নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ মাকসুদুর রহমান

মোঃ মাকসুদুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

সংস্কার ইস্যুঃ বিএনপি বনাম আওয়ামী লীগ

১২ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:১২









সাম্প্রতিক কালে বাংলাদেশের বড় দল গুলোর মধ্যে বিশেষ করে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে যে বিষয়টি ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি করেছে তা হচ্ছে সংস্কার ইস্যু।২০০৭ সালে সেনাসমর্থিত কেয়ারটেকার সরকার গঠনের পর রাজনৈতিক দল গুলোর অভ্যন্তরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনায় উঠে আসে।যার ধারাবাহিকতায় এদুটি রাজনৈতিক দলের কয়েকজন সিনিয়র নেতৃবৃন্দ দলের মধ্যে অধিকতর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অভিপ্রায়ে একগুচ্ছ রাজনৈতিক প্রস্তাব পেশ করেন , সেই প্রস্তাব সমুহই ‘সংস্কার প্রস্তাব’ হিসেবে বহুলভাবে দেশে ও বিদেশে ব্যাপক রাজনৈতিক বিতর্কের অবতারণা করে।সময়ের বিবেচনায় বিশেষ করে যখন দেশে একটি সেনাসমর্থিত অরাজনৈতিক সরকার বিদ্যমান ,ঠিক সেই মুহুর্তে এ ধরনের একটি মৌলিক রাজনৈতিক ইস্যু উত্থাপনকে রাজনৈতিক সুবিধাবাদিতা হিসেবে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই তখন চিহ্নিত করেছেন।ফলে শুরু থেকেই ‘সংস্কার ইস্যু’টি দলগুলোর ভিতরে এবং বাহিরে ব্যাপক মতদ্বৈততার সৃষ্টি করে।তাছাড়া খুব সঙ্গত কারনেই, দলগুলোর শীর্ষ নেতৃত্ব শুরু থেকেই সংস্কার প্রস্তাবকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখতে শুরু করেন।ফলশ্রুতিতে সময়ের বিবর্তনে সংস্কার প্রস্তাব দলগুলোর সাধারণ নেতাকর্মীদের সমর্থন পেতে সম্পুর্ণ রূপে ব্যর্থ হয় ।সেই পটভুমিতে সংস্কার প্রস্তাব সমর্থনকারী বিএনপি ও আওয়ামী লীগের অনেক নেতৃবৃন্দ ‘সংস্কারপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যাক্তিত্বে পরিণত হয়ে দলের মধ্যে কোনঠাসা হয়ে পড়েন।যা পরবর্তীতে দলগুলোর অভ্যন্তরে বড় ধরনের অনৈক্যে ও গভীর রাজনৈতিক ক্ষতের সৃষ্টি করে।মোটকথা সংস্কার ইস্যুটি এক পর্যায়ে দল দুটির কাছে ‘সুনামি’ আকারে আবির্ভুত হয়,যার ভয়াবহ প্রভাবে দল দুটির অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক ভিত্তিমূলকে তছনছ করে দেয়।

যদিও পরবর্তীতে দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমণের অভিজ্ঞতালব্দ রাজনৈতিক সংগঠন আওয়ামী লীগ তার দেশী-বিদেশী বন্ধুদের পরামর্শ গ্রহণ করে দ্রুততার সাথে এ সমস্যাটিকে রাজনৈতিক ভাবে সামাল দিতে সক্ষম হয়েছে।এ ধরনের একটি জটিল রাজনৈতিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে প্রভাবক হিসেবে যে বিষয়টি আওয়ামী লীগকে সহায়তা করেছে তা হচ্ছে ,শুরু থেকেই সংস্কার ইস্যুটিকে তাঁরা রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখার চেষ্টা করেছে।

আওয়ামী লীগ তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার আলোকে দ্রুততার সাথে অনুধাবণ করতে সক্ষম হয় রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান অবশ্যই রাজনীতির ব্যাকরণ অনুসরণ করেই করতে হবে।সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ শুরু থেকেই সংস্কার ইস্যুটির রাজনৈতিক সমাধান খোঁজার চেষ্টা করেছে এবং অত্যন্ত সফলতার সাথে জটিল এই রাজনৈতিক সমস্যা থেকে দলকে বের করে আনতে সক্ষম হয়েছে।এক্ষেত্রে আমরা যদি আওয়ামী লীগের সূদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাস বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব , সময়ের সাথে খাঁপ খাঁইয়ে নেয়ার যোগ্যতাই দল হিসেবে আওয়ামী লীগের শক্তির মূল উৎস। উদাহরন হিসেবে আমরা বলতে পারি যে আমু, তোফায়েল ও সুরঞ্জিত একসময় সংস্কার প্রস্তাব উত্থাপণ করে দলের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে অপাংক্তেয় হয়ে পড়েছিলেন কিন্তু তাদেরকে কখনওই আওয়ামী লীগ থেকে ছুড়ে ফেলে দেয়া হয়নি । বরং তাদেরকে দলীয় প্রধানের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য হিসেবে সাংগঠনিক কাঠামোর ভিতরে আটকে রাখা হয়েছিলো। আবার ঠিক সেই নেতৃবৃন্দের ঘাড়েই এখন দলের রাজনৈতিক ইতিহাসের সবচেয়ে সংকটময় সময়ে সরকার পরিচালনার ভার অর্পণ করা হয়েছে। যা এই মূহুর্তে আওয়ামী লীগের রাজনীতির অন্যতম বুদ্ধিদীপ্ত ও সময়োচিত রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন।

পক্ষান্তরে, বিএনপি সংস্কার ইস্যুতে দীর্ঘ সাত বছর অতিবাহিত হয়ে গেলেও, অদ্যবধি এর কোন রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে পারেনি বা এ ধরনের একটি জটিল রাজনৈতিক বিষয়কে এড়িয়ে যেতে সচেষ্ট থেকেছে। ফলশ্রুতিতে আজ পর্যন্ত ‘সংস্কার’ নামক ভূত বিএনপিকে রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে কুড়েকুড়ে খাচ্ছে।বরং দীর্ঘদিন যাবৎ সংস্কার ইস্যুতে বিএনপি পরিস্কার কোনো রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের না করার ফলে দিনে দিনে এর ক্ষতিকর প্রভাব দলের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে।

তাছাড়া সংস্কার ইস্যুতে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের দোদুল্যমানতার সুযোগে দলের ভিতরে ও বাহিরের কোনো কোনো মহল ব্যাক্তিগত ও সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার হিসেবে একে ব্যাবহার করার পায়তাঁরা চালিয়ে যাচ্ছে।আওয়ামী লীগের মতো একটি ক্ষুরধার রাজনৈতিক শক্তিকে মোকাবেলার জন্যে যেখানে সমন্বিত রাজনৈতিক পরিকল্পণা ও ঐকবদ্ধ সাংগঠনিক তৎপরতা অতীব জরূরী সেখানে মাঝে মধ্যেই বিএনপির জাতীয় পর্যায়ের কিছু নেতা নেত্রীর বক্তব্য ,বিবৃতি দেখে মনে হয় তারা এ ধরনের একটি জটিল রাজনৈতিক ইস্যুকে ব্যাবহার করে দলের অভ্যন্তরে তাদের প্রভাব বলয়ের শক্তি বৃদ্ধিতে সচেষ্ট রয়েছেন।

আর এ সুযোগে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ‘সংস্কার’ ইস্যুতে যাতে স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান না হয় তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা অব্যাহত রেখেছে। তাঁর অংশ হিসেবে মাঝে মাঝেই এই শক্তিটি তাদের ঘনিষ্ঠ মিডিয়ায় দলের ‘সংস্কারপন্থী’ হিসেবে চিহ্নিত নেতৃবৃন্দকে নিয়ে বিভিন্ন গুজবধর্মী খবর প্রচার ও সরকারী বিভিন্ন এজেন্সিকে ব্যাবহার করে নানামুখী তৎপরতার মাধ্যেমে বিএনপিকে এক ধরনের বিভ্রান্তির বেড়াজালে আবদ্ধ রাখতে সচেষ্ট রয়েছে।

দলের ভিতরের ও বাহিরের এই চক্রটির একমাত্র লক্ষ্যেই হচ্ছে বিএনপি যাতে কোনোভাবেই‘সংস্কার’ ইস্যুতে একটি স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানে উপণীত হতে না পারে। তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সংস্কার ইস্যুতে বিএনপি’র রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে না পাওয়ার দায় অনেকটা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের উপরেও বর্তায়। তাদের অভিমত হচ্ছে , রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান রাজনৈতিকভাবে খুঁজে বের না করে,কোনো ক্রমেই তা পাশ কাটিয়ে যাওয়ার অবকাশ নেই।উপরন্তু সেক্ষেত্রে সমস্যা আরো জটিল থেকে জটিলতর আকার ধারণ করতে পারে, যা বর্তমানে বিএনপি’র ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

সুতরাং বিএনপি’র প্রতি রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের পরামর্শ হচ্ছে , অতিসত্বর ‘সংস্কার ইস্যু’তে বিএনপি’কে একটি স্থায়ী সমাধাণ খুঁজে বের করতে হবে। যাতে করে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে এই মেসেজ পৌছে যায় যে দল হিসেবে বিএনপি এখন পুরোপুরি ঐক্যবদ্ধ, যা তৃণমূল নেতাকর্মীদের মানষিক শক্তি বৃদ্ধি করতে ব্যাপকভাবে সাহায্য করবে ।কারণ একটি রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীদের মনোবল সুসংহত থাকা দলের সামগ্রিক রাজনীতি সুষমভাবে অব্যাহত রাখার জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ।অন্যথায় বিএনপি’র প্রতিপক্ষ দেশি-বিদেশি রাজনৈতিক শক্তি তাদের ঘনিষ্ঠ ব্যাক্তবর্গ ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন এজেন্সীকে ব্যাবহার করে বিএনপি’র রাজনৈতিক শক্তিকে ক্ষয়িষ্ণূ থেকে ক্ষয়িষ্ণুতর করে ফেলবে। যা বাংলাদেশের রাজনীতিকে দীর্ঘমেয়াদে এক ভারসাম্যহীন সংকটময় অবস্থার দিকে নিশ্চিতভাবে ঠেলে দেবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জুন, ২০১৪ রাত ১০:০৭

দারুচিনির দ্বীপ বলেছেন: লেখকের সাথে আমি একমত।

১৯ শে জুন, ২০১৪ রাত ৩:৪৭

মোঃ মাকসুদুর রহমান বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ১৬ ই জুন, ২০১৪ রাত ১১:৪৪

কীর্তনখোলা তীরে বলেছেন: সংস্কার ইস্যুতে বিএনপি নেতৃত্বের একটা ফয়সালা করা দরকার ।এটা ঝুলিয়ে রাখা দলের বৃহত্তর ঐক্যের জন্য ক্ষতিকর।আর আওয়ামী লিগের সাথে ক্ষমতার যুদ্ধে লড়তে হলে দলকে এক ছাতার তলে আনার কোনো বিকল্প নেই।

১৯ শে জুন, ২০১৪ রাত ৩:৪৮

মোঃ মাকসুদুর রহমান বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ। আপনি ঠিক বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.