নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছুই হয়নি মর্মে জানা/ \"জানি জানি\"--তবুও চড়াই গলা/ আমি কত বড় তালকানা!

মাস্টারদা

মানুষ হয়ে জন্মানোর মর্যাদাবোধের খোঁজে,,,,,

মাস্টারদা › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিক্ষণীয় গল্প ("লাভ ইউ অল\'!")

১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ ভোর ৫:২০



ভারতের কোনো এক শহরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নতুন এক শিক্ষিকা বদলি হয়ে এলেন। নতুন স্কুলেও তিনি তার অভ্যাস মতো '…লাভ ইউ অল' বলে পাঠদান শুরু করতে লাগলেন। কিন্তু তিনি জানতেন যে, এখানে তিনি সত্য বলছেন না। একটা ফাঁকি আছে। আর কেউ না জানলেও তিনি জানতেন যে ক্লাসের সবাইকে তিনি এক‌ই রকম ভাবে ভালবাসেন না। বা ভালোবাসা আসছে না সবার প্রতি সমান। একজনের প্রতি তো নয়ই; নাম রাজু!

ক্লাসে অমনোযোগী, সারাক্ষণ অন্য মনস্ক, উষ্কখুষ্ক চুল, অপরিচ্ছন্ন পোশাক-আশাক, সুলেস খোলা, শার্টের বোতাম খোলা, সহজ প্রশ্নের উত্তরেও হাদাগঙ্গারাম মার্কা আচরণ… এক কথায় অপদার্থ ছাত্রের সব বৈশিষ্ট্য একা রাজু সবটা ধারণ করে আছে যেন। বারম্ববার বলার পরেও শুধরানোর চেষ্টাও করে না। শুধু একটা বিষয়ে ব্যতিক্রম। দুষ্টুমি করে না। ঝিম মেরে থাকে। কেমন যেন শূন্য দৃষ্টি! দেখে স্পষ্ট বুঝা যেত যে, শারীরিকভাবে ক্লাসে উপস্থিত থাকলেও মন তার অন্য কোথাও। প্রশ্নের উত্তর দেয় না, জানতে চায় না, এমনকি বকা-তিরস্কারেও তার কিছুতেই যেন কিছু তার গায়ে লাগে না! নির্বিকার!
ধীরে ধীরে মিসের মনে প্রথমটায় বিরক্তি তারপর তা অবজ্ঞায় রূপ নিতে শুরু করল।

ক্লাসে ঢুকতেই মিসের বিদ্রুপাত্মক সমালোচনা থেকে শুরু করে সব রকম খারাপ কাজের উদাহরণ হতে থাকল সে। সহপাঠীরা দেখে খিলখিলিয়ে হাসে‌। মিসও এখন তাকে পচায়ে আনন্দ পান। যদিও রাজু এসবের কোনো কিছুর‌ই উত্তর করে না। নিষ্প্রাণ পাষাণের মতো চোখ তুলে শুধু ফ্যালফ্যালিয়ে চাইত। সমস্ত ধমক, ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ আর শাস্তির বিনিময়ে সে শুধু মাথা নীচু করে নিশ্চুপতা দিতো।

প্রথম সেমিস্টার শেষ। রেজাল্ট কার্ডে মিস ওর সম্পর্কে সব খারাপ কথা লিখে দিলেন। মা-বাবাকে দেখানোর আগে রিপোর্ট কার্ড যেতো হেড মিস্ট্রেসের কাছে। তিনি রাজুর রিপোর্ট দেখে মিসকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, "মিস! রিপোর্ট কার্ডে অন্তত কিছু তো অনুপ্রেরণার কথা লেখা উচিত ছিলো! আপনি তো যা কিছু লিখেছেন তার থেকে রাজুর বাবা একদম নিরাশ হয়ে যাবেন।"

___"মাফ চাইছ!", বললেন মিস। "ও এক নম্বরের অমনোযোগী আর নিষ্কর্মা বাচ্চা। আমার মনে হয় না আমি ওর সম্পর্কে ভাল কিছু লিখতে পারবো!" মিস অবজ্ঞা আর তাচ্ছিল্য ভরে কথাগুলো বলে তিনি উঠে চলে গেলেন।

পরের দিন মিস নিজের ডেক্সের ওপর কিছু রিপোর্ট কার্ড দেখলেন। সেগুলো এমনিতেই উল্টে দেখলেন, সেটা রাজুর রিপোর্ট কার্ড। তৃতীয় শ্রেণীর। কৌতূহল বশত পাতা খুলতেই তার চক্ষু চড়কগাছ! উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয়েছে রিপোর্ট কার্ডটিতে! নম্বরের ঘরে স্টার চিহ্নিত ফুল মার্কস! প্রথম স্থান! স্মাইলিসহ শিক্ষক মন্তব্য, "...রাজুর মতো বুদ্ধিমান বাচ্চা আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি। অতি সংবেদনশীল এবং নিজের সহপাঠী আর শিক্ষকের প্রতি সম্মান এবং সহযোগিতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত!"
পরের কার্ডেও। অন্তিম সেমিস্টারেও প্রথম!

অস্থির ভাবে মিস চতুর্থ শ্রেণীর রিপোর্টটাও খুললেন। "…রাজুর লেখা পড়ার ওপর ওর মায়ের অসুখের গভীর প্রভাব পড়ছে। পড়াশোনার প্রতি অমনোযোগী হয়ে উঠছে।"

আরেকটা, "মায়ের সাথে সাথে রাজুর জীবনের যাবতীয় আশা ভরসা আর সুন্দর ভবিষ্যতের আলোও যেন চলে গেছে। তবুও তাকে বাঁচাতে হবে। আরও দেরি হয়ে যাওয়ার আগে!"

মিসের চোখে মুখে এবার অপরাধবোধের ভারী ছাপ দেখা দিল। যার ভালোবাসা সবচেয়ে দরকার তারেই কিনা তিনি নিত্য নতুন আয়োজন করে ঘৃণার-মালা পরাচ্ছেন! মরতে বসা সম্ভাবনার একটা কুঁড়িকে মাড়িয়ে চলেছেন প্রতি নিয়ত! মিসের সবকিছু কেমন যেন ঝাঁপসা হয়ে এল। তারপর টপ টপ করে ঝরল কয়েক ফোঁটা।

পরের দিন পড়া বুঝানোর সময় রোজকার মতো রাজুর দিকে একটা প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন, আর রাজুও যথারীতি মাথা নীচু করে নিল। কিন্তু যখন বেশ কিছুক্ষণ পরেও আজ ধমক বা শ্লেষাত্মক কথার কোনটাই সে শুনতে পেল না বা সহপাঠীদের সম্মিলিত হাসির শব্দ কানে এল না তখন সে ধীরে ধীরে মাথা উঁচু করে মিসের দিকে চাইল। অপ্রত্যাশিতভাবে মিসের মাথা মুণ্ডিত, কেশহীন। আর মুখে মৃদু হাসি। রাজুকে কাছে ডাকলেন এবং প্রশ্নের উত্তর বলে দিয়ে তা' বলতে বললেন। তিন-চারবার চেষ্টার পর অবশেষে সে বলতে পারল। জবাব দেওয়ার সাথে সাথে মিস খুশি হয়ে শুধু নিজে তালি দিলেন না, বরং অন্য সব বাচ্চাদেরকেও তালি দিতে বললেন।

তারপরে এটা অনেকটা রোজকার কাজ হয়ে গেল। উত্তর নিজে থেকে বলে দিতেন, তারপর সস্নেহে রাজুকে বাহবা দিতেন। সব ভালো কাজের উদাহরণ রাজুর নামে বলতে লাগলেন। ধীরে ধীরে বিষণ্ণতার কবর ফুঁড়ে রাজু বেরিয়ে আসল। এখন আর মিসকে প্রশ্নের সাথে উত্তর বলে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। সে ঠিক ঠিক উত্তর দিয়ে সবাইকে প্রভাবিত করতে এবং নতুন নতুন প্রশ্নও জিজ্ঞেস করতে লাগল। তার চুলগুলো এখন অনেকটা পরিপাটি থাকে, জামাকাপড়ও যথেষ্ট পরিষ্কার। হয়তো নিজেই কাচঁতে শুরু করেছে। দেখতে দেখতে বছর শেষ। রাজু দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ হল।

বিদায় অনুষ্ঠানে সব বাচ্চারা মিসের জন্য সুন্দর সুন্দর উপহার নিয়ে এল। মিসের টেবিলের ওপর ছোটখাটো একটা পাহাড় জমে গেল। সুন্দর সুন্দর প্যাক করা উপহারের ভীড়ে পুরনো কাগজে মোড়া একটা উপহার! বাচ্চারা তাই দেখে হাসতে লাগল।

কারও জানতে বাকি রইল না যে, উপহারটা রাজুই এনেছে। মিস উপহারের ছোট সেই পাহাড় থেকে সেটা বের করে খুললেন। ভেতরে অর্ধেক ব্যবহার করা মহিলাদের আতরের একটা শিশি আর এক হাতে পরার মতো বড় একটা বালা। বেশির ভাগ মতিই ঝরে গেছে। মিস চুপচাপ শিশি থেকে খানিকটা আতর নিজের গায়ে মাখলেন এবং বালাটা হাতে পরে নিলেন। বাচ্চারা অবাক হয়ে চেয়ে র‌ইল। রাজুও। শেষে ধীরে ধীরে মিসের কাছে এগিয়ে এসে থমকে থমকে বলল, "আপনার গা' থেকে... আমার মায়ের মতো গন্ধ আসছে।"

এরপর সময়ের স্রোতস্বিনীতে দিন সপ্তাহে, সপ্তাহ মাসে আর মাস বছরে বদলে যেতে লাগল। বছরান্তে মিসের কাছে নিয়মিত একটা চিঠি আসতো। "এই বছর অনেক নতুন টিচারের সংস্পর্শে এসেছি কিন্তু আপনার মতো কেউ ছিলো না।" __আরো কিছু কথার মধ্যএ এমনি থাকতো সে চিঠির ভাষা।

তারপর স্কুল পর্ব শেষ হল এবং চিঠির ধরাবাহিকতা কমে এল। এদিকে মিসও অবসরে গেলেন। বিরতি দিয়ে এমনি আরেকদিন আবার এল চিঠি। সঙ্গে পয়গাম।

"এমবিবিএস শেষ। সরকারি হাসপাতালে যোগ দিয়েছি‌। এই মাসের শেষে আমার বিয়ে। আপনাকে ছাড়া বিয়ের কথা ভাবতে পারি না। আরেকটা কথা, জীবনে আমি অনেক লোকের সাথে মিশেছি, কিন্তু আপনার মতো কেউ নেই!
___ রাজু।"

সাথে দিনক্ষণ ঠিকানাসহ এয়ারের টিকিট।

তিনি স্বামীর থেকে অনুমতি নিয়ে সেই ঠিকানায় রওনা দিলেন। বিয়ের দিনে যখন বিয়ের আসরে উপস্থিত হলেন, তখন খানিকটা দেরি হয়ে গেছে। ভাবলেন বিয়ের অনুষ্ঠান নিশ্চয়ই শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু পৌঁছে দেখলেন এখনো কিছুই শুরু হয়নি। শহরের বড় বড় ডাক্তার, ব্যবসায়ী, এমনকি পুরুত মশাই পর্যন্ত অস্থির হয়ে উঠেছেন। লগ্ন যে যায় যায়! এতো গুরুত্বপূর্ণ এখনো কার আসা বাকি! কিন্তু রাজু বিয়ের অনুষ্ঠানের মণ্ডপের বদলে গেটের দিকে চোখ!

তারপর সবাই দেখে ছোটবেলার সেই টিচার গেটের ভিতরে ঢুকতেই রাজু পড়িমরি করে ছুটলেন। তারপর হাত ধরে নিয়ে গেলেন মণ্ডপে। সেই মতি-খসা বালাটা সেই হাতে! "…আপনারা সবাই সব সময় আমাকে আমার মায়ের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেন?" সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলা আরম্ভ করলো।"আর আমি বারবার বলতাম যে, খুব শিগগির সবাইকে তাঁর সাথে পরিচয় করিয়ে দেবো, এই ইনি আমার মা!"




(সংগৃহীত ও সংশোধিত।)

আজ ইচ্ছে ছিল কবিতা লিখব। কিন্তু সংগৃহীত গল্পটা পড়ে (অনেকেরই হয়তো পূর্ব পড়া) আনন্দটা সবার সাথে ভাগাভাগি করতে তর সইল না। সত্য-অসত্য জানিনে কিন্তু আমি সবসময় শিখতে চাই।
যাইহোক গল্পটা জাতীয় শিক্ষক বাতায়ন থেকে আর ছবি পিন্টারেস্টে থেকে গৃহীত।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৮:০৮

নজসু বলেছেন:



গল্পটা আগেও পড়েছি। কয়েক বছর আছে তৃতীয় শ্রেণির বাংলা বোর্ড বইয়ে গল্পটি ছিলো।
গল্পে শিক্ষিকার নাম ছিলো নাসরিন। ধন্যবাদ আপনাকে গল্পটি পুনরায় পাঠ করার সুযোগ করে দেবার জন্য।
ভালো থাকবেন।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৮

মাস্টারদা বলেছেন: ...রয়ে গেল কত অজানা রে!

ধন্যবাদ

২| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর গল্প।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭

মাস্টারদা বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬

বিজন রয় বলেছেন: সুন্দর। শিক্ষণীয়।
আপনি পরপর শিক্ষণীয় পোস্ট দিচ্ছেন।
খুব ভালো।

এবার বললেন কবিতা পোস্ট করবেন।
তাই করুন।

১৮ ই জানুয়ারি, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭

মাস্টারদা বলেছেন: ধন্যবাদ

৪| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:০১

রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: অনুবাদ কি আপনিই করেছন না সংগৃহীত? সুন্দর একটা লেখা।

৫| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ২:৪৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: মাস্টারদা,




একাধারে শিক্ষনীয় এবং মন ছুঁয়ে যাওয়া!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.