নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://web.facebook.com/mashiur.rahman.7771

মশিউর বেষ্ট

ভালোবাসার ফেরিওয়ালা ( মানব ধর্ম )

মশিউর বেষ্ট › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানব ধর্ম - অভিন্ন আমাদের মৌলিক বিষয়

২৫ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:০৬

দু’এক ক্ষেত্রে (বিকলাঙ্গ) ব্যতীত পৃথিবীর সকল মানুষ প্রকৃতিগত বা আচরণগত ভাবে এক নিয়মের অধীন। সবায় হাত দিয়ে খায়। পা দিয়ে চলে। মুখ দিয়ে কথা বলে। চোখ দিয়ে দ্যাখে। কান দিয়ে শোনে। নাক দিয়ে নি:শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণ প্রদান করে। এমন কি, একই ভাবে মায়ের গর্ভে যায় এবং জন্ম গ্রহণ করে। কালো কি সাদা, হিন্দু কি মুসলমান, বৌদ্ধ কি খ্রিষ্টান, কিম্বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা সবায় একই নিয়মের অধীন। তাহলে মানুষের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? মানুষ সবাই এক।

যদি এমনটি হতো মুসলমান হাত দিয়ে খায় আর হিন্দু পা দিয়ে খাচ্ছে। বৌদ্ধ কান দিয়ে কথা বলে আবার খ্রিষ্টান চোখ দিয়ে কথা বলে। মুসলমান নাক দিয়ে কথা বলে কিম্বা হিন্দু চোখ দিয়ে শোনে ইত্যাদি তাহলে সে ক্ষেত্রে না হয় মানুষ আলাদা আলাদা জাত ভাবতাম। অবশ্যই ভাবতাম। কিন্তু জগতের সকল মানুষ একই নিয়মের অধীন… ঈশ্বর বা আল্লাহ এক। অতএব মানুষের ধর্মটাও এক, মুক্তির পথও এক। মানব ধর্ম।

২.

যেহেতু পৃথিবীর সকল মানুষ এক ভাবে খায়। এক ভাবে কথা বলে (অঞ্চলভেদে আলাদা ভাষায় কিন্তু এক কায়দায়, মুখে দিয়ে)। এক ভাবে চলাফেরা করে। এক ভাবে অনুভূতি প্রকাশ করে, এক ভাবে হাসে বা কাঁদে। এক ভাবে সন্তান উৎপাদন করে। তাহলে মানুষের মৌলিক বৈশিষ্ট্যগুলির মধ্যে পার্থক্য কোথায়! সকল মানুষ এক নিয়মের অধীন। তাদের ধর্ম ও ধর্মীয় বিশ্বাস এক অভিন্ন। ভিন্নতা যেটুকু তা ধর্মীয় বাহ্যিক নিয়ম নীতিতে। তার কারণ সময়গত এবং আঞ্চলিকতার বা ভৌগলিকতার প্রভাব। একই ধর্মীয় সারমর্মের প্রকাশ ভিন্ন ভিন্ন সময়ে, ভিন্ন ভিন্ন ভৌগলিকস্থানে, তাই বাহ্যিক নিয়ম নীতিতে ভিন্নতা দেখতে পাওয়া যায়। নিশ্চয় সাগরতীরের বা পাহাড়ের জনপদের জীবন যাত্রা আর সমতলের জীবন যাত্রা এক নয় ।

পৃথিবীর সকল ধর্মগুলির উৎপত্তিস্থল একই জায়গাতে নয়। অধিকাংশ ভারতবর্ষের এবং আরব-বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে। নিশ্চয় ভারতবর্ষের জলবায়ু, ভৌগলিক পরিবেশ আর আরব-বিশ্বের জলবায়ু, ভৌগলিক পরিবেশ এক নয়। এই জলবায়ু ভৌগলিক পরিবেশের ভিন্নতার জন্য আমাদের পরিবেশ আচরণ সামাজিক রীতি নীতিতে পার্থক্য দেখা যায়। যেমন চারপাশের গাছপালা, পরিবেশ, খাবারে, কথায়, পোষাকে এবং চালচলনে। বরফ ঢাকা অঞ্চলের পোশাক আর মরু অঞ্চলের পোশাক এক হবেনা, জীবনযাত্রাও এক হবে না। তবে আমরা সবায় পোশাক পড়ি। আমরা সবায় খাই। কেউ খেজুর খায়, কেউ ভাত খায়, কেউ রুটি খায়, কেউ ব্রেড খায়। খায় সবায়। আমরা সবায়, ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী খাই পড়ি চলাফেরা করি এবং অনুকূল জীবনযাপনের চেষ্টা করি। এই সকল পোশাক খাওয়া পড়া চলাফেরার জীবনযাত্রার ভিন্নতা ধর্মের বাহ্যিক রীতিনীতির ক্ষেত্রে দারুণ প্রভাব ফেলে। আসলে ধর্ম একটায়। কে কি খায় বা কি পড়ে বা কি ভাষায় কথা বলে তা জরুরী নয়। আসল কথা চারপাশের সবকিছু মিলে কে কতখানি মানবিক গুন-সম্পূর্ণ মানুষ হতে পারল।

৩.

ধ্যানে শিব মহাদেব। একাত্মবাদের জনক নবী হযরত ইব্রাহিম (আ ) প্রায় নির্জনে একা চাঁদ তারা আকাশের পানে চেয়ে থাকতেন আর ভাবতেন সৃষ্টি রহস্য সম্পর্কে। নবী-রসূল মুসা (আ) তুর পাহারে ধ্যান করেছিলেন টানা ৪০ দিন ৪০ রাত মতান্তরে বেশি বা কম। নবী রসুল হযরত মুহাম্মদ (সা) ধ্যান করতেন হেরা পর্বতের গুহায়। কোন কোন সময় তার স্ত্রী বিবি খাদিজা (রা) তাকে খাবার দিয়ে আসতেন। এ বিষয়ে তিনি বলেন, স্রষ্টার সৃষ্টি নিয়ে এক প্রহর ধ্যান করা ৭০ বৎসরের এবাদত অপেক্ষা উত্তম…[আল হাদিস] (এবাদত হল , পূর্ণ বিশ্বাসের সাথে আল্লাহ ও রসূলের হুকুম ও আহকাম মান্য করা )

যিশুও ধ্যান করেছেন খোলা উপত্যকায় এলেবেলে ঘুরে ঘুরে। গৌতম বুদ্ধ ধ্যান করতেন….মহাবীর নানকও ধ্যান করতেন….স্বামী বিবেকানন্দও ধ্যান করতেন….এক কথায় সকল মহামানবই ধ্যান করতেন ,,,,,তবে কি তাহলে, আধ্যাত্নিক জ্ঞান ধ্যান মাধ্যমেই আসে !! হয়তোবা, হ্যাঁ।

সবায় যদি ধ্যান করে জ্ঞানী হয়, তাহলে সেই জ্ঞানের চর্চার এত প্রকার ভেদ কেন? না কি এ শুধু দল ভারী করা বা নিজেকে আলাদা হিসাবে উপস্থাপন করা ? হয়তোবা হ্যাঁ, হয়তো বা না। তবে ধ্যান একটি বিশেষ বিষয় প্রত্যেক ধর্মের জন্য।

৪.

পৃথিবীতে যারা আস্তিক, যারা আল্লাহ বা ঈশ্বরকে বিশ্বাস করে তাদের মূল বিষয় এক। তারা সবায় বিশ্বাস করে স্রষ্টা একজন। যিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। এই বিষয়ে সনাতন ধর্মের প্রথম ধর্মগ্রন্থ ‍ঋগ্বদে বলা আছে, ‘‘একং সদ্ বিপ্রা বহুধা বদন্তি’’ (তিনি এক সৎ নিত্য। বিপ্রাগণ বিভিন্ন নাম দিয়া থাকেন) –ঋক ১/১৬৪/৪৬। এবং “যো দেবানাং নামধা এক এব” ( যিনি বিধাতা যিনি বিশ্বভুবনের সকল স্থান অবগত আছেন, যিনি অনেক দেবগণের নাম ধারণ করেন কিন্তু তিনি এক ও অদ্বিতীয়। ভুবনের লোকে তাকে জানতে ইচ্ছা করে)–ঋক ১০/৮২/৩। শেষ ধর্মগ্রন্থ কোরআন এর কথাও কিন্তু এক। “বলুন, তিনিই আল্লাহ, একক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাকেও কেউ জন্ম দেননি। তার সমতুল্য কেউ নাই।”–সূরা ইখলাস

বিভিন্ন ধর্মের দিকে তাকালে এবং ধর্মগ্রন্থগুলির আলোকে দেখলে দেখি, ঈশ্বর বা আল্লাহ বা ভিন্ন অন্য যে নামেই তাকে ডাকিনা কেন, তিন সর্বশক্তিমান তিনি একজন। তাকে কেন্দ্র করেই বিভিন্ন জন (মহামানবরা) সময়ের প্রয়োজনে মূলকথা একই রেখে আনুষঙ্গিক কথা ভিন্ন ভিন্ন বলেছেন। যখনই মানুষরা সৎ কর্ম থেকে বিচ্যুত হয়েছে। তখনই নতুন আঙ্গিকে নতুন মোড়কে ঐ একই বিশ্বাসকে উপস্থাপন করেছে। মূলকথাগুলি কিন্তু একই। তুমি সৎ হও। তুমি সৎ থাক। উন্নত মানবিক গুন সম্পূর্ণ হও। নতুবা নরক বা দোযখ জ্বালা ভোগ করবে। আর উন্নত মানবিক গুন সম্পূর্ণ হলে স্বর্গ বা বেহেস্ত শান্তি লাভ করবে।

আমি যেই ধর্ম বিশ্বাসেই থাকিনা কেন, আমাকে সৎ হতে হবে, সৎ থাকতে হবে, উন্নত মানবিক গুন সম্পূর্ণ হতে হবে। কোন ধর্মে আছি বা কোন বিশ্বাস আঁকড়ে ধরে আছি তা বড় কথা না। মূল কথা সততা ধারণ করা। এই সততা ধারণ করার জন্যই বিভিন্ন কথার বেড়া দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। সময়ের বিবর্তনে ভিন্ন ভিন্ন বেড়া সৃষ্টিকরা হয়েছে। উদ্দেশ্য একটায়। আমরা যেন, সৎ থাকতে পারি। আর ঐ সকল মহামানবদের সৃষ্ট সম্প্রদায়ভুক্ত আমরা কেউ নবী-রসূল বা কেউ অবতার হিসাবে তাদের সন্মান করছি।

কোরআন বলেছে, “ নিশ্চয় যারা ঈমান এনেছে এবং যারা ইয়াহুদী, খ্রিষ্টান ও ছাবিঈন হয়েছে , তাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসে বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, তাদের জন্য পুরস্কার রয়েছে প্রতিপালকের কাছে। তারা ভীত হবেনা ও দুঃখিত হবেনা।”–সূরা বাকারাহ্ আয়াত ৬২ নং। অন্য আর এক সূরা, আল-মায়িদাহ্ আয়াত ৬৯ নং- এ বলা আছে, “ নিশ্চয় যারা ঈমানদার, যারা ঈহুদী, ছাবিয়ীন ও নাছারা; তাদের মধ্যে যারাই আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান রাখে এবং সৎকর্ম করে, তাদের কোন ভয় নাই এবং তাদের কোন দুঃখ্য নাই।” এছাড়া সন্যাসবাদ বা বৈরাগ্যবাদ সর্ম্পকে বলা আছে সূরা হাদীদে- “………..কিন্তু সন্যাসবাদ, এ তো তারা নিজেরাই আল্লাহর সুন্তুষ্টিলাভের জন্য সৃষ্টি করেছিল তাদের কে আমি এই বিধান দেইনি, অথচ এটিও তারা যথাযথ ভাবে পালন করেনি। তাদের মধ্যে যারা ইমানদার ছিল তাদের দিয়েছিলাম পুরস্কার। আর তাদের অধিকাংশ ছিল সত্যতাগী”

একজন মানুষ যেই সমাজেরই হউক যেই অঞ্চলেরই হউক যেই ধর্মেরই হউক, তিনি যদি পূর্ণ ধার্মিক হন তাহলে, তিনি প্রকৃত-গুণেই একজন হিন্দু একজন খ্রিষ্টান একজন বৌদ্ধ একজন শিখ একজন ঈহুদী একজন মুসলমান। এক কথায়, তিনি মানব ধর্মের লোক। একজন ধার্মিক উগ্র নয়। তার কথায় চালচলনে কাজে কর্মে উগ্রতার প্রকাশ পাবেনা। শালীনতার মধ্যে তার সবকিছু থাকবে। একজন ধার্মিক, ছেলে হউক বা মেয়ে হউক তার পোশাক পরিচ্ছদ চলনে বলনে অবশ্যই শালীন হবে। জয় হউক ধার্মিকের, জয় হউক মানব ধর্মের।

… মশিউর রহমান

(আমার নিজেস্ব মত। আমার নিজেস্ব বিশ্বাস। এই জন্য কেউ দায়ী নয়।)

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:৪৪

মহা সমন্বয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

২৬ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১:৫৭

মশিউর বেষ্ট বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে

২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৪১

মেহেদী রবিন বলেছেন: আমি একজন মুসল্মান। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে বিশ্বাস করি।
ইস্লামে বিশ্বাস করি।
আমার ছোট্ট জীবনে আমি অন্য কোন ধর্মের লোক কে তার ধর্মের জন্যে ছোট করে দেখিনি।
আমি শুধুমাত্র সেই জ্ঞানকে জ্ঞান বলে মানি না যেটা মানুষকে ঘৃণা করতে শিখায়।

লেখা সুন্দর। ভালোবাসার জয় হোক।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:৩৪

মশিউর বেষ্ট বলেছেন: জয় হোক ভালোবাসার। জয় হোক বিশ্ব বাংলার। শুভকামনা থাকল আপনার জন্য।

৩| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:০২

শ্রাবণধারা বলেছেন: ভাল লিখেছেন ।

ঃিহিন্দু সাধু বলতেন, যত মত, তত পথ । সমস্যা হয় তখন, যখন এই পথ-কে গন্তব্য বলে, একমাত্র সত্য বলে মনে করি । এই কুট বিশ্বাস থেকে সাম্প্রদায়িকতা, জংগীপনার সৃষ্টি । আশ্চর্য লাগে এই ভেবে যে মানুষ কি করে ভাবে যে কোনরকম সৎ কর্ম ছাড়া, সাধনা ছাড়া, শুধু মাত্র কতগুলো আজগুবি বিশ্বাস মানুষকে স্বর্গে পৌঁছে দেবে !!!!

১৬ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৫:৩১

মশিউর বেষ্ট বলেছেন: `` যত মত, তত পথ " এইটা শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন তার সখা অর্জুনের মাধ্যমে জগতকে। শুভকামনা এবং ভালোবাসা থাকল আপনার জন্য।

৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৫৭

শ্রাবণধারা বলেছেন: লেখক বলেছেন: `` যত মত, তত পথ " এইটা শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন তার সখা অর্জুনের মাধ্যমে জগতকে।

আসলে এটা রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কথা, যিনি স্বামী বিবেকানন্দের গুরু ছিলেন..। শুভকামনা ।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১:৩১

মশিউর বেষ্ট বলেছেন: শুভকামনা

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.