নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রেখ মা দাশেরে মনে/ এই মিনতি করি পদে

বাংলা মোদের সোনার বাংলা/নুরের বাংলা হয়ে যায়/বাংলা ভাষা অজানা মোর/ দিলে কিছু কয়ে যায়।।

আবুল মোকারম

নিজের সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। পড়ি, লেখতে ভালবাসি।

আবুল মোকারম › বিস্তারিত পোস্টঃ

মা তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি

১২ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:১২

আজ বিশ্ব মা দিবস।

আমি এইসব নাম সর্বস্ব দিবস গুলোতে বিশ্বাসী নই। তবুও যখন মা'র কথা বলা হয়, তখন আমি আর পারি না।



মা, আমি জানি এই লেখাটি তুমি পড়বে না। তবুও বলছি তুমিই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা। কেন তা এই ক্ষুদ্র পরিসরে বলা সম্ভব না।



আজ মা দিবসে এক দুঃখিনী মা-কে নিয়ে লেখা আমার এই গল্পটি পড়ে কারো যদি মায়ের প্রতি একটুও সহানুভূতি জাগে তবে পুলকিত হব। কারণ, আমাদের এই জগত সংসারে এমন কিছু সন্তান আছে যাদের সম্পর্কে বলার মতন ভাষা আমার জানা নেই.।।



সেই গলার হারটি



এক



তারামন বিবি ইটের লাল রাস্তার দিকে অনড় দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে, চোখের পলক একটুও নড়ে না। সাদা রঙের গাড়ীটা ছোট হতে হতে নিমিষেই হারিয়ে যায়। তার ঘোর তখনও কাটে না। বিকেলের সূর্যটা একেবারে হেলে গেছে, তার চোখ দুটোও গোধূলির মতন রক্তিম আভা ধারণ করেছে।সে ক্রমশ স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে। চোখে হাত দিয়ে দেখে একটুও জল নেই,সবটুকুন নিঃশেষ হয়ে গেছে, এখন শুধুই আছে হৃদয়ের মতন মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র। বুকের বামপাশে সে হালকা ব্যথা অনুভব করে। মস্তিষ্কও কেন জানি অকেজো অকেজো মনে হচ্ছে। তবে নিউরন থাকে সংক্ষুব্ধ করে তোলে।



দুই

রফিক-তারামনের সংসার জীবনের বয়স সবে মাত্র আট হতে চলল। কিন্তু তারামন এখনও সংসার নামক পাখীটাকে মোটেই পোষে আনতে পারে নি। এরই মাঝে কোল জুড়ে এসে গেছে তিন তিনটি সন্তান।দুই মেয়ে এক ছেলে।কিন্তু তারামনের তখন লুকোচুরি কিংবা পুতুলনাচের খেলায় ব্যস্ত থাকার কথা,সে মাত্র কুড়িতেই দিব্যি সামাল দিচ্ছিল সবকিছু,নিজের অজান্তে,নিপুণ হাতে। কিন্তু একটু উল্টাপাল্টা কিছু হলেই তার উপর বয়ে যায় কালবোশেখি ঝড়। নীরবে নিভৃতে এসব সয়ে সয়ে সে তার দিন গুজরান করে।



তিন

শুরু হয়ে গেলো উত্তাল মার্চ। শেখ মুজিব ডাক দিলেন দেশের আপামর জনতাকে। রেসকোর্সের সেই অগ্নিঝরা ভাষণ ছড়িয়ে পড়লো দেশজুড়ে। রফিকও প্রত্যহ মিছিল মিটিঙে বেতিব্যস্ত। এপ্রিলের শুরুতে রফিক দেশান্তরী হয়ে স্বদেশ কে বাঁচানোর যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে।একের পর এক গেরিলা আক্রমণে ছিন্নভিন্ন করে ফেলে পাকিদের। এদিকে তারামন প্রহর গুণে, প্রতিটি ক্ষণ চেয়ে থাকে মেঠো মেদুর পথে। কবে আসবে রফিক? কবে আসবে সে?এদিকে তারামন কোনও মতে অনেক জঞ্জাল পেরিয়ে আশ্রয় নেয় বাপের বাড়ীতে। রফিক আর আসে না। সে পড়ে অথৈ পাথারে। যুদ্ধ শেষ হয়। দেশ স্বাধীন হয়। অনেকেই ফিরে আসে আবার অনেকেই না। রফিকও থাকে না’র দলে। শুরু হয়ে গেলো তারামনের নতুন যুদ্ধ। সে যুদ্ধ বেঁচে থাকার । সে যুদ্ধ কোনোভাবে একবেলা অন্ন জুটানোর। সে যুদ্ধ তিন তিনটে সন্তান কে বাঁচিয়ে রাখার।







চার

নিজে না খেয়ে না পড়ে ছেলেকে স্কুলে পাঠায় তারামন।ছেলেও মেধাবী ছিল।অনেকটা ঝড়ের মতন ক্লাস এইটে বৃত্তিও পেয়ে যায়। সে খবর শুনে অনেক গুলো দিন-মাস-বছর পর এক চিলতে হাসি ফোটে তারামনের মুখে। সে অন্তত ভুলতে চেষ্টা করে তার ‘উপোস জীবনে’র গল্প, অনেক ভুলেও যায়। কারণ তারামনই জানে কত বেলা অনাহারে অর্ধাহারে আর কত ঘামের স্রোত বয়ে গেছে ছেলেকে স্কুলে পাঁঠাতে আর বেঁচে থাকার মতন খাদ্যের যোগান দিতে। আস্তে আস্তে ছেলে স্কুল এবং কলেজের পাঠ চুকিয়ে ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক-স্নাতকোত্তর শেষ করে আজ নাম করা সরকারি অফিসার। এর সবই সে করেছে কৃতিত্বের স্বাক্ষর রেখে। সন্তানের সাফল্য তারামন নিজের সব দুঃখ কষ্টের মলম হিশেবে ব্যবহার করে। স্বপ্ন দেখে সুখে শান্তিতে জীবনের শেষ প্রহরগুলো সমাপ্ত করার।



পাঁচ

জব্বার এসে তাকে আলতো হাত নেড়ে জাগিয়ে দেয়। সে তার ছেলের গাড়ীর ড্রাইভার। এসেছে মাসিক বিল শোধ করতে, গত কয়েকমাসের বিল শোধ না করায় কর্তৃপক্ষ বারবার কল দেয়াতে তাকে আসতে হোলো। তারামন তাকে

দ্যাখতেই ছেলের কথা জিজ্ঞেস করে, জব্বারের চোখে জল এসে যায়। জব্বার কোনও জবাব দিতে পারে না। খানিক বাদে বলে তার(তারামনের) ছেলের বিয়ে নিয়ে ব্যস্ত থাকায় আসতে পারছিলো না। এ কথা শুনে তারামন হাতের কাছের ব্যাগটিতে হাত দেয়। তারপর অনেক যতনে মুড়ানো কাপড়ের ভাঁজ থেকে বের করে গলার হারটি, যা সে আগলে রেখেছে বিগত পয়ত্রিশটি দিন নয় সপ্তাহ নয় মাস নয়, বছরজুড়ে। তার ছেলের বউকে বিয়েতে উপহার হিশেবে দেয়ার জন্যে।তারামন একবার তার হাতের দিকে তাকায় অন্যবার জব্বারের দিকে।জব্বারও হা করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আর কী-বা করতে পারে?! জব্বার তারামনের পা ছুঁয়ে বিদায় নেয়। বৃদ্ধাশ্রমের গেট থেকে বেরিয়ে এক্সেলারেতরে প্রবলভাবে চাপ দেয়,সে যে বুড়ির(তারামন) জীবনের ফিরিস্তি শুনতে শুনতে বড় বেশি দেরি করে ফেলেছে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:১৫

সুফিয়া বলেছেন:

http://www.somewhereinblog.net/blog/sufia

২| ১২ ই মে, ২০১৩ সকাল ১১:৫৩

বিলাল বলেছেন: মন ছুঁয়ে গেলো ভাই।

১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১২:২৮

আবুল মোকারম বলেছেন: ধন্যবাদ।

৩| ১২ ই মে, ২০১৩ দুপুর ১:৪৬

আদনান মাননান বলেছেন: Click This Link

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.