নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ হয়ে জন্মানোর মর্যাদাবোধের খোঁজে,,,,,
বাজার করতে গিয়ে এই ভরা শ্রাবণের বন্যায় গুলি গুলি বেগুন ছাড়া আর কিছুই পেল না শ্যামল। একে তো করোনার লকডাউন, তার ওপর বৃষ্টি। "ওদিকে উত্তুরে নাকি বন্যে হচ্ছে। সব পঁচে গেছে। কাচা বাজারে এখন আগুন।"__বিড়বিড় করে সে।
ভেবেছিল আগে-ভাগেই কিছু কিনে নেবে।
কিন্তু বৃষ্টিতেই রিক্সার কদর বাড়ে কিনা, ভাড়া কিছু বেশিই পেল। সময় মতো আর বাজার করার সময়টা ঠিক হয়ে উঠল না।
এক মনে ভাবল একটা মুরগি নেয়। দাম শুনে স্ফুট স্বরে বলে ___"একটা টাচ ফোন কিনতি হবে। এখন অ্যাঁতো খরচ কললে হবি নে। কমলের কী যেন ক্লাসে নাগবে।" চট্ করে আজকাল আর অনেক কিছুই সে মনে করতে পারে না। বয়স হলে নাকি সব আস্তে আস্তে কমতে থাকে।
মরচে ধরা তালাটা খুলতে খুলতে ভাবলো, "আজ তাইলে অ্যাখনো কেউ আসেনি!"
তারপর কল পাড়ে হাত-মুখ ধুয়ে, উনুনে আলু-বেগুন সেদ্ধ করে সে গিলতে বসলো। খেয়ে আবার রিক্সাটা নিয়ে বেরুবে।
ভাতে তরকারি মাখিয়ে প্রথম নোলা মুখে দিয়েই বিকূট স্বাদে মুখটা বিকৃত হল ওর। "কী তেঁতো! "ওয়াক্...থুহ্...!"___ ফেলে দিল মুখের সবটা। সারাদিনের কাজের শেষে ক্ষিধেতে পেটে চোঁ চোঁ করছে। এমনিতেই মেজাজ তিরিক্ষি হয়ে আছে। তার ওপর এই স্বাদ! সব লাত্থি দিয়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে হল।
সেই রাগে থালার ভাত-তরকারিটুকু ফেলে দিতে উদ্ধত হয়েও ফেলে দেয়া হল না। এই স্বাদ, এই অবস্থা... ওর কেমন যেন চেনা চেনা লাগে।
কেউ একজন যেন বলেছিল, "অন সিজনের গুলি বেগুন তিতা হয়।" কে কে...হাতড়ে ভাবতে ভাবতে স্মৃতির ধুলো জমা বছর বিশ-পঁচিশেক আগের দিনের একটা ছবি ভেসে আসে চোখের সামনে।
ভাঙাচোরা ধুলে ভরা এক কুঁড়ে ঘরের দুপুর বেলা। তিনটে হাড় জিরজিরে প্রাণি আহারে উদ্ধত। চামড়া পুড়ে তামাটে রঙ নিয়েছে বুড়ো প্রাণিটার। সেদিনও আলু-বেগুনের সিদ্ধ ঘাটি আর ভাত ছিল থালায়।
মুখে এক নোলা দিয়েই "ওয়াক থু" করে ফেলে দিল ছোকরা গোছের ছেলেটা।
"কী রান্দি ছো, অ্যাঁ?"___ অদূরে বসা তল্লা বাঁশের মতো শ্রীহীন স্ত্রীলোকটিকে উদ্দেশ্য করে দাঁতে দাঁত চেপে বলল সে। "তেঁতো...গেলা যায় না!"__নটখট স্বাদে মুখ বাঁকিয়ে আছে সে।
স্ত্রীলোকটি পাশের বুড়ো প্রাণিটির দিকে চাইল। "কী গো! তেঁতো লাগছে?__রাজ্যের জিজ্ঞাসা যেন চোখে মুখে। "তুমি তো খাচ্ছো দিব্যি!"__ সান্ত্বনা পেতে চাইছে যেন।
বুড়োর খাওয়া দেখে স্বাদের গুরুতর হেরফের হয়েছে কিনা_ বোঝার উপায় নেই। মুখ তুলে নির্বিকার ভাবে বললে, "কই না তো? তেঁতো নাগছে না তো!" যেন খুব স্বাদ হয়েছে তেমনি "...উমম..." শব্দ করে মুখের অবশিষ্টটুকু গিলে পূর্ব কথার জের ধরে বললে,
"তোর পাতে কিছু পড়িছ্ কিনা দ্যাখ! ভালোই তো নাগছে।"
"হ্যাঁয়...ওটুক ফেলে দে আরেকটু নে।"___তড়িঘড়ি করে স্ত্রীলোকটি। "তোর বাবা তো দিব্যি খাচ্ছে!"
ছেলেটি আরেকটু ঘন্ট নিয়ে মুখে দিয়েই ফেলে দিল। "তোমার মুখি কোনো স্বাদ নেই। খাও গে তুমি!"__বাপকে উদ্দেশ্য করে বলে উষ্মা ভরে থালা ঠেলে দিয়ে উঠে গেল।
"হ বাজান। বুড়ো হলি মনে হয় সব স্বাদ কমি যায়!"__বুড়ো নিজের খাওয়ায় মন দেয়।
তারপর অনেকটা সময় চলে গেছে। আনমনে ছোট্ট একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছাড়ে...
আচমকা কী যেন মনে হতেই শ্যামল আঙুল গোণা শুরু করে। আর কী সব হিসাব নিকাশ করে বিড়বিড় বিড়বিড় করে।
"বাজানের বয়স... আমার বয়স... কমলের বয়স হিসেব কল্লে...।"
শ্যামলের হিসেব মেলে না। বয়স বাড়লে কেমনে মানুষের স্বাদ কমে! তার তো এখন তেঁতোই লাগল!
"বাজান কি তালি মিছা কতা কইছিল...
নাকি সইত্য চাপা পইড়া যায়? বয়সের ভারে..."
ভাবতে ভাবতে বুড়ো বাপের সেদিনের সেই মুখ নিচু করে একমনে খেয়ে যাওয়া আর নিজ ছেলের ছবি ভেসে ওঠে শ্যামলের ছলছল দু'চোখে।
কেমন যেন অসম্ভব ভারী কী একটা কিছু চারপাশটা তখন নিশ্চুপতার চাদরে মুড়ে দিয়ে গেছে!
২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৪৪
মাস্টারদা বলেছেন: মনে পড়ে গেল বীরবল আর সম্রাট আকবরের বেগুন সমাচার।
যাইহোক, বেগুনের রুচি বর্ধক গুণ বে-গুণী স্ব-ভোজীও অস্বীকার করতে পারবে না। কিন্তু সেজন শেষের পরে বয়সোত্তীর্ণ বুড়ো গাছের ছোট ছোট বেগুনের তেঁতো গুণ না খেলে মাথা দিয়ে স্বাদ বুঝা প্রায় অসম্ভব। গরীব চাষী আর গরীব মানুষ এই বেগুনের উৎপাদক আর খাদক।
আপনার ভোজন রসনার লাস্ট পূর্ণ হোক। ;-)
মন্তব্যে অনেক অনেক ধন্যবাদ।
২| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১:২৫
সন্ধ্যা রাতের ঝিঁঝিঁ বলেছেন: গল্প একদম ছুঁয়ে গেছে, ফেলে আসা অতীত মনে পড়ে গেল। গল্পে +++
গুলি গুলি মানে কি?
২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৪৫
মাস্টারদা বলেছেন: ছোট ছোট...টেনিস বলের থেকে ছোট ছোট আর শক্ত বেগুন।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:০০
রাজীব নুর বলেছেন: বেগুন ভালো করে রান্না করতে পারলে তিন থাল ভাত খাওয়া যায়।
সামান্য বেগুন ভাজা দিয়ে খিচুড়ি করেছেন? দারুন। অথবা লুচি দিয়ে?