নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পেশা ব্যবসা ও চাকরি। জ্ঞানভিত্তিক জীবনদর্শনে বিশ্বাসী। নির্জনে ও নীরবে প্রকৃতির নৈসর্গিক রূপ উপভোগ করতে ভালোবাসি। বই পড়তে, ভ্রমণ করতে, একলা চলতে এবং জটিল চরিত্রের মানুষ থেকে দূরে থাকতে পছন্দ করি। –এম. জেড. ফারুক

এমজেডএফ

কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী

এমজেডএফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুকান্ত ভট্টাচার্যের উল্লেখযোগ্য কবিতাসমূহ

১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:১৩



মার্কসবাদী ভাবধারায় বিশ্বাসী এবং প্রগতিশীল চেতনার অধিকারী বাংলা সাহিত্যের তরুণ কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের আজ ৯৩তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২৬ সালের ১৫ আগস্ট কলকাতায় মাতুলালয়ে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-নিবারন ভট্টাচার্য, মা-সুনীতি দেবী। পৈতৃক নিবাস ছিল ফরিদপুর জেলার (বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া থানার উনশিয়া গ্রামে)। ১৯৪৫ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে অকৃতকার্য হন। এ সময় ছাত্র আন্দোলন ও বামপন্থী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ায় তাঁর আনুষ্ঠানিক শিক্ষার সমাপ্তি ঘটে। সুকান্তের বাল্যবন্ধু কবি অরুনাচল বসুর মাতা কবি সরলা বসু সুকান্তকে পুত্রস্নেহে দেখতেন। সুকান্তের ছেলেবেলায় মাতৃহারা হলেও সরলা বসু তাকে সেই অভাব কিছুটা পুরন করে দিতেন। কবির জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছিল কলকাতার বেলেঘাটার ৩৪ হরমোহন ঘোষ লেনের বাড়ীতে। সেই বাড়িটি এখনো অক্ষত আছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য সুকান্তের নিজের ভাতুষ্পুত্র।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, তেতাল্লিশের মম্বন্তর, ফ্যাসিবাদী আগ্রাসন, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি কলম ধরেন। ১৯৪৪ সালে তিনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টির সদস্যপদ লাভ করেন। তাঁর রচনাবলির মধ্যে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো: ছাড়পত্র (১৯৪৭), পূর্বাভাস (১৯৫০), মিঠেকড়া (১৯৫১), অভিযান (১৯৫৩), ঘুম নেই (১৯৫৪), হরতাল (১৯৬২), গীতিগুচ্ছ (১৯৬৫) প্রভৃতি। পরবর্তীকালে উভয় বাংলা থেকে সুকান্ত সমগ্র নামে তাঁর রচনাবলি প্রকাশিত হয়। পার্টি ও সংগঠনের কাজে অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে দুরারোগ্য ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হয়ে তিনি ১৯৪৭ সালের ১৩ মে কলকাতায় মৃত্যুবরণ করেন। সুকান্তের সাহিত্য-সাধনার মূল ক্ষেত্র ছিল কবিতা। সাধারণ মানুষের জীবনসংগ্রাম, যন্ত্রণা ও বিক্ষোভ তাঁর কবিতার প্রধান বিষয়বস্ত্ত। তাঁর রচনাকর্মে গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার বাণীসহ শোষণহীন এক নতুন সমাজ গড়ার অঙ্গীকার উচ্চারিত হয়েছে।

হে মহাজীবন

হে মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন, কঠোর গদ্যে আনো,
পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো!
প্রয়োজন নেই, কবিতার স্নিগ্ধতা-
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী-গদ্যময়ঃ
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝল্‌সানো রুটি।।


আগামী

জড় নই, মৃত নই, নই অন্ধকারের খনিজ,
আমি তো জীবন্ত প্রাণ, আমি এক অঙ্কুরিত বীজ;
মাটিতে লালিত ভীরু, শুদু আজ আকাশের ডাকে
মেলেছি সন্দিগ্ধ চোখ, স্বপ্ন ঘিরে রয়েছে আমাকে।
যদিও নগণ্য আমি, তুচ্ছ বটবৃক্ষের সমাজে
তবু ক্ষুদ্র এ শরীরে গোপনে মর্মরধ্বনি বাজে,
বিদীর্ণ করেছি মাটি, দেখেছি আলোর আনাগোনা
শিকড়ে আমার তাই অরণ্যের বিশাল চেতনা।

আজ শুধু অঙ্কুরিত, জানি কাল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাতা
উদ্দাম হাওয়ার তালে তাল রেখে নেড়ে যাবে মাথা;
তার পর দৃপ্ত শাখা মেলে দেব সবার সম্মুখে,
ফোটাব বিস্মিত ফুল প্রতিবেশী গাছেদের মুখে।

সংহত কঠিন ঝড়ে দৃঢ়প্রাণ প্রত্যেক শিকড়;
শাখায় শাখায় বাঁধা, প্রত্যাহত হবে জানি ঝড়;
অঙ্কুরিত বন্ধু যত মাথা তুলে আমারই আহ্বানে
জানি তারা মুখরিত হবে নব অরণ্যের গানে।
আগামী বসন্তে জেনো মিশে যাব বৃহতের দলে;
জয়ধ্বনি কিশলয়ে; সম্বর্ধনা জানাবে সকলে।
ক্ষুদ্র আমি তুচ্ছ নই- জানি আমি ভাবী বনস্পতি,
বৃষ্টির, মাটির রসে পাই আমি তারি তো সম্মতি।
সেদিন ছায়ায় এসো; হানো যদি কঠিন কুঠারে
তবুও তোমায় আমি হাতছানি দেব বারে বারে;
ফল দেব, ফুল দেব, দেব আমি পাখিরও কূজন
একই মাটিতে পুষ্ট তোমাদের আপনার জন।।

প্রিয়তমাসু

সীমান্তে আজ আমি প্রহরী।
অনেক রক্তাক্ত পথ অতিক্রম ক'রে
আজ এখানে এসে থমকে দাড়িয়েছি-
স্বদেশের সীমানায়।

ধূসর তিউনিসিয়া থেকে স্নিগ্ধ ইতালী,
স্নিগ্ধ ইতালী থেকে ছুটে গেছি বিপ্লবী ফ্রান্সে
নক্ষত্রনিয়ন্ত্রিত নিয়তির মতো
দুর্নিবার, অপরাহত রাইফেল হাতে;
- ফ্রান্স থেকে প্রতিবেশী বার্মাতেও।

আজ দেহে আমার সৈনিকের কড়া পোশাক,
হাতে এখনো দুর্জয় রাইফেল,
রক্তে রক্তে তরঙ্গিত জয়ের আর শক্তির দুর্বহ দম্ভ,
আজ এখন সীমান্তের প্রহরী আমি।
আজ নীল আকাশ আমাকে পাঠিয়েছে নিমন্ত্রণ,
স্বদেশের হাওয়া বয়ে এনেছে অনুরোধ,
চোখের সামনে খুলে ধরেছে সবুজ চিঠি :
কিছুতেই বুঝি না কী ক'রে এড়াব তাকে?
কী ক'রে এড়াব এই সৈনিকের কড়া পোশাক?
যুদ্ধ শেষ। মাঠে মাঠে প্রসারিত শান্তি,
চোখে এসে লাগছে তারই শীতল হাওয়া,
প্রতি মুহূর্তে শ্লথ হয়ে আসে হাতের রাইফেল,
গা থেকে খসে পড়তে চায় এই কড়া পোশাক,
রাত্রে চাঁদ ওঠে : আমার চোখে ঘুম নেই।

তোমাকে ভেবেছি কতদিন,
কত শত্রুর পদক্ষেপ শোনার প্রতীক্ষার অবসরে,
কত গোলা ফাটার মুহূর্তে।
কতবার অবাধ্য হয়েছে মন, যুদ্ধজয়ের ফাঁকে ফাঁকে
কতবার হৃদয় জ্বলেছে অনুশোচনার অঙ্গারে
তোমার আর তোমাদের ভাবনায়।
তোমাকে ফেলে এসেছি দারিদ্র্যের মধ্যে
ছুঁড়ে দিয়েছি দুর্ভিক্ষের আগুনে,
ঝড়ে আর বন্যায়, মারী আর মড়কের দুঃসহ আঘাতে
বাব বার বিপন্ন হয়েছে তোমাদের অস্তিত্ব।
আর আমি ছুটে গেছি এক যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আর এক যুদ্ধক্ষেত্রে।
জানি না আজো, আছ কি নেই,
দুর্ভিক্ষে ফাঁকা আর বন্যায় তলিয়ে গেছে কিনা ভিটে
জানি না তাও।


তবু লিখছি তোমাকে আজ : লিখছি আত্মম্ভর আশায়
ঘরে ফেরার সময় এসে গেছে।
জানি, আমার জন্যে কেউ প্রতীক্ষা ক'রে নেই
মালায় আর পতাকায়, প্রদীপে আর মঙ্গলঘটে;
জানি, সম্বর্ধনা রটবে না লোক মুখে,
মিলিত খুসিতে মিলবে না বীরত্বের পুরস্কার।
তবু, একটি হৃদয় নেচে উঠবে আমার আবির্ভাবে
সে তোমার হৃদয়।

যুদ্ধ চাই না আর, যুদ্ধ তো থেমে গেছে;
পদার্পণ করতে চায় না মন ইন্দোনেশিয়ায়
আর সামনে নয়,
এবার পেছনে ফেরার পালা।

পরের জন্যে যুদ্ধ করেছি অনেক,
এবার যুদ্ধ তোমার আর আমার জন্যে।

প্রশ্ন করো যদি এত যুদ্ধ ক'রে পেলাম কী? উত্তর তার-
তিউনিসিয়ায় পেয়েছি জয়,
ইতালীতে জনগণের বন্ধুত্ব,
ফ্রান্সে পেয়েছি মুক্তির মন্ত্র;
আর নিষ্কণ্টক বার্মায় পেলাম ঘরে ফেরার তাগাদা।

আমি যেন সেই বাতিওয়ালা,
সে সন্ধ্যায় রাজপথে-পথে বাতি জ্বালিয়ে ফেরে
অথচ নিজের ঘরে নেই যার বাতি জ্বালার সামর্থ্য,
নিজের ঘরেই জমে থাকে দুঃসহ অন্ধকার।।




আঠারো বছর বয়স

আঠারো বছর বয়স কী দুঃসহ
র্স্পধায় নেয় মাথা তোলবার ঝুঁকি,
আঠারো বছর বয়সেই অহরহ
বিরাট দুঃসাহসেরা দেয় যে উঁকি।

আঠারো বছর বয়সের নেই ভয়
পদাঘাতে চায় ভাঙতে পাথর বাধা,
এ বয়সে কেউ মাথা নোয়াবার নয়-
আঠারো বছর বয়স জানে না কাঁদা।

এ বয়স জানে রক্তদানের পুণ্য
বাষ্পের বেগে স্টিমারের মতো চলে,
প্রাণ দেওয়া-নেওয়া ঝুলিটা থাকে না শূন্য
সঁপে আত্মাকে শপথের কোলাহলে।

আঠরো বছর বয়স ভয়ঙ্কর
তাজা তাজা প্রাণে অসহ্য যন্ত্রণা,
এ বয়সে প্রাণ তীব্র আর প্রখর
এ বয়সে কানে আসে কত মন্ত্রণা।

আঠারো বছর বয়স যে দুর্বার
পথে প্রান্তরে ছোটায় বহু তুফান,
দুর্যোগে হাল ঠিক মতো রাখা ভার
ক্ষত-বিক্ষত হয় সহস্র প্রাণ।

আঠারো বছর বয়সে আঘাত আসে
অবিশ্র্রান্ত; একে একে হয় জড়ো,
এ বয়স কালো লক্ষ দীর্ঘশ্বাসে
এ বয়স কাঁপে বেদনায় থরোথরো।

তব আঠারোর শুনেছি জয়ধ্বনি,
এ বয়স বাঁচে দুর্যোগে আর ঝড়ে,
বিপদের মুখে এ বয়স অগ্রণী
এ বয়স তবু নতুন কিছু তো করে।

এ বয়স জেনো ভীরু, কাপুরুষ নয়
পথ চলতে এ বয়স যায় না থেমে,
এ বয়সে তাই নেই কোনো সংশয়-
এ দেশের বুকে আঠারো আসুক নেমে।।


রানার

রানার ছুটেছে তাই ঝুম্‌ঝুম্ ঘণ্টা বাজছে রাতে
রানার চলেছে, খবরের বোঝা হাতে,
রানার চলেছে রানার!
রাত্রির পথে পথে চলে কোনো নিষেধ জানে না মানার।
দিগন্ত থেকে দিগন্তে ছোটে রানার-
কাজ নিয়েছে সে নতুন খবর আনার।

রানার! রানার!
জানা-অজানার
বোঝা আজ তার কাঁধে,
বোঝাই জাহাজ রানার চলেছে চিঠি আর সংবাদে;
রানার চলেছে, বুঝি ভোর হয় হয়,
আরো জোরে,আরো জোরে, এ রানার দুর্বার দুর্জয়।
তার জীবনের স্বপ্নের মতো পিছে স'রে যায় বন,
আরো পথ, আরো পথ- বুঝি হয় লাল ও-পূর্বকোণ।
অবাক রাতের তারারা, আকাশে মিট্‌মিট্ ক'রে চায়!
কেমন ক'রে এ রানার সবেগে হরিণের মতো যায়!
কত গ্রাম, কত পথ যায় স'রে স'রে-
শহরে রানার যাবেই পৌঁছে ভোরে;
হাতে লণ্ঠন করে ঠন্‌ঠন্, জোনাকিরা দেয় আলো
মাভৈঃ, রানার! এখনো রাতের কালো।

এমনি ক'রেই জীবনের বহু বছরকে পিছু ফেলে,
পৃথিবীর বোঝা ক্ষুধিত রানার পৌঁছে দিয়েছে 'মেলে'।
ক্লান্তশ্বাস ছুঁয়েছে আকাশ, মাটি ভিজে গেছে ঘামে
জীবনের সব রাত্রিকে ওরা কিনেছে অল্প দামে।
অনেক দুঃখে, বহু বেদনায়, অভিমানে, অনুরাগে,
ঘরে তার প্রিয়া একা শয্যায় বিনিদ্র রাত জাগে।

রানার! রানার!
এ বোঝা টানার দিন কবে শেষ হবে?
রাত শেষ হয়ে সূর্য উঠবে কবে?
ঘরেতে অভাব; পৃথিবীটা তাই মনে হয় কালো ধোঁয়া,
পিঠেতে টাকার বোঝা, তবু এই টাকাকে যাবে না ছোঁয়া,
রাত নির্জন, পথে কত ভয়, তবুও রানার ছোটে,
দস্যুর ভয়, তারো চেয়ে ভয় কখন সূর্য ওঠে।
কত চিঠি লেখে লোকে-
কত সুখে, প্রেমে, আবেগে, স্মৃতিতে, কত দুঃখে ও শোকে।
এর দুঃখের চিঠি পড়বে না জানি কেউ কোনো দিনও,
এর জীবনের দুঃখ কেবল জানবে পথের তৃণ,
এর দুঃখের কথা জানবে না কেউ শহরে ও গ্রামে,
এর কথা ঢাকা পড়ে থাকবেই কালো রাত্রির খামে।
দরদে তারার চোখ কাঁপে মিটিমিটি, -
এ-কে যে ভোরের আকাশ পাঠাবে সহানুভূতির চিঠি-
রানার! রানার! কি হবে এ বোঝা ব'য়ে?
কি হবে ক্ষুধার ক্লান্তিতে ক্ষয়ে ক্ষয়ে?
রানার!রানার ! ভোর তো হয়েছে- আকাশ হয়েছে লাল
আলোর স্পর্শে কবে কেটে যাবে এই দুঃখের কাল?


রানার! গ্রামের রানার!
সময় হয়েছে নতুন খবর আনার;
শপথের চিঠি নিয়ে চলো আজ
ভীরুতা পিছনে ফেলে-
পৌঁছে দাও এ নতুন খবর
অগ্রগতির 'মেলে',
দেখা দেবে বুঝি প্রভাত এখুনি-
নেই, দেরি নেই আর,
ছুটে চলো, ছুটে চলো আরো বেগে
দুর্দম, হে রানার।।

একটি মোরগের কাহিনী

একটি মোরগ হঠাৎ আশ্রয় পেয়ে গেল
বিরাট প্রাসাদের ছোট্ট এক কোণে,
ভাঙা প্যাকিং বাক্সের গাদায়
আরো দু'তিনটি মুরগীর সঙ্গে।
আশ্রয় যদিও মিলল,
উপযুক্ত আহার মিলল না।
সুতীক্ষ্ণ চিৎকারে প্রতিবাদ জানিয়ে
গলা ফাটাল সেই মোরগ
ভোর থেকে সন্ধে পর্যন্ত-
তবুও সহানুভূতি জানাল না সেই বিরাট শক্ত ইমারত।

তারপর শুরু হল তাঁর আঁস্তাকুড়ে আনাগোনা;
আর্শ্চর্য! সেখানে প্রতিদিন মিলতে লাগল
ফেলে দেওয়া ভাত-রুটির চমৎকার প্রচুর খাবার!

তারপর এক সময় আঁস্তাকুড়েও এল অংশীদার-
ময়লা ছেঁড়া ন্যাকড়া পরা দু'তিনটে মানুষ;
কাজেই দুর্বলতার মোরগের খাবার গেল বন্ধ হয়ে।

খাবার! খাবার! খানিকটা খাবার!
অসহায় মোরগ খাবারের সন্ধানে
বার বার চেষ্টা ক'রল প্রাসাদে ঢুকতে,
প্রত্যেকবারই তাড়া খেল প্রচণ্ড।
ছোট্ট মোরগ ঘাড় উঁচু করে স্বপ্ন দেখে-
'প্রাসাদের ভেতর রাশি রাশি খাবার'!

তারপর সত্যিই সে একদিন প্রাসাদে ঢুকতে পেল,
একেবারে সোজা চলে এল
ধব্‌ধবে সাদা দামী কাপড়ে ঢাকা খাবার টেবিলে ;
অবশ্য খাবার খেতে নয়
খাবার হিসেবে!


ছাড়পত্র

যে শিশু ভূমিষ্ঠ হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুমঃ
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চিৎকারে।
খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।
সে ভাষা বোঝে না কেউ,
কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার।
আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা।
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের
পরিচয়-পত্র পড়ি ভূমিষ্ঠ শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে।
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তূপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল,
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য ক’রে যাব আমি
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।


অবশেষে সব কাজ সেরে
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস।।

----------------------
তথ্যসূত্র: বাংলাপিডিয়া

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৫

রাজীব নুর বলেছেন: একজন প্রতিভাবান কবি।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:১৯

এমজেডএফ বলেছেন: আমাদের দুর্ভাগ্য! এরকম একজন প্রতিভাবান কবি খুবই অল্প বয়সে চলে গেলেন।

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৮

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: প্রয়াত এই প্রতিবান কবির জন্ম দিনে শুভেচ্ছা। ও আপনাকে পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:১৯

এমজেডএফ বলেছেন: মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

৩| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:১২

ইসিয়াক বলেছেন: পোস্টের জন্য ধন্যবাদ।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:২৩

এমজেডএফ বলেছেন: প্রতিভাবান কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্মদিনে উদীয়মান কবি ইসিয়াকের সাফল্য কামনা করছি।

৪| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:২৭

ইসিয়াক বলেছেন: লেখক বলেছেন: প্রতিভাবান কবি সুকান্ত ভট্টাচার্যের জন্মদিনে উদীয়মান কবি ইসিয়াকের সাফল্য কামনা করছি।
আপনার দেয়া এ সম্মান আমি মাথা পেতে নিলাম। আসলে এত সম্মানের সত্যি যোগ্য কী আমি ?
শুভসন্ধ্যা , ভালো থাকবেন ।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:০৩

এমজেডএফ বলেছেন: আপনাদের মতো তরুণ কবিদের মধ্যে লুকিয়ে আছে ভবিষ্যতের রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত। আমরা সেই প্রত্যশায় চেয়ে আছি। ইচ্ছা, আগ্রহ ও চেষ্টা থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব। ধন্যবাদ।

৫| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৮:২৯

জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: প্রতিভাবান কবি ছিলেন। উনি আরো কিছুকাল বেচে থাকলে বাংলা কবিতাভাণ্ডার আরো সমৃদ্ধ হতো।

১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:০৮

এমজেডএফ বলেছেন:
বাংলা সাহিত্যে এত কম বয়সে এত বেশি মানসম্পন্ন কবিতা আর কেউ লিখেছে কিনা আমার জানা নেই।
"উনি আরো কিছুকাল বেচে থাকলে বাংলা কবিতাভাণ্ডার আরো সমৃদ্ধ হতো।" – একমত।

৬| ১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ৯:৫৫

নাসির ইয়ামান বলেছেন: অসাধারণ কবিতাগুলো!
ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টানোর জন্যে!

১৫ ই আগস্ট, ২০১৯ রাত ১১:১৪

এমজেডএফ বলেছেন: কমেন্টানোর জন্যে আপনাকেও ধন্যবাদ!

৭| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৯ ভোর ৬:১৮

সোহানী বলেছেন: আমার অসম্ভব প্রিয় কবি। কত যে আবৃতি করেছি ..... দেশালই কিংবা মোরগের আত্মকাহিনী......... আহ সেই সব দিনগুলো।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৭:১০

এমজেডএফ বলেছেন: স্মৃতিচারিত মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আমাদের কৈশোর-যৌবনের স্মৃতি বিজড়িত জনপ্রিয় কবিতাগুলোর প্রতি আজকের তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টি আকর্ষণ করাই এই পোস্টের উদ্দেশ্য।

৮| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৭:১৫

বলেছেন: বারবার আহত হই, বারবার প্রেমে মজি,
বড় অসময়ে অবসর নেওয়া ছিলো কি এমন জরুরি,,,!!!!
এসেছে নতুন শিশু তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্হান
তাই বলে এ অসময়ে কেন তোমার প্রস্থান!!!


বিনম্র শ্রদ্ধা প্রিয় কবি ও কবিতায়।।।।। চমৎকার পোস্টে মুগ্ধতা।।।।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:০৮

এমজেডএফ বলেছেন: "বারবার আহত হই, বারবার প্রেমে মজি,
বড় অসময়ে অবসর নেওয়া ছিলো কি এমন জরুরি,,,!!!!
"
যারা প্রতিভাবান, যারা দেশ ও জাতিকে অনেক কিছু দিতে পারবে তাদের অবসর নেওয়া জরুরি নয়। আমাদের মতো অযোগ্য লোকেরা প্রয়োজন হলে নতুন শিশুদের স্থান দিতে একটু তাড়াতাড়ি প্রস্থান করবো। :)
কাব্যিক মন্তব্যের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।

৯| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৯ সকাল ১১:২২

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: আমাদের দুর্ভাগ্য! এরকম একজন প্রতিভাবান কবি খুবই অল্প বয়সে চলে গেলেন।


প্রিভাবান ব্যাক্তিদের দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকা দরকার।

১৬ ই আগস্ট, ২০১৯ বিকাল ৪:১৫

এমজেডএফ বলেছেন:
প্রতিভাবান ব্যাক্তিদের দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকা দরকার। –একমত।
কিন্তু বাঁচা-মরার ক্ষমতা এখনো পুরোপুরি মানুষের আয়ত্বে আসেনি। তাই ব্যথিত হৃদয়ে সব ধরনের মৃত্যুকে মেনে নিতে হয়।

১০| ২২ শে আগস্ট, ২০১৯ সকাল ৭:৪৭

ডঃ এম এ আলী বলেছেন: পোষ্টের সুবাদে প্রথমেই রইল বাংলার কাব্যের ভুবনের অমর কবি সুকান্তের প্রতি গভীর শ্রদ্ধাঞ্জলী ।
গণমানুষের কবি সুকান্ত। তার কবিতার বিষয় হল অসহায়-নিপীড়িত সর্বহারা মানুষের সুখ, দুঃখ । ধনী মহাজন ও অত্যাচারী প্রভুদের বিরুদ্ধে অবহেলিত মানুষের অধিকার আদায়ের কথা উঠে এসেছে তার কবিতার পড়তে পড়তে । সুকান্তের দৃঢ় অবস্থান ছিল যাবতীয় শোষণ-বঞ্চনার বিপক্ষে । কবিতার নিপুণ কর্মে তিনি দূর করতে চেয়েছেন শ্রেণী বৈষম্য। লড়াকু ভূমিকায় তিনি অবতীর্ণ হয়েছেন মানবতার জয়ের জন্য । অসুস্থতা অর্থাভাব তাকে কখনো দমিয়ে দেয়নি। নিরন্তর নিবেদিত থেকেছেন তিনি মানুষের কল্যাণের জন্য । মানবিক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন তিনি। বাংলা কাব্যধারার প্রচলিত প্রেক্ষাপটকে আমূল বদলে দিতে পেরেছিলেন হৃদয়ের অন্তস্থল হতে উদ্ভুদ মানবিক চেতনায় ।
গণমানুষের প্রতি গভীর মমতা প্রকাশ ঘটেছে তাঁর কবিতার ছত্রে ছত্রে । ছাড়পত্র , পূর্বাভাস , মিঠেকড়া , অভিযান , ঘুম নেই , হরতাল , গীতিগুচ্ছ , রানার , এসকল কবিতা পাঠে বুঝা যায় তাঁর কবিতায় শক্তি কত । অতি সাধারণ বস্তুকেও তিনি করতে পেরেছেন কবিতার বিষয় বস্তু । যাপিত জীবনের দুঃখ-যন্ত্রণাকে মোকাবেলা করার সাহস সুকান্তের কবিতা থেকেই পাওয়া যায়। তার কবিতার সাম্যবাদী ভাবধারা মানুষকে দিয়েছে জীবনের সন্ধান । রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, দিজেন্দ্রলাল রায়, জীবনানন্দ দাশসহ সে সময়ের বড় বড় কবির ভিড়ে তিনি হারিয়ে যাননি বরং স্বল্প জীবন পরিসরেই রেখে গেছেন তার স্বতন্ত্রতা , শুধু কবিতাতেই নয় রেখে গেছেন স্বতন্ত্রতা তাঁর মেধা ও মননে ।

ধন্যবাদ, এই গুণী কবি ও তাঁর লেখা জনপ্রিয় কিছু কবিতা নিয়ে পোষ্ট দিয়ে তাকে আমাদের স্মরণে জাগরুপ রাখার প্রয়াস নেয়ার জন্য , বহুবার পাঠ করা কবিতাগুলি মন্ত্রপাঠের আবারো পড়লাম ।

শুভেচ্ছা রইল ।

২৫ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ৩:২৪

এমজেডএফ বলেছেন:
খুব অল্প কথায় কবি সুকান্ত ও তাঁর কবিতাকে মূল্যায়ন করে চমৎকার মন্তব্যের জন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

" রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, দিজেন্দ্রলাল রায়, জীবনানন্দ দাশসহ সে সময়ের বড় বড় কবির ভিড়ে তিনি হারিয়ে যাননি বরং স্বল্প জীবন পরিসরেই রেখে গেছেন তার স্বতন্ত্রতা , শুধু কবিতাতেই নয় রেখে গেছেন স্বতন্ত্রতা তাঁর মেধা ও মননে।"
বাংলা সাহিত্যের সমসাময়িক দিকপালদের লেখার প্রভাবকে পাশ কাটিয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন স্টাইলের কবিতা লেখাটাই ছিলো তরুণ কবি সুকান্তের অমর কীর্তি।

সব সময় ভালো থাকুন।

১১| ২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ দুপুর ২:১৭

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: পোস্টটি কি করে চোখের আড়ালে গেল বুঝতে পারলাম না।ছোটবেলায় সুকুমার রায়, উপেন্দ্রকিশোর পড়লেও সুকান্ত ভট্টাচার্যের সঙ্গে পরিচয় হয়েছে হাই স্কুলে গিয়ে। ষষ্ঠ শ্রেণীতে বাংলা পাঠ্য বইতে একটি মোরগের কাহিনী ও সপ্তম শ্রেণীতে রানার পড়ার পর কবির প্রতি অসম্ভব ভালোলাগা ও ভালোবাসা চলে আসে। সমাজের নিপীড়িত লাঞ্ছিত শ্রমজীবী মানুষের দুঃখ যন্ত্রণার কথা কবির কাব্যে স্থান পেয়েছে।এমন একজন গুণী মানুষের অসাধারণ কালেকশন গুলিকে পোস্ট আকারে সংকলিত করার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানাই।

শুভেচ্ছা নিয়েন।

২৭ শে আগস্ট, ২০১৯ রাত ১০:৩৬

এমজেডএফ বলেছেন:
মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।

কবির জন্মদিনে প্রিয় কবিতাগুলো সংগ্রহ করে পোস্ট দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো নিজেও অনেকদিন পর আরেকবার পড়তে পারলাম এবং সেইসাথে অন্যরাও পড়তে পারলো।

যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.