![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কে তার খবর রাখে
নাম মাণিক বাড়ী তার খুলনা চানমারী
আযম খান কমার্স কলেজ হতে বিকম পাশ করেছে ১৯৯৩ সালে এর পর আর দেখা হয়নি ২০১৫ পর্যন্ত । আর কখনো দেখা হবেনা । আজ থেকে ৫ মাস আগে কাওকে না জানিয়ে চলে গেছে বহুদূরে ।
অনেক খুঁজেছি তাকে কিন্তু পাইনি। গতবছর সেপ্টেমবার পেয়ে গেলাম তাকে আচমকা ভাবেই। অনেক কথা হল ৩ টা বাচ্চা আছে তার গোপালগঞ্জে একটা ফার্মেসী দিয়েছে , বলতে থাকে একটানা প্রাইমারী স্কুল শিক্ষক হিসাবে চেষ্টা করছি , ৯০০০ হাজার টাকা ইনকাম হয় ফার্মেসী থেকে কোন রকম চলে যায় ভালই আছি কিন্তু বিদ্রূপের হাসি দিয়ে গোপাল গঞ্জের ভাষায় আবার বলে “ হ সংসার চলেনা বাল কি করব ক, তয় তুই কিরাম আছিস ছূয়াল মাইয়ে কয়ডা । কি এরতিসিশ”
আমি আমার আবেগ কে সামলে নিয়ে বললাম চল, কূয়াণে যাবি আমি বললাম চল না । বাসাই নিয়ে আসলাম অনেক গল্প করলাম বিদায়ও দিলাম । বিদায় দিয়ার সময় বললাম ঢাকা চলে আয় একটা ব্যবস্থা হবে আর যদি কিছু না হয় আমার সাথে সাথে থাকবি ।
তোর সাথে থেকে কি করবো ? কেন আমি যা করি তাই করবি, তুই কি করিস ? আমি প্যান্ট সার্ট পড়ে চাকরের কাজ করি । কিন্তু তোর ঐটা করা লাগবেনা তুই শুধু সাইনবোর্ড লাগানোর দড়ি ধরে থাকবি ব্যাস পেয়ে যাবি ১০০০ টাকা । এক মাসে যতবার ধরবি তত হাজার টাকা । প্রাণ খোলা হাসি দিল মাণিক , তুই না সেই আগের মতই আছিস ঠিক তাই মাণিক পারিনি নিজেকে বদলাতে তাই চাকর হয়েই রয়ে গেলাম।
কলেজ জীবনে আমরা চার বন্ধু ছিলাম খুবই অন্তরঙ্গ। মাণিক দীপক শামীম আর আমি । লম্বা চওড়া দেহ ছিল তার তাই ছাত্রলীগ এর প্রথম কাতারে থাকতাম। সারারাত বুককিপিং আর সারাদিন রাজনীতি এই ছিল আমাদের কাজ । রাজনীতির মাঠ যখন মানুষ মারার খেলা হয়ে উঠলো, চোখের সামনেই অনেকের প্রাণ যেতে দেখলাম। দিনে দিনে যখন বুঝলাম আমরা ব্যাবহার হচ্ছি, গোলা বারুদ আমাদের সঙ্গী হয়ে যাচ্ছে তখনি রাজনীতির মাঠ ছেড়ে জীবিকার তাগিদে বের হলাম । চাকরীও পেলাম প্রবেশন সময় ২৫০০ পার্মানেন্ট হয়ে হল ৪৬০০। ১৯৯৪ সাল
মাণিক পুলিশ হওয়ার আশায় বেশ সময় ব্যয় করল, দীপক তার ভাইয়ের স্টুডিও সামলায়। ছবি তোলার ছলে অনেকের ওড়না সরানো যায় তাই ঐ কাজটা তার ভালই লাগতো । শামীম বেশ উচ্চাকাঙ্ক্ষী তাই ICMA পরতে ঢাকা পাড়ি দিল আর আমি চাকরী করি ও ICMA ভর্তি হই বড় হবার আশাই । কিন্তু বড় হয়েছি বড় মানুষ হতে পারিনি । বন্ধু চলে গেল দুনিয়া ছেড়ে জানতেও পারিনি ।
সত্যি সত্যি মাণিক ঢাকায় হাজির যথারীতি আমার বাসায় , কত সহজ সরল মানুষ ছিল ও । ওড় জন্য একটা ঘর নিলাম এবং একটা এড ফার্মের সাথে কাজ ঠিক করলাম । কিন্তু এর পর আর তেমন কেয়ার নিতে পারিনি, একদিন এসে বলল একটা ওষুধ কোম্পানি তে চাকরী হইছে গোরানের দিকে ডিউটি একটা মেস ঠিক করে আসছি , আমি বললাম তো ভালই সবই তো ঠিক করে আসছিস তা আমারে জানাই আর কি করবি যা । দরকার পড়লে ফোন দিস । এর পর কিছুদিন নিয়মিত যোগাযোগ হত আবার বেশ গ্যাপ হত । একদিন বলল দোস্ত ৫০০০ টাকার দরকার সেল জমা দিতে হবে প্রডাক্ট বেচেছি কালেকশন হয়নি । কালেক্ট করে তোরে দিয়ে যাব । আচ্ছা তুই নিয়ে যাস । বেচারা টাকাটা আর ফেরত দিতে পারেনি আমিও কোনোদিন চাইনি । ও লজ্জায় ফোন দেই নি আমিও কাজের চাপে ওড় সাথে যোগাযোগ করেতে পারিনি । এর মধ্যেই চোলেগেছে ৫/৬ মাস ।
শামীম এসেছে দুবাই থেকে কথা ছিল একসাথে আবার চার বন্ধু এক হব অনেক ঘুরাঘুরি করে মজার সময় কাটাব । আমার সামনে বসেই শামীম ফোন দিচ্ছে বুঝিনি কাকে ফোন দিচ্ছে , ওপাড় থেকে মহিলা কণ্ঠের আওয়াজ শামীম চুপ করে আছে কথা বলছে না চোখ মুছতেছে, আমি বললাম কে কার সাথে কথা বলিস , কি হইছে ? বলল মাণিক ৫ মাস আগে মারা গেছে । আমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম মাণিকের নাম্বারে ফোন দিলাম । মহিলা কণ্ঠ , বললাম আমি উজ্জ্বল ,উনি বললেন আপনার নাম্বার সেভ করা আছে । ও আর নাই আপনার ঐখান থেকে এসে খুলনা জয়েন করার কথা ছিল কিন্তু আর জয়েন করা লাগেনি । আমি কি বলবো বুঝতে পারছিনা শুধু বললাম ভাবী আমি পরে কথা বলছি। শামীমের মতই আমার চোখে পানি । নিজেকে বড় অপরাধী মনে হচ্ছে কেন এমন হয় ।
মাণিক তোর জন্য কিছুই করতে পারিনি। গুলশান ১০৪ নাম্বার রোডের একটা প্রজেক্টে সাইনবোর্ড এর দড়ি ধরিয়ে ছিলাম সেই ছবি বোধ হয় তোর জীবনের শেষ ছবি তাই এই ছবি আর এই লেখা এই মহাশূন্যে ছেড়ে দিলাম ।
আমায় ক্ষমা করিস বন্ধু উজ্জ্বল / শামিম 29/5/2017 ০১৭১১৩২১৭৪৯
©somewhere in net ltd.