নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাহীন ভাবনাগুলো

মাহের ইসলাম

মাহের ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

পাহাড়ের জমির মালিকানার উদ্ভট দাবীদার !

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:০০



‘জুম্ম জাতি' অভিধাটি মানুষের জাতিগত পরিচয়ের পরিবর্তে পেশাগত পরিচিতি হিসেবেই গণ্য করা হয়। ঝুম পদ্ধতিতে বাংলাদেশের অন্যান্য সমতল ভূমির মত একই জমিতে অবিরাম চাষ করা যায় না। আবার, একেবারে অনাবাদী, নতুন ভুমি না হলে ফসল ভালো হয় না। অনেক সময় হাতের কাছে উপযুক্ত জমিও পাওয়া যায় না। তাই, জুমিয়াদের মুলত জীবিকার প্রয়োজনে, পাহাড় থেকে পাহাড়ে স্থানান্তর করে জীবন যাপনে অভ্যস্ত হতে হয়।

বস্তুত, সামাজিক বিশ্বাস, জীবন প্রণালী আর প্রথাগত কারণেই জুমিয়াদের ভূমির মালিকানার প্রয়োজন অনুভুত হয়নি। এজন্যেই, প্রাচীন পাহাড়ি সমাজে ভূমির ব্যক্তি মালিকানার কোন সুযোগই ছিল না। বরং ভুমিকে সামাজিক সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হত। যেখানে ভূমির উপর ব্যক্তির অধিকার শুধুমাত্র ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। ভূমির কোন ব্যক্তি মালিকানা ছিল না। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী, ব্যক্তির পরিবর্তে গ্রাম্য সমাজ, আত্নীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ কোন গোত্র বা দল, এমনকি অলৌকিক আত্নারাই ভূমির মালিক ছিল।

এরূপ পরিস্থিতিতে, ১৮৬৮ সালে ব্রিটিশ সরকার পার্বত্য অঞ্চলের সকল ভূমির মালিকানা দাবী করে। এর পিছনে, বনভুমি হতে খাঁজনা আদায়ের পরিমাণ বৃদ্ধি করা অন্যতম প্রধান কারণ ছিল। তবে তৎকালীন চীফগন সরকারের এহেন দাবীর বিরোধিতা করে ভূমির মালিকানা দাবী করলেও ব্রিটিশ সরকার চীফদের সেই দাবীকে কখনই স্বীকৃতি দেয়নি। আমেনা মহসিনের মতে, বরং সরকারী ভাষ্য ছিল,

“The chiefs of the CHT have no title to the ownership of the land which is vested exclusively in the Crown: they exercise only the delegated right of collecting taxes and rents on behalf of the government (Government of Bengal 1918:32)” (Mohsin, 1997, p. 87)

সরকারের এমন দাবীর পিছনে যুক্তি ছিল যে, উপজাতীয়দের চীফগন উপজাতি বা গোত্র অনুযায়ী ক্ষমতাপ্রাপ্ত ছিলেন, ভূমির ভিত্তিতে নয়। অর্থাৎ চীফদের ভূমির উপর কোন অধিকার ছিল না, বরং মানুষের উপর ছিল। ফলশ্রুতিতে, ঐ সময় থেকেই পার্বত্য অঞ্চলের ভূমির উপর সরকার চূড়ান্ত এবং অসীম ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে যায়।

সমসাময়িক কালেই, পার্বত্য অঞ্চলের ভুমিকে সরকারীভাবে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ব্যক্তিগতভাবে চাষাবাদের জন্য সমতলের জমিকে এক দিকে আর জুম চাষের জন্য পাহাড়ি জমিকে অন্যদিকে ফেলা হয়।

চাষাবাদের জন্য কিছু ভূমি ব্যক্তি মালিকানায় দেয়া হয়। যেগুলো জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে ব্যক্তি মালিকানায় নেয়া হত, তবে নির্দিষ্ট শর্তে। এই প্রকারের জমি ব্যক্তির নামে জেলা প্রশাসকের অফিসে রেজিস্ট্রেশন করতে হত। এছাড়াও হয় সরাসরি, নতুবা গ্রামের হেডম্যানের মাধ্যমে সরকারকে এই জমির ভাড়া বা খাঁজনা প্রদান করতে হত। স্থানীয় প্রতি উপজাতি পরিবার সাধারনভাবে সর্বোচ্চ ২৫ একর পর্যন্ত জমি এই প্রক্রিয়ায় নিতে পারত। জমির গুণাগুণ অনুযায়ী, সকল সমতল ভুমিকে সাধারনভাবে ১ম শ্রেণী, ২য় শ্রেণী এবং ৩য় শ্রেণী – এই তিন শ্রেণীতে ভাগ করা হয় এবং জমির খাঁজনার তারতম্যও করা হয়। ব্যক্তিগত মালিকানার ব্যাপারে, ১৯০০ সালের সিএইচটি ম্যানুয়ালে বলা হয়েছে,

“A tenant directly under government shall have permanent and heritable rights in the land for which he pay tax… (CHT Manual 1942)”

তবে, সরকার চাইলে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিয়ে এই প্রকারের জমি অধিগ্রহন করতে পারত। (Mohsin, 1997, p. 88)

দ্বিতীয় প্রকারের ভুমিতে কোন ব্যক্তি মালিকানা ছিল না। শুধু ভুমি ব্যবহারের অধিকার ছিল – এই ধরণের মালিকানা ছিল জুম চাষের জমির জন্যে। অনেকটা আগে আসলে আগে পাবেন ভিত্তিতে, এই শ্রেণীর জমি যে আগে পরিস্কার করে চাষাবাদ করবে, জমি ব্যবহারের অধিকার তারই হবে। কিন্তু গ্রামের হেডম্যানের কাছে জমি ব্যবহার সংক্রান্ত সম্মতি/ অনুমোদন নিতে হবে। এখানে মালিকানা ছিল সরকারের, উপজাতীয়দের শুধুমাত্র ভুমি ব্যবহারের অধিকার ছিল। জমি ব্যবহারের এই চর্চা শত বছর ধরে চলে আসছিল. এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে আমেনা মহসিন Piere Bessaignet এর The Tribesmen of the Chittagong Hill Tracts বই হতে উধৃতি দিয়েছেন (Bessaignet, 1958),

“ ….tribal people have no actual concept of land ownership. They use the land but they do not regard it as a thing that is ‘theirs’. They are therefore, concerned with the rights not with ownership as such.” (Mohsin, 1997, p. 88)

সহজ ভাবে বললে, আমাদের দেশের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের সমাজে জমির মালিকানা সংক্রান্ত কোন ধারনা ছিল না। শত বছরের চর্চা, সামাজিক প্রথা, এবং জুম চাষের বিশেষ পদ্ধতির কারণে তাদের মধ্যে শুধুমাত্র জমি ব্যবহারের অধিকারের ধারনা ছিল, যা ছিল সাময়িক মাত্র, স্থায়ী কিছু নয়। ঝুম চাষের প্রয়োজনেই তারা এক পাহাড় হতে অন্য পাহাড়ে বা অন্য এলাকায় চলে যেত। পরবর্তীতে, ব্রিটিশ সরকারের ১৮৬৮ সালের পার্বত্য অঞ্চলের সমস্ত ভূমির মালিকানা ঘোষণার পরে সরকারীভাবে জেলা প্রশাসকের অনুমতি সাপেক্ষে জমির ব্যক্তিগত মালিকানা চালু হয়।

উল্লেখ্য যে, বনজ সম্পদ সংরক্ষনের অভিপ্রায়ে ব্রিটিশ সরকার ১৮৬৫ সালে ইনডিয়ান ফরেস্ট রিজার্ভ অ্যাক্ট পাশ করে। এরপরে উপযুক্ত সংরক্ষিত বনাঞ্চল খুঁজে বের করার জন্যে পার্বত্য চট্রগ্রামে ব্যাপক পরিদর্শন শুরু হয়। যার চূড়ান্ত ফলস্বরূপ, ফেব্রুআরি ১৮৭১ সালের ভিতরেই, পার্বত্য চট্রগ্রামের ৬৮৮২ বর্গ কিমি এর মধ্যে ৫৬৭০ বর্গ কিমি কে সরকারী রিজার্ভ ফরেস্ট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। নিজেদের গৃহস্থালি উদ্দেশ্য পুরনের উদ্দেশ্যে স্থানীয় অধিবাসিদের এই বনভুমির বনজ সম্পদ ব্যবহার করার অধিকার দেয়া ছিল।

কিন্তু কয়েক বছর পরেই, ১৮৭৫ সালে, এই বনভুমিকে আরো দুই শ্রেনিতে ভাগ করা হয়, যথাঃ রিজার্ভ ফরেস্ট এবং ডিস্ট্রিক ফরেস্ট। রিজার্ভ ফরেস্ট সম্পূর্ণরুপে বন বিভাগের হাতে ন্যস্ত করা হয়। যেখানে জুম চাষসহ সকল ধরণের বনজ সম্পদ আহরন নিষিদ্ধ ছিল।
দ্বিতীয় ক্যাটাগরি ছিল - ডিস্ট্রিক ফরেস্ট ( যা বর্তমানে আনক্লাসড স্টেট ফরেস্ট হিসেবে পরিচিত)। এখানে জুম চাষসহ বনজ সম্পদ আহরন করার অনুমতি ছিল।

ব্রিটিশ আমলে পার্বত্য অঞ্চলের রিজার্ভ ফরেস্টের পরিমাণ নিচের টেবিলে দেখানো হলঃ


সুত্রঃ আমেনা মহসিন (১৯৯৭), পৃষ্ঠা – ৯২।

সম্প্রতি জাতীয় সংসদে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন (সংশোধন) বিল-২০১৬ পাশ হওয়ার পর থেকেই কিছু উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ সর্বত্র একটা আওয়াজ তোলার চেষ্টা করছেন যে, পাহাড়ের সকল জমি পাহাড়িদের (ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের) এবং এখানে কোন সরকারী জমি নেই।

অথচ, দেখা যাচ্ছে যে, ১৮৭১ থেকে ১৮৮৫ সালের মধ্যে পার্বত্য চট্রগ্রামের তিন- চতুর্থাংশ এলাকাই সরকারী বনভুমি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছিল। যদি উপজাতীয়দের দাবী অনুযায়ী সিএইচটি ম্যানুয়াল ১৯০০ কার্যকরী করা হয়, তাহলেতো তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের এই বনভুমির অধিকার বর্তমানের বাংলাদেশ সরকারের হাতেই ন্যস্ত হয়ে যায়। স্মরণযোগ্য, যেখানে জেলা প্রশাসক ভুমি বন্দোবস্ত দেয়াসহ প্রভূত ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন।

আরো মজার ব্যাপার হল, জুম চাষের কারণেই মুলত প্রাচীন পাহাড়ি সমাজে জমির ব্যক্তি মালিকানার পরিবর্তে সামাজিক মালিকানায় বিশ্বাস করা হত। বর্তমান যুগে, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের একটা বড় অংশ লেখাপড়া শিখে চাকুরি করছে, অনেকেই ব্যবসা-বানিজ্যে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের আর জুম চাষ করার অবকাশ নেই। যদি তারা জুম চাষই না করে, তাহলে সামাজিক জমির অংশীদার হওয়ার জন্যে অযোগ্য বলে বিবেচনা করাই স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে, যেখানে জুম চাষের কোন অবকাশ নেই, সেখানে সামাজিক ভূমির অবকাশ না থাকাই স্বাভাবিক। এমতাবস্থায়, পার্বত্য সমাজের অংশবিশেষ জুম চাষের বাইরে চলে যাওয়ার পরেও শুধুমাত্র প্রথার দোঁহাই দিয়ে পাহাড়ের সমস্ত জমিকে সামাজিক জমি হিসেবে দাবী করা নিতান্তই অযৌক্তিক।

সুতরাং ঐতিহাসিক তথ্য, প্রাচীন রীতি ও চর্চা এবং সমসাময়িক বাস্তবতা পর্যবেক্ষণে এই ধারনা জন্মানো অমুলক নয় যে, স্বার্থান্বেষী একটা মহল পার্বত্য অঞ্চলের ভুমি সমস্যা সমাধানে সরকারের আন্তরিকতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা আর এই সমস্যা জিইয়ে রাখার মানসিকতা থেকেই ভূমির মালিকানা সংক্রান্ত উদ্ভট দাবী তৈরি করছে।

দেশের একটা অংশে কিভাবে সরকারের কোন জমি না থাকার মত উদ্ভট ধারনা মানুষের মাথায় আসে, সে প্রসঙ্গ অবতারনার নিতান্তই নিষ্প্রয়োজন। তাও আবার, পার্বত্য চট্রগ্রামে, যেখানে ভু-প্রকৃতির বৈশিস্টের কারণেই মানুষের বসবাস আদিকাল থেকেই কম ছিল। এহেন বাস্তবতায়, এমন ধারনার উদ্রেক হওয়া অমুলক নয় যে, মুলত বাংলাদেশ সরকারের কর্তৃত্ব আর নিয়ন্ত্রণ অস্বীকার করার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আপাতদৃষ্টিতে এমন উদ্ভট কিন্তু অন্তর্নিহিত তাৎপর্যে অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী এই ধারনা নিরীহ উপজাতিদের মাথায় গেঁথে দেয়ার অপচেস্টা করা হচ্ছে।

এর পাশাপাশি আরেকটা সুপ্ত উদ্দেশ্য হতে পারে, পাহাড়ে বাঙ্গালীদের জমির মালিকানার দাবীকে দুর্বল করা এবং পর্যায়ক্রমে তাদেরকে জমিবিহীন করে ফেলা – যতজনকে সম্ভব। যার কিছু হিন্টস পাওয়া যায়, সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় যেখানে, পাহাড়িরা বাঙালীদের জমি দখলের চেষ্টা করেছে। আর না হয়, নিজের বৈধ জমি ভোগ করতে বাঙ্গালী মালিককে বাঁধা দিয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে এমনো ঘটেছে যে, বংশানুক্রমে ভোগ করা নিজ জমিতেই বাঙ্গালীকে যেতে দেয়া হয়নি, বাঁধা দেয়া হয়েছে।

তথ্যসুত্রঃ
১। Bessaignet, P. (1958). Tribesmen of the Chittagong Hill Tracts. Dacca: Asiatic Society of Pakistan.
২। Mohsin, A. (1997). The Politics of Nationalism: The Case of the Chittagong Hill Tracts Bangladesh. Dhaka: The University Press Limited.

মন্তব্য ১৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:১৮

রাকু হাসান বলেছেন: পরিশ্রমী,তথ্যবহুল ,বিশ্বাসযোগ্য , লেখা । শুভকামনা নিবেন । আমি কিছু টা এ ব্যাপারে জানতে পারলাম । কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি । ++++++++++++

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:২৭

মাহের ইসলাম বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।
উৎসাহ পেলাম।

আপনার জন্যও শুভ কামনা রইল।

২| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৩১

কাওসার চৌধুরী বলেছেন:



চমৎকার তথ্যবহুল পোস্ট; অনেক অজানাকে জানতে পারলাম। (ধন্যবাদ)

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৪৪

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, আমাকে উৎসাহিত করার জন্যে।

শুভ কামনা রইল।

৩| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১০:৫৮

ching বলেছেন: পাহাড়ে সংখ্যালঘুদের উচ্ছেদে যৌন সহিংসতা একটি ‘হাতিয়ার’

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৩৭

মাহের ইসলাম বলেছেন: দাদা,
আপনার দেয়া লিঙ্কে গিয়ে লেখাটা পড়লাম। ভালো লিখেছে।
লেখার মধ্যে সত্যতা নেই, সেটা বললে মিথ্যা বলা হবে। তবে, আমার দৃষ্টিতে একপেশে লেখা।

আর কেউ না জানলেও আপনি নিশ্চয় জানেন যে, কাপেং ফাউন্ডেশন, রুবায়েত ফেরদৌস, মেজবাহ কামাল, সুলতানা কামাল, সঞ্জীব দ্রং প্রমুখ ব্যক্তিবর্গের অনেক বক্তব্য এবং কর্মকাণ্ড প্রমান করে যে তারা পাহাড়ের উপজাতিদের প্রতি ততটাই সহানুভূতিশীল যতটা তারা বাঙালীদের প্রতি বিদ্বেষ ভাবাপন্ন।

এখন আসি, লেখার বিষয়বস্তু প্রসঙ্গে। আমি স্বীকার করছি যে, পাহাড়ে নারীদের প্রতি যে সহিংসতা হচ্ছে তার জন্য অনেক বাঙালী দায়ী। কিন্তু বাস্তবতা হল - একই অপরাধ যদি কোন উপজাতি করে তখন কিন্তু সেটা অনেক ক্ষেত্রেই চেপে যাওয়া হয়। তাই, কাপেং ফাউন্ডেশনের মত দল যখন ডেটা এনালাইসিস করে তখন উপজাতিদের অপরাধ প্রকৃত সংখ্যার চেয়ে কম দেখা যায়।
লক্ষ্য করুন, আমি কিন্তু বলিনি যে, বাঙালীদের অপরাধ বেশী দেখানো হয়।

উদাহরণ হিসেবে, অতি সাম্প্রতিক কয়েকটা ঘটনা বলি।

১। ২৯ মে ২০১৮ তারিখে মহালছড়িতে দশম শ্রেণীর ৩ জন মারমা ছাত্রীকে উপজাতি তরুন্ররা ধর্ষণ করে। এই ঘটনা কিন্তু সংবাদ পত্রে আসেনি। এমনকি মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিল কোন ধরণের প্রতিবাদ বা মিছিল করার প্রয়োজনবোধ করেনি। যদিও একই ধরণের ঘটনায় যেখানে বাঙালী দোষী - অনেক ফলাও করে প্রচার করা হয়, লেখালেখি, প্রতিবাদ, মিছিল ইত্যাদি চলতেই থাকে।

২। ২ আগস্ট সন্ধ্যায় রাঙ্গামাটির কাউখালিতে ৮ম শ্রেণীর এক চাকমা ছাত্রী ধর্ষিতা হয়। অপরাধী চাকমা বলে থানায় মামলার পরিবর্তে মেয়েকে রাঙামাটি সদর হাসপাতালে নিতে দেয়া হয়নি। যদিও মেয়ের মা মেয়েকে নিয়ে কাউখালি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসেছিলেন এবং সেখান থেকে তাদেরকে রাঙ্গামাটি যেতে বলা হয়েছিল। আমি শুনেছি, এই অপরাধে অপরাধীকে ইতিমধ্যেই প্রথা অনুযায়ী সাজা দেয়া হয়েছে।

৩। একই দিনে দিঘিনালায় ৭ম শ্রেণীর এক চাকমা ছাত্রী ধর্ষিতা হয়ে হাঁসপাতালে আসে। হাঁসপাতালে এসে তারা ধর্ষণ করা হয়েছে বলে অভিযোগও করে। কিন্তু, পরে আবার তারাই দাবী করতে শুরু করে যে, ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। এখানে অপরাধী একজন চাকমা। যতটুকু জেনেছি, কোন একটা আঞ্চলিক দলের সদস্য সে। আর আঞ্চলিক দলের চাপেই ধর্ষণের অভিযোগ প্রত্যাহার করা হয়েছে।

এমন অনেক উদাহরণ আছে, তালিকা বড় করে লাভ আছে বলে মনে করি না। তাই, অতি সাম্প্রতিক কয়েকটা ঘটনার কথা বললাম।

৪| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:০৮

চাঙ্কু বলেছেন: কতকিছু জানলাম!

১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৪১

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

৫| ১১ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১১:৪০

মাহের ইসলাম বলেছেন: চিং
দাদা, আপনি চাইলে এই লিংক দুটো ঘুরে আসতে পারেন।

১। [link|http://parbattanews.com/en/the-politicization-of-violence-against-women-in-cht/|The Politicization of Violence against Women in CHT

২। Tears of Hill: Violence against Tribal Women in CHT

৬| ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:২০

অলিভিয়া আভা বলেছেন:
খুব সুন্দর ও ভালো একটা লেখা। পুরটা পড়া হয়নি। পড়ে আবার পড়ার জন্য প্রিয়তে রাখলাম।
অনেক ধন্যবাদ

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:২৮

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
উৎসাহিত বোধ করছি।

শুভ কামনা রইল।

৭| ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১২:৫৬

যুক্তি না নিলে যুক্তি দাও বলেছেন: এক টানে পড়ে ফেললাম, বেশ তথ্যবহুল পোস্ট, ভালো লাগল

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১১:৪৯

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
অনুপ্রানিত হলাম।

৮| ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ রাত ১:২০

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আমার মাথায় ঢুকে না বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরও কেন ওখানের জন্য আলাদা আইন? কীসের সার্কেল, কীসের রাজা, কীসের খাজনা? দেশে চলবে দেশের সংবিধান ও আইন অনুযায়ী। এখানে মায়াকান্নার সুযোগই নেই। তারাও বাংলাদেশী। তারা আলাদা কেউ নয়। তাদেরকে বিশেষ দৃষ্টিতে দেখার অধিকার সংবিধানেরও নেই...

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৪২

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আমাকে উৎসাহিত করার জন্য।

আমরা সবাই বাংলাদেশী এটা নিয়ে কোন সন্দেহ নাই।
তবে, সংবিধানে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তাই, তারা কিছু কিছু ক্ষেত্রে মূল জনগোষ্ঠী হতে সুবিধাপ্রাপ্ত।

৯| ১২ ই আগস্ট, ২০১৮ সকাল ১০:২৬

রাজীব নুর বলেছেন: পাহাড় কি কেনা যায় না?
তবে লিজ তো নেওয়া যায়।

১২ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:৪৭

মাহের ইসলাম বলেছেন: আপনাকে দেখে ভালো লাগলো।

বর্তমানে লিজ নেয়া যায়। তবে, আইন কানুন যেভাবে সংশোধন হচ্ছে, ভবিষ্যতে লিজ নেয়া বর্তমানের তুলনায় কঠিন হতে পারে।

আর হ্যাঁ, পাহাড় কেনা যায় :)
পাহাড়ে জমি কিনতে গেলে তো পাহাড়ই কিনতে হবে।

১০| ১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৩:২০

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: প্রিয়মাহেরভাই,

পোষ্টটি পড়ে আমার মনে হয়েছে আপনার রিসার্চ পেপারের একটি অংশ। নিছক ব্লগে দেওয়ার জন্য বোধহয় এতটা পরিশ্রম ভাবতে পারছি না । যাইহোক, সুন্দর তথ্যসমৃদ্ধ, যুক্তিযুক্ত পোষ্টে একটা লাইক দিয়ে খুশি নই। ক্ষমতা থাকলে আরও কটি দিতাম।

শুভ কামনা রইল।

১৪ ই আগস্ট, ২০১৮ বিকাল ৪:২৬

মাহের ইসলাম বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।

সত্যি বলতে কি, এটা কোন রিসার্চ পেপারের অংশ না।
ব্যক্তিগত আগ্রহে পার্বত্য চট্রগ্রাম নিয়ে পড়তে গিয়ে কিছু বিষয় আগেই জানতাম। তাই, যখন দেখলাম কিছু পাহাড়ি এমন একটা উদ্ভট ধারনা ছড়ানোর চেষ্টা করছে যে, পাহাড়ের সব জমি পাহাড়িদের তখন বই পত্র ঘাটতে হয়েছে। ইচ্ছে করেই আমেনা মহসিনের বইয়ের সুত্র উল্লেখ করেছি, কারন অন্য লেখকের দাবী অনেকে মানতে চাইবেন না। অধিকন্তু, এই লেখিকার যে পাহাড়িদের প্রতি সহানুভূতি আছে, সেটা মোটামুটি অনেকেরই জানা।

আপনার কমেন্ট আমাকে আরো উৎসাহিত করবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.