নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এক সময় খুব বেশি কথার সাগরে ডুবে থাকতে ইচ্ছে করতো। নিজেও খুব ক্যাঁটক্যাঁট করতাম। কিন্তু আজ এমন একটা সময়ে এসে পৌঁছেছি যে সময়টাতে মানুষের ক্যাঁটক্যাঁট শুনতে বিরক্ত লাগে।

এম হাসান মেহেদী

আমি মানুষ

এম হাসান মেহেদী › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রাচীর

১৮ ই জুন, ২০১৫ সকাল ১০:১১


"মানুষ এতটা নির্দয় হতে পারে?"সময়ের সাথে সাথে মানুষের মনও পরিবর্তন হতে পারে?"-মনে মনে শুধু এইধরনের হৃদয়কাঁড়া কথা জপে যাচ্ছে মন্তু।পুরানো শহরের পরিচিত এক টঙ-এ বসে। জুঁই এর সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো ভাবাচ্ছে তাকে।এক হাতে চায়ের কাপ।অন্য হাতে সিগারেট।চায়ের কাপে চুমুক দেয়ার ফাঁকে ফাঁকে সিগারেট টেনে ধুসর রঙের ধোঁয়া নিঃসরণ করছে।মন্তু সিগারেট টানতে খুব একটা অভ্যস্ত নয়।ইদানিং দুই একটা কিনে খায়।হয়তো ভাবছে সিগারেটের ধোঁয়ার সাথে সাথে মনের ভিতরের কষ্টটাও বেরিয়ে যাবে।
প্রায় চার বছরের সম্পর্ক ছিল জুঁই আর মন্তুর।সপ্তাহখানেক আগে সব কিছু যেন একনিমিষেই ফুঁড়িয়ে গেল।জুঁই রাতবিরাতে ফেবুতে ছেলেদের সাথে চ্যাট করে,সেটা মন্তু সহ্য করতে পারতো না।জুঁই ভাবতো মন্তু তাকে সন্দেহ করছে।হঠাৎ একদিন জুঁই সন্দেহের বাহানা দিয়ে মন্তুকে ছেড়ে দেয়ার কথা জানিয়ে দেয়।মন্তু জুঁইয়ের এই আজগুবি সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছিল না।জুঁইকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়।কিন্তু জুঁই এর মুখে একটাই কথা,"আমি তোমাকে ভালোবাসি না।"
মন্তু তাকে কোনভাবেই বুঝাতে সক্ষম হচ্ছিল না।জুঁইকে সে খুব ভালোবাসে।তাকে হারানোর ভয় কাজ করতো তার মনে।আর তাই ফেবুতে অন্য ছেলেদের সাথে কথা বলাটা মেনে নিতে পারে নি।
কাপের চা ফুঁড়িয়ে গেছে।সিগারেটও শেষ।আরেকটা সিগারেটে আগুন দিয়ে ফুটপাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো।গায়ে লাল রঙের টি-শার্ট।লাল জুঁইয়ের পছন্দের রঙ,মন্তুর নয়।জুঁইকে খুশি রাখতেই সবসময় লাল রঙে ঘিরে থাকতো সে।জুঁইকেও লাল জামাকাপড় উপহার দিতো।বেশ কিছুদিন জুঁইয়ের মিষ্টি মুখ দেখে না মন্তু।হাঁটতে হাঁটতে ভালোবাসার দিনগুলোর কথা ভাবছে।প্রতিদিন পড়ন্ত বিকেলে পার্কে বসে মন্তু তার নিজের লেখা কবিতা জুঁইকে শোনাত।জুঁইও খুব আগ্রহ নিয়ে শুনতে চাইত।জুই এর একটা পছন্দের কবিতাও ছিল।জুঁই সর্বক্ষণ এই কবিতাটাই শুনতে চাইত।
-ইচ্ছে করে-
তোর চুলের ঐ খোপার ভিতর
ঘাপটি মেরে বসে থাকি
বসে বসে আপন মনে
গান গাই আর কাব্য লিখি।

ইচ্ছে করে-
তোর কাজল-কালো চোখে
হঠাৎ করেই লেপ্টে থাকি
তোর ওড়নার আচলে
কপাল বেয়ে ঝরতে থাকা
বিষাদ-মাখা ঘামটি মুছি।

ইচ্ছে করে-
তোর থেকে আজ রাত্রি- মাখা
ছোট্ট একটি ভুবন খুঁজি
সেই রাত্রিতে জ্যোৎস্না ঢেলে
কঠিন মিলনে হারাতে রাজি!

ইচ্ছে করে-
তোর কাছে আজ পাবো একটু প্রশ্রয়
দুষ্টুমিতে করবো আজ
তোর ভুবন-জয়।

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে আপনাতেই পানি নিঃসরণ হচ্ছে।

জুঁইকে ইদানিং খুবই হাসিখুশি দেখায়।ফেবুতে অনিক নামক অন্য একটা ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ায় সে।মন্তুর সাথে সম্পর্ক বিচ্ছেদের এটাই হয়তো আসল কারণ।মন্তু এসবের কিছুই জানে না।

‪#‎দুই_বছর_পর‬

অগোছালো জটপাকানো চুল উড়িয়ে ফুটপাতের রাস্তা ধরে পাগলীবেশে কিছু একটা খুঁজে বেড়াচ্ছে ২৫-২৬ বছর বয়সী জুঁই।চোখে মুখে না পাওয়ার অশ্রু।অনিকের সাথে সম্পর্কে জড়ানোর প্রায় এক বছরের মাথায় ঘটল সবচেয়ে মর্মান্তিক ঘটনা। সুখের বার্তা নিয়ে আসবে বলে কথা দেয়া অনিক তার ইচ্ছা হাসিল করে জুঁইকে চিরকালের জন্য অন্ধকারে ঠেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। কোন উপায় না পেয়ে বেশ কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালায় সে।কিন্তু মৃত্যুও তার কাছে ঘেঁষতে রাজি নয়।এখন শুধু পাগলের মত মন্তুকে খুঁজে বেড়ায়।মানসিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।চিকিৎসার জন্য মানসিক হাসপাতালে পাঠানো হল।সেখানেই কোন এক পড়ন্ত বিকেলে একটা প্রাচীরে হেলান দিয়ে বসে পড়ে।প্রাচীরের যে পাশে জুঁই বসে,তার ঠিক উল্টোপাশ থেকে খুবই পরিচিত কন্ঠ থেকে কবিতার চরণ ভেসে আসছে।

-আমি বদলে গেছি-
হৃদয়টা আগের মতো নেই
হারিয়েছি হৃদয়ের মায়ামমতা
ভুলে গেছি ভালবাসতে।

সত্যিই বদলে গেছি-
সব হাসিখুশি কবর দিয়ে কষ্টকেও দিয়েছি চিরবিদায়।
কারো উজ্জ্বল মুখ আর এই মুখে হাসি ফুটায় না
কারো কষ্ট আর পুড়ায় না জ্বলন্ত বিষাদের আগুনে।

যতটা পেরেছি বদলেছি-
লোচনে একরত্তি সলিল জমা নেই
খোয়া গিয়েছে জমে থাকা সমস্ত আবেগ
হারিয়েছি গাত্রের জমানো শক্তি।

বড়ই অদ্ভুত সেই বদলে যাওয়া-
না হাসি,না কান্না।
আঁকড়েছে উভয়ের আভ্যন্তরিক পর্যায়
কেড়েছে মেদিনীর সুখ দুঃখের স্পর্শ।

বদলানোটা এমন হবে ভাবিনি-
ভাবিনি কখনো ধূলিসাৎ হবে দরজায় কড়া নাড়া স্বপ্ন
বুঝিনি হারাবো কিছু পাওয়া না পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা।
মস্তকে শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছিল-
আমি বদলে যাবো।

তাই আজ সত্যিই বদলেছি-
বিসর্জন দিয়েছি সমস্ত কষ্ট আর শান্তি।

কন্ঠসরটা কার তা বুঝতে দেরি হল না।আকাশ মাটি কাঁপিয়ে চিৎকার করে মন্তুকে ডেকে বলতে ইচ্ছে করছে-"মন্তু আমি জুই।তোমার জুই।"কিন্তু এক মুহূর্তেই যেন নিস্তব্ধ হয়ে গেল সে।মন্তুর সামনে নিজের কলঙ্কিত মুখ সে দেখাবে না।

এভাবে প্রতিদিন পড়ন্ত বিকেলে প্রাচীরের একপাশ থেকে মন্তু কবিতা আবৃতি করে এবং জুঁই প্রতিনিয়তই সেই কবিতা শোনে।জুঁইয়ের চোখের অশ্রু প্রাচীরের নিচের মাটি ভিজিয়ে দেয়।মন্তুও আবৃতি করার ফাঁকে ফাঁকে প্রতিনিয়তই জুঁই জুঁই বলে চিৎকার করে।
মন্তুর হয়তো কখনো জানা হবে না,যার জন্য তার কবিতা লিখা,সেই জুঁই-ই আড়াল থেকে তার কবিতা শুনছে।এভাবেই হয়তো ভালোবাসার সেই দুটি প্রাণ বাকি জীবনটা প্রাচীরের দুই পাশে অশ্রু বিসর্জন দিয়ে কাটিয়ে দিবে!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.