নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মস্তিস্কের তাড়নায় ভাসানির ভাবনায়

এম এস আই জুেয়ল

সরল গল্প

এম এস আই জুেয়ল › বিস্তারিত পোস্টঃ

অখন্ড ভারত : বাংলা ও বাংলাদেশের অবদান(এক থেকে দশম পর্ব একত্রে)

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১১:২৬

।।এক।।

বর্তমান বিশ্বে ভৌগোলিক আয়তনের দিক থেকে যে কয়েকটি বড় দেশ আছে তার মধ্যে ভারত সপ্তম বৃহত্তম রাষ্ট্র । আর জনসংখ্যার বিচারে বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বাধিক জনবহুল দেশ । পৃথিবীর আর দশটি বৃহৎ দেশের মত ভারতেরও রয়েছে বর্ণিল ইতিহাস । ইউরোপীয় বণিকদের আগমন সে ইতিহাসের স্বাভাবিক গতির মোড়টা ঘুরিয়ে দেয়। ভারতবর্ষে যখন ইউরোপীয় বণিকদের আগমন ঘটে তখন পুরো ভারত খন্ডে খন্ডে বিভক্ত ছিল । এ বিভক্তি পর্তুগিজ, ওলন্দাজ(ডাচ বা নেদারল্যান্ডের অধিবাসী),দিনেমার (ডেনমার্কের অধিবাসী),ইংরেজ ও ফরাসি বণিকদের আগমনকে আরও সহ্জতর করে । বিশেষত ইংরেজরা সে বিভক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করে । ১৮৫৬ সালের মধ্যেই ভারতের অধিকাংশ অঞ্চল ইংরেজদের দ্বারা ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হস্তগত হয় ।



বৃটিশ ভারতের মানচিত্র[সূত্র-উইকিপিডিয়া]

আঞ্চলিকতা ফেলে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যগুলি আস্তে আস্তে ইংরেজদের শাসন ও হুকুমজারি মেনে নিতে বাধ্য হয় । তবুও কাশ্মির, বেলুচিস্তান, হায়দ্রবাদসহ বহু বৃহৎ ও ক্ষুদ্র রাষ্ট্র নিজেদেরকে স্বাধীন রেখেই ব্রিটিশের অধীনতা মেনে নেয় । ব্যবসায়ীমনা ইংরেজরাও অখন্ডতা নিয়ে অতটা মাতামাতি করেনি। তবে ১৮৭৬ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় বৃটিশ অধিকৃত সমগ্র অন্চলটিকেই সরকারীভাবে ভারতীয় সাম্রাজ্য নামে অভিহিত করা হয়। মূলত তখন থেকেই অখন্ড ভারত চিন্তাটি স্বার্থকরুপে পরিগ্রহ করতে থাকে। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ বিশ্বব্যাপি অনেকগুলি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। আর তখনকার ভারতীয় জাতীয় নেতৃত্ব ও ভারতবাসীর দেশপ্রেমের স্বার্থক প্রয়াস আজকের অখন্ড ভারত। চিন্তাটি ১৯৪৭ সালে একটি অবশ্যম্ভাবী পরিণতির কাছে ধাক্কা খায়।



।।দুই।।

আগেই বলেছি ১৯৪৭ সালটি ভারতীয়দের কাছে একটি অবশ্যম্ভাবী পরিণতির বছর। ইতিহাসবিদরা অনেক কারণ দেখাবেন। এতবড় ঘটনার কারণ থাকবে না তাও নয়। ১৯৪৭ সালের ১৫ই জুলাই ব্রিটিশ পার্লামেন্ট “ইন্ডিয়ান ইন্ডিপেন্ডেস এ্যাক্ট-১৯৪৭ পাশ করে। এ আইন অনুসরণ করেই ভারতবর্ষ থেকে ব্রিটিশ রাজ বিলুপ্ত হয়। ভারতবর্ষ ব্রিটিশমুক্ত করতে এতদিন হিন্দু মুসলিম কঁাধে কঁাধ মিলিয়ে সংগ্রাম করেছে। কিন্তু শেষবেলায় বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহ ও ইংরেজদের রহস্যপূর্ণ আচরণ এবং হিন্দু-মুসলমান সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে ভারতবর্ষে হিন্দু সরকার ও মুসলমানদের সেই সরকারের অধীনতার আশঙ্কা জেগে ওঠে।তাই ব্রিটিশ রাজের বিরোধিতার পাশাপাশি মুসলমানদের মধ্যে হিন্দু শাসকদের প্রতি এতদিনের অবিশ্বাস আরও বদ্ধমূল ধারণা পায়। আর কূটকৌশলে পারদর্শী ইংরেজদের উপস্থিতি সেই ধারণাকে এই অবশ্যম্ভাবী পরিণতির মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটায়।





।।তিন।।

পানির স্বাভাবিক ধর্ম নীচের দিকে ধাবিত হওয়া। তার আগে পানির উপস্থিতিটা্ দরকার। নইলে সমালোচকেরা গড়ানোর রাস্তার ব্যাপকতা দেখে প্রশ্ন তুলবে।পানির মত ধর্মও সত্যকে আঁকড়ে ধরে থাকে।পৃথিবীর প্রতিটা বৃহৎ ধর্মের প্রচারককে এর উৎস বলে ধরা হয়। সবাই পরম করুণাময়ের আদিষ্ট হয়ে সত্যকে,শান্তির বাণীকে মানুষের দোর গোড়ায় পৌছে দিয়েছে। তারা আমাদের মতই রক্ত মাংসের মানুষ।এসেছে, আবার মানব জীবনের স্বাভাবিক গতির স্বাক্ষী হয়ে চলেও গেছে। ইথার তরঙ্গে রয়েছে কেবল শান্তির বাণী, সত্যের বাণী ধর্ম। অতএব তাকে জাদু বলারও কোন অবকাশ নেই। বিধাতা আসন থেকে নয়, কোন এক পিতার ঔরসে,কোন এক মাতার গর্ভে দূত পাঠিয়ে মানুষকে হাতে কলমে শিক্ষা দিয়েছে সত্য কাকে বলে,শান্তি কিভাবে আসে। রাজার ঘরে যে শিশুটি জন্ম নিল তার রক্ত লাল, আর কুঁড়ে ঘরে জন্ম নেওয়া শিশুর রক্ত সাদা কিনা তা পরীক্ষা করে দেখতেই হবে ? ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশে সেই লাল সাদার হলি খেলা হয়েছে । আর তামাম বিশ্ব চেয়ে চেয়ে দেখেছে র্নিবুদ্ধি, অথর্বর মত। জিন্নাহ পাকিস্থান চেয়েছিল, পেয়েছে এবং আজও আছে। গান্ধীজি অবশিষ্ট অংশের অখন্ডতা চেয়েছিল তাও হয়েছে। কিন্তু সেই অখন্ডতার মূর্ত প্রতীক একটি জাতি। অতন্দ্র প্রহরী একটি ছোট্র দেশ, একটি জনবহুল জনপদ। ইতিহাসের এ এক কঠিন শিক্ষা, নির্মম পরিণতি।



।।চার ।।

ভারতীয় উপমহাদেশে যেমনি আছে ভাষার প্রাচুর্য, তেমনি আছে ধর্মের আধিক্য। তবুও অন্যসব ধর্মকে প্রধান দুটি ধর্মের লীলাকীর্তন দেখতে হয়েছে অত্যন্ত অসহায়ভাবে। দরকষাকষি হয় হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে আর খেসারত দিতে হয় বিপুল পরিমাণ শিখের বাস্তুচ্যুত হয়ে। নানাবিধ গোলযোগে বিপুল পরিমাণ জনসংখ্যার বসতভিটা ছেড়ে সাময়িক অন্য দেশে বা অন্য ভুমিতে শরণার্থী হয়ে থাকার নজির পৃথিবীতে বহু আছে। কিন্তু নেহায়েত ধর্মের কারণে নিজের গড়া আপন ঘর, জন্মস্থান বাপদাদার বসতি ছেড়ে চিরদিনের জন্য অজানা অচেনা গন্তব্যে প্রস্থান ! তাও হয়েছে এই উপমহাদেশে।

ভারত যখন ভাগ হয় তখন হিন্দু-মুসলমানের আনুপাতিক হার কত ছিল? এখন কি সে হার নেহায়েতই কম ? কাশ্মিরের কথা বাদই দিলাম। অপরাপর প্রদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মুসলমান কম নয়। তবে কি মুসলমানেরা আবার আলাদা বসতি দাবি করবে ? ভারত কি আবার ভাগ হবে ? যদি পরিবর্তনটা মেনে নেয়ার মন মানুষিকতা থাকে তো তা আর দরকার হবে না। সেই পরিবর্তনটা তাহলে কি ? তা হলো সত্যকে মানা, সঠিককে জানা। কারও দারিদ্রতার সুযোগ নিয়ে চাকরি দিয়ে, উন্নত জীবনের লোভ দেখিয়ে ধর্মান্তরিত করাকে পরিবর্তন বলছি না। বলছি সেটাকে যেটা আপন বিবেকে গ্রহণ করা। কারও বিবেক যদি হিন্দু ধর্মকে চায় তো সে সেই ধর্ম মেনে চলবে। আবার কেউ যদি ইসলাম ধর্ম মেনে মুসলমান হতে চায় তো সেটাই করবে। অবশ্যই আমি ধর্ম মানার কথা বলছি। নিয়ম মানার কথা বলছি না। সত্যকে কখনও নিয়মের মধ্যে বেঁধে রাখা যায় না। নিয়ম পুঁথিগত, সত্য সার্বজনিন। সত্যের আবহে যে কেউ যেভাবে খুশি নিজেকে গড়ে তুলবে।

বলা হয় পাকিস্থান জঙ্গিবাদের উর্বর ভূমি। পাশেই আফগানিস্থান। যারা রাশিয়ার আগ্রাসন ফিরিয়েছে। এখন আবার আমেরিকা, সাথে ইউরোপীয় শক্তি ন্যাটো। তবুও পর্যদস্তু অবস্থা। চীনাদের সাথেও ভারতের সখ্যতার নজির ভাল নয়। সকল উপকরণ পরিপার্শ্বে নিয়েও সেই ১৯৪৭ সাল থেকে আন্দোলন করে আজও মুক্ত হতে পারেনি কাশ্মির। অথচ এরই মাঝে দুইবার পুনঃজন্ম হয়েছে বাংলাদেশের। পৃথিবীর বহু রাষ্ট্র কাশ্মিরের সাথে অথবা পরে আন্দোলন করে আজ তারা স্বাধীন। ইতিহাসকে গড়ে নিয়েছে নিজের করে। কাশ্মিরে যতটা দাবানল তার চেয়ে বেশি দহন উত্তর পূর্ব ভারতে।



বাংলা ও বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারত অত্যন্ত যত্নের সাথে সেই ক্ষতটাকে ঢেকে রেখেছে যুগ যুগ ধরে। এত যন্ত্রণা, চর্তুমূখী হিসাব নিয়ে পৃথিবীর এই কোণে টিকে আছে বাংলা ভাষাভাষি একটি জনপদ। আছে ক্ষুদ্র একটি রাষ্ট্র, বাংলাদেশ। অখন্ড ভারতের বিশ্বস্থ প্রহরী হয়ে।



।। পাঁচ ।।

লিখব বাংলা ও বাংলাদেশের কথা কিন্তু লেখায় প্রাসঙ্গিকভাবেই হিন্দু-মুসলমান প্রসঙ্গ এসে যাচ্ছে। আরব মুসলমানদের পূর্বপুরুষ ঘাটলে যেমনি ইহুদী-খ্রিষ্টান-পৌত্তলিক চলে আসে। ভারতীয় মুসলমানদের নাক টিপলে তেমনি হিন্দুর গন্ধ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের তিনদিকে ভারতের নয় নয়টি প্রদেশঃ পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, সিকিম, মেঘালয়, অরুণাচলপ্রদেশ, ত্রিপুরা, মিজোরাম, মণিপুর ও নাগাল্যান্ড। এরমধ্যে বাকী আটটি প্রদেশই বৃহৎ ভারতের মূল ভূ-খন্ডের সাথে স্থল যোগাযোগের জন্য পশ্চিমবঙ্গের সংকীর্ণ শিলিগুড়ি করিডোরের উপর নির্ভরশীল। করিডোরটির একপাশে বাংলাদেশ, অন্যপাশে নেপাল। দু’টোই স্বাধীন সার্বভৌম দেশ। ভূখণ্ডটির সবচেয়ে সরু অংশের প্রশস্থতা ২১ কিলোমিটার।অথাৎ এখানে বাংলাদেশ থেকে নেপালের দূরত্ব মাত্র ২১ কিলোমিটার। প্রস্থতা মূখ্য বিষয় নয়, মূখ্য দূরত্বের বিড়ম্বনা। বাংলাদেশের টেকনাফ-তেঁতুলিয়ার মানুষের কাছে ঢাকার চিত্র গল্পের মত। সকালের আগ্রহ দূরত্বের বিড়ম্বনায় দুপুরেই উবে যায়। বাংলাদেশ ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে সমতল ভূমির দেশ। তিন পার্বত্য জেলা বাদে দেশের স্থল যোগাযোগটা সমতল ভূমির উপর দিয়েই। কিন্তু উত্তর-পূর্ব ভারতের এই প্রদেশগুলির ভূখণ্ড পাহাড়-পর্বতে পরিপূর্ণ। উৎস স্থল থেকে প্রবাহিত প্রায় সকল নদীই বাংলাদেশের সমতল ভূমি পেরিয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। সুতরাং স্থল পথটাও বাংলাদেশের হাতে বন্দি। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত হিমালয়ের পাদদেশ দার্জেলিংসহ শিলিগুড়ির ভূমি। সারা ভারতে যানবাহন যে গতিতে চলাচল করে শিলিগুড়ি পেরোতে চলে কচ্ছপ গতিতে। গৌহাটি থেকে সিলং; সিলং থেকে শিলিগুড়ি করিডোর পেড়িয়ে দার্জেলিং-গ্যাংটক পৃথিবীর অন্যতম ভূমিকম্প প্রবণ এলাকা। যে কোন রকম প্রাকৃতিক দূর্যোগে উদ্ধার তৎপরতার একমাত্র অবলম্বন হেলিকপ্টার। তখন দিনের পর দিন মূল ভূ-খন্ডের সাথে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ থাকে উত্তর-পূর্ব ভারতের বিশাল ভূ-খন্ডের। আধুনিক বিশ্বে এও সম্ভব ! টেকনাফ-তেঁতুলিয়ার কথা বলেছি। তাহলে অরুণাচল প্রদেশের দিবাং ভ্যালি (Dibang Valley), নাগাল্যান্ডের ফাকিম বা থানামির (Fakim/Thanamir), মনিপুরীর চাঁন্দিল (Chandel), মিজোরামের সাইহা (Saiha) অথবা দক্ষিণ ত্রিপুরার সাবরুম (Sabroom) এলাকার লোকজন দিল্লির গল্প কি জেগে জেগে শোনে নাকি ঘুমের মধ্যে কল্পনা করে ? দিল্লির কথা বাদই দিলাম। কারণ শখের করাত দেড় টাকা । শখের বশে চাল-ডাল বেঁধেও অনেকে এর বেশি দূরত্ব যেতে গা করে না। উত্তর-পূর্ব ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী কলকাতা। পশ্চিমবঙ্গসহ গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যের সিংহভাগ কলকাতা বন্দরের উপর নির্ভরশীল। দুরত্ব ও খরচার ভয়ে দিল্লি না গেলেও কলকাতা ঠিকই আসতে হয়। অতএব, কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি করিডোর হয়ে উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু জায়গার দূরত্ব নিরুপণ করি।



।। ছয় ।।

কেবল কলকাতা থেকে শিলিগুড়ি সড়ক পথে দূরত্ব ৭০০ কিলোমিটার যা পেরুতে সময় লাগে ১১ ঘন্টা । তাহলে শিলিগুড়ি থেকে অন্যান্য জায়গার দূরত্ব যোগ করে কেমন হয় এবার দেখুন-

(ক) শিলিগুড়ি টু গ্যাংটক,সিকিম ১১৫ কিমি + ৭০০কিমি = ৮১৫ কিমি

শিলিগুড়ি টু গ্যাংটক,সিকিম ২ ঘন্টা + ১১ ঘন্টা = ১৩ ঘন্টা



(খ) শিলিগুড়ি টু দিসপুর,আসাম ৪৩৬কিমি+৭০০কিমি = ১১৩৬কিমি

শিলিগুড়ি টু দিসপুর,আসাম ৮ ঘন্টা + ১১ ঘন্টা = ১৯ ঘন্টা



(গ) শিলিগুড়ি টু শিলং,মেঘালয় ৫২২কিমি+৭০০ কিমি = ১২২২ কিমি

শিলিগুড়ি টু শিলং,মেঘালয় ৯ ঘন্টা ৩০ মি + ১১ ঘন্টা = ২০ ঘন্টা৩০মি



(ঘ) শিলিগুড়ি টু ইটানগর,অরুণাচল৬৯৩কিমি+৭০০কিমি= ১৩৯৩কিমি

শিলিগুড়ি টু ইটানগর,অরুণাচল১২ঘন্টা৩০মি+১১ঘন্টা =২৩ঘন্টা৩০মি



(ঙ) শিলিগুড়ি টু কহিমা,নাগাল্যান্ড৭৬৬কিমি+৭০০কিমি= ১৪৬৬কিমি

শিলিগুড়ি টু কহিমা,নাগাল্যান্ড ১৩ঘন্টা৩০মি+১১ঘন্টা=২৪ঘন্টা৩০ মি



(চ) শিলিগুড়ি টু ইম্ফল,মণিপুর ৯০১কিমি+৭০০কিমি= ১৬০১কিমি

শিলিগুড়ি টু ইম্ফল,মণিপুর ১৬ঘন্টা + ১১ঘন্টা = ২৭ ঘন্টা



(ছ) শিলিগুড়ি টু আগরতলা,ত্রিপুরা ৭০৫কিমি+৭০০কিমি= ১৪০৫কিমি

শিলিগুড়ি টু আগরতলা,ত্রিপুরা ১৩ঘন্টা৩০মি+১১ঘন্টা=২৪ঘন্টা৩০ মি



(জ) শিলিগুড়ি টু আইজল,মিজোরাম ৯১৫কিমি+৭০০কিমি= ১৬১৫কিমি

শিলিগুড়ি টু আগরতলা,ত্রিপুরা ১৭ ঘন্টা+১১ঘন্টা = ২৮ ঘন্টা



### শিলিগুড়ি টু দিল্লি, রাজধানী ভারত ১৫০৬ কিলোমিটার

শিলিগুড়ি টু দিল্লি, রাজধানী ভারত ২১ ঘন্টা ৩০ মিনিট





### শিলিগুড়ি টু বোম্বে,মহারাষ্ট্র ২৩৪৭ কিলোমিটার

শিলিগুড়ি টু বোম্বে,মহারাষ্ট্র ৩৫ ঘন্টা

উৎসঃ http://maps.google.com Driving directions



পৃথিবীর বহু দেশ আছে যেখানে ঐ দেশের নাগরিকদের কাছে দূরত্ব কোন বিষয় নয়। উন্নত দেশগুলিতে কেবল যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার কারণে মানুষ শতশত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে অফিস,আদালত শেষ করে দিনের দিন বাসায় ফেরে। পৃথিবীর এ প্রান্তের ভারতীয়দের নিজ দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে যেতে বুকটা দূরু দূরু করে কাঁপে। উন্নতির দ্বীপ শিখা মুষ্ঠিমেয় কতকগুলি এলাকায় সীমাবদ্ধ। তাই দেখে অপরাপর এলাকার লোক গাল ফুলে গর্ব করে দেশে এই আছে, সেই আছে। ছোট শিশুরা যেমন বলে মামা বাড়ী এই আছে, সেই আছে, গুরুজনরা খোঁজ নিয়ে দেখে আসলে বাপের চুলা জ্বালানোরও মুরোদ নেই।



।।সাত।।

ভারত ভাগ হয়েছে ১৯৪৭ সালে।অদ্যাবধি অখন্ডতার পাশাপাশি উন্নয়ন চিন্তাও কম হয়নি।কিন্তু বাস্তবায়ন যা হয়েছে তার খুব বেশি উত্তর পূর্ব ভারতে লাগেনি।বাঁধা ঐ যোগাযোগ ব্যবস্থা। মাঝখানে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ।যার স্বাচ্ছন্দ্যতা অখন্ড ভারত কামীদের মাথা ব্যথার কারণ। এজন্যেই যে প্রতীবেশীর স্বচ্ছলতা ও স্বাচ্ছন্দ্যতার ছোঁয়া আশপাশেই বেশি লাগে।সমাজ জীবনের এ এক স্বাভাবিক প্রবাহ।ওপাশে দ্রুত অগ্রসরমান চীন,পাশে সদ্য স্বৈরতন্ত্র মুক্ত মায়ানমার।অবাধ তথ্য প্রবাহের যুগে নিশ্চয় তা উত্তর পূর্ব ভারতের মানুষদের মনে নাড়া দেয়।মনকে যারা বেঁধে রাখতে পারে না মানুষ চেনে তারা চরমপন্থি, বিচিছন্নতাবাদী বলে।কেবল পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশেই বাঙ্গালী নয়।ত্রিপুরার মোট জনসংখ্যার ৭০ জন আর আসামের মোট জনসংখ্যার ৩০ জন বাঙ্গালী।আশেপাশের প্রদেশগুলিতেও এ সংখ্যা নেহায়েত কম নয়।ত্রিপুরার স্বজাতির লোকেরা সাড়ে ১৪ শত থেকে ১৫ শত কিলোমিটার পথ ঘুরে ২৪ থেকে ২৫ ঘন্টা সময় ব্যয় করে এসে কলকাতায় গিয়ে তাদের উৎপাদিত পণ্যের সাথে বর্হিবিশ্বের পরিচয় ঘটায়।আর আসামের চা সাড়ে ১৩ শত থেকে ১৪ শত কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলকাতায় এসে বর্হিবিশ্বে রপ্তানী হয়।গল্প নয়, আধুনিক বিশ্বে এও এক নির্ভেজাল সত্য।অথচ আশ্চর্যের বিষয়, বাংলাদেশের উপর দিয়ে কলকাতা থেকে আগরতলার দূরত্ব মাত্র ৬১৭ কিলোমিটার।বাড়তি এই দূরত্বের ঝক্কি ভারতীয় বলেই সম্ভব।ইউরোপ,আমেরিকা, কানাডা বা অষ্ট্রেলিয়া হলে নেতারা মন্চে উঠে গল্পবাজির সাহস পেত না।আমরা বাংলাদেশীরা বাঙ্গালী আবার পশ্চিবঙ্গ,ত্রিপুরা বা আসামে যারা বসবাস করে তাঁরাও বাঙ্গালী। একই জাতি কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন সীমানায় বসবাস। ১৯৪৭ দুটো ধর্মকে আলাদা আলাদা সীমানায় বেঁধে পুরো ভারত বর্ষকে চরম জাতিগত দাঙ্গার হাত থেকে বাঁচিয়েছিল। কিন্তু দেখুন এখন দুই সীমানার কোনটাতেই কেবল একক কোন ধর্মের লোক বসবাস করে না। বাংলাদেশ,ভারত,পাকিস্থানে সেই হিন্দু মুসলিম মিলে মিশে আজও একাকার হয়ে বসবাস করছে।বাংলাদেশে শতকরা ৯০ জন মুসলমান আবার ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তানের পর ভারত বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মুসলিম-জনবহুল রাষ্ট্র।

১৯৪৭ এর মত বাঙ্গালী জাতির ভাগ্যেও একটা ধাক্কা এসেছিল ১৯০৫ সালে। ১৯০৫ সালের ১৬ই অক্টোবর ভারতের ভাইসরয় লর্ড কার্জনের আদেশে প্রথম অখন্ড বঙ্গভূমি ভেঙ্গে পূর্ববঙ্গ ও আসাম করা হয় কেবলই প্রশাসনিক কার্যের সুবিধার্থে। কেননা অখন্ড বঙ্গের পূর্বাঞ্চল ভৌগোলিক এবং অপ্রতুল যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে পশ্চিমাঞ্চল হতে প্রায় বিচ্ছিন্ন ছিল। এ বিভক্তি পশ্চিমাঞ্চলের লোকেরা মানেনি, শুরু হয় প্রচণ্ড রাজনৈতিক অস্থিরতা।পূর্বাঞ্চলের মুসলিমরা একে আর্শীবাদ বলে কল্পনা করে এই ভেবে যে এর ফলে শিক্ষা, কর্মসংস্থান ইত্যাদি ক্ষেত্রে পূর্বাঞ্চলের বিশেষত তাদের সুযোগ বেড়ে



যাবে। কিন্তু সেই সুযোগটা পাওয়ার আগেই ১৯১১ সালে প্রচণ্ড গণআন্দোলনের ফলে দুই বঙ্গ আবার একত্রিত হয়।আশ্চর্যের বিষয় ১৯৪৭ এ সেই বঙ্গ আবার ভাঙ্গা হয়। তবে এবার আর পশ্চিম থেকে আগের মত প্রতিবাদ আসল না কেবলমাত্র ধর্মের কারণে।কেননা তার আগেই ১৯৪০এ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের লাহোর প্রস্তাব অখন্ড বঙ্গভূমির আবেগকে বাস্তবতার যুক্তি দিয়ে থেঁতিয়ে দিয়েছে অনেকখানি।১৯০৫ সালে না চাইতেই মুসলমানদের মনে সামান্য সময় যে আশাটা এসে ঝিলিক দিয়ে চলে যায় ১৯৪৭ সালে তাই তারা পাকাপাকিভাবে পেয়ে যায়।তবে ভারত যেমন মুসলমানদের আলাদা ভূমি দিয়েও মুসলিম মুক্ত হতে পারেনি পশ্চিমবঙ্গও তেমনি পারেনি নিজেকে মুসলিম মুক্ত রাখতে।জম্মু ও কাশ্মীরকে ধরে রেখে বিশাল ভারত যেমন তার সর্বত্র মুসলিমদের বসবাসের

District Muslim Percentage

Bankura 7.51%

Bardhaman 19.78%

Birbhum 35.08%

Cooch Behar 24.24%

Darjeeling 5.31%

Hooghly 15.14%

Howrah 24.44%

Jalpaiguri 10.78%

Kolkata 20.27%

Malda 49.72%

Midnapore 11.32%

Murshidabad 63.67%

Nadia 25.41%

North 24 Parganas 24.22%

North Dinajpur 47.36%

Purulia 7.12%

South 24 Parganas 33.34%

South Dinajpur 24.01%



পশ্চিমবঙ্গ (জনগণনা ২০০১)



ছাড়পত্র দিয়ে রেখেছে পশ্চিমবঙ্গও তেমনি মুর্শিদাবাদ ও মালদাকে আগলে রেখে অপরাপর অংশে মুসলিম বৃদ্ধিকে অবারিত রেখেছে।

লেখার শুরুতে পরিবর্তনের কখা বলেছিলাম,বাহির থেকে নয় ভেতর থেকেই এ পরিবর্তন হচ্ছে।অখন্ড বঙ্গভূমির আন্দোলন অযৌক্তিক কোন বিষয় ছিল না।সত্যের উপস্থাপনায় জ্ঞানীরাও কখনও কখনও কিংকর্তৃব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে।আসলে বাঁধাহীন কোন সত্যই মজবুত নয়।বাংলা সাহিত্যের দিক্পাল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।যিনি পূর্ববঙ্গ তথা আজকের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় পর্বতসম বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন।স্বপ্নের বঙ্গভূমির খন্ডতা মেনে নিতে পারেননি।আজ সেই বাংলাদেশ কবিগুরুর পীঠস্থান।যারা পরিবর্তনটা কম বোঝেন এখনও তাঁরা এ নিয়ে রঙ্গরস করে ফুটপাতে জ্বালাময়ী বক্তৃতা করে বেড়ায়। নিজেকে যারা চৌদ্দ শিঁকেয় বেঁধে রাখতে চায় পরিবর্তনটা তাঁরা মানতে চায় না।রবীন্দ্রনাথ যদি মুসলমান হতেন বা পূর্ববঙ্গের বাসিন্দা হতেন আর পশ্চিমবঙ্গ যদি পূর্ববঙ্গ থেকে ভাগ হতো তবে পশ্চিমবঙ্গের মানুষেরা নিশ্চয় রবীন্দ্রনাথকে কাঁধে করে বেড়াতো না।দোষটা তাঁদের একার নয় পূর্ব তিমুর ভাগ হয়েছে ইন্দোনেশিয়া থেকে,কিছু দিন আগে সুদান থেকে দক্ষিণ সুদান আলাদা হয়েছে।সবাই যতটা সম্ভব অতীতটা ফেলে রেখে গেছে।সংকীর্ণতা একটাই মুসলমান বলে।কিন্তু মুসলমানরা পারে না, কারণ মানষ যদি বৃক্ষ হয় ইসলাম সে বৃক্ষের ফুল।যে কিনা ফল হয়ে অনুরুপ শত বৃক্ষের জন্ম দিয়ে অনাগত পৃথিবীর মাঝে শান্তির ধারাকে অক্ষুন্ন রাখতে চায়।যারা উচ্চ বর্ণ,নিম্ন বণের্র গিঁটে মানুষের অধিকারকে বেঁধে রাখতে চায় তাদের হাতে ধর্মের নিশান মানায় না।বাংলাদেশে আছে কিনা জানি না তবে বিশাল ভারতে এখনও এক বর্ণের লোকে ছুলে অন্য বর্ণের প্লেটের ভাত উচ্ছিষ্ট হয়ে যায়।



।।আট।।

১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের আবরণে বাংলাদেশ নিজস্ব ভূ-খন্ড পায়।যার ভিত ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গই রচিত করে দিয়েছিল। যদিও ১৯১১ সালে বঙ্গভঙ্গ রহিত হয় । কিন্তু এ এলাকার রাজনীতিতে বঙ্গভঙ্গ যে পরিবর্তন সূচিত করে তা আর থামানো যায়নি।কারণ এর প্রতিক্রিয়া হয় সুদূর প্রসারী।১৯০৫ সালের আগে ইংরেজরা আরও তিন বার বাংলার রাজনৈতিক সীমানার পরিবর্তন ঘটায়।তখন এমন প্রতিক্রিয়া হয়নি।কিন্তু ১৯০৫ সালের চতুর্থ বারের সীমানা পরিবর্তন ও তার প্রতিক্রিয়া অনেক বিষয়কে প্রার্থক্যের নিক্তিতে স্পষ্ট দিবালোকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।পূর্ববঙ্গ দেখল কংকাল থেকে কলকাতার অবাক-উত্থান,কলকাতার বুদ্ধিজীবীদের বিমাতাসুলভ আচরণ।আমরা শাসক তোমরা শোষিত এই মন্ত্রে দীক্ষিত কলকাতার বাবুরা।যারা কিনা ঢাকায় সামান্য একটা বিশ্ববিদ্যালয় হতেও বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়।ঢাকা কেন্দ্রিক পূর্ব বাংলা প্রদেশ গঠনের বিরোধীতায় সবাই কোমড় বেঁধে নামে।‘বঙ্গভঙ্গ’ রদের মধ্য দিয়ে কলকাতার বুদ্ধিজীবীরা ঢাকার অগ্রযাত্রা ঠেকানোর জন্য যেভাবে উঠেপড়ে লাগে কোন সভ্য জাতির ইতিহাসে এমন অদ্ভুত নজির আর একটা আছে কি-না সন্দেহ।এরকম নানা কারণে বাঙ্গালী মুসলমানদের ভয় ও শংকা ছিল অনেক বেশী। বাঙ্গালী মুসলমানদের চাওয়া নিজস্ব সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র বজায় রাখার শাসনতান্ত্রিক গ্যারান্টি। সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর তারা দাবি করলো জাতিস্বাতন্ত্রভিত্তিক নিজস্ব আবাসভূমি।১৯৪০এর শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের লাহোর প্রস্তাবে ১৯০৫ সালের রাষ্ট্র সীমানা মেনে বাঙ্গালী মুসলমানদের আলাদা আবাসভূমি চাওয়া হয়।সুতরাং একথা নির্দিধায় বলা যায় ইংরেজ আমলের বার বার বাংলা বিভাগের মাধ্যমে বিশেষত ১৯০৫ সালের ‘বঙ্গভঙ্গে’র মাধ্যমেই আজকের বাংলাদেশের স্বাধীনতার রাজনৈতিক ভিত্তি নির্মিত হয়েছিল।



।।নয় ।।

উসমানীয় সাম্রাজ্য যা অটোমান সাম্রাজ্য নামে পরিচিত তুর্কি খেলাফত, বিশ্বে প্রায় ৬০০ বছর ধরে টিকে ছিল।সাম্রাজ্যটি পশ্চিম এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ ও উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার এক বিরাট অঞ্চলব্যাপী বিস্তৃত ছিল। সমসাময়িক কালের বিশ্বব্যাপী সকল সাম্রাজ্যের শৌর্যের শীর্ষে তখন অটোমান সাম্রাজ্য। কিন্তু ইউরোপের শিল্পবিপ্লব ও ফরাসী বিপ্লব অটোমান সাম্রাজ্যে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্ম,বর্ণ এবং বহু ভাষাভাষী মানুষের মাঝে দ্রুত উন্নয়ন চিন্তা ও জাতীয়তাবাদের প্রসার ঘটায়।অটোমান শাসকেরা জনমনের এ ভাষা সহজে অনুধাবন করা ও ভেতরকার সেক্যুলার সংস্কার করার কোন পথ খুঁজে পাচ্ছিল না।দীর্ঘ সময় পেরিয়ে ১৮৩৯ থেকে অটোমানরা বাধ্য হয়ে সংস্কারের লক্ষ্যে কাজ শুরু করে।কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরী হয়ে গেছে। জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতার ডাক শুনতে পাওয়া জনগণ আর পিছন ফিরে তাঁকায়নি।তাছাড়া ইউরোপের শক্তিগুলি ইউরোপের মাটিতে কখনই ইসলামকে মেনে নিতে পারেনি।এরই মাঝে দৃশ্যপটে হাজির হয় প্রথম মহাযুদ্ধ।প্রথম মহাযুদ্ধের অনেক কারণ আছে।





উনিশ শতকের শিল্প বিপ্লবের কারণে সহজে কাঁচামাল সংগ্রহ এবং তৈরি পণ্য বিক্রির জন্য স্থায়ী বাজার সৃষ্টির জন্য উপনিবেশ স্থাপনের প্রতিযোগিতাও প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের অন্যতম কারণ।প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে অটোমান সাম্রাজ্য ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়ে ই্উরোপ মুসলমানদের উপর ৫০০ বছরের পুরনো প্রতিশোধ নেয়,সেই সাথে তাদের উৎপাদিত পণ্যের বিশাল বাজার পেয়ে যায়। ‍বৃটেন ও ফ্রান্স কর্তৃক ইসলামের সে সময়ের অধিকর্তা তুরস্ক কেন্দ্রিক উসমানীয় সাম্রাজ্যের ব্যবচ্ছেদ ভারতবর্ষের মুসলমানদের মনে গভীর রেখাপাত করে।বলার অপেক্ষা রাখেনা, তুরস্ক কেন্দ্রিক উসমানীয় সাম্রাজ্য তথা অটোমান সাম্রাজ্য তৎকালীন বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ব, একতা ও আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকরূপে গণ্য হতো।আর ভারতের মুসলমানরাও তুর্কি খেলাফতের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল এবং সুলতানকে নিজেদের ধর্মীয় নেতারূপে মনে করত। বৃটেন ও ফ্রান্স কর্তৃক তুর্কি খেলাফতের মর্মস্পর্শী পতন ভারতীয় উপমহাদেশে বৃটিশ শাসনের বিরুদ্ধে মুসলমানদের মনে বিদ্রোহের আগুন শতগুণ বাড়িয়ে দেয়।

অনেক সংগ্রাম ও ত্যাগের ফসল ভারতবর্ষকে বৃটিশমুক্তকরণ।ব্যাপারটা অত সহজ বিষয় ছিল না।তখনও বিশ্বব্যাপী বৃটিশ সাম্রাজ্য ছড়িয়ে ছিটানো।কথায় বলা হতো “বৃটিশ সাম্রাজ্যে কখনও সূর্য্য অস্ত যায় না।” চারিদেকে অথৈ পানির মাঝে ছোট্র একটি দেশ।অথচ সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে এখান থেকেই শাসন করতো প্রায় অর্ধ পৃথিবী।পাঁচ পরাশক্তির এক শক্তি বৃটেনের আধুনিকতা,বিদ্যা-বুদ্ধি,প্রযুক্তি,সাম্য,শক্তি সবই ছিল এবং আজও আছে।এত কিছু থাকার পরেও জনমানুষের দাবির প্রতি সন্মান দেখিয়ে তাদেরকে ভারত ছাড়তে হয়েছে।আসলে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ পৃথিবীর অনেকগুলি ঘটণা প্রবাহের উপসংহার হয়ে আর্বিভূত হয়।বলা হয় অন্তরাত্বার রক্তক্ষরণ পরাক্রমনশালী বীরকেও নত হতে বাধ্য করে।



আমার আজকের লেখার উদ্দেশ্য তুর্কি খেলাফতের গুণকীর্তণ বা প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের ধারা বর্ণনা দেয়া নয়।বিশাল তুর্কি খেলাফতে তেমন বিচ্ছিন্ন কোন ভূ-খন্ড ছিল না।ভূ-খন্ডগুলি পরস্পর একটা আরেকটার সাথে লাগোয়া ছিল।শক্তি সামর্থ্যের দিকেও কম ছিল না।থাকলে একটা সাম্রাজ্য ৬০০ বছর টিকানো যেত না।তারপরও তার পতন ঠেকানো যায়নি। এবার বৃটিশ ভারতের কথায় আসি।বৃটেন ২০০ বছর ভারতবর্ষ শাসন করে।শক্তির বিচারে তারা কি কোন অংশে কম ছিল ? মানি তারা সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে এসে ভারতবর্ষ শাসন করতো।কিন্তু এটাকে কখনই তারা দূরত্ব বলে মনে করতো না।আর আধুনিক বিশ্বেতো প্রশ্নই আসে না।তারপরেও তারা ভারতবর্ষে টিকতে পারেনি।তবে পিছন দরজা দিয়ে নয়।নিজ হাতে কয়েক খন্ডে ভারতবর্ষকে ভাগ করে অত্যন্ত সন্মানের সাথে তারা বিদায় নিয়েছে।তাহলে পাকিস্থান পৃথিবীর কোন সাম্রাজ্যের তফসিলদার ছিল,আর কোন পরাশক্তি ছিল যে তারা সাত সমুদ্র তের নদী পাড়ি দিয়ে এসে বাংলাদেশ শাসন করার অধিকার পায় ? যেখানে পৃথিবীর বড় বড় শক্তি যার যার উপনিবেশ থেকে বাস্তবতা মেনে নিজেকে গুটিয়ে নিচ্ছে তখন পাকিস্থানের মত নব্য স্বাধীন একটা দেশের খায়েশ জাগে বিশাল একটা দেশ পাড়ি দিয়ে এসে আরেকটা দেশ শাসন করার !



।।দশ ।।

১৯১৮ সালের নবেম্বরে ১ম বিশ্বযুদ্ধের অবসান ঘটে।যুদ্ধ শেষে সেভার্স চুক্তি অনুসারে বৃটিশ ও অন্যান্য মিত্রশক্তি পরাজিত তুরস্কের শাসনাধীন এলাকাগুলি নিজেদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেয়।কিন্তু ১ম বিশ্বযুদ্ধের অবসান পূর্ববর্তী সময়েই ১৯১৪ হতে ১৯১৭ সালের মধ্যে বৃটিশ ভারতে এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে যায়।বৃটিশ ভারতের কিছু জাতীয়তাবাদী বিপ্লবী সংগঠন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সৃষ্ট ঘাদার দল এবং জার্মানিতে সৃষ্ট ভারত স্বাধীন কমিটি ঔপনিবেশিক ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে সর্বভারতীয় প্রতিরোধ ও বিদ্রোহ ঘটানোর পরিকল্পনা করে।জার্মানি মিত্র পক্ষ হওয়ায় অতি সহজেই তুরস্ক এ পরিকল্পনায় নিজেকে জড়িয়ে ফেলে।অবশ্য বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহে ক্ষুব্ধ তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্য অনেক আগে থেকেই নিজ ভূ-খন্ডের বাইরে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক এই শক্তিগুলোকে একটা উচিৎ শিক্ষা দেয়ার উপায় খুঁজছিল। তুর্কি সাহায্য নিশ্চিত জেনে বৃটিশ লাগোয়া আইরিশ প্রজাতন্ত্র আন্দোলন, জার্মান বৈদেশিক দপ্তর এবং সান ফ্রান্সিস্কোর জার্মান দূতাবাসও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।পরিকল্পনা মহামাত্রা পায়।বৃটিশ ভারতের সৈন্যবাহিনীও তখন মধ্যপ্রাচ্যের রণাঙ্গণে ব্যস্ত।১৯১৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসকে বিদ্রোহ শুরুর সময় হিসাবে পরিকল্পনায় আনা হয়।কিন্তু এক ইউরোপীয় শক্তির বিরুদ্ধে আরেক ইউরোপীয় সংশ্লিষ্টতায় পরিকল্পনা, স্বজাতি প্রশ্নে ফাঁকটা থেকে যায়।চৌকস ব্রিটিশ গোয়েন্দারা কখন এ আন্দোলনে ঢুকে পড়েছে লক্ষ্যধারী সংগঠনগুলি বুঝতেও পারেনি।ব্রিটিশ গোয়েন্দারা আন্দোলনের ভেতরে ঢুকে পড়ে সব তথ্য জেনে আন্দোলনের প্রধান নেতাদের গ্রেপ্তার করে।বিশ্বব্যাপী ব্রিটিশ গোয়েন্দারা তৎপর হয়ে উঠে এবং সাফল্যের সাথে বিদ্রোহের সকল পরিকল্পনা ভূন্ডুল করে দেয়।১ম বিশ্বযুদ্ধের শেষ লগ্নে বিদ্রোহ ঘটানোর পরিকল্পনাটি নস্যাৎ হয়ে গেলেও ভারতে ব্রিটিশ শাসনের নীতিমালায় এ ঘটনার ব্যাপক প্রভাব পড়ে।ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনের যুক্তরাষ্ট্রীয় অংশ বাদ দিয়ে প্রাদেশিক অংশ কার্যকারী করার উদ্যোগ গ্রহণ করে ১৯৩৭ সালে প্রদেশ সমূহে নির্বাচন দেয় ।কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয়েই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে।নির্বাচনে কংগ্রেস ৬টি প্রদেশে সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করে এবং দুইটি প্রদেশে একক সংখ্যাগরিষ্টতা অর্জন করে ৭টি প্রদেশে সরকার গঠন করে। কিন্তু ভুলেও কোথাও মুসলীম লীগের কোন সদস্যকে মন্ত্রীসভায় গ্রহণ করেনি।অবিভক্ত বাংলা প্রদেশে কৃষক প্রজা পার্টির নেতা এ.কে. ফজলুল হক কংগ্রেসের সাথে কোয়ালিশন করে সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েও প্রত্যাখ্যাত হন এবং সবশেষে তিনি মুসলীম লীগের সাথে কোয়ালিশন করে সরকার গঠন করেন। শাসনকার্য পরিচালনায় কংগ্রেস সর্বক্ষেত্রে মুসলিম স্বার্থবিরোধী সাম্প্রদায়িক মনোভাব পোষণ করতে থাকে। আইন-আদালত, শিক্ষা, চাকুরী ,সংস্কৃতি সহ সকল ক্ষেত্রে কংগ্রেস মুসলীম বিদ্বেষী চরম বৈষম্যমূলক ব্যবস্থার প্রবর্তন করতে থাকে।এই বিমাতা সূলভ আচরণের ফলে মুসলমানদের মধ্যে এ ধারনা জন্মে যে, কংগ্রেস একটি হিন্দু প্রেমী ও মুসলিম বিরোধী সংগঠন।আল্লামা ইকবাল, চেীধুরী রহমত আলী ও আলীগড়ের অধ্যাপকবৃন্দ বহুকাল পূর্ব থেকেই এ ধারণার বাস্তব চিত্র পোষণ করে আসছিলেন।স্যার ইকবাল ১৯৩০ সালেই এলাহাবাদ অধিবেশনে তার সভাপতির অভিভাষণে পাঞ্জাবের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ, সিন্ধু ও বেলুচিস্থান নিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব করেছিলেনে। কংগ্রেসের এহেন আচরণ চাক্ষুস প্রত্যক্ষদর্শী মুসলীম লীগ নেতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ দিব্যদৃষ্টিতে গভীরভাবে অনুধাবন করেন এবং দ্বিজাতি তত্বের ভিত্তিতে স্বতন্ত্র জাতি হিসাবে মুসলমানদের একটি নিজস্ব আবাসভূমি বা রাষ্ট্রর দাবী উন্থাপন করেন।১৯৪০ খ্রীস্টাব্দের ২৩ই মার্চ বর্তমান পাকিস্তানের লাহোরে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সম্মেলনে বাঙ্গালী মুসলমানদের প্রবাদ পুরুষ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন।লাহোর প্রস্তাবের মূল বিষয় হলো মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। এই প্রস্তাবে বলা হয় যে ভারতবর্ষের উত্তর - পশ্চিমাঞ্চলে এবং পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোতে 'স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ'(Independent States) গঠন করা।মোট কথা, ভারতবর্ষের উত্তর - পশ্চিমাঞ্চলে এবং পূর্বাঞ্চলের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাগুলোর আঞ্চলিক স্বাধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার ও সার্বভৌমত্ব অর্জনই ছিল লাহোর প্রস্তাবের মূল বিষয়।লাহোর প্রস্তাবে ভারতীয় মুসলমানদের জন্য একাধিক (কার্যত দুটো) স্বতন্ত্র, স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্রের কথা বলা হয়।উত্তর -পশ্চিমাঞ্চলের রাষ্ট্রটি গঠিত হবে পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে। আর পূর্বাঞ্চলের রাষ্ট্র গঠিত হবে বাংলা ও আসাম নিয়ে। ১৯৪০ সালে গৃহীত 'লাহোর প্রস্তাব' ১৯৪১ সালে মাদ্রাজে অনুষ্ঠিত নিখিল ভারত মুসলিম লীগ সম্মেলনেও অনুমোদিত হয়। কিন্তু ১৯৪৬ সালের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর মুসলিম লীগ পার্টির আইনসভা সম্মেলনের বিষয় নির্বাচনী কমিটিতে মুহম্মদ আলী জিন্নাহ 'লাহোর প্রস্তাব'টিকে বিকৃত করে এক পাকিস্তান রাষ্ট্রের দাবি হিসেবে পাস করিয়ে নেন।জিন্নাহর এই প্রতারণা আর্থসামাজিক দিক থেকে পশ্চাৎপদ বাঙালি মুসলমান সমাজ যা কিনা ভূ-রাজনৈতিক দিক থেকে জন্মলগ্ন থেকেই অত্যাচারিত,নিষ্পেষিত ও প্রতারিত,সে সমাজে ততটা দাগ কাটতে পারেনি।অনবরত ডান-বাম থেকে নিষ্পেষিত ও ১৯১১ সালের ‘বঙ্গভঙ্গ’রদের অভিজ্ঞতায় পুষ্ট বাঙালি মুসলমান সমাজে স্বাধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পাওয়ার আকাংখার কাছে জিন্নাহর প্রকাশ্য প্রতারণা গৌণই মনে হতে থাকে।যারা উচ্চ বাক্য করে বাকীরা শাক দিয়ে মাছ ঢাকার মত প্রতারণার বিষয়টিকে সযত্বে ঢেকে রাখে।কিন্তু বনে ডাকাতি হলেও লোকালয়ে পৌছতে বেশি সময় লাগে না।১৯৭১ সালে বাংলার দামাল ছেলেরা সেই প্রতারণার জবাব দিয়েছে অত্যন্ত শক্ত ভাবে,পৃথিবী দেখেছে নিষ্কান্ত চিত্তে।

১৯৪৭ সালের ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট বৃটিশ ভারতের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের পাঞ্জাব, সিন্ধু, বেলুচিস্তান ও উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ নিয়ে পশ্চিম পাকিস্থান আর পশ্চিম পাকিস্তান থেকে প্রায় ১৬০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বৃটিশ ভারতের পূর্বাঞ্চলের কেবল পূর্ব বঙ্গ নিয়ে গঠিত হয় পূর্ব পাকিস্থান।ফার্সি, সিন্ধি, ও উর্দু ভাষায়, "পাকিস্তান" নামটির অর্থ "পবিত্রদের দেশ"। নামটি আসে পাকিস্তানের তৎকালীন পশ্চিম অংশের পাঁচটি রাজ্যের নাম থেকে:

প - পাঞ্জাব

আ - আফগানিয়া (নর্থ-ওয়েস্ট ফ্রন্টির প্রভিন্স)

ক - কাশ্মীর

স - সিন্ধ

তান - বালুচিস্তান

১৯৩৪ সালে চৌধুরী রহমত আলী তাঁর "নাও অর নেভার" (Now or Never) পুস্তিকায় এই নামটির প্রস্তাব রাখেন(উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে)।আশ্চর্যের বিষয় পাকিস্থান নাম গঠনের কোথাও ভূল করেও পূর্ব বঙ্গ বা পূর্ব পাকিস্থানের নাম কোন বর্ণের মাধ্যমে আনা হয় নাই।অথচ পাকিস্থানের কাছে উচ্চিষ্ট সেই দেশটি যখন ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় তখন নানা গাঁয়ের সৎ মায়ের লোক হাসানো রক্তক্ষরণ দেখানোর উলখুল্ল মনের মানুষের বুক চাপড়ানোও দেখেছে এই বাংলার হতভাগ্য জমিন।(চলবে)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১২:১৫

আদিম পুরুষ বলেছেন: আপনি কি ভারতীয়? অনেক ধৌর্য নিয়ে আপনার লেখা পড়লাম। অধিকাংশ তথ্য এবং ইতিহাস আগেই জানতাম। আপনার পয়েন্ট অব ভিউ কি সেটা লিখেন নি। যদি মনে করেন দুই বাংলা একত্রীকরণ ধরণের কিছু..তাহলে সেটা বর্তমান এবং ভবিষ্যত প্রেক্ষাপটে অবাস্তব কল্পনা। পারমাণবিক ভারত চায় ''ভূখণ্ডের অখন্ডতা'' । সুতরাং একত্রীকরণের মাধ্যমে বৃহত্তর স্বাধীন বাংলা কে মেনে নেয়ার চেয়ে ভারত বরং পারমাণবিক বোমা মেরে পুরো এরিয়াটাকে মানব শুণ্য করবে। তাতে ঝামেলা সৃষ্টিকারী মানুষ গুলোও মরবে এবং ভারতের অখন্ডতাও রক্ষা পাবে।
আর যদি মনে করেন ''অখন্ড ভারতে'' বর্তমান ''বাংলাদেশ '' অদূর ভবিষ্যতে যোগ দিবে ..তাও অবাস্তব কল্পনা। সম্ভব নয়। কারণ খুঁজতে গেলে বর্তমান ''বাংলাদেশের'' ইতিহাস প্রাচীন কাল থেকে '৭১ পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে নেয়াই যথেষ্ট। বাঙলী বলতে বৃহৎ জাতিসত্বাকে বুঝি। সেই বৃহৎ বাঙলী জাতিসত্ত্বার ''বাংলাদেশ '' অংশের বাঙালিরা কখনো দখলদারিত্ব মেনে নেয়নি। হয়ত অধীনে, উপনিবেশে ছিল। কিন্তু আবার কোন না কোন সময় একাধিক বার স্বাধীন হয়েছে। বাংলার বার ভূঁইয়া , আরো আগে কৈবর্ত্য বিদ্রোহ .. এবং অনেক সফল বিল্পবের মাধ্যমে বার বার স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার ইতিহাসের সাথে বৃহৎ বাঙালি জাতিসত্ত্বার বর্তমান ''পশ্চিম বঙ্গীয় '' বাঙালিদের ইতিহাসের মিল নেই। এই অংশের বাঙালীরা সমুদ্রের গর্জন এবং প্রমত্তা পদ্মা , মেঘনার মত । যা পশ্চিম বঙ্গীয় বাঙালীর স্বভাবজাত নয়।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ২:৫৫

এম এস আই জুেয়ল বলেছেন: আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ।আরও ধন্যবাদ যে আপনি ধৈর্য সহকারে আমার লেখাটি পড়েছেন।লেখার হেডিং লাইন যা তার ধারে কাছেও আমি এখনও আসতে পারিনি।লেখাটি চলমান।খোদার ইচ্ছা ও আপনাদের উৎসাহে আমি লেখাটি শেষ করতে চাই।লেখাটি ইতিহাস ভিত্তিক হওয়ায় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করতে হচ্ছে।কারণ ইতিহাসের অপর পৃষ্টার নাম অতীত।কিন্তু তা বিশ্লেষণ করে আসল সত্যটা বের করে আনাটা বড়ই কঠিন। ইতিহাস বিকৃতি আপনার আমার কারই কাম্য নয়।
আর আপনি জানতে চেয়েছেন আমি ভারতীয় কিনা।ভারতীয় নই,বাঙ্গালী এবং বালাদেশী।ভারতেও অনেক বাঙ্গালী আছে।তবে দেশের বাইরে তারা ভারতীয় বলেই নিজেদের পরিচয় দেয়।কারণ ঐ যে ভারতের খোলসের মধ্যেই তাদের বসবাস।প্রদেশের নাম নিলে তো ইমিগ্রেশান অফিসার পতাকা খুজে পায় না।আমার ভাই নিজস্ব পতাকা আছে।আর আছে নিজের দেশ বাংলাদেশ।
আপনি পারমানবিক বোমার কথা বলেছেন।এটা কি কারও শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে ? যদি করতো তাহলে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে যেত না।ভাঙ্গার সময় ঐ পিন্ডটি তাদেরও ছিল।কিন্তু রাষ্ট্রের ভাঙ্গন ঠেকাতে পারেনি।আমেরিকা হিরোসিমা-নাগাসাকিতে যা করেছে চিরদিন সে ভয় তাদেরকে তাড়িয়ে বেড়াবে।চোরের মন যেমন সব সময় পুলিশ পুলিশ করে একজন খুনির মনও সব সময় প্রতিশোধের শংকার তটস্থ থাকে,কখন যেন সেও আক্রান্ত হয়।

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ১:২৭

এমএআনসার বলেছেন: 'নানা গাঁয়ের সৎ মায়ের লোক হাসানো রক্তক্ষরণ দেখানোর উলখুল্ল মনের মানুষের বুক চাপড়ানোও দেখেছে এই বাংলার হতভাগ্য জমিন।' বাহ কী একটা লাইন লিখেছেন!

আপনার লেখা যতটুকু লক্ষ্য ততটা পরিষ্কার নয়। একেবারে কম করে শুধু যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের ভাল দিক দেখানোও যদি আপনার লক্ষ্য হয়, তাহলেও অত্যন্ত আক্ষেপের সহিত বলতে হচ্ছে যে তাও সম্ভব নয়। আপনার লেখাতেই তার কারণ রয়েছে।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১২ রাত ৩:০০

এম এস আই জুেয়ল বলেছেন: লেখাটার এখনও অনেক বাকী।আপনার সুচিন্তিত মতামতের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.