নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

Maahathir

Maahathir › বিস্তারিত পোস্টঃ

চাইলেও ফেরা যাইনা

০৩ রা জুন, ২০১৭ সকাল ৮:৩৪

ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে, আমার ঘরের পিছনে একটা খালি প্লট আর ওইদিকেই কাকতালীয় ভাবে একটা দরজা আছে। প্রয়োজনীয় অভাব গুলি ওই দরজা দিয়ে পুরন করি। মানে একটু সুর‍্যের আলো একটু বাতাস একটু গন্ধ সেই সাথে মশার আক্রমণ যখন যেটা দরকার সেটাই নেয়ার জন্য দরজাটা খুলতে হয়।

কি সৌভাগ্য আমার এই কংক্রিটের শহরে মাঝে মাঝে মনে হয় আমিই একমাত্র সুখী মানুষ। কেনই বা বলব না দুর দুরান্ত থেকে মানুষ আসে হাতিরঝিল দেখতে অথচ আমার ঘর হতে এক পা বাড়ালেই হাতিরঝিল তার উপর এমন একটা বাসা। সব মিলিয়ে একেবারে গোলাপ জাম।

যাইহোক দরজা খুলে বৃষ্টি উপভোগ করছি পিছন থেকে বাবু এসে বলছে একটু পারমিশন দিবা কিসের পারমিশন ? ভিজতে যাব ওর মা হুংকার মেরে উঠল আল্লাদ দিয়ে দিয়ে খারাপ করে দিচ্ছি। এমনিতে আমার নানা দোষ নানা অভিযোগ যেন আমার সাথে বিয়ে না হলে হয়তো বারাক ওবামার সাথে বিয়ে হত। জিবন টা শেষ করে দিলাম আমি বলে সংসার করে গেলাম এ ধরনের সাত সতের কথা শুনছি আর বৃষ্টি দেখছি। ছেলেও চুপ করে সংলাপ আত্তিকরণ করছে, হালকা করে বললাম যা ভিজ গিয়ে ধুমায়ে ভিজ কিসের ঠান্ডা কিসের জর যা। আমিই কত ভিজেছি চোখ হয়ে যেত রক্তের মত লাল, কাদার প্রলেপে মোচ দাড়ি হয়ে যেত।

এর পর ছেলে না ফিরা পরজন্ত আমার উপর দিয়ে দক্ষিন পূর্ব দিক দিয়ে ৩৮০ কিলমিটার বেগে ঘুরনি ঝড় " মোর" এবং ছেলে ফেরার পর গতিবেগ পরিবর্তন করে ধিরে ধিরে দুর্বল হল। বাপ রে ! ক্ষতির মাত্রা মাত্রাতীত।

অতঃপর পূত্রের প্রশ্নবান বাবা তোমরা ছোট বেলায় কেমন ছিলে , বৃষ্টি হলে কি খেলতে পারতা? এখনত রোজা তোমরা কি আমাদের মত আনন্দ করতে এধরনের অনেক গুলি প্রশ্ন।

আমি কাছে নিয়ে বসলাম এবং বললাম কি কি আনন্দ করিস তোরা। এইযে এক সাথে ভিজলাম ইফতারির আগে ঘুরব তারাবি নামাজ পড়ব ভোরবেলা আবার দেখা হবে। আচ্ছা বেশ ঠিক আছে, আনন্দ কর কিন্তু মসজিদের পিছনে বসে দুস্টুমি কোরনা যেন । না না বাবা পিছনে নজরুল হুজুর থাকে। উরিপবাপ অনেক কড়া। তুমিত বললেনা তোমরা কি করতে? নজরুল হুজুরের কথা শুনে ভালই লাগল এক সময় আমার জন্য কাদের হুজুর কে পিছনে রাখত কারন আমি শিড়ির উপরে থাকতাম একজনকে ছোট করে ধাক্কা দিলেই তাসের ঘর। কি হল বল ।।

এইত তোমাদের মতই । ঠিক এরকম না একটু অন্যরকম। সেটা কেমন?

একটা সময় বুকে ছিল সপ্ন জিবনটাও ছিল রঙিন । রোজা এসে গেছে মানেই এক মহা আনন্দ। লম্বা ছুটি কোন রকমে ১০০ টাকা গুছিয়ে মাইক ভাড়া নিতাম , সুন্দর সুন্দর গজল রেকর্ড করতাম রাত যেগে ।

আই কে যাবি সঙ্গে আমার মরুর দেশে আয় ...

জাগো জাগোরে মুসলমান খাও সেহরি রাখ রোজা কমাও তোমার পাপের বোঝা, আত্মা তোমার কররে সুন্দর এ মোমিনো মুসলমান।"

প্রচণ্ড শীতেও রোজা পেয়েছি আবার তিব্র গরমে। সারারাত জেগে থাকতাম। মানুষ যাগানোর পর আমরা সেহরি খেয়ে নামাজ পড়ে তারপর ঘুমাতে যেতাম। ২০ রোজা পার হবার পর আনন্দ ফল্গুধারা বইত। জমা হত এক বছরের হাসি ঠাট্টার খোরাক। আর এগুলি কালেক্ট হত চাঁদা তোলার সময়, কত টাইপের কিপটে মানুষ গুলি গুহা হতে বেরিয়ে আসত। আর কত রকমের কথা যে সংরক্ষণ করে রাখতাম তার হিসাব মনে নেই। শুধু একজন রাম বাবুর কথা মনে আছে, নামে রাম কামে মুসলিম। চাঁদা চাওয়ার সময় দরজা খুলেই করকশ কন্ঠে বলত কি চাই , আমরা বলতাম কাকা টাকা। যা কাল লিবি, কাকা "ন" বলতে পারত না। পরের দিন যথারিতি আমরা যায় আবার আরো কঠিন ভাবে শুনতে পাই "কি চাই", তোতলা ভঙ্গিতে কা...কা ...কা টাকা । চিতকার করে বলছে রঞ্জু (উনার ছেলের নাম) খুচরো পাঁচ টাকা লিয়াইত। উনি দারুন করে নাক দিয়ে বলতেন পাঁচ, আমরা বললাম কাকা ৫ টাকা দিবেন। আবারও চিতকার লিবি তো লিবি লা লিবি তো পাছা......যা। আর তার কাছে যেতাম না তবে বাকি দশ রোজা ও পুরা বছর দরজায় যেয়ে টক টক করেই লম্বা সরে পাকিস্তানি কাইদাই বলতাম এ রেম দারজা খোল পাইছা দে। এই গুলি ভাবছি আর সন্তান কে বলছি এইত তোমাদের মতই আনন্দ করতাম। প্রকৃত সত্য বললে ও হয়ত ভাবতে থাকবে অন্য কিছু তবুও মনে পড়ে হারিয়ে যাওয়া সে আনন্দে ঘেরা নানা রঙ্গের দিনগুলি।

আসলেই বাংলার আনন্দ ছিল ঘরে ঘরে, পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায়, কি রাতে কি দিনে প্রত্ত্যেক সময়। হেরিকেনের আলো সরে আসলো ইলেক্ট্রিসিটি আমরা বলতাম কারেন্ট। যা চলে গেলেও আনন্দ ফিরে আসলেও আনন্দ। যখনি ইলেক্ট্রিসিটি চলে যেত তখন বড় ছোট নির্রবিশেষে সকলেই রাস্তাই অথবা বাড়ির উঠোনে যে যার ঝুলি থেকে বের করত আনন্দের উপঢৌকন।
এখন সম্পূর্ণ অন্যরকম। বুড় ঝিমাই ছোটরাও ঝিমাই ৬" এল ই ডি স্ক্রিন আমাদের মাথা কে নামিয়ে দিয়েছে। জিবনী শক্তি এখন প্রযুক্তির কাছে বন্দি অথচ এই প্রযুক্তি এসেছে জীবনী শক্তি হতে।

যে কথা বলছিলাম সোনালী প্রান্তরের কথা। ষড়্‌ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলা। বৈশাখ তার শুরু চৈত্র তার শেষ।

বৈশাখী তাপদাহে ঘুমোনোর ভান ধরে পড়ে থাকি মায়ের কোলে, অপেক্ষায় আছি মা কখন ঘুমিয়ে পড়ে। আস্তে করে উঠে যাব তারপরেই তো কচুরিপানার ভেলাটি ভাসাব গতকাল যা বানিয়েছি অনেক খেটে।
চামড়াটা পুড়ে ছাই সন্ধ্যা বেলায় মায়ের আদর মাখা বকা খাই। এর পর পড়ার শব্দে প্রতেক্টা বাসা যেন এক একটা পাঠশালা।

কি গ্রিস্ম কি বর্ষা, কি শরত কি হেমন্ত , কি শীত কি বসন্ত সবই সুন্দর ও নানা ধরনের সপ্নে ঘেরা। যতদিন যাই ততই রং হারায় এই ষড় ঋতু। এক সময় আমাদের বাবারা দেখেছেন তার আগে তাদের বাবারা দেখেছেন অনেক রং , আমরাও কিছুটা দেখছি তোরা অভাগা দেখলি না কিছু পেলি না কিছুই । এখন গ্রিস্ম বর্ষা শীত বসন্ত তেমন পার্থক্য নেই । বর্ষা কালে বর্ষা নেই শীত কালে শীত নেই

পুরোনো বর্ষাকালে আমরা ভাসিয়েছি কাগজের নৌকা, পাটকাঠি ও গার্ডার দিয়ে স্পীড বোট বানিয়ে ছেড়েছি কত। হাজার আনন্দে ঘেরা আমাদের কিশোর বেলা। গোলপাতা দিয়ে ঘরের ছাউনি দিত যারা তারা ভুগত আর টিনের ঘরে হত মজা, পুকুর খাল গুলি থৈ থৈ পানি, পাতো (ধান চারা) ভাষিয়ে নিয়ে চলে কৃষানী , মস্ত একটা কচুর মাতা নিয়ে ছিপ ফেলে মাছ ধরার আনন্দ বুঝবা না তোমরা।

আহা কি সোনালী সময়-শরতের আকাশ আর মেঘ দিয়ে ছবি আকতে পারবি না তোরা। তোদের ঘাড়ে তো ১০ কেজি ব্যাগ।

হেমন্তের নবান্ন , শীতের সকাল খেজুরের রস আর আগুন পোহানোর মজা, ফাগুনের বাতাস স্নিগ্ধ করত বিকেল বেলা,

তবে আছে কি তাহলে...।
আছে ধুল মাখা শহর। আছে হাজার ইংলিশ্‌ মিডিয়াম স্কুল, আছে ওয়াই ফাই, আছে ট্যাব আছে সিওসি আছে বেয়াদবি আছে হাতের মধ্যেই নিল ছবি । সবই আছে কিন্তু বের হয়না একটা বিদ্যাসাগর। বের হয়না একটা মেধা যে হতে পারে এ দেশের রাজা।

আমি দিতে পারলাম না কিছুই তোকে। আমাদের আনন্দ হয়ত দেখেবে না কভু । তবে আমি চেষ্টা করব তোমায় সব কিছু দেখাতে যতটকু আমার সাধ্যে আছে।

শুধু বলতে চাই মানুষ হও মানুষের পাশে দাড়াও নইলে আমার মত হতে হবে। হাসির আড়ালে হতাশা কে ঢেকে আমরা যেভাবে খেলা করি।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.