![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোন বড় কলেবরের বই পড়লে ঐ বইয়ের চরিত্রগুলোর উপর বাস্তবে এক মায়া জন্মে যায়, যেহেতু অনেকদিন ধরে পড়া হয়। রিভার গড বড় বই। সময় স্বল্পতার কারণে অল্প অল্প করে অনেকদিন ব্যাপী পড়ে বইটা শেষ করলাম।
দীর্ঘ সময় নিয়ে পড়ার কারনে এই বইয়ের চরিত্রগুলো ও ঘটনার বর্ণনায় একাত্ম হয়েছি। নিবিড় মনোযোগ দিয়ে পড়েছি।
বইটা লেখা মোটামুটি ১৫০০ থেকে ২০০০ খৃষ্টপূর্বাব্দের মিশরের প্রেক্ষাপটে। গল্পটা বলা হয়েছে টাইটা নামক বিচক্ষণ এক দাসের বয়ানে। টাইটা একইসাথে চিকিৎসক, প্রকৌশলি, কবি, চিত্রকর, যোদ্ধা ইত্যাদি। তাকে তার প্রথম মনিব ইনটেফ খোঁজা (eunuch) করে দিয়েছিলো।
বইটা একইসাথে ফারাও মামোসের কাহিনী যেমন বর্ণিত হয়েছে, তেমনি ইনটেফের কন্যা রানী লসট্রিসের প্রেমের কাহিনীও আছে।
সেনাপতি ট্যানাসের সাথে রানী লসট্রিসের যে প্রেমের কাহিনী বর্ণিত হয়েছে তা এই উপন্যাসের অন্যতম এক আকর্ষণীয় দিক। এবং এই প্রেমের বড় অনুঘটক ও সাহায্যকারী হিসেবে ছিলো টাইটা।
ফারাও মামোস লসট্রিসকে বিয়ে করার কয়েকবছর পরই এশিয়া থেকে হিকসস বাহিনী গিয়ে মিশর আক্রমণ করে। এই যুদ্ধে ফারাও মামোস মারা যায়।
এই উপন্যাস যদিও ইতিহাস নির্ভর পিওর ফিকশনাল উপন্যাস, তথাপি মিসরে হিকসস বাহিনীর আক্রমণ সত্য। হিকসস বাহিনী যখন মিশর আক্রমণ করে তখন মিশরের মানুষ ঘোড়া এবং ঘোড়ার গাড়ি ও চাকা দেখে নাই। হিকসসরা ঘোড়া ও ঘোড়ার গাড়ি তথা রথ সহযোগে আক্রমণ করেছিল। মিশর সেনাবাহিনীকে তারা পরাস্ত করতে পেরেছিল ঘোড়া ও রথ থাকার কারনে।
মিশর তখন বিভিন্ন সেক্টরে উন্নতি করলেও চাকা আবিষ্কার করতে পারেনি।
হিকসস রাজা স্যালিতিস যখন মিশর আক্রমণ করে তখন মিশরের মানুষ ঘোড়া দেখে মনে করেছিল এটা শয়তান বা অপদেবতা। আর চাকাসহ ঘোড়ার রথ দেখে তারা যারপর নাই বিস্মিত হয়েছিলো।
হিকসসরা মিশরে ঘোড়া আর চাকা নিয়ে আসলো। তারা মিশর দখল করে নিলো। তখনকার বড় নগরি তথা রাজধানী ছিলো থিবেস। তারা থিবেস দখল করে। পরবর্তীতে হিকসসরা রাজধানী যদিও অন্য জায়গায় শিফট করেছিলো।
প্রায় ১২০ বছর হিকসসরা মিশর শাসন করে। তারপর আবার আরেক ফারাও তাদের মিশর থেকে বিতাড়িত করে।
যাইহোক, হিকসসরা মিশর দখল করলেও তারা যে ঘোড়া আর রথ এনেছিলো তা মিশরে থেকে যায়। এগুলো মিশর সেনাবাহিনীতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে।
.
বইয়ের কাহিনীতে হিকসসরা ফারাও মামোসকে মেরে ফেলার পর তারা এক পর্যায়ে থিবেসের দখল নিয়ে নেয়। তখন রানী লসট্রিস, তার প্রেমিক সেনাপ্রধান ট্যানাস, তার দাস টাইটা, মিশরের সেনাবাহিনী ও হাজার হাজার মানুষ নীলনদ ধরে পানিপথে আফ্রিকার দিকে চলে আসে।
আফ্রিকার উপকূলে তারা মোটামুটি ২০ বছর থাকে। সেখানে শিলুক গোত্রের বশ্যতা তারা অর্জন করে। সেখানে ইথিওপিয়ার লোকজনের সাথে তাদের দেখা হয়।
ইথিওপিয়ার এক রাজার সাথে যুদ্ধে ট্যানাস মারা যায়। ট্যানাস যখন মারা যায় তখন পাঠক মনে ব্যাপক নাড়া দেওয়ার কথা।
ট্যানাসের যে বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার তা শেষ হয় সুদূর আফ্রিকায়। টাইটা ও রানী লসট্রিস মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে।
রানী লসট্রিস দীর্ঘ ২০ বছর আফ্রিকায় থাকার পর আবার মিশর দখলের জন্য উত্তরে রওনা দেয়। দীর্ঘ যাত্রা শেষে মিশরের গজ দ্বীপ আর থিবেস আবার তারা পুনর্দখল করে।
থিবেসে পৌছে রানী লসট্রিসও মারা যায়।
এমন এক কাহিনীকে দাস টাইটার বর্ণনায় লেখক উইলবার স্মিথ যে অপার সুন্দর ভঙ্গিমায় বর্ণনা করেছেন তা পাঠককে মোহিত করে।
দীর্ঘ কলেবরের উপন্যাস যখন শেষ হয় তখন মনে হয় আমি তো রানীর সাথেই ছিলাম। টাইটাকে মনে হয় অতি পরিচিত একজন।
উপন্যাসে তখনকার মিশরের যে ছবি তা ভালভাবে পাঠকমনে চিত্রায়িত হয়। তখনকার দাসপ্রথা, যুদ্ধ, ফারাওদের সমাধি তৈরির আয়োজন, মরুতে দস্যুদের রাজত্ব, ধর্ম ও মন্দিরের প্রভাব ইত্যাদি বিষয় ভালোভাবেই এসেছে।
।
মূল লেখা সাবস্ট্যাকে।
©somewhere in net ltd.