নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ভাবনাহীন ভাবনাগুলো

মাহের ইসলাম

মাহের ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ধর্মের দোহাই এ আগ্রাসন ব্যবসাঃ পণ্য যেখানে ভুমি

১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:১৬


ছবিঃ বাবুছড়ার সোনা মিয়া টিলাতে ১৯৮৪ সালে নির্মিত সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছবি।

সাম্প্রতিক কুকিছড়ার বৌদ্ধ মন্দির ভাঙচুরের ঘটনা যে কোন স্বাভাবিক বিবেকবান মানুষকে নাড়া দিয়েছে নিশ্চয় - নাড়া দেয়াটাই স্বাভাবিক। কাত হয়ে পড়ে থাকা বৌদ্ধ মূর্তির ছবিটি দেখে, যে কেউই যতটা না ব্যথিত হবে, তার চেয়ে বেশী অবাক হবে। প্রচন্ড ঘৃণাবোধ করাটাই স্বাভাবিক সেই কাপুরুষদের প্রতি, যারা এক প্রাণহীন জড় পদার্থের উপর দিয়ে তাদের পৌরুষ ফলাতে গিয়েছিল

দুনিয়ার কোন ধর্মই এমন শিক্ষা দেয় না যে, অন্যের ধর্ম অবমাননা করতে হবে। সকল ধর্মই মানবের কল্যানের পাশাপাশি মানষের বিভিন্ন ভালো গুনাবলীর চর্চা ছাড়াও শান্তি, ক্ষমা আর হৃদয়ের মহত্ত্ব প্রচারে সচেষ্ট। তাই, ধর্মের মত একটা স্বর্গীয় এবং সার্বজনীন ধারণাকে এমন অপমানিত হতে দেখে ব্যথিত না হয়ে গত্যন্তর থাকে না।

ইট –রড-বালি আর সিমেন্টের একটা মূর্তির উপর কোন স্বাভাবিক চিন্তার এবং বিবেকবান মানুষের এমন ক্ষোভ থাকতে পারে, সেটা আমার কল্পনাতেও আসে না। ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রকাশিত সিএইচটি কমিশনের বক্তব্যের সাথে সুর মিলিয়ে আমিও বলতে চাই, “এ ঘটনা নিঃসন্দেহে বৌদ্ধধর্মাবলম্বীসহ দেশের সব অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষের উপর চরম আঘাত ও অবমাননাকর।“ সঙ্গত কারণেই এই কাপুরুষদের প্রতি তীব্র ঘৃণাবোধ করছি। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছি, এই সব মানুষ নামের কলংকিত পশুদের।

২২ অক্টোবর ২০১৮, দিবাগত রাতে খাগড়াছড়ি জেলার গুইমারা উপজেলার হাফছড়ি ইউনিয়নের কুকিছড়া গ্রামে জেতবন বৌদ্ধ বিহারে ভাঙচুর করা হয়। দুষ্কৃতিকারীরা প্রায় সাত ফুট উঁচু বৌদ্ধ মূর্তিটি ভেঙ্গে ঘরের পাশে ফেলে রাখে। সঙ্গত কারণেই স্থানীয় বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা ক্ষোভে ফেটে পরে । বিক্ষোভ মিছিল, সমাবেশ করে এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানায় এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির দাবী করে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব প্রবারণা পূর্ণিমার মাত্র একদিন আগে এমন ঘৃন্য ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন, নিরাপত্তা বাহিনীকে হতবাক করে দেয়। দেশের বিভিন্ন স্থান হতেও প্রতিবাদের রব উঠে। শান্তি শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি এড়াতে, বিশেষ করে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষারথে অতি দ্রুত বিহারের ভিক্ষুদের সাথে মিটিং করে স্থানীয় প্রশাসনের তরফ থেকে তাদের সকল দাবী তৎক্ষণাৎ মেনে নেয়া হয়। ফলশ্রুতিতে, স্থানীয় প্রশাসনসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তড়িৎ হস্তক্ষপে ঘটনার জেরে পার্বত্য চট্রগ্রামের অন্যান্য স্থানে সাম্প্রদায়িক বিষবাস্প ছড়াতে পারেনি।

কুকিছড়ার বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণের বিষয়টি সর্ব প্রথম সকলের নজরে আসে জুনের ২৪ তারিখে। পারবত্য চট্রগ্রাম কেন্দ্রিক এক অনলাইন পত্রিকায় দাবী করা হয় যে, নির্মাণাধীন মন্দির ভেঙ্গে ফেলার আদেশ দিয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। সেখানে এক নির্মাণাধীন ঘরের ছবিও দেয়া হয়।

এর অব্যবহিত পরেই আরেক নিউজ পোর্টাল হতে জানা যায় যে, নিরাপত্তা বাহিনী মন্দির ভাঙ্গার কোন নির্দেশ দেয়নি। বরং মন্দিরটি এক প্রত্যাহারকৃত নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্পে নির্মিত হচ্ছে এবং নির্মাণকারীরা মালিকানার সপক্ষে কোন প্রমাণাদি উপস্থাপন করতে পারেনি। তাই, মালিকানা নিশ্চিত না করতে পারা পর্যন্ত নির্মাণ কাজ বন্ধ রেখে জমির মালিকানা নিশ্চিত করার পরে বিহার নির্মাণ করতে বলে, তারা (নিরাপত্তা বাহিনী) স্থান ত্যাগ করে। এর কিছুদিন পরে ফেসবুকে এক ছবিতে দেখা যায় যে, নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। শুধু তাই নয়, মন্দিরের ভিতরে প্রায় এক ফুট উঁচু এক বৌদ্ধ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে, যার পাশে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদেরকেও দেখা যায়। তবে, তখনো জমির মালিকানা নিয়ে পরিস্কার কিছু জানা যায়নি।

প্রায় চার মাস পরে, অক্টোবরের শেষ সপ্তাহে এসে মন্দিরের মূর্তি ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। সাম্প্রতিক ছবিতে দেখা যায় যে, প্রায় সাত ফুট উঁচু বিশাল এক মূর্তি কাত হয়ে পড়ে আছে। অনুমিত, বিগত চার মাসের কোন এক সময়ে এই মূর্তিটি নির্মাণ করা হয়েছিল।
এরপরে ভাংচুরের দায় নিয়ে একেক ধরণের তত্ব প্রচার করা হয়েছে। সেসব দায়ের যৌক্তিকতা নিয়ে সঙ্গত কারণেই প্রচুর বিতর্ক হয়েছে। স্মরণযোগ্য, জমির মালিকানা নিয়ে বিতর্ক ছাড়া এই মন্দির নির্মাণকালীন অন্য কোন বিতর্ক ছিল না।

সর্বশেষ সংবাদ অনুযায়ী, ২৭ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে, বৌদ্ধ ধর্মীয় রীতিনীতি পালন ও মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ বিহার ও বৌদ্ধ মূর্তির পুননির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। পুননির্মাণ কাজের উদ্বোধনের সময় পাড়াবাসিরা নিজেদের বাড়ি থেকে নগদ টাকা পয়সা ও সোনা রুপা এনে বৌদ্ধের জীবন ফিরে আসার জন্য উৎসর্গও করেছেন। গুইমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পঙ্কজ বড়ুয়া, যিনি ঐ শুভ উদ্বোধন করেন তাকে উদ্ধৃত করে সংবাদে বলা হয়েছে যে, সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে আগামী এক মাসের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে। আরো জানা যায় যে, আগের চেয়ে সুন্দর ও বেশী জায়গা নিয়ে সরকারীভাবে স্থায়ী এই বিহার নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় স্থানীয় জনসাধারণ খুব খুশী।

এই লেখার উদ্দেশ্য বৌদ্ধ মন্দির পুনর্নির্মাণের সংবাদ জ্ঞাত করে কাউকে খুশী করা নয়। কিংবা, ভাঙচুরের বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে পুরনো ক্ষত জাগিয়ে তোলা নয়। এমনকি, কোন নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে লক্ষ্য করে, কে বা কারা ঐ ঘটনায় জড়িত থাকতে পারে, সেই সন্দেহের তীর ছোঁড়াও নয়। গুইমারা উপজেলার কুকিছড়ার প্রায় অনুরূপ আরেকটা ঘটনা খাগড়াছড়ির সদর উপজেলার দেবতাপুকুর এলাকায় জন্ম হয়েছে বলেই এই লেখার অবতারনা করা হচ্ছে। যাতে পাঠককুল নিজস্ব বিচারবিবেচনা প্রয়োগের মাধ্যমে যুক্তিসঙ্গত ধারনা করতে পারেন – কারা এমন ঘটনার কুশীলব হতে পারেন এবং কি তাদের উদ্দেশ্য হতে পারে। কারণ, কুকিছড়ার ঘটনায় আর কিছু না হলেও নিরাপত্তা বাহিনীর পরিত্যক্ত ক্যাম্পের জমি অবৈধভাবে দখল করে সরকারী খরচে স্থায়ীভাবে সুন্দর ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণের এক চমৎকার পদ্ধতি উদ্ভাবিত হওয়ার পাশাপাশি, অত্যন্ত কার্যকারীভাবে তা বাস্তবায়িত করা হয়েছে।

সিএইচটি নিউজডটকমের ২৬ অক্টোবরের এক প্রতিবেদনে দেবতাপুকুর এলাকার মন্দির নিরমান সংক্রান্ত এক বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়। নিঃসন্দেহে, কিছু কিছু দিক বিবেচনায় নিলে দেবতাপুকুরের ঘটনাকে কুকিছড়ার ঘটনার ‘কপি-পেস্ট ভার্সন’ বলা যেতে পারে, যার শেষ দৃশ্যের পর্দা এখনো উন্মোচিত হওয়া বাকী রয়েছে বলে অনেকেই ধারনা করতে পারেন।

ঘটনাস্থল হিসেবে এখানেও বেছে নেয়া হয়েছে একটি পরিত্যক্ত নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প। অবশ্য এখানে “পরিত্যক্ত সেনা ক্যাম্পের স্থান, অনুমতি ছাড়া দখল নিষেধ” মর্মে একটা স্টিলের সাইনবোর্ড লাগানো ছিল। এছাড়াও সেনাবাহিনীর টহল দল এখানে নিয়মিত টহল দিত। আর টহলে এসে এখানে বিশ্রাম নিত। কুকিছড়ার মতই, হঠাত স্থানীয় পাহাড়ীরা এখানে রাতারাতি ঘর তুলে মন্দির হিসেবে পুজো করতে শুরু করে দেয়। কয়েকদিন পরে টহলে এসে সেনাবাহিনী খাস জমিতে মন্দির দেখতে পেয়ে স্বাভাবিকভাবেই স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ডেকে মন্দির সরিয়ে ফেলতে বলে। সাথে সাথেই শুরু হয়ে যায় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে অপপ্রচার – ঠিক যেমনটা ঘটেছিল কুকিছড়ার ক্ষেত্রে। সেনাবাহিনীর স্থানীয় কমান্ডার বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার স্থানীয়দের সাথে মিটিং করেছেন। এমনকি স্থানীয়রা মন্দির সরিয়ে ফেলতে রাজী হওয়ায়, মন্দির সরানোর জন্যে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন বলেও জানা যায়। তবে, এর পরেও মন্দির সরানো হয়নি। তৎপরিবর্তে সোশ্যাল মিডিয়াতে সেনাবিদ্বেষী এবং ধর্মীয় উস্কানীমুলক অপপ্রচার চালানো অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে ৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে, আরেক নিউজ পোর্টালে , গ্রামবাসীর সাথে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে মিটিং এর ভিডিও আপলোড করে এই ঘটনায় গ্রামবাসীর অবস্থান পরিস্কার করা হয়েছে। মিটিঙয়ে গ্রামবাসী নিজেরাই বলেছে যে, অবৈধভাবে ভূমি দখল করে নির্মিত মন্দিরের উপাসনা কোন কাজে আসবেনা এবং তারা মন্দির সরিয়ে নিবে। গ্রামবাসীর বরাতে জানানো হয়েছে যে, এক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল পাহাড়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের পায়তারা করছে। আর সে কারণেই, “গ্রামবাসীরা একমত হলেও নানা ভাবে তাদরও হুমকি-ধামকি দিয়ে নারাজ প্রমান করতে মরিয়া হয়ে উঠেছিলো সন্ত্রাসীরা। অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে গ্রামবাসীদের বলা হয়েছে, “মন্দির সরাতে যে আসবে, তার লাশ পড়বে।“ (নেক্সটবিডি২৪ডটকম, ৮ নভেম্বর ২০১৮)। সন্ত্রাসীরা আদৌ হুমকি দিয়েছিল কিনা বা হুমকির সত্যতা যাচাই করার উপায় না থাকলেও যা দেখা গেছে তা হলো - পরবর্তী এক সপ্তাহেও মন্দিরটি সরিয়ে নিতে সাহস করেনি কেউই।

এমতাবস্থায়, একজন স্বাভাবিক চিন্তা-চেতনার মানুষের পক্ষে এমন ধারনা করা অমুলক নয় যে, খাস জমিতে মন্দির নির্মাণের মাধ্যমে দেশের আইন অনুযায়ী দণ্ডনীয় অপরাধ করা হয়েছে। আজ হোক, কাল হোক প্রশাসন প্রয়োজনীয় আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। ফলাফল হিসেবে, মন্দিরতো এখানে থেকে সরবেই সাথে কিছু গ্রামবাসী অবৈধভাবে সরকারী জমি দখলের অপরাধে দণ্ডিত হতে পারে।
এহেন ঘোর অমানিশা হতে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে বেশী দূরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই; উল্টো হাতের নাগালেই রয়েছে – কুকিছড়ার ঘটনা। অবৈধভাবে দখল করা জমিতে মন্দির নির্মাণ করে গ্রামবাসীর শাস্তির পরিবর্তে কিভাবে জমিসহ সরকারী টাকায় স্থায়ীভাবে মন্দির নির্মাণ করা যেতে পারে – তার জ্বাজল্যমান উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে কুকিছড়ার ঘটনায়। তাই, একই পদ্ধতি দেবতাপুকুর এলাকাতে প্রয়োগ করে ভিন্ন ফলাফল আশা করা কতটুকু বোকামি হবে ? এই প্রশ্নের উত্তর দেবার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না।

যারা ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণের নামে ভুমি দখলের এমন কার্যকরী পদ্ধতির ব্যাপারে এখনো সন্দিহান, তাদের দৌদুল্যমানতা দূর করতে আরো কয়েকটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। ঘটনাগুলো হুবুহু একই না হলেও ঘটনার বিসয়বস্তু একই ধরণের।

১৯৮২-৮৩ সালে খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ৫০টি বাংগালি পরিবারকে সরকারীভাবে ২০০ একর জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল।কিছুদিন পরে নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে পরিবারগুলো অন্যত্র আশ্রয় নিলে, পাহাড়ীরা ঐ জায়গা দখল করে ২০০৮-০৯ সালে এক বিশাল বৌদ্ধ বিহার নির্মাণ করে। ‘শান্তিপুর অরন্য কুটির’ নামের এই বিহারে পুরোহিতদের থাকার জন্য আবাসন, অফিস, দর্শনার্থীদের আলাদা অপেক্ষাগার, বাগান ইত্যাদি তৈরি করা হয়েছে। তবে, এই বিহারের অল্প কিছু নির্দিষ্ট স্থান ছাড়া বাকী সকল জায়গায় সাধারণ দর্শনার্থীদের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা আছে।

২০০১ সালে লক্ষিছড়ির দুধাইয়াখোলাতে এক পরিত্যক্ত পুলিশ ক্যাম্পের জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে ‘ ‘দুঃখ মুক্তি ভাবনা কেন্দ্র’। এই লক্ষিছড়িতেই ২০১৫ সালে দেওয়ানপাড়ায় আরেকটি পরিত্যক্ত পুলিশ ক্যাম্পের জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে ‘কুতুকছড়ি দশবল বৌদ্ধ বিহার’। শুধু তাই নয়, বিহারের সামনে ‘পরিত্যক্ত পুলিশ ক্যাম্প’ লিখিত সাইনবোর্ড স্থাপনের প্রতিবাদে কিছু লোক মানববন্ধন করে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা পর্যন্ত করেছিল।

খাগড়াছড়ির দিঘিনালায় পরিত্যক্ত ক্যাম্পের জমিতে একাধিক বিহার আর কিয়াং নির্মাণ করা হয়েছে। দিঘীনালার ধনপাতা আর্মি ক্যাম্পের পরিত্যক্ত জমিতে ‘ধনপাতা মৈত্রী কল্যান’ বিহারটি ২০০৭ সালেই নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১১ সালে নির্মিত ‘সাধনা প্রেম বৌদ্ধ বিহার’টি নির্মাণ করা হয়েছে একটি পরিত্যক্ত আর্মি ক্যাম্পের জমিতে। এছাড়াও কয়েক বছর আগে, বাবুছড়া বাজারে ডিস্ট্রিক্ট পুলিশের এক পরিত্যক্ত ক্যাম্পের জমি দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে ‘তিনতামনি বৌদ্ধ বিহার’। একইভাবে, মহালছড়ির করল্লাছড়ি আর্মি ক্যাম্পের পরিত্যক্ত জায়গায় ২০০৮-০৯ সালে যথারীতি এক কিয়াং ঘর নির্মাণ করা হয়েছে।

২০১৫ সালের ৫ জুলাই তারিখে সিন্দুকছড়ির বকরীপাড়ায় অবৈধভাবে জমি দখল করে পাহাড়ীরা কিয়াং ঘর নির্মাণ করতে গেলে স্বাভাবিক ভাবেই উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। যথারীতি নিরাপত্তা বাহিনী শুরুতেই কিয়াং নির্মাণে বাধা দিয়েছিল। ফলে, প্রতিবাদ, মিছিল, সমাবেশ, ইত্যাদি পর্ব পার হয়ে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, স্থানীয় প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারী করতে বাধ্য হয়েছিল। অতি সম্প্রতি সিন্দুকছড়ির তিন্দুকছড়িতে পরিত্যক্ত আর্মি ক্যাম্পের জমিতে রাতারাতি এক ঘর তুলে ছোট এক বৌদ্ধ মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। গত জুলাই এর প্রথম সপ্তাহে এই ঘটনা ঘটলেও অদ্যবধি ঐ জায়গা কিয়াং ঘরের নামে বেদখলেই রয়েছে।

অবৈধভাবে জমি দখল করে ধর্মীয় উপাসনালয় নির্মাণের সবচেয়ে ভয়াবহ উদাহরণ হচ্ছে, বাবুছড়াতে নির্মিত ‘সাধনা টিলা বন বিহার’। ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের অংশ হিসেবে ১৯৮১ – ৮২ সালে সরকারী খাস জমিতে ৮১২ টি বাঙ্গালী পরিবারকে দিঘিনালার বাবুছড়াতে যথাযথ দলিল-দস্তাবেজসহ পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে তৎকালীন শান্তি বাহিনীর অমানুষিক অত্যচার আর নৃশংসতার কারণে এই পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। এরপর পার্বত্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া সত্ত্বেও এই পরিবারগুলো অদ্যবধি তাদের স্বভুমিতে ফিরতে পারেনি। কারণ, তাদের জায়গা দখল করে নিয়েছে পাহাড়িরা। যেখানে তারা এখন বিশাল এক বৌদ্ধ বিহারও নির্মাণ করেছে। শুধু তাই নয়, বাঙালীদের সমস্ত চিহ্ন মুছে ফেলার ষড়যন্ত্রে ‘সোনামিয়া টিলা’র নতুন নামকরন করা হয়েছে, ‘সাধনা টিলা’। অথচ, কালের স্বাক্ষী হিসেবে ১৯৮৪ সালে নির্মিত এক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিত্যক্ত বিল্ডিং আজো সেই আদি নাম ধারন করে আছে। অপরদিকে উচ্ছেদের শিকার বাঙ্গালি পরিবারগুলো বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। ছোট্ট এক ঘুপচি ঘরে দুই-তিন পুরুষ ধরে বাস করছে অনেকেই, কেউ কেউ আবার একই ঘরে গরু বাছুরের সাথেই রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। এমনকি দোয়া করার অভিপ্রায়ে নিজেদের মৃত পূর্বপুরুষদের কবরগুলো পর্যন্ত জিয়ারত করতে যেতে পারছে না। এই মানুষগুলোর দুরবিষহ জীবনের খন্ডচিত্র উঠে এসেছে The Daily Star এর A three-month wait that didn't end in three decades প্রতিবেদনে (The Daily Star, ২৭ অক্টোবর ২০১৮)।


ছবিঃ সোনা মিয়া টিলায় নির্মিত সাধনা টিলা বন বিহারের সাম্প্রতিক ছবি, যার নামানুসারে পুরো এলাকাকে এখন সাধনা টিলা নামে পরিচিত করানো হচ্ছে।

পার্বত্য চট্রগ্রামে ধর্মের নামে অবৈধভাবে জমি দখলের এই প্রবণতা ক্রমেই বাড়ছে। যার নিকৃষ্টতম উদাহরণ সৃষ্টি হয়েছে কুকিছড়াতে – আর চলমান রয়েছে দেবতাপুকুরে। পার্বত্য চুক্তির পরে সবাই যখন শান্তির প্রত্যাশায়, তখনই কিছু অবিমৃশ্যকারী অশান্তির ধামাঢোল পিটিয়ে বেড়াচ্ছে – হয়তবা নিজের অজান্তেই। যেখানে এক পক্ষ পার্বত্য চুক্তি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে নিরাপত্তা বাহিনীর ক্যাম্প ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করছে। সেখানে অন্যপক্ষ, ধর্মের নামে এই পরিত্যক্ত ক্যাম্পের সরকারী জমি অবৈধভাবে দখল করছে। অথচ, এরাই আবার দাবী করছে যে, সরকার চুক্তি বাস্তবায়ন করতে গড়িমসি করছে। অবৈধভাবে ভুমি দখলের মাধ্যমে পার্বত্য চট্রগ্রামের ভুমি সমস্যা ক্রমান্বয়ে জটিল হতে জটিলতর করে তুলে, এরাই আবার আওয়াজ তুলছে যে, ভুমি সমস্যাই পার্বত্য চট্রগ্রামের সকল সমস্যার উৎস; তাই ভুমি সমস্যার সমাধান সর্বাগ্রে করতে হবে। সাধারণ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে একদিকে নিরীহ ধর্মপ্রাণ মানুষের ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত দেয়া হচ্ছে। আরেকদিকে একটা এলাকার মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করা হচ্ছে ঘৃণা আর বিদ্বেষ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ চমৎকার একটি বিষয় খুব সুন্দর করে তুলে ধরেছেন।

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৫

মাহের ইসলাম বলেছেন: রাজীব ভাই,
আপনাকে দেখে ভালো লাগলো।
প্রথম কমেন্টের জন্যে বিশেষ ধন্যবাদ।
আপনার মন্তব্যে উৎসাহিত বোধ করছি।
ভালো থাকবেন।

২| ১৫ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৮

প্রশ্নবোধক (?) বলেছেন: পার্বত্য চট্রগ্রামে যারা ঘোরা ঘুরি করেন। তারা অনেকেই জানেন যে, গাড়ীতে পর্যন্ত পর্যটকরা আগে উঠতে পারেনা। যেন নিজ ভূমে পরবাসী। প্রত্যেক মোড়ে মোড়ে চাদাবাজীর শিকার সাধারণ পাহাড়ী-বাঙ্গালী সবাই। আমি মনে করি পার্বত্য চট্রগ্রামে আদতে কোনও সমস্যা নাই। মূলত দৃশ্যমান সমস্যাগুলোর পেছনে দায়ী কিছু উগ্র সংগঠন যার পেছনে অন্য কিছু!!!

১৬ ই নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৮

মাহের ইসলাম বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ।
পার্বত্য অঞ্চলের বাস্তবতা আমাদের দেশের মূল জনগোষ্ঠীর অনেকেই জানেন না।

আর, স্বভাবজাত কারণেই আমরা উদার এবং সহানুভূতিশীল। জাতির এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কিছু কিছু মানুষ অপব্যবহার করে, বিশেষত পাহাড়ে।

ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.