নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছুই হয়নি মর্মে জানা/ \"জানি জানি\"--তবুও চড়াই গলা/ আমি কত বড় তালকানা!

মাস্টারদা

মানুষ হয়ে জন্মানোর মর্যাদাবোধের খোঁজে,,,,,

মাস্টারদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

চশমা

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:০৩



মেঘো গরমে ভ‍্যাপসা শ্রাবণের দুপুর। গুরু গুরু সুরে ডমরুর তালে তালে বাদলের উদ‍্যম নৃত্য চলেছে বাইরে। বৃষ্টির দিনে ছাত্র কিছু কম আসে। আজও তার ব‍্যতিক্রম কিছু হয়নি।
"মেঘের আকাশে কটা বাজে___সেইটাও ঠাওর করা কষ্টের", বিড়বিড় করতে করতে হাতে কতগুলো নথি নিয়ে অধ‍্যক্ষের কক্ষ হতে বের হলো বিপু। উদ্দেশ্য কেরাণির কক্ষ। "কুকুরের পায়ে জিরুনি আছে কিন্তু পিয়নের নেই।" কিছুটা এগিয়ে নজর পড়লে আরো খানিকটা দূরে স্কুলের বারান্দায়। লোকটা এখনো বারান্দার পাশে দাঁড়ায়ে। বাইরে কিছু যেন দেখছে খুব মনোযোগে।

____"স‍াব! আপ আবভি ইধার খাড়া হে?" বিপু এগিয়ে এসে বলল। "হাম বাতায়ে পণ্ডিত কো?" ক্লাসের সামনে দাঁড়িয়ে আছে দেখলে অধ‍্যক্ষের বকার ভয়ে সে ব‍্যস্ত হয়।

____"না না। অপেক্ষা করতে আমার সমস্যা হচ্ছে না।" কথা বলে আগন্তুক। "মাস্টারমশাই পড়ানো শেষ করে নিন। আমি অপেক্ষা করছি।"

____"লেকিন সাব, ইধার... অর পাড়হাই খতম হোনে কে তো য‍্যাদা টাইম ওর লাগে গা!"
____"কোহি তাকলিফ নেহি। হাম ইনতেজার কারলেঙ্গে।"


কেমন যেন বিরক্তিকর সন্দেহ সন্দেহ লাগে বিপুর। কোন আপদ? বেশ-ভূষায় তো ভালোই ঠেকছে। খানিক আগে বলে, সামসুর স‍্যারের সাথে দেখা করতে চায়। কী নাকি দরকার। সেই থেকে ঠায় দাঁড়ায়ে আছে।


ডালে ডালে জলের তালে তালে পত্র-পল্লবে নৃত্য চলেছে। বছর বারো আগের কথা। সেদিনও এমনি দুপুরে ঝুম নেমেছে বৃষ্টি। আইসিটির নতুন স‍্যারটা ঢুকলেন ক্লাসে। বছর পুরেনি যোগ দিয়েছেন। বয়সে যেমন তরুণ, শেখানোতেও তেমনি অরুণ ধরণ।

____"আচ্ছা, ধরো তোমাদের যদি আমি ১০০ টাকা দিই, কি করবে তোমরা?"

একজন জবাব দিল, "আমি একটা খেলনা গাড়ি কিনব, মাস্টারমশাই!"

আরেকজনের জবাব, "ক্রিকেট ব্যাট কিনব।"

____"আমি সমস্ত বন্ধুদের সাথে সামোসা খাব।" পেছনে থেকে বলল একছাত্রী। ডানের বেঞ্চ থেকে জবাব এলো, "আমি আমার মাকে একটা চশমা কিনে দেব।"

____"তোমার বাবা তোমার মায়ের জন্য চশমা কিনতে পারেন।" খানিকটা হেসে যুক্তি দিলেন মাস্টারমশাই। "তুমি কেন কিনতে চাও?"

____"আমার বাবা নেই। মা আমাদের মানুষ করার জন্য কাপড় সেলাইয়ের কাজ করে। মা'র চোখে সমস্যা হয়েছে। এখন আর ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। খরচের কারণে চশমাও কেনে না। তাই আমি তার জন্য একটা চশমা কিনতে চাই।"

ছাত্রদের চিন্তাধারা ধরার জন‍্যে তিনি এমনটা জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু এতটা গভীরে যে আশার আলো পাবেন তা বোধহয় তিনি ভাবেননি।

ক'দিন পরে চশমা কেনার মতো কিছু টাকা ছেলেটির হাতে দিয়ে বললেন, "তোমার মাকে বলবে, এটা আমি তোমাকে ধার দিয়েছি। তুমি যখন বড় অফিসার হবে তখন তুমি চাইলে এটা ফেরত দেবে। সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই তোমার মঙ্গল করবেন!"

পেতলের থালায় ঘণ্টার হাতুড়ি পেটার শব্দ হলো। "ঢঙ্ ঢঙ্ ঢঙ্...!"
খানিক বাদে শ্রেণিকক্ষ থেকে বই হাতে, পাঞ্জাবি পরা, সাদা চুলের এক প্রবীণ বেরিয়ে এলেন।

__"নমস্কার, মাস্টমশাই!", এগিয়ে গিয়ে শিক্ষকের পা ছুঁয়ে আগন্তুক বলল,"কেমন আছেন?"

___"নমস্কার...ভালো আছি, আলহামদুলিল্লাহ্!" মুখটা হালকা উঁচূ করে চশমার ভেতর দিয়ে চেনবার চেষ্টা করলেন। "কী খবর?" গলার সুরে অপরিচিতের পরিচয়ের জিজ্ঞাসা।

___"এই যে আপনার চশমা।" হাতের চকচকে নতুন চশমার কেসটা এগিয়ে দিতে দিতে বলল আগন্তুক।

___"কিন্তু... আমি তো কোনো চশমা অর্ডার করিনি।" চোখের চশমাটা আরেকটু ঠিক করে আগন্তুকে পুনঃ চেনবার চেষ্টা করলেন। মোড়ের "নবীন অপটিকস'র কর্মচারী" কিনা দেখতে যেয়ে পোষাক দেখে সন্দেহ হলো মাস্টারমশাইয়ের।

___"অর্ডার দিয়েছিলেন, তবে আপনার হয়তো স্মরণ নেই। কিন্তু অর্ডার দিয়েছিলেন।" এতক্ষণে সে কেস খুলে চশমাটা বের করে ফেলেছে। পুরনো চশমাটা খুলে নিয়ে নতুনটা পরাতে পরাতে বলল, "বারো-তেরো বছর আগে। গড়তে গড়তে ডেলিভারী দিতে দেরি হয়ে গেল।"

চকচকে নতুন ফ্রেমের ভেতর দিয়ে তাকায়ে থাকলেন খানিকক্ষণ। বর্তমানের ভেতর দিয়ে অতীতকে পড়তে চাইলেন যেন। বা-হাতটা ঈষৎ উঁচিয়ে তর্জনীর ইশারায় ধীরে সুস্থে বললেন,
___"সোমেন!"

আরেকবার বৃদ্ধের পা ছুঁয়ে গেল সোমেনের কর।
চশমার পেছনের চোখজোড়া ততক্ষণে চিকচিক করেছে অশ্রু মতির হাসিতে।


মধ‍্যাহ্নে দোকান বন্ধ করে যাবার সময় নবীন শ্রেষ্ঠী খেয়াল করলে, স্কুলের ঠিকানা জানতে চাওয়া লোকটার গাড়ি এখনও দোকানের বিপরীতে ঠায় দাঁড়িয়ে। এগিয়ে গাড়ির স্টিকারটা পড়লো সে।

"সোমেনচন্দ্র চক্রবর্তী।
এসি ল‍্যান্ড, দিরাই, সুনামগঞ্জ।"

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ১২:১৮

রাজীব নুর বলেছেন: আমার অতি দ্রুত চোখের ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত।
চোখে বেশ সমস্যা হচ্ছে। ডাক্তারের কাছে যাচ্ছি না কারন আমার চশমা পছন্দ না।

২| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:১৭

শেরজা তপন বলেছেন: ঘটনাটা সম্ভবত সত্যি-
দারুল লিখেছেন! লেখায় ভাল লাগা

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:২৯

মাস্টারদা বলেছেন: ধন‍্যবাদ

৩| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৮:১৮

শেরজা তপন বলেছেন: দুঃখিত; দারুল নয় দারুন হবে

৪| ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০২১ রাত ৯:৩৩

নিমো বলেছেন: ভালো লাগল আপনার লেখাটা।

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ১১:৫৩

মাস্টারদা বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.