![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
~~~~~~~~~~~~~
নেদারল্যান্ডস এর সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর হল রটারডাম। কেবল নেদারল্যান্ডস নয় ইউরোপ মহাদেশের সবচেয়ে বড় সমুদ্র বন্দর এটি। রাজধানী আমস্টারডামের পর এটি সেদেশের সবচেয়ে বড় শহর, অনেকটা আমাদের দেশে ঢাকার পর চট্টগ্রাম যেমন। দক্ষিণ নেদারল্যান্ডস এ অবস্থিত এই বন্দরটি এক সময়ে পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যস্ত সমুদ্র বন্দর ছিল। তবে ২০০৪ সালের পর সে জায়গাটি দখল করে নেয় চীনের সাংহাই সমুদ্র বন্দর। রটারডাম পর্যটেন কেন্দ্র হিসেবে খুব একটা পরিচিত না হলেও এখানে দেখার মত কিন্তু অনেক কিছুই আছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো সমুদ্র বন্দর, রটারডাম জু এবং অবশ্যই ইউরোমাস্ট।
ইউরোপের ৫০ কোটি ভোক্তার কাছে পণ্য পৌঁছার অন্যতম সদর দরজা হলো রটারডাম সমুদ্র বন্দর। নেদারল্যান্ডসের নিউ মাস নদীর তীরে এই বন্দর অবস্থিত। এই নদী কিছুদুর গিয়েই নর্থ সি তে গিয়ে মিশেছে। দশ হাজার হেক্টরের বেশি এলাকা নিয়ে এই বিশাল সমুদ্র বন্দরটি অবস্থিত। প্রতিদিন শতশত ছোট বড় জাহাজ ভীড় করে এই সমুদ্র বন্দরটিতে। নেদারল্যান্ডস এর অর্থনীতির অন্যতম ভীত রটারডাম সমুদ্র বন্দর। ইতিমধ্যে বন্দরের পরিধি আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর এলাকায় জাহাজে করে নৌ ভ্রমনের জন্য রয়েছে বিভিন্ন প্যাকেজ। সারাদিন জাহাজে করে ভ্রমন ছাড়াও সেখানে লাঞ্চ করার ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া ছোট স্পিড বোটে করেও আপনি ঘুরে বেড়াতে পারবেন, পাঁচ মিনিটে আপনাকে বন্দরের একটি অংশ ঘুরিয়ে নিয়ে আসা হবে এবং এজন্য খরচ হবে মাত্র পাঁচ ইউরো। আমার কাছে অবশ্য ছোট স্পিড বোটে করে ঘুরতেই বেশি ভালো লেগেছে। এটা বেশি এক্সাইটিং মনে হয় বড় জাহাজে করে ঘুরে বেড়ানোর চেয়ে।
রটারডামে আগত পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ থাকে রটারডাম জু। প্রাণী বৈচিত্র দেখার অন্যতম জায়গা এটি। এখানে গেলে যেমন দেখতে পাবেন আফ্রিকার সাভানা এলাকায় চড়ে বেড়ানো সিংহ কিংবা জিরাফ আবার দেখতে পাবেন উত্তর মেরুর সাদা ভালুক, এ্যান্টার্কটিকার পেঙ্গুইন, সিল এর মত প্রাণী। যে প্রাণী যে এলাকা থেকে এসেছে সেখানকার পরিবেশ যথাসম্ভব সেরকম করে রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। রটারডাম জুর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হল ওশেনিয়াম। এতে রয়েছে সামুদ্রিক প্রাণীদের প্রদর্শণী। এটাকে বিশাল আকারের এ্যাকুরিয়াম বলা যেতে পারে। ভেবে দেখুন আপনি হেটে যাচ্ছেন আর আপনার চারপাশে পানির মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে হিংস্র হাঙ্গর, স্টিং মাছ সহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী। নীল এই এ্যাকুরিয়ামের মধ্যে দিয়ে যখন দর্শনার্থীরা হেটে যায় তখন তাদের ছবি তোলা যেন থামতে চায় না। ওশেনিয়াম দর্শন আমার কাছে এক দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা। চাইলে যে কেউ সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারবেন রটারডাম জু দেখে। তবে জুর টিকিটের দাম একটু বেশি, ১৮ ইউরো করে।
এরপর রয়েছে রটারডামের অন্যতম ঐতিহ্য ইউরোমাস্ট। ১৮৫ মিটার উঁচু এই টাওয়ারের চুড়ায় যখন উঠবেন তখন গোটা রটারডাম শহর এবং বন্দর চোখের সামনে চলে আসবে। ১৯৬০ সালে এই ইউরোমাস্ট টাওয়ার যখন তৈরী করা হয় তখন এর উচ্চতা ছিল ১০৪ মিটার। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা যায় শহরের অন্যান্য ভবনের উচ্চতাও এর সমান হয়ে যাচ্ছে। তখন ইউরোমাস্টের উচ্চতা আরো বাড়ানো হয়। টাওয়ারের চুড়ায় ওঠার জন্য রয়েছে স্পেস কেবিন। এটা উপরে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে ঘুরতেও থাকে। তাই স্পেস কেবিন থেকেই আপনি চতুর্দিক দেখতে পারবেন। রটারডামে আগত কোন পর্যটকই এই অভিজ্ঞতা না নিয়ে ফেরত যায় না। ইউরোমাস্টের সঙ্গেই রয়েছে সুন্দর একটি পার্ক।
এই শহরের আরেকটি উল্লেখযোগ্য জায়গা হল এরাসমুস ইউনিভার্সিটি। বিশ্বের সেরা ইউনিভার্সিটির একটি হল এই এরাসমুস ইউনিভার্সিটি। বিশেষ করে এখানকার স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট হল বিশ্বসেরা। এছাড়া এরাসমুস ইউনিভার্সিটি নিজ উদ্যোগে তাদের ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ দিয়ে থাকে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়াটাও বেশ কৃতিত্বের ব্যাপার।
ইউরোপের যে কয়টি দেশে এখন পর্যন্ত ঘুরতে গিয়েছি তার মধ্যে নেদারল্যান্ডসকে ভিন্ন মনে হয়েছে। কারণ এখানে সবাই ইংরেজি বলতে পারে। নেদারল্যান্ডস সহ স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এলাকার দেশগুলোর শিক্ষা ব্যবস্থার প্রায় পুরোটাই ইংরেজি মাধ্যম। তাই এসব দেশগুলোতে ঘুরতে গেলে ভাষার সমস্যাটা হয় না। এদেশের ছোট একটি দোকানের সেলসম্যানের ইংরেজি বলা শুনলেও অবাক হতে হয়।
©somewhere in net ltd.