![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শরিয়তের বিশ্বাস: আরবি আল্লাহর ভাষা, ফেরেস্তার ভাষা, কোরানের ভাষা, বেহেস্ত-দোযখের ভাষা; কবর-কেয়ামতের ভাষা, ধর্ম-কর্মের ভাষা তথা মুসলমানের ভাষা ইত্যাদি।
কিন্তু এমন ঈমান-আমান থাকা সত্ত্বেও আজ ১৫ শত বৎসরের মধ্যেও বিশেষ করে বাংলার শতকরা এক ভাগ আলেম আল্লামাদেরও শুধু পড়া এবং মুখস্থ করা ছাড়া আরবি ভাষার উপরে কোনই দখল নেই।
পক্ষান্তরে তারা যখন ওয়াজ নছিহত করেন যে, কবরে ফেরেস্তা এসে মুদ্দারকে কবরের মধ্যে পুনঃ জেন্দা করে (পুনর্জন্ম) বসিয়ে আরবিতে ছওয়াল জওয়াব করবেন, “তেরা/তেরী রব কোন্ হ্যায়? তোমকো নবি কোন্ হ্যায়? তোমকো দ্বীন কোন্ হ্যায়?” (উর্দ্দু, হিন্দি ভাষা!) অথবা যখন বই পত্রে লেখা দেখি যে, “মোকামে মাহমুদায় ফেরেস্তাগণ শেখ সা’দির রচিত কবিতা মুখস্থ করে সারিবদ্ধ হয়ে মাহবুবে খোদার শুভাগমণে বুলন্দু কন্ঠে গেয়ে উঠলেন, ‘বালাগাল উলা বে কামালীহী, কাসাফাত দোজা বে জামালীহী, হাছুনাত জামিয়া খেছালীহী, ছাল্লুহু আলাইহে অ আলেহী। তখন আলেম-আল্লামাদের ঈমান-আমান ও ধর্ম জ্ঞান সম্বন্ধে সাধারণ মানুষের সন্দেহ জাগাটা একান্ত স্বাভাবিক বটে! ভাষা বা ধর্মজ্ঞান সম্বন্ধে অক্ষর জ্ঞান থাকলে এমন হাস্যকর বয়ান ফরমাইতে পারতেন না। মূলতঃ এই তাজ্জব দাবি দাওয়ার পক্ষে কোরানের বিন্দুমাত্র সমর্থন নেই, বরং ঘোর বিরোধ।
বিশ্বে এমন কোন ভাষা নেই যা স্বতন্ত্র ও স্বয়ং সম্পূর্ণ। বরং সকল ভাষার সঙ্গে সকল ভাষার কম-বেশি সংমিশ্রণ আছে। আরবি ভাষায় অসংখ্য ইংরাজী, বাংলা, হিন্দি-উর্দু-ফারসী, হিব্র“ ও আরামিক ভাষার সংমিশ্রণ দেখা যায়। এটি দোষের বা লজ্জার কিছু নয়। কোন্ ভাষার, কোন্ দেশের মানুষের জন্ম আগে-পরে, এ জটিল প্রশ্নের উত্তর দেহের কোন অঙ্গের বা কোন পশমটির জন্ম আগে-পরে, গ্রহ-নক্ষত্র বা কোন গ্যালাক্সির জন্ম আগে-পরে! দিন আগে না রাত আগে, মুরগি আগে না ডিম আগে, সত্য আগে না মিথ্যা আগে ইত্যাদি প্রশ্নগুলির উত্তর একই রকম জটিল এবং অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত হেতু প্রশ্নটি অবান্তরও বলা যায়। কারণ ধর্মানুশীলণে ওদের উপর কোন প্রভাব বিস্তার করে না। পাঠকদের সাধারণ অবগতির জন্য আরবি, উর্দু, হিন্দি, হিব্র“, ফারসি ইত্যাদি ভাষা মিশ্রণের কিছু উদাহরণ দেয়া হলো যা কোরানে স্থান পেয়েছে:
আইন, আমিন, আখের, আদম, আদল, আরশ, ইয়াদ, ঈমান, ইনছান, এতিম, ওয়াক্ত, কেতাব, কতল, কুরসী, কুরবান, খতম, জান্নাত-জাহান্নাম, জিনা, তবেল, তরীকা, দুনিয়া, ছাবত, নূর, নিয়ত, নাবা, নিকাহ্, দ্বীন, দোয়া, হাদিছ, হক, ফরজ, মোজেজা, শরাব, শাহদত, শরীফ, শোকর, সদকা,আরো অসংখ্য।
আরবি ভাষা অন্যান্য ভাষার মতই এক জাতির ভাষা। এই ভাষায় কাবা ঘরের ৩৬০টি মূর্তি পূজিত হতো আর এই ভাষা দিয়েই সেই মূর্তিগুলি বিতাড়িত হয়েছিল। আরবি ভাষা আবু যেহেলের ভাষা, আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর ভাষা; অতঃপর মহানবিরও ভাষা। মৌলবাদী তথা ঘোর ধর্মান্ধ, কাফের আবু যেহেল এই ভাষা দিয়েই আল্লাহর নবিকে ধর্মোদ্রোহী বলে জীবনভর দুঃখ কষ্ট দিয়েছেন। বেশ-ভূষায় মোসলেম সেজে এই ভাষা দিয়েই এজিদের গোষ্ঠী নবি বংশকে সমূলে নিপাত করেছে। এই ভাষা জাতি, ধর্ম, বর্ণ, কাফের, মোনাফেক, মোসলেম, মোমেন, ইহুদি, খ্রিস্টান, বেদুঈন নির্বিশেষে অন্যান্য ভাষা-ভাষীর মত আরব জাতির ভাষা। ‘ভাষা’ বলতে হিন্দু, মোসলেম, কাফের, মোনাফেক বুঝায় না।
কোরানের ভাষা আরবি নয় বরং আল্লাহর প্রেরণা (অহি) আরবি ভাষায় প্রকাশ; কোরানের ভাষা-বাক্য কোরান নয় বরং তার মর্মার্থ উপলব্দিই মূল কোরান; উপলব্দির কোন ভাষা নেই এবং উহাই আল্লাহর ভাষা; আল্লাহর ভাষা জ্ঞান-বিজ্ঞান, ধ্যান-সাধন, কর্ম-গবেষণা। সকল উপলব্দি বা প্রেরণা স্ব স্ব মাতৃ ভাষায়ই প্রকাশ হয়। সুতরাং উপলব্দি এবং উহার অনুসরণ ছাড়া শুধুমাত্র মুখস্ত বিদ্যার ছোয়াব বা ফলাফল ভয়াবহ!
মহানবি আরববাসী ও আরবি ভাষী ছিলেন বলেই আরবি ভাষায় আল্লাহর প্রেরণা বাণী কোরান নাজিল হয়। কোরান দেখুন:
অকাজা-লিকা আউহাইনা- । [ ৪২: ৭] অর্থ: এভাবেই আমি তোমার নিকট আরবি ভাষায় কোরান নাজিল করেছি, যাতে তুমি মক্বা ও তার আশ-পাশে যারা রয়েছে [আরব ভাষা-ভাষীদের] তাদেরকে সতর্ক করতে পার।
যে দেশে এবং যে ভাষায় নবি-রাছুল পাঠিয়েছে আদিকাল থেকেই ঠিক সেই দেশের ভাষাতেই ঐশী গ্রন্থ নাজিল করা হয়েছে। কোরান দেখুন :
অমা- আরছালনা- হাকীম। [১৪: ৪] অর্থ: আমি প্রত্যেক রাছুলকেই তার নিজের জাতিয় ভাষাতেই অহি পাঠিয়েছি, যেন তাদের নিকট উহা পরিস্কারভাবে বুঝিয়ে দিতে পারে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী ও বিজ্ঞানময়।
আরবি ভাষায় আল্লাহ কেন কোরান নাজিল করলেন, তার যুক্তি দেখিয়ে স্বয়ং আল্লাহ কোরানে ঘোষণা করেন:
অলাউ - আরাবিয়্যু। [৪১: ৪৪ ] অর্থ: আমি যদি এই কোরানকে বিদেশী ভাষায় নাজিল করতাম তবে উহারা অবশ্যই বলতো, ‘ইহার বাক্যগুলি আমাদের বোধগম্য করে পাঠানো হয় নাই কেন ? কি আশ্চর্য্য! আরব দেশী রাছুল আর বিদেশী ভাষায় অহি!
আল্লাহর সংবিধান বিশ্ব মানবের, কোরান বিশ্ব মানবের কিন্তু আরবি কোরান আরবি মানবের; উল্লিখিত আয়াত ঠিক উহাই ঘোষণা করছে। অনারবগণ কোরান চাইলে তাদের মাতৃভাষায় অনুবাদ করে নিতে হবে। তাই আজ অসংখ্য ভাষায় কোরানসহ অসংখ্য মূল্যবান গ্রন্থ অনুদিত হয়েছে এবং হচ্ছে। যাদের ধারণা আরবি কোরান আর বাংলা কোরানে অনেক তফাত, সেটা তাদের ক্ষীণ দুর্বল সত্য ধারণা বটে। তবে কোরানের ‘মোহকামাত’ (আদেশ-নিষেধ সুচক) অংশের অনুবাদে প্রধানতঃ সন্দেহের কোন কারণ নেই এবং মোমেন, মোসলেম থেকে বেহেস্ত প্রাপ্তি পর্যন্ত এই অংশই যথেষ্ট এবং ইহাই কোরানের মূল। বাকি অংশ ‘মোতাসাবেহাত’ [বিজ্ঞান, গবেষণা, ভাববাদ] ; আরবি জানা থাকলেও উহার মূল বিষয়বস্তু উদ্ধার করা এমনকি আরবিয়দের দ্বারাও সম্ভব নয় এবং সম্ভব হয়নি। লালন, ররীন্দ্রনাথ, নজরুলের অনেক কবিতা, গান বড় বড় শিক্ষিত বাঙ্গালীগণ আজও বুঝতে সক্ষম হয়নি। তাছাড়া যে যতই পরদেশী বিদেশী ভাষা শিখুক না কেন, যখন সে তা পড়ে অর্থ জানা থাকলে তার মাতৃ-ভাষাতে অনুদিত হয়েই তার হৃদয়ে রেকর্ড হয়। যেমন : ‘ওয়াটার’ উচ্চারণ করার সঙ্গে সঙ্গেই (অর্থ জানা থাকলে) বাঙ্গালীদের হৃদয়ে ‘পানি’ শব্দ অনুদিত হয়েই রেকর্ড হয়। মাতৃভাষার গুরুত্ব ও মূল্যায়ণ এখানেই। অন্য ভাষা শেখা ও জানার অর্থই ঐ সমস্ত ভাষাগুলি আপন ভাষার শৃংখলে শৃংখলাবদ্ধ করতে সমর্থ হওয়া। অতএব আপন ভাষা ছাড়া নিখুত জানা বোঝার আর কোন বিকল্প নেই, আলবৎ নেই।
কতিপয় অনুবাদকগণ যে কোন অনুদিত কোরানকে কোরান বলেই স্বীকার করেন না, আরবি কোরানের মত সন্মান বা গুরুত্বও দেন না; উদাহরণ দেখুন:
Attention Please: The Holy Qur’an is revealed in Arabic so the Qur’an is only the Arabic Text not its translation in any other language. [Ref: English Translation of the Meaning of Al Qur’an; by Md. Farooq-i-Azam Malik]
বিজ্ঞাপনটি সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে মূল্যবান বটে! কিন্তু প্রচলিত দৃষ্টে মূল্যহীণ, কারণ তিনি যুক্তি দেন যে, আরবি কোরান অহি করে পাঠানো হয়েছে, পক্ষান্তরে অনুবাদ অহি করে পাঠানো হয় নি! সুতরাং অনুবাদকে ‘কোরান’ বলা যাবে না। তাদের এই বালসুলভ অসার যুক্তির যুক্তি আছে বটে! আর তা হলো: অনুবাদকে ‘কোরান’ বলতে যাবেই বা কেন! ‘কোরান’ আরবি শব্দ, এর অনুবাদে যে ভাষায় যা হয় তাই-ই বলা উচিৎ; কিন্তু অজ্ঞাত কারনে আজ পর্যন্ত শব্দটির অনুবাদ করা হয়নি!
(চলবে-২)
২| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ২:০০
এ কে এম নাহিদ বলেছেন: আপনার লেখার একটি উদ্ধৃতি থেকেই আপনাকে বলছি:
অমা- আরছালনা- হাকীম। [১৪: ৪] অর্থ: আমি প্রত্যেক রাছুলকেই তার নিজের জাতিয় ভাষাতেই অহি পাঠিয়েছি, যেন তাদের নিকট উহা পরিস্কারভাবে বুঝিয়ে দিতে পারে। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তিনি পরাক্রমশালী ও বিজ্ঞানময়।
সুতরাং তাঁকে জানতে হলে প্রথমে তাঁর অনুগ্রহ প্রার্থনা করতে হবে।
এবার আসা যাক ট্রান্সলেশন এর কথাতেই। কোন ভাষাকেই অন্য ভাষাতে পুরাপুরি ট্রান্সলেশন করা যায় না। কারণ লেখার ভেতরই লুকায়িত থাকে আবেগ, ঐ অঞ্চলের আর্থ সামাজিক অবস্থা, সংস্কৃতি।
এটা সঠিক বলেছেন যে মাতৃভাষাতে অনুদিত হয়ে তারপর আমরা বুঝি। কিন্তু অনেক কিছুই আছে যা ঐ ভাষা না জানলে কখনোই পুরাপুরি বোঝা সম্ভব নয়।
তবে আমাদের মত আম পাবলিক এর সাধারণ জীবণ-যাপনে দিকদর্শন অনুবাদ থেকেই অনেকাংশে পাওয়া যাবে। কিন্তু যাঁরা কোরাণ নিয়ে রিসার্চ করবে তারা অনুদিত কোরাণ থেকে অনেক তথ্যই পাবেন না। তাদের আরবি ভাষার মূল কোরাণ থেকেই জ্ঞানার্জন করতে হবে।
আর একটি বিষয় আপনি কিভাবে বুঝবেন অন্য ভাষা থেকে শব্দগুচ্ছ আরবি তে এসেছে? এমনও তো হতে পারে আরবি ভাষা থেকে অন্য ভাষাতে শব্দটি চয়ণ করা হয়েছে।
আপনার প্রচেষ্টার জন্য আপনাকে অসংখ্য সাধুবাদ।
৩| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৯
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: কোরানের ভাষা আরবি নয় বরং আল্লাহর প্রেরণা (অহি) আরবি ভাষায় প্রকাশ; কোরানের ভাষা-বাক্য কোরান নয় বরং তার মর্মার্থ উপলব্দিই মূল কোরান; উপলব্দির কোন ভাষা নেই এবং উহাই আল্লাহর ভাষা; আল্লাহর ভাষা জ্ঞান-বিজ্ঞান, ধ্যান-সাধন, কর্ম-গবেষণা। সকল উপলব্দি বা প্রেরণা স্ব স্ব মাতৃ ভাষায়ই প্রকাশ হয়।
দারুন বলেছেন।
আসলেই আল্লাহ যাকে হেদায়েত করেন না তারা সত্য বুঝতে কতইনা ব্যার্থ।
আল্লাহ আপনাকে কল্যনা দান করুন।
সালাম।
৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১১ ভোর ৬:৫৮
জেমসবন্ড বলেছেন: পড়লাম । নো কমেন্টস ।
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জানুয়ারি, ২০১১ দুপুর ১:২৪
রাহিক বলেছেন: আল্লাহর কোন ভাষা নেই ।সকল ভাষাই আল্লাহর।কারণ আসমান ও জমিনের কোন কিছুই তার নির্দেশ ছাড়া হয় না ।