ্রুপগুলো যে নগ্নভাবে ‘মোদি’ মডেল সারা ভারতের মানুষকে গিলতে বাধ্য করল, তার সাথে কোনো নীতি বা আদর্শের বিন্দুমাত্র সংযোগ নেই আছে শুধুই ব্যাবসায়িক স্বার্থ। এ পর্যন্ত বিভিন্ন পরিসংখ্যানে যে হিসাব পত্রিকা মারফত জানা যাচ্ছে , 'মোদি ব্রান্ড' তৈরি করতে প্রায় ১০ হাজার কোটি রুপি খরচ করেছে কর্পোরেট হাউসগুলো। ভারতের এবারকার লোকসভা নির্বাচনে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৩০হাজার কোটি রুপি যা এ যাবৎকালের মধ্যে ভারতের নির্বাচনী ইতিহাসে সর্বোচ্চ, শুধু তাই নয় সারা পৃথিবীতে এর চাইতে বেশী নির্বাচনী খরচ হয়েছে কেবলমাত্র গতবারের আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে যার পরিমান ছিল প্রায় ৪২ হাজার কোটি ডলার । কিন্তু আমার মুল দুশ্চিন্তার বিষয় এটা না, যে বিষয়টি আমাকে সবচেয়ে বেশি তাড়িত করেছে তা হলো এই প্রথম ভারতের মতো বৃহৎ জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত দেশের রাজনীতি সম্পুর্ণরূপে কর্পোরেট গ্রুপগুলো দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হলো।যার প্রভাব শুধু ভারত নয় বাংলাদেশের উপরেও এসে পড়বে ব লে আমার বিশ্বাস। এখানে আর একটি বিষয় পরিস্কার করা দরকার, ভারতের রাজনীতিবিদদের মধ্যে দর্শনচর্চা যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। নেহেরু থেকে শুরু করে মনমোহণ সিং পর্যন্ত সবাই শুধু রাজনীতিবিদই ছিলেন না, তারা একাধারে রাজনীতিবিদ ও বড়মাপের দার্শনিক ছিলেন ,এমনকি বিজেপি থেকে নির্বাচিত প্রথম প্রধাণন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী একজন বড় মাপের কবি, সাহিত্যিক ও দার্শনিক ছিলেন।
কিন্তু এই প্রথম ভারতের মতো বহুভাষা, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি পরিবেষ্টিত একটি দেশে প্রধাণমন্ত্রী হিসেবে যিনি দায়িত্ব নিচ্ছেন তিনি হচ্ছেন কর্পোরেট গ্রুপগুলোর প্রতিভু আপাদমস্তক একজন কাঠখোট্টা হিসেবে পরিচিত চরম হিন্দুত্ববাদী একজন অর্ধঃশিক্ষিত নেতা 'নরেন্দ্র মোদি'। যার একমাত্র গুণই হচ্ছে ,তিনি একজন ভালো ব্যাবস্থাপক, যা একটি কর্পোরেট হাউসে সবচেয়ে বেশি দরকার , কিন্তু একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করার জন্য শুধুমাত্র গুড গভর্নেন্স হলেই চলে না ,এখানে মানবতা অনেক বেশি জরুরী যার অভাব ভারতীয়রা সহ পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্রগুলো এখন হাড়ে হাড়ে টের পাবে ব লে ব্যক্তিগতভাবে আমার আশাংকা।তাছাড়া একটি রাজ্য পরিচালনা করা আর রাষ্ট্র পরিচালনা করা এক নয়, এখানে ইচ্ছে থাকলেও গুটি কতক কোম্পানির মালিকদের খুশী করে দেশ চালানো যায়না ,যার প্রমাণতো আমাদের হাতের কাছেই আছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের আন্তরিক ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধীতার জন্যে বহুল প্রত্যাশিত বাংলাদেশের সাথে তিস্তা পানি চুক্তি করতে না পারার ব্যর্থতা।
তবে ভারতের এবারের লোকসভা নির্বাচনে আর একটি বিষয়ের উপর আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে তা হচ্ছে , এই প্রথম ভারতে সেক্যুলার দলগুলো নির্বাচনে কোনো আবেদন সৃষ্টি করতে পারেনি ,যা শুধু ভারত নয় বাংলাদেশের রাজনীতির জন্যেও অত্যন্ত চিন্তার বিষয়, কারণ রাজনীতিতে ভারসাম্যহীনতা দলগুলোর ভিতরে রাজনীতির বাইরের শক্তির প্রভাব প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়,যাতে জনগণের অধিকার হরণের সম্ভাবনা চরমভাবে তরাণ্বিত হয়।তাই এবারের ভারতের লোকসভা নির্বাচনে মুলত বিজয়ী হয়েছে কর্পোরেট গ্রুপগুলো , কিন্তু বৃহত্তর পরিসরে পরাজয় ঘটেছে গণতন্ত্রের।এখন দেখা যাক কর্পোরেট হাউসের প্রসবকৃত রাজনীতির ‘ক্লোন বেবি’ নরেন্দ্র মোদি তার স্বীয় জন্মদাতাদের প্রত্যাশিত ব্যবসায়িক স্বার্থকে এড়িয়ে জনগণের স্বার্থ কতটা রক্ষা করতে পারেন।শুধু তাই নয় ‘নরেন্দ্র মোদি’ কে শুধু দেশেই নয় আঞ্চলিক প্রতিবেশি দেশগুলোর মধ্যেও তাঁর বিষয়ে যে ব্যাপক অনাস্থা বিরাজমান তাও দূর করতে হবে বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা আরো বেশি প্রযোজ্য।
©somewhere in net ltd.