![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সব রাজনীতিবিদ যদি কবিতা ভালোবাসতেন অথবা সব কবি যদি রাজনীতিবিদ হতেন তাহলে পৃথিবীটা আরো সুন্দর ও বাসযোগ্য হয়ে উঠতে পারত। -জন এফ কেনেডী
১
মাঝে মাঝে আমি মৃত্যু নিয়ে খুব ভাবি। চিন্তা করি, আমার মৃত্যুতে কয়জন কাঁদবে? আমার জন্য কাঁদার মতো আছে কি কেউ? আমি কি মানুষের সাথে তেমন কোন সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পেরেছি? অনেক চিন্তা করেও হাতে গুনে দু-চারজনের বেশী এগোতে পারি না। কারণ, ঝামেলা টামেলা এড়িয়ে চলি বলে মানুষের বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়া হয়নি আমার। মানুষের কঠিন দুঃসময়ে তাঁর কাঁধে ভরসার হাত রাখা হয়নি কখনো, তাহলে আমার জন্য কাঁদার মতো মানুষ সৃষ্টি হবে কোন দুঃখে? কেউ রক্ত লাগবে বললে, আমি আতংকিত হয়ে পড়ি। রক্তের যোগাঢ় কিভাবে করবো? এই ঝামেলা কিভাবে সামাল দেবো? কেউ অসুস্থ বললে আমি ভয়ে সিঁটিয়ে মরি, তাকে আবার দেখতে যাওয়ার হ্যাঁপা কিভাবে পোহাবো? কেউ মারা গেছে বললে, ভেতরে আমি ডুকরে উঠি। কিন্তু তাঁর লাশ দেখার সাহস হয় না আমার। তাই আমার জন্য কেউ কাঁদবে, কখনো তেমন ভরসা পাইনি।
নেহলিন আপু, আপনি বড় ভাগ্যবতী! আপনার জন্য আত্নীয়-অনাত্নীয় সমানে কেঁদেছে। আইআইইউসিয়ান প্রত্যেকটা ভাইবোনের নোনাজল অজান্তেই গড়িয়ে নেমেছে আপনাকে হারোনোর বিচ্ছেদ-যন্ত্রণায়। আপনাকে আমি কখনো দেখিনি, শুনিনি আপনার কোন কথা, চিনতামও না আপনাকে, তবু বুকের ভেতর সব হারানোর হাহাকার উঠেছে আপনার মৃত্যুর খবরটা শুনে।
নেহলিন আপু, আপনি সত্যিই বড় ভাগ্যবতী!
২
বৃহস্পতিবার হচ্ছে জুমার আগের দিন। বৃহস্পতিবারের রজনীকে চন্দ্রমাস অনুসারে জুমার রজনী হিসেবেই ধরা হয়। এই দিনে মৃত্যুলাভকে আমরা মুসলমানেরা বিশেষ প্রাপ্তি বলে ধরে নিই। নেহলিন আপু, আপনি বড় ভাগ্যবতী! আপনার মৃত্যু হয়েছে বৃহস্পতিবার দিনটাতেই (ঠিক যেমন হয়েছিল নিয়াজ মোর্শেদ ভাইয়েরও)। বৃহস্পতিবারের রজনীতে আপনার জন্য দোয়ার পর দোয়া পৌছেছে মহান ক্ষমতাধরের কাছে। বিরামহীন নোনাজল গড়িয়ে পড়েছে, আপনার রুহের মাগফেরাত কামনায়। নামাযের পর কিংবা আপনার স্মরণে দু’হাত আপনাতে উর্ধ্বে উঠেছে, আপনার জন্য প্রাণ-মন ঢেলে প্রার্থনারত হয়েছে সবাই। ছেলে-মেয়ে, যুবা-বৃদ্ধা সকলেই আপনার জন্য কেঁদেছে, আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ করেছে।
আপনার জানাযা হয়েছে পবিত্র জুমার পর। হাজারো মুসল্লী আপনার সেই জানাযায় শরীক হয়েছে, দোয়ায় শামিল হয়েছে। কেঁদে কেটে চেয়েছে, জান্নাতুল ফিরদাউসে আপনার চিরস্থায়ী আবাস নিশ্চিত হোক।
নেহলিন আপু, আপনি বড় ভাগ্যবতী! আপনি এমন বিশাল নামাযে-জানাযা পেয়েছেন। এতগুলো মানুষের দোয়া পেয়ে যাত্রা করতে পেরেছেন, মহান প্রভুর পানে, হয়তো মহান আল্লাহর জান্নাতের একজন সম্মানিত মেহমান হয়ে!
৩
মৃত্যু এক অবধারিত পরিণতি। আজ হোক কাল হোক মৃত্যু আসবেই। অবশ্যই আসবে। কিন্তু এমন সৌভাগ্যের মৃত্যু জুটে কজনের ভাগ্যে? কয়জন পায় কান্নার জন্য হাজারো সুহৃদ? মানুষকে ‘একটু দোয়া করো’ এই কথা বলার দরকার পড়ে না কয়জন মৃতের মা-বাবার? এত অল্প বয়সে কয়জনের ভাগ্য জুটে এমন মহা সম্মান?
সত্যিই আপনি বড় ভাগ্যবতী!
মৃত্যু আমাদের সবারই হবে। কিন্তু আপু, আপনার মতো মৃত্যু আমাদের নসীবে হবে কি? আমাদের জন্য কি কাঁদবে এই এতগুলো মানুষ? আমাদের জানাযায় কি জনতার এমন ঢল নামবে? আমাদের জন্য এত দোয়া কি আল্লাহর আরশে পৌছবে?
কি জানি, হয়তো হবে, হয়তো হবে না!
নেহলিন আপু আপনি ভাগ্যবতী! কারণ, আপনার আর দোলাচলের সুযোগ নেই। আপনি অজানার পথে যাত্রা করেছেন, মহা আনন্দের এক মৃত্যু-পরবর্তী পরিবেশ পেয়ে। মৃত্যুকালে মানুষ যা চায়, যা কামনা করে, আপনার জুটেছে ঠিক তা-ই। অসীমলোকে আপনার যাত্রা হয়েছে, ঐশী ও পূতঃ-পবিত্র এক আবহ নিয়ে।
নেহলিন আপু, আপনি সত্যিই বড় ভাগ্যবতী!
৪
নেহলিন আপু, আপনার মতো আরো অনেকই ভাগ্যবতী আছেন। তাদের ভাগ্য যে, তাঁরা আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো একটা মহান বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন। তাঁরা হাসপাতালের বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন ঠিকই, তবে তাদের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে অপেক্ষা করছেন হাজারো আইআইইউসিয়ান। যদি সম্ভব হতো, প্রত্যেকটা বোনের যন্ত্রণা-লাঘবে আমাদের আইআইইউসিয়ান ভাইবোনেরা নিজেরা ব্যথাটুকু নিয়ে তাদের মুক্তি দেয়ার যথাসাধ্য চেষ্টা করতেন। শত শত আইআইইউসিয়ান নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন, রক্তের অভাবে আমাদের কোন বোন যেন মারা না যায়। তাই রক্তের অভাব ঘটতে দেয়নি তাঁরা এতটুকুও। ছায়ার মতো প্রত্যেকটা আহত বোনের পাশে থেকেছে তাঁরা। শিক্ষক থেকে শুরু করে কর্মকর্তা-কর্মচারী পর্যন্ত সবাই যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে, করে চলেছে। আল্লাহর কাছে ফরিয়াদের পর ফরিয়াদ হচ্ছে, মহান দয়াময় যেন আমাদের বোনদের উপর রহম করেন, তাঁর অনুগ্রহের সদয় দৃষ্টি রাখেন।
আইআইইউসির স্বপ্নদ্রষ্টাদের নাকি স্বপ্ন ছিল, এই বিশ্ববিদ্যালয় হবে, উদার, নৈতিক চিন্তা সমৃদ্ধ ও মানবিক হৃদয় সম্পন্ন এক জনগোষ্ঠীর মিলনক্ষেত্র। আমাদের আহত বোনদের সৌভাগ্য যে, তাঁরা এমন এক সৌহার্দ্যপূর্ণ, উদার ও মানবিক হৃদয় সম্পন্ন কিছু মানুষের পরশে ধন্য হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
৫
নেহলিন আপুর জন্য কাঁদছে হাজারো মানুষ। দোয়া করছে, ফরিয়াদ করছে পরিচিত-অপরিচিত, আত্নীয়-অনাত্নীয় অনেকেই। আমি সেসব দেখছি, বড় আগ্রহ নিয়ে দেখছি। ভাবছি, এই নেহলিন আপুটা কি এমন পূণ্য করেছিলেন যে, তাঁর ভাগ্যে এমন মৃত্যু জুটেছে? সব দেখে-শুনে হয়তো কিছুটা ঈর্ষাকাতরও হয়েছি। ইশ, যদি এমন মৃত্যু কখনো পেতাম!
চিরস্থায়ী আবাসস্থলের একজন চিরস্থায়ী বাসিন্দা হোক, আমাদের এই আপু। এই কামনা করছি, তাঁর মৃত্যু-পরবর্তী কাল থেকেই। মনে পড়ছে সেই দুটো লাইন... ভাবছি, আমার ভাগ্য কি এমন হবে? মরণ কালে ভুবন কি কাঁদবে আমার মতো অতি ক্ষুদ্র এক নরাধমের জন্য?
“এমন জীবন হবে করিতে গঠন
মরণে হাসিবে তুমি কাঁদিবে ভুবন।”
নেহলিন আপু, আপনি বড় ভাগ্যবতী! আপনার জন্য ভুবন কাঁদছে। আমি কাঁদছি, আমরা কাঁদছি, আমরা সবাই কাঁদছি। শেষ বিচারেও আপনার এমন দিগ্বীজয়ী ভাগ্য হোক, মহান দয়াময়ের কাছে এই আমাদের শেষ প্রার্থনা।
০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৪০
মোঃ ইয়াসির ইরফান বলেছেন: বড় ভাগ্যবতী !
©somewhere in net ltd.
১|
১৪ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০
হৃদয়হীন মানব বলেছেন: আসলেই নেহলিন আপু ভাগ্যবতী ।