![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আসুন, "ধর্মান্ধতা পরিহার করে ধর্মিষ্ঠ হই" "বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম" [আল-কোরআন-৯৬. সূরা আল-আলাক] ০১. পাঠ কর (এবং ঘোষনা / প্রচার কর) তোমার প্রতিপালকের নামে যিনি সৃষ্টি করেছেন- ০২. সৃষ্টি করেছেন মানুষকে ‘আলাক’ হতে। ০৩. পাঠ কর, আর (ঘোষনা / প্রচার কর) তোমার প্রতিপালক মহামহিমান্বিত। ০৪. যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন- ০৫, শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে যা সে জানত না।] পবিত্র কোরআনের ৯৬ নম্বর সূরা 'আলাক'-এর প্রথম এই পাঁচটি আয়াত অত্যন্ত মূল্যবান এবং যা মহান আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে ফেরেশতা জিবরীল (আঃ)-এর মাধ্যমে সর্বশেষ নবী রাসূলুল্লাহ হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নাযিলকৃত সর্বপ্রথম ওহি অর্থাৎ ঐশীবাণী। মহামহিমান্বিত প্রতিপালকের নামে শিক্ষা লাভের জন্য পাঠ করা ( Study ) অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় থেকে জ্ঞানার্জন করা এবং জ্ঞানের প্রচার ও প্রসারে কলমের ব্যবহার অর্থাৎ 'লিখন' যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখে তা সর্বজনবিদিত। মহান স্রষ্টা আল্লাহতায়ালা তাঁর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টিকে খাঁটি মানুষ রূপে গড়ে তোলার জন্য যে সর্বপ্রথমে এই ধরণের চমৎকার ও কার্যকর ঐশীবাণী প্রদান করে অনুপ্রাণিত করবেন তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে পার্থিব জীবনের শত ব্যস্ততার মাঝেও আল-কোরআন ও বিজ্ঞানের বিষয়ে জ্ঞান চর্চার তাগিদে সময় বের করে নিতে হয়েছে। যে জ্ঞানের কোন সীমা পরিসীমা নেই, যে জ্ঞানের কথা লিখতে বসলে মহাসাগরের এমনকি আকাশ ও পাতালের সকল জলরাশিকে কালি বানালেও তা ফুরিয়ে যাবে- তার জন্য এই সময়টুকু অতি নগন্য। তথাপি আমার এই ছোট্ট প্রয়াসের জন্য দয়াময় আল্লাহতায়ালা যে আমাকে সুযোগ ও তৌফিক দিয়েছেন সেজন্য আমি অবনত মস্তকে সর্বশক্তিমান স্রষ্টার কাছে প্রতি মূহুর্তে শুকরিয়া আদায় করছি। সত্যের স্বরূপ উদঘাটনে যতটুকু সফলতা অর্জন করতে পেরেছি তার সবটুকুই আল-কোরআনের ঐশীবাণীসমূহের মর্ম সঠিকভাবে অনুধাবনের ফলেই সম্ভব হয়েছে। আর ব্যর্থতার জন্য একজন অতি সাধারন মানুষ হিসেবে আমার অযোগ্যতা ও অজ্ঞতাই সম্পূর্ণরূপে দায়ী। হে বিশ্ববিধাতা করুণাময় মহান আল্লাহ , সর্বপ্রকার অনিচ্ছাকৃত ভুল-ভ্রান্তির জন্য সর্বদা অবনত মস্তকে ক্ষমাভিক্ষা চাই। আর সরল ও সত্যের পথ যতটুকু অর্জন করতে পেরেছি তার উছিলায় একজন হতভাগা পাপী বান্দা হিসেবে তোমার জ্যোতির্ময় আরশের ছায়াতলে চিরকালের জন্য একটুখানি ঠাঁই চাই। আশাকরি ছোটখাট ভুলত্রুটি ক্ষমা-সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। চিন্তাশীল সুধীজনদের সুচিন্তিত পরামর্শ ও সমালোচনা সাদরে গ্রহণ করা হবে।
ইসলামে বিলাসিতা কিংবা বৈরাগ্য যেমন কাম্য নয়, তেমনি কৃপণতা ও অপচয় করতেও নিষেধ করা হয়েছে। শাশ্বত ও ভারসাম্যপূর্ণ জীবনবিধান হিসেবে ইসলাম মূলত মধ্যপন্থা অবলম্বনের শিক্ষাই দেয়-
আল-কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বিশ্বাসীদের উদ্দেশ্যে বলেন-
সূরা আশ-শো’আরা (মক্কায় অবতীর্ণ)
(২৬:২০৫) অর্থ- আপনি ভেবে দেখুন তো, যদি আমি তাদেরকে বছরের পর বছর ভোগ-বিলাস করতে দেই,
(২৬:২০৬) অর্থ- অতঃপর যে বিষয়ে তাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল, তা তাদের নিকট এসে পড়ে।
(২৬:২০৭) অর্থ- তখন তাদের ভোগ বিলাসের উপকরণ কি তাদের কোন উপকারে আসবে?
সূরা মুহাম্মদ (মদীনায় অবতীর্ণ)
(৪৭:১২) অর্থ- যারা বিশ্বাস করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে দাখিল করবেন, যার নিম্নদেশে নির্ঝরিণীসমূহ প্রবাহিত হয়। আর যারা অবিশ্বাসী, তারা কেবলই ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং চতুস্পদ জন্তুর মত আহার করে। তাদের বাসস্থান জাহান্নাম।
সূরা আল হাদীদ (মদীনায় অবতীর্ণ)
(৫৭:২৬) অর্থ- আমি নূহ ও ইব্রাহীমকে রসূলরূপে প্রেরণ করেছি এবং তাদের বংশধরের মধ্যে নবুওয়ত ও কিতাব অব্যাহত রেখেছি। অতঃপর তাদের কতক সৎপথপ্রাপ্ত হয়েছে এবং অধিকাংশই হয়েছে পাপাচারী।
(৫৭:২৭) অর্থ- অতঃপর আমি তাদের পশ্চাতে প্রেরণ করেছি আমার রসূলগণকে এবং তাদের অনুগামী করেছি মরিয়ম তনয় ঈসাকে ও তাকে দিয়েছি ইঞ্জিল। আমি তার অনুসারীদের অন্তরে দান করেছিলাম নম্রতা ও দয়া। আর বৈরাগ্য-- তারা নিজেরাই এটি উদ্ভাবন করেছে; আমি এটা তাদের উপর ফরজ করিনি; শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা, কিন্তু তারা তা পালন করেনি যেমনটি তারা পালনের যোগ্য ছিল। তাদের মধ্যে যারা বিশ্বাসী ছিল, আমি তাদেরকে তাদের প্রাপ্য পুরস্কার দিয়েছি। আর তাদের অধিকাংশই পাপাচারী।
সূরা আন নিসা (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৪:৩৬) অর্থ- আর আল্লাহর উপাসনা কর, তাঁর সাথে অপর কাউকে শরীক করো না। পিতা-মাতার সাথে সৎ ও সদয় ব্যবহার কর এবং নিকটাত্নীয়, এতীম-মিসকীন, প্রতিবেশী, অসহায় পথচারী এবং ডান হাতের অধিকারভুক্ত যুদ্ধবন্দী/দাস-দাসীর প্রতিও। নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালবাসেন না তাকে যে দাম্ভিক, গর্বিত,---
(০৪:৩৭) অর্থ- যারা নিজেরা কার্পণ্য করে এবং অন্যকেও কৃপণতা শিক্ষা দেয় আর গোপন করে সে সব বিষয় যা আল্লাহতায়ালা স্বীয় অনুগ্রহে তাদেরকে দান করেছেন। আর অবিশ্বাসীদের জন্য আমরা তৈরী করে রেখেছি অপমানকর শাস্তি।
(০৪:৩৮) অর্থ- আর যারা স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে লোক-দেখানোর উদ্দেশে এবং যারা আল্লাহর উপর ঈমান আনে না, ঈমান আনে না কেয়ামত দিবসের প্রতি এবং শয়তান যার সাথী হয়, সে কত নিকৃষ্টতর সাথী!
সূরা আল আ’রাফ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(০৭:৩১) অর্থ- হে আদম সন্তানেরা! তোমরা প্রত্যেক নামাজের সময় বেশ-ভুষা পরিধান করে নাও, খাও ও পান কর, কিন্তু অপচয় করো না। নিঃসন্দেহে তিনি অমিতব্যয়ীদের পছন্দ করেন না।
সূরা বনী ইসরাঈল (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১৭:২৬) অর্থ- নিকটাত্মীয়কে তার প্রাপ্য দাও এবং অভাবগ্রস্তকে ও অসহায় পথচারীকেও। আর কিছুতেই অপব্যয় করো না।
(১৭:২৭) অর্থ- নিশ্চয় অপব্যয়ীরা হচ্ছে শয়তানের ভাই-বিরাদর। আর শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।
(১৭:২৮) অর্থ- আর তোমার পালনকর্তার করুণা প্রত্যাশায় অপেক্ষামান থাকাকালে যদি কোন সময় তাদেরকে বিমুখ করতে হয়, তখন তাদের সাথে সদয় ভাবে কথা বল।
……………………………………..
(১৭:২৯) অর্থ- তুমি একেবারে ব্যয়কুন্ঠ/বদ্ধমুষ্ঠি হয়ো না এবং একেবারে মুক্ত হস্তও হয়ো না। তাহলে তুমি তিরস্কৃত, নিঃস্ব হয়ে বসে থাকবে।
(১৭:৩০) অর্থ- নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা যাকে ইচ্ছা অধিক জীবনোপকরণ দান করেন, আবার যাকে ইচ্ছা মাপজোখ কোরেও দেন। নিঃসন্দেহে তিনি তাঁর বান্দাদের সম্পর্কে সর্বজ্ঞ, সর্বদ্রষ্টা।
সূরা আল-ফুরকান (মক্কায় অবতীর্ণ)
(২৫:৬৩) অর্থ- আর পরমকরুণাময়ের বান্দা তারাই, যারা পৃথিবীতে নম্রভাবে চলাফেরা করে এবং তাদের সাথে যখন অজ্ঞরা কথা বলতে থাকে, তখন তারা বলে- 'সালাম'।
(২৫:৬৭) অর্থ- এবং তারা যখন ব্যয় করে, তখন অপচয় করে না আর কার্পণ্যও করে না, বরং তাদের পন্থা হয় এ দুয়ের মধ্যবর্তী।
সূরা আল ইমরান (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৩:১৮০) অর্থ- আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে যা দান করেছেন তাতে যারা কৃপণতা করে, তা তাদের জন্য মঙ্গলকর হবে বলে যেন তারা ধারণা না করে। বরং তা একান্তই ক্ষতিকর প্রতিপন্ন হবে। যা নিয়ে তারা কঞ্জুসি করে তা কিয়ামতের দিন তাদের গলায় বেড়ী বানিয়ে পরানো হবে। আর আল্লাহ হচ্ছেন আকাশমন্ডল ও যমীনের পরম সত্ত্বাধিকারী। আর যা কিছু তোমরা কর; আল্লাহ সে সম্পর্কে সম্মক অবগত।
সূরা আত তাওবাহ (মদীনায় অবতীর্ণ)
(০৯:৩৪) অর্থ- হে ঈমানদারগণ! পন্ডিত ও সংসারবিরাগীদের মধ্যে যারা লোকদের মালামাল অন্যায়ভাবে গ্রাস করে এবং আল্লাহর পথ থেকে লোকদের ফিরিয়ে রাখে, আর স্বর্ণ ও রূপা জমা করে রাখে এবং তা ব্যয় করে না আল্লাহর পথে, তাদের কঠোর শাস্তির সংবাদ শুনিয়ে দিন।
সূরা আত-তাগাবুন (মদীনায় অবতীর্ণ)
(৬৪:১৬) অর্থ- অতএব তোমরা যথাসাধ্য আল্লাহকে ভয় করো, আর শুনো, আনুগত্য করো এবং ব্যয় করো। এটা তোমাদের জন্যে কল্যাণকর। যারা মনের কার্পণ্য থেকে মুক্ত, তারাই সফলকাম।
সূরা আল মা’আরিজ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৭০:১৯) অর্থ- মানুষ তো সৃজিত হয়েছে অস্থির চিত্ত রূপে।
(৭০:২০) অর্থ- যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন হা-হুতাশ করে।
(৭০:২১) অর্থ- আর যখন সচ্ছলতা প্রাপ্ত হয়, তখন কৃপণ হয়ে যায়।
সূরা আল লায়ল (মক্কায় অবতীর্ণ)
(৯২:০৫) অর্থ- অতএব, যে দান করে এবং ধর্মভীরু হয়,
(৯২:০৬) অর্থ-এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে,
(৯২:০৭) অর্থ-আমি তার জন্য সুখকর পথ সহজ করে দেব।
(৯২:০৮) অর্থ-আর যে কৃপণতা করে ও বেপরোয়া হয়
(৯২:০৯) অর্থ- এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে,
(৯২:১০) অর্থ- আমি তার জন্য কষ্টকর পথ সহজ করে দেব।
(৯২:১১) অর্থ-যখন সে অধঃপতিত হবে, তখন তার সম্পদ কোনই কাজে আসবে না।
সূরা হুমাযাহ্ (মক্কায় অবতীর্ণ)
(১০৪:০১) অর্থ- দুর্ভোগ প্রত্যেকের যে পশ্চাতে ও সম্মুখে লোকের নিন্দা করে;
(১০৪:০২) অর্থ- যে অর্থ পুঞ্জিভূত করে রাখে এবং তা বার বার গননা করে,
(১০৪:০৩) অর্থ- সে ধারনা করে যে তার অর্থ তাকে অমর করে রাখবে;
(১০৪:০১) অর্থ- কখনো না, সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে হুতামায়;
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:১৩
মাহফুজশান্ত বলেছেন: ধন্যবাদ-
তবে অনেক সময় আলোচনার প্রয়োজনও পড়ে-
২| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:৩৪
কান্টি টুটুল বলেছেন:
তবে অনেক সময় আলোচনার প্রয়োজনও পড়ে-
আলোচনা করা যেতে পারে তবে তাফসির কারকের তাফসির আমার কাছে মাঝে মাঝে বিপদজনক মনে হয়,যেমন
ইবনে কাসির (র) এর তাফসির (সুরা নিসা ৩ নং আয়াত) এর অনুবাদে (২য় খন্ড,৪,৫,৬,৭পর্ব ২৭৮ পৃষ্ঠা) মনে হইতেছে কাসির সাহেবের কথাকেই আল্লাহর কথা বলে চালিয়ে দেয়া হয়েছে,এটা কিভাবে সম্ভব?
এখানে বা আমার কোন পোষ্টে আপনার মতামত দিয়েন।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:১৩
মাহফুজশান্ত বলেছেন: নিচের পোষ্টে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি-
#একলগে একাধিক বিয়া করা'- বৈধ কি?
৩| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:৩৬
আমি বীরবল বলেছেন: ভাল লাগল।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:১৪
মাহফুজশান্ত বলেছেন: মহান স্রষ্টার বাণী, ভাল লাগারই মত
ধন্যবাদ-
৪| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:০৬
বাজপাখি বলেছেন: ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। অনেক কিছু জানলাম।
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৩:১৫
মাহফুজশান্ত বলেছেন: পড়ার জন্য ধন্যবাদ-
৫| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সন্ধ্যা ৭:৫২
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: বিষয়টি খুবই গুরুত্বপুর্ণ
কিন্তু আমাদের দেশে প্রচলিত কোন ইসলামী দল/সংগঠনই এই ক্ষেত্রে ঠিক মধ্যম পন্থায় স্থির থাকতে পারছে না। কেউ বিলাশিতা/সম্পদশালীতার দিকে আবার কেউ বৈরাগ্যবাদের দিকে ঝুকে পরছে। যদিও সবাই জানে এবং বলে মধ্যম পন্থাই উত্তম!!
আমার কাছে এর কারন মনে হয় - ঠিক মধ্যম পন্থায় টিকে থাকার সঠিক হিসেব/কৌশল/প্রযুক্তিটা আমাদের জানা নাই। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির মধ্যে সম্পর্ক যেমন তত্ব ও তার প্রয়োগ কৌশল - তেমনি প্রতিটি তত্বেরই সুনির্দিস্ট প্রয়োগ কৌশল থাকা উচিত। এই ক্ষেত্রে আমরা তত্বটি জানি কিন্তু তার প্রয়োগ কৌশলটি সুনির্দিস্ট নয়।
ঠিক কোন অবস্থাটাকে আপনি মধ্যম অবস্থা বলবেন? মানুষ আর্থিক ভাবে যতই সম্মৃদ্ধ হতে থাকে তার চাহিদাও সেই হারে বাড়তে থাকে। সুতরাং মধ্যম পন্থা বলতে আপনি ঠিক কী বুঝাবেন সেটা সুনির্দিস্ট হওয়া উচিত। প্রতি মাসে কত টাকা খরচ করলে সেটা মধ্যম পন্থা হবে, কত খরচ করলে সেটাকে বিলাসিতা বলবেন, কত টাকা জমালে সেটাকে কৃপণতা বলা হবে - - এই বিষয়গুলির উপর বিস্তারিত আলোচনা প্রয়োজন।
০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:০৬
মাহফুজশান্ত বলেছেন: খুবই গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছেন।
জীবনযাপনের মান নির্ধারণ অবশ্যই জরুরী একটা বিষয়।
আমাদের দেশ দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি হলেও মন মানসিকতার দিক দিয়ে ততটা দরিদ্র নয়। বরঞ্চ কতিপয় ব্যতিক্রম ছাড়া অনেক ধনী দেশের মানুষদের চেয়ে সার্বিক বিচারে আমাদের সাধারন জনগণ যথেষ্ট উন্নত বলে আমি মনে করি।
আমি এটাও মনে করি যে আমাদের দেশের ৮০% জনগণ বিলাসিতায় অভ্যস্ত নয়। এর মধ্যে ৫০% মানুষ তো অতি সাধারন জীবনযাপন করতেই হিমশিম খায়। আর বাকিরা কষ্টেসৃষ্টে হলেও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুফল ভোগ করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।
আর চাঁদে জমিন কেনার স্বপ্নে যারা বিভোর তাদের সংখ্যা নগন্য হলেও, দাবার গুঁটি আপাতত তাদের হাতে বৈকি।
বাংলার সকল জনগণ তাদের প্রাত্যহিক জীবনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদির সাথে মানানসই প্রযুক্তি ব্যবহার করার সামর্থ অর্জন করুক- আমি এমনই স্বপ্ন দেখি। এটাকে আমি বিলাসিতা মনে করি না। অহেতুক দামি ও প্রয়োজনের অতিরিক্ত অপচয়ের পেছনে না ছুটে বরং টেকসই গাড়ি, ফ্রিজ, কম্পিউটার, পাওয়ারট্রিলার, ধান/গম মাড়াইয়ের যন্ত্র, ওয়াসিং-মেশিন, বৈদ্যুতিক সেলাই-মেশিন ব্যবহারের সামর্থ ও যোগ্যতা অর্জন করুক। এবং শুধু আমদানির উপর নির্ভরশীল না থেকে এই নিত্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রাদি নিজেরাই নিজেদের মত করে প্রস্তুত করার সামর্থ অর্জন করুক- আমি সেই স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। মোটকথা সামর্থ থাকলেই অহেতুক বিলাসিতায় না মেতে লোকদেখানো প্রতিযোগিতা ছেড়ে সম্পদের সুষ্ঠ বন্টন ও ব্যবহারই কামনা করি। নিজের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি অন্যের জন্য ভাববার মত মানসিকতাই আমাদেরকে প্রকৃত সুখ দিতে পারে। নিজের আয় অনুসারে জীবনযাপনের একটা যুক্তিসংগত মান নির্ধারণের পাশাপাশি আর দশ জনের জন্য ভাবলেই অনেক সমস্যার সমাধান বের হয়ে আসতে পারে বলে আমি বিশ্বাস করি।
ধন্যবাদ-
৬| ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:৩৫
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ
আপনার চিন্তাধারা ঠিকই আছে - তবে এখনও তাত্বিক অবস্থানের বাইরে এসে প্রায়গিক কৌশল নির্ধারনের সুনির্দিস্ট অবস্থান পরিষ্কার হয়নি। অবশ্ব আমিও যে বিষয়টা সুনির্দিস্টভাবে ব্যাখ্যা করতে পারব তাও নয় - আমি শুধু আমার চিন্তাগুলিই শেয়ার করতে পারি।
আমি দেখি আমাদের সমাজে শুধুমাত্র সম্পদশালীরাই যে অপচয় বা বিলাষিতা করে এটা সর্বত ভাবে সত্য নয়। দরিদ্র মানুষও পান-বিড়ি-সিগারেট এবং আরো অনেক অপ্রয়োজনীয় কাজে/ভোগে বেশ বড় একটা অংশ ব্যায় করে। নিম্মমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেরাও ধারদেনা করেহলেও বিশাল অংকের বাজেটে বিয়ের আয়োজন করে। আবার অতি নিম্ন স্তর থেকে উঠে আসা মানুষও ক্রমান্ময়ে ভোগ/সম্পদের মাত্রা বাড়াতেই থাকে - সে বুঝতেই পারে না কখন প্রয়োজনের মাত্রা ছাড়িয়ে অপচয়/বিলাষিতার গন্ডিতে চলে গেছে - কারণ সে সবসময় তার প্রয়োজন/আকাংখাটাকে সাধ্যের বাইরেই দেখতে পায়। এখানেই একটা গানিতিক হিসেব প্রয়োজন যাতে সুনির্দিস্ট ভাবে বলা যায় প্রয়োজন ও বিলাষিতার সীমারেখাটা ঠিক কোথায়।
আমি এমন একজনকে চিনি যার পরিবার তাকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়ার হোস্টেলের সামান্য খরচ দিতে পারত না। আর সেই লোকই এক সময় একটা ৫তলা বাড়ির মালিক হওয়ার পরও আর একটা বাড়ির জন্য লোনের আবেদন নিয়ে ব্যাংকে দেন দরবার করছিলেন(খুজলে এ'রকম উদাহরণ বহু পাওয়া যাবে)। মানুষ হিসেবে তিনি মোটেই খারপ নন, আমি যতদুর জানি তার কোন অবৈধ উপার্জও নাই - এই ব্যাপাটিকে আপনি কিভাবে দেখেন? তিনি বৈধ পথেই প্রচুর উপার্জন করছেন - জমি কিনছেন, বাড়ি করছেন, দামি ফ্ল্যাট কিনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও ফার্নিচারে সাজিয়েছেন, একাধিক গাড়িও আছে, আর আছে অনেকগুলো ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান(যেমন স্কুল, হাসপাতাল, ইন্ডেন্টিং ইত্যাদি) - এটা কি বিলাষিতা বা কৃপণতা? এর বাইরে উনি আর কী করতে পারতেন? বা এইভাবে একজন মানুষ যখন দরিদ্র থেকে উচ্চবিত্তে উঠে আসে তখন সে বিলাষিতা/কৃপনতার সীমানা কিভাবে নির্ণয় করবে??
০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১২:৫৮
মাহফুজশান্ত বলেছেন: আপনার প্রশ্নগুলো আমাকেও একই ভাবে ভাবিত করে। আম কোন সমাজবিজ্ঞানী নই। তথাপি আমার বোধ অনুসারে মনের কথাগুলো শেয়ার করছি। আমি সবজান্তা নই বলেই হয়ত আমার সব যুক্তি আপনাকে সন্তুষ্ট নাও করতে পারে। তারপরও ধৈর্য সহ ভাব বিনিময়ের জণ্য ধন্যবাদ জানাই। এসব নিয়ে যারা অন্তত চিন্তাভাবনা করেন, বরাবরই তাদের প্রতি আমার অন্তরের টান অনুভব করি।
ভাই, খারাপ মানুষের সঙ্গা সব ক্ষেত্রে সমান নয়। ভাল মানুষের মধ্যে যেমন খুব ভাল মানুষ থাকেন। আবার খারাপ মানুষের মধ্যেও খুবই খারাপ মানুষ থাকেন, মানুষের বেশে থাকা সত্বেও যাদেরকে আমরা পিশাচ বলে অবিহিত করি। কেউ খুন, সন্ত্রাস, ছিনতাই করে খারাপ মানুষ হয়। আবার কেউ উঁচু তলার খারাপ মানুষ- 'গড ফাদার'। ভদ্র বেশে এরা অনেক সময় পিশাচদেরও হার মানায়। বাহ্যিক দৃষ্টিকোন থেকে আপনি যাকে একেবারেই খারাপ মানুষ ভাবছেন না, তিনি অল্প-বিস্তর খারাপও হতে পারেন। বিশেষ করে যার এত এত সম্পদ রয়েছ এবং যাকে আল্লাতায়ালা স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছেন, তিনি যদি টাকা ধার করে একের পর আরেকটি বাড়ি, গাড়ি করার বাসনা পোষন করেন, একর পর এক প্লট কিনে কিনে ফেলে রাখেন। তাকে সেই অর্থে খারাপ না বললেও লোভের হাত থেকে যে তিনি মুক্ত নন- তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। বৈধ পথে উপার্জিত হলেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত অর্জনের আকাঙ্খাই মানুষকে বিলাসিতা করতে উদ্বুদ্ধ করে আর লোভই মানুষকে ধীরে ধীরে পাপের পথে নিয়ে যায়। যে পাপগুলো সাধারণ মানুষের চোখে অনেক সময় ধরা নাও পড়তে পারে। তবে আমাদের সমাজে অনেকেই আয়কর ফাঁকি দেবার জন্যও ধার নেন। এটি ভিন্ন প্রসঙ্গ এবং এক ধরনের পাপও বৈকি।
বিলাসিতা বলতে আমি তাকেই বুঝি যা প্রয়োজনের সাথে মানানসই নয়। নেশা জাতিয় যে কোন আসক্তিকেও আমি পাপ মনে করি। আর এইসব পাপ থেকে মুক্তির জন্য সাধনা করাই মুসলিমের কাজ। আপনি অল্প আয়ের যেসব মানুষের কথা উল্লেখ করেছেন, তাদের মধ্যে অনেকে হয়ত প্রকৃত শিক্ষার অভাবে এসব পাপ করছেন। আবার অনেকে আছেন জ্ঞানপাপী। তবে কার পাপের পাল্লা ভারি হবে তার সঠিক নির্ধারণের জন্য মহান স্রষ্টাই যথেষ্ট।
মূলত লোকদেখানো ও আরাম আয়েশে মেতে থাকার উদ্দেশ্যে অতিরঞ্জিত ব্যয় করার অদম্য বাসনাই হলো বিলাসিতা। নিম্মমধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলের উদাহরণটি এক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ইঞ্জিনিয়ার বা ডাক্তার- যেই হোক না কেন, অন্তরে সুপ্ত ও ন্যায় সঙ্গত বাসনা লালন করা এবং তা অর্জনের জন্য চেষ্টা-সাধনা করা ভাল। কিন্তু লাগামহীন বাসনা কখনই শান্তি দিতে পারে না। এটাই আমাদেরকে বুঝতে হবে। তবে এই বাসনা যখন প্রয়োজনের সাথে সামঞ্জস্য বিধান করে এবং লোভ ও লোকদেখানোর প্রতিযোগিতা ছেড়ে যুক্তি ও বিবেকের আলোকে নিরূপিত হয়, তখন তা বিলাসিতা নয়। এক্ষেত্রে নিজের আয়ের বিষয়টি যে মাত্রা নির্ধারণে বেশ বড় ভূমিকা রাখে, তা অনস্বীকার্য। কিন্তু আয় করলেই যে ভোগ বিলাসিতায় মেতে থাকা ঠিক নয়, ইসলাম মানুষের অন্তরে সেই চেতনা জাগিয়ে দেয়। যারা ভোগ-বিলাসিতায় মেতে থাকে এবং অন্যের কথা না ভেবে পেট থেকে পিঠ পর্যন্ত ভোজনে লিপ্ত থাকে- মহান স্রষ্টা তাদেরকে শয়তানের অনুচর হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। পাশাপাশি বৈরাগ্য জীবনযাপন ধর্মের অংশ নয় বলেও পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন। উপদেশ দান ও নিষেধাজ্ঞা জারির মাধ্যমে বিশ্বাসীদের বিবেককে মধ্যপন্থা নির্ধারণের নিক্তিতে রূপান্তরিত করার দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সুতরাং এরপর একজন মুসলিমের পক্ষে ভোগ বিলাসিতায় মেতে থাকার প্রশ্নই আসে না। বিবেকবান ধর্মীষ্ঠ মানুষ মাত্রই এ পথ পরিহার করা চাই।
ধন্যবাদ-
৭| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১০:২২
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: আমি দু:খিত যে বিষয়টি সম্ভবত সুস্পস্ট করে বুঝাতে পারছি না।
আমি বলতে চাইছি একজন মানুষ নিজে কখনই বুঝতে পারে না যে সে বিলাষিতা/অপচয় করছে। সে সবসময় মনে করে যে সে কেবল প্রয়োজনীয় কাজেই টাকা খরচ করছে।
উদাহরণের মানুষটি হোস্টেলে থাকার সময় যদি মাসে ১০০০ টাকা পেত তাহলেই তা যথেস্ট মনে করত। ঐসময় যারা হোস্টেলে থেকে মাসে ১৫০০/২০০০ টাকা খরচ করত তাদের ব্যাপারে এই লোকের ধারনা ছিল যে তারা অপচয়/বিলাশিতা করছে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এই একই লোক যখন একটা পাচতলা বিল্ডিংএর মালিক হয়েছে তখন আর একটা বিল্ডিংকে প্রয়োজনীয় মনে করেছে - এবং প্রয়োজনীয় মনে করার কারণেই সে ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করেছে। এটা এক দিনে হয়নি - ধীরে ধীরে হয়েছে। যখন তার কোন গাড়ি ছিল না তখন একটা গাড়ির প্রয়োজন ছিল - আজকে যখন তিনটা গাড়ি আছে তখনও নতুন মডেলের উন্নত গাড়ি বা চতুর্থ আর একটা গাড়ি প্রয়োজনীয় মনে হয়।
আমরা যে যার অবস্থান থেকে বিবেচনা করি বলে নিজের অবস্থানটা বুঝতে পারি না। আজকে আমি যে অবস্থানে থেকে যা খরচ/ভোগ করি আমার নিচে থাকা বহু মানুষের কাছে সেটা অপচয়/বিলাশিতা। আবার আমি যাদের যেইসকল খরচকে অপচয়/বিলাশিতা মনে করছি, ভবিষ্যতে কখনো তাদের স্তরে পৌছালে হয়ত সেগুলোকেই প্রয়োজনীয় মনে করব। আমি বেশ নিচু অর্থনৈতিক স্তর থেকে এসেছি বলে বিষয়টা অনুভব করতে পারি।
এটা একটা জটিল চক্র। এই চক্র ভেদ করা খুবই কঠীন। এই চক্রে আবদ্ধ প্রতিটি মানুষ তার উপরের দিকে তাকিয়ে থেকে মনে করে সে অনেক নিচে আছে। যার তিনটি বাড়ি আছে সে বলে "অমুকেরতো দশটি বাড়ি আমার তো অনেক কম"!
একই কথা বৈরাগ্যের বেলায়ও প্রযোজ্য - আমি আপনি যাকে বৈরাগ্যবাদী মনে করছি তার কাছে গিয়ে দেখুন সে অন্য আরো অনেকের উদাহরণ দিয়ে বলবে "আমিতো তাদের মত বৈরাগী নই"!! যাকে আপনি কৃপণ ভাবছেন সে কিন্তু নিজে নিজেকে কৃপণ ভাবছে না বরং অন্য অনেকের সাথে তুলনা করে নিজেকে যথেস্ট দানশীল মনে করছে!!(এ'রকম ব্যাক্তির সাথে পরিচয়ের অভিজ্ঞতাও আমার আছে)
এ'জন্যই কৃপণতা, বৈরাগ্য, বিলাশিতা, অপচয় - এই বিষয়গুলি গানিতিক ভাবে সুনির্দিস্ট হওয়া প্রয়োজন - তা না হলে কেউ কখনই বুঝতে পারবে না কখন সে কোন সীমা অতিক্রম করে গেছে। চিন্তা করে দেখবেন কি এরকম কোন গানিতিক সুনির্দিস্ট সীমারেখা নির্ধারণ করা যায় কি না?
০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:৩০
মাহফুজশান্ত বলেছেন:
আমি দু:খিত যে বিষয়টি সম্ভবত সুস্পস্ট করে বুঝাতে পারছি না।
আমি বলতে চাইছি একজন মানুষ নিজে কখনই বুঝতে পারে না যে সে বিলাষিতা/অপচয় করছে। সে সবসময় মনে করে যে সে কেবল প্রয়োজনীয় কাজেই টাকা খরচ করছে।
....................................
জী ভাই, এই বোঝার মত বোধ যেন জাগ্রত হয় সেই উদ্দেশ্যেই এই আলোচনার সূত্রপাত করা হয়েছে। শুধু নিজে নিজে মনে করলেই তো হবে না, সেই মনে করাটা সার্বিক অবস্থা, আপন আপন পরিবেশ-পরিস্থিতি, সামর্থ ও প্রয়োজনের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা সেটা বিবেচনা করা মত যোগ্যতা অর্জন করতে হবে।
.................................
উদাহরণের মানুষটি হোস্টেলে থাকার সময় যদি মাসে ১০০০ টাকা পেত তাহলেই তা যথেস্ট মনে করত। ঐসময় যারা হোস্টেলে থেকে মাসে ১৫০০/২০০০ টাকা খরচ করত তাদের ব্যাপারে এই লোকের ধারনা ছিল যে তারা অপচয়/বিলাশিতা করছে। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় এই একই লোক যখন একটা পাচতলা বিল্ডিংএর মালিক হয়েছে তখন আর একটা বিল্ডিংকে প্রয়োজনীয় মনে করেছে - এবং প্রয়োজনীয় মনে করার কারণেই সে ব্যাংকে লোনের জন্য আবেদন করেছে। এটা এক দিনে হয়নি - ধীরে ধীরে হয়েছে। যখন তার কোন গাড়ি ছিল না তখন একটা গাড়ির প্রয়োজন ছিল - আজকে যখন তিনটা গাড়ি আছে তখনও নতুন মডেলের উন্নত গাড়ি বা চতুর্থ আর একটা গাড়ি প্রয়োজনীয় মনে হয়।
.....................................
১০০০ টাকার স্থলে কেউ ১৫০০/২০০০টাকা খরচ করাটাই মুখ্য বিষয় নয়। যেহেতু ছাত্রাবস্থায় মূলত পরিবারই ব্যয় বহন করে থকে। তাই পরিবারের সামর্থটা এখানে বিবেচ্য। সেই সাথে ছাত্রটি বিলাসিতা করছে কিনা তা সার্বিক অবস্থার উপরে নির্ভরশীল। যেমন ধরুন- ১০০০ টাকা যিনি খরচ করছেন, তিনি হয়ত সকালে নাস্তায় সবজি-রুটি, একবেলা গোস্ত এবং একবেলা মাছ খান। পরনের তিনটি করে প্যান্ট ও সার্ট আছে। আর যিনি ১৫০০/২০০০ টাকা খরচ করছেন, তিনি হয়ত সকালে ডিম-পরোটা এবং দুপরে গোস্ত ও রাতে মাছ খান। পরনের পাঁচটি করে প্যান্ট ও সার্ট আছে। দু-পক্ষের জন্যই এটি তাদের খরচের জন্য যে টাকা দেয়া হয় তার সাথে খুব একটা বে-মানান হবে না। এখন এদের মধ্যে কাউকে যদি সব সময়ই এত বেশি মূল্যের প্যান্ট-সার্ট পড়তে দেখা যায় যে, যার এক একটির মূল্য দুমাসের হাত খরচের সমান, তাহলে এই স্টেজে সেটাকে বিলাসিতাই বলতে হবে। ঠিক তেমনি কোন পরিবারের পক্ষে হাত খরচের জন্য ১০,০০০ টাকা দেবার মত সামর্থ থাকলেও এমনটি দিয়ে আর দশজন ছাত্রের সাথে বিভেদ সৃষ্টি করাটা ঠিক হবে না। আর এই ধরনের ফারাকের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য বিদ্যাপিঠের নিজস্ব একটা নিয়মনীতি থাকা চাই এবং নীতির আলোকে ওপেন ডিস্কাস্যনের মাধ্যমে ছাত্রজীবন থেকেই বিলাসিতায় অভ্যস্ত পরিবারের ছাত্র-ছাত্রিদের মধ্যে একটা সুসঙ্গত বোধের উন্মেষ ঘটানোর ব্যবস্থা থাকা বাঞ্ছনীয় বলে আমি মনে করি।
.........................................
আমরা যে যার অবস্থান থেকে বিবেচনা করি বলে নিজের অবস্থানটা বুঝতে পারি না। আজকে আমি যে অবস্থানে থেকে যা খরচ/ভোগ করি আমার নিচে থাকা বহু মানুষের কাছে সেটা অপচয়/বিলাশিতা। আবার আমি যাদের যেইসকল খরচকে অপচয়/বিলাশিতা মনে করছি, ভবিষ্যতে কখনো তাদের স্তরে পৌছালে হয়ত সেগুলোকেই প্রয়োজনীয় মনে করব। আমি বেশ নিচু অর্থনৈতিক স্তর থেকে এসেছি বলে বিষয়টা অনুভব করতে পারি।
এটা একটা জটিল চক্র। এই চক্র ভেদ করা খুবই কঠীন। এই চক্রে আবদ্ধ প্রতিটি মানুষ তার উপরের দিকে তাকিয়ে থেকে মনে করে সে অনেক নিচে আছে। যার তিনটি বাড়ি আছে সে বলে "অমুকেরতো দশটি বাড়ি আমার তো অনেক কম"!
একই কথা বৈরাগ্যের বেলায়ও প্রযোজ্য - আমি আপনি যাকে বৈরাগ্যবাদী মনে করছি তার কাছে গিয়ে দেখুন সে অন্য আরো অনেকের উদাহরণ দিয়ে বলবে "আমিতো তাদের মত বৈরাগী নই"!! যাকে আপনি কৃপণ ভাবছেন সে কিন্তু নিজে নিজেকে কৃপণ ভাবছে না বরং অন্য অনেকের সাথে তুলনা করে নিজেকে যথেস্ট দানশীল মনে করছে!!(এ'রকম ব্যাক্তির সাথে পরিচয়ের অভিজ্ঞতাও আমার আছে)
.............................................
আমি আগেও বলেছি, আসলে এ বিষয়গুলো শুধুমাত্র উঁচু বা নিচু শ্রেণী কিংবা করো ভাবার উপরে নির্ভশীল নয়। তবে নিজের নিজের অবস্থান ও সামর্থ এবং একই সাথে গোটা সমাজের সার্বিক অবস্থার উপরে নির্ভশীল।
বিষয়টিকে যখন শুধুমাত্র ভাবাবেগের উপরে ছেড়ে দেয়া হবে তখন তা অবশ্যই একটি জটিল চক্র মনে হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাই শুধু ভাবাবেগ নয় বরং গোটা ব্যাপারটিকে বিবেকের হাতে ন্যস্ত করা চাই।
.........................................
এ'জন্যই কৃপণতা, বৈরাগ্য, বিলাশিতা, অপচয় - এই বিষয়গুলি গানিতিক ভাবে সুনির্দিস্ট হওয়া প্রয়োজন - তা না হলে কেউ কখনই বুঝতে পারবে না কখন সে কোন সীমা অতিক্রম করে গেছে। চিন্তা করে দেখবেন কি এরকম কোন গানিতিক সুনির্দিস্ট সীমারেখা নির্ধারণ করা যায় কি না?
...............................................
কৃপণতা, বৈরাগ্য, বিলাশিতা, অপচয় - এই বিষয়গুলি যেমন গানিতিক ভাবে সুনির্দিস্ট ছকে ফেলা ঠিক নয়, আবার সার্বিক অবস্থা ও আপন আপন সামর্থ ও প্রয়োজন অনুসারে হিসেবের একটি সামঞ্জস্য অবশ্যই থাকা চাই।
যেমন ধরুন আপনার যদি অনেকগুলো বৈধ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থাকে এবং আপনাকে প্রতিদিন দু-তিনটা প্রতিষ্ঠানের সরেজমিনে উপস্থিত থাকার প্রয়োজন হয়। আপনার স্ত্রীও কোন প্রতিষ্ঠানের সাথে যুক্ত থাকেন এবং আপনার কয়েকজন সন্তান বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পড়াশুনা করেন। এক্ষেত্রে আপনার সামর্থ থাকলে প্রয়োজন অনুসারে দু-চারটে প্রাইভেট গাড়ি থাকতেই পারে। এটি কারো দৃষ্টিতেই বিলাসিতা মনে হবার কোন কারন নেই। আর যদি কেউ এমনটি ভাবেন, তবে সেটি ভুল হবে। কিন্তু সামর্থ থাকলেই যে প্রয়োজন ছাড়াই লোকদেখানো প্রতিযোগিতায় মতে আপনি দশ-বারটি প্রাইভেট কার কিনে সাজিয়ে রাখবেন- এমটি আপনি ঠিক ভাবলেও, তা কি মোটেই ঠিক হবে? আপনার দৃষ্টিতে এটি ঠিক মনে হলেও বিবেকের নিক্তিতে যারা বিচার করবেন তাদের কাছে এটি বিলাসিতা বটে। মাহন আল্লাহ এরূপ বিলাসিতা পরিহার করতে বলেছেন। আবার আপনি অতিরিক্ত যে ছয়টি গাড়ি কিনেছেন সেগুলো যদি আপনার প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের আনা-নেয়ার জন্য ব্যবহৃত হয়, তাহলে তা একদিকে যেমন যুক্তিসঙ্গত হবে, অপরদিকে মহান আল্লাহতায়ালাও খুশিই হবেন।
তেমনি ধরুন অফিসে যাতায়াতের জন্য আমার প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যবস্থা আছে। আমার গৃহকত্রী চাকরী করেন না এবং আমার সন্তানদের বিদ্যাপিঠে আসা যাওয়ার জন্য গাড়ির তেমন একটা দরকারও পড়ে না। কিন্তু আমার একটি গাড়ি ক্রয় ও খরচ বহনের সামর্থ আছে। এক্ষেত্রে আমি যদি প্রাইভেট কার না রেখে সামাজিক যোগাযোগ রক্ষার খাতিরে মাসে দু-তিনবার রেন্ট-এ-কার ভাড়া নিয়ে কাজ চালাতে পারি। তাহলে এটিকে কি কৃপণতা বলা ঠিক হবে। আবার একটি প্রাইভেট কার রাখলেও সেটিকে কেউ বিলাসিতা ভাবলেও ভুল হবে। তবে প্রাইভেট কারের মূল্য নির্ধারনের ক্ষেত্রে হিসেব নিকেশের একটা মাত্রা নির্ধারন করার বিষয়ে আমি ঐক্যমত পোষণ করি। আমাদের দেশের আর্থসামাজিক কাঠামো অনুসারে আমার সামর্থ থাকলেও কোটি টাকার প্রাইভেট কার খরিদ করার সাথে আমি কখনই একমত হতে পারব না। এই যুক্তিটা শুধুই ভাবাবেগ নয় বরং বিবেক দ্বারা নিরূপণের চেষ্টা করলে আশাকরি সকলে একমত হবেন। সার্বিক অবস্থা বিচারে সর্বসাধারনের জন্য প্রাইভেট কার কেনার পেছনে বিশ লাখ টাকা অতিক্রম করা যুক্তি সঙ্গত নয়। তবে কিছু ব্যতিক্রম থাকতেই পারে। এই মূল্য ও মান নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকেও নীতিমালা করে দেয়া দরকার।
একইভাবে কারো অন্তত একটি প্রাইভেট কারের খুবই প্রয়োজন আছে এবং কেনার সামর্থও আছে। এখন তিনি যদি রিক্সা কিনে সেই স্থান পূরণের ব্যর্থ চেষ্টা করেন, তাহলে বিবেকের নিরিখে এটি কৃপণতা বটে। তবে আপাতত আমাদের দেশে যেহেতু গাড়ি উৎপাদন হচ্ছে না, তাই তিনি যদি রিকন্ডিশন জি-করোলা/এলিয়ন না কিনে ইন্ডায়ান ব্রেন্ড নিউ ওয়াগানর/অলটো কিনে তার প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা করেন। তবে এটি নিয়েও টিটকারি বা সমালোচনা করার কোন কারন থাকতে পারেনা।
আবার যাদের গাড়ির প্রয়োজন আছে, কিন্তু সামর্থ নেই। তাদের জন্য হুট করে প্রাইভেট কার কেনাটা বিলাসিতা বৈকি। তবে তিনি যদি রিক্সা/সিএনজি কিনে নিজের আংশিক প্রয়োজন মিটিয়ে কিছু উপার্জন করার ব্যবস্থা করেন, তাহলে সেটি ভাল উদ্যোগই বলতে হবে। এভাবে তার গাড়ির প্রয়োজন মেটানোর জন্য পরিকল্পনা করা এবং বৈধপথে চেষ্টা ও আকাঙ্খা করাকে আমি পজেটিভ ভাবেই গ্রহণ করতে চাই।
আমাদের দেশের আপামর জনগণের মধ্যে যাদের সামর্থ নেই, কিন্তু জীবন ঘনিষ্ট অনেক জিনিসেরই প্রয়োজন আছে। তাদের কথা বিবেচনায় রেখে কোটি টাকার গাড়িতে না চেপে সামর্থবান লোকদের উচিত তাদের জন্য সময়োপযোগী উপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা। সামর্থ থাকা সত্বেও প্রয়োজনের অতিরিক্ত বিলাসিতা পরিহার করার মানসিকতা অর্জন করতে পারলেই এই ধরনের উদ্যোগের কথা মাথায় আসতে পারে। নচেৎ নয়।
একইভাবে বৈরাগ্য মনোভাবের ক্ষেত্রেও সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনমানের ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায়। কারো নিজস্ব দৃষ্টিকোন থেকে নয়, বরং আপন আপন অবস্থা অনুসারে বিষয়টি বিচার বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন পড়ে। সারাটা জীবন শুধু স্রষ্টার ধ্যানে মগ্ন থাকার দোহাই তুলে আর দশজনের কথা না ভেবে আপন খেয়ালে মেতে পথে পথে ঘুরে বেড়ানোকেই বৈরাগ্যবাদ বলে। ইসলামে যার কোন বৈধ ভিত্তি নেই।
তাই বলে অনাড়ম্বর জীবনযাপন করাকে কৃপণতা/বৈরাগ্যের সাথে গুলিয়ে ফেলা ঠিক নয়। কেউ অঢেল টাকার মালিক হয়েও নিজে সাধারন বাড়িতে বসবাস করেন ও গাড়িতে চড়েন। ইচ্ছে করলে তিনি আরও সুখের জীবন কাটাতে পারতেন। কিন্তু যদি তার জীবনের খরচা থেকে টাকা বাঁচিয়ে শুধু ব্যাংকে গচ্ছিত না রেখে মানুষের জন্য খরচ করেন। তাহলে তাকে কখনই কৃপণ বা বৈরাগি বলার তো প্রশ্নই আসে না। বরং তাদেরকে অনাড়ম্বর জীবনযাপনকারী মানবদরদি বড় মাপের ব্যতিক্রমী ও অনুসরণযোগ্য মানুষ হিসেবেই আখ্যায়িত করা যায়।
আশাকরি আমার কোন মতের সাথে একমত না হলে সে সম্পর্কে আপনার মতামত প্রকাশ করবেন। প্রয়োজনে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়া যেতে পারে।
ধন্যবাদ-
৮| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৫৯
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: আমরা মনে হয় খুব বেশী মতপার্থক্যে নাই। আপনি বলছেন যার যার নিজের বিবেক বিবেচনা অনুসারে প্রয়োজনীয় খরচ/ভোগ করতে এবং নিজ অবস্থান অনুসারে বিলাশিতা পরিহার করতে। আর আমি বলছি মানুষের নিজের বিবেক অনুসারেই তার প্রয়োজন ক্রমান্ময়ে এমনভাবে বাড়তে থাকে যে সে বুঝতেই পারে না কখন বিলাশিতার স্তরে পৌছে গেছে। আমার মতে প্রয়োজনও নিয়ন্ত্রন করা উচিত।
একই ভাবে যারা বৈরাগ্য বা কৃপনতার পথে অগ্রসর হয় তারাও এমন ভাবে ক্রমে ক্রমে সেই পথে উন্নতি করতে থাকে যে বুঝতেই পারে না কখন সে সীমা অতিক্রম করে গেছে - সে নিজে নিজেকে ঠিক মনে করেই কাজগুলি করে। এখানেই একটা গানিতিক হিসেব প্রয়োজন যা সবার জন্য এমন ভাবে প্রযোজ্য হবে যে সে সহজেই বুঝতে পারবে কোথায় তার চুড়ান্ত সীমানা।
যাই হোক, এ'সব তাত্বিক আলোচনা থাক। আমি বরং আপনাকে একটা গল্প বলি। আমার এক সিনিয়র কলিগকে ডাক্তার বলেছিল দিনে অন্তত এক ঘন্টা হাটতে হবে। তিনি বড়ই ব্যাস্ত মানুষ, তার উপর বড় অফিসার - তাই রাস্তায় হাটলে কেমন দেখায় ভেবে তিনি বেশ বড় অংকের টাকায় একটা ট্রেডমিল কিনে নিলেন(আমার দৃস্টিতে প্রথম অপচয়)। প্রতিদিন অফিস থেকে বাসায় ফিরে উনি ট্রেডমিলে ঘন্টাখানের হাটা শুরু করলেন। আগে ঐ সময়ে তিনি টিভি দেখতেন। হাটতে গিয়ে এমনিতেই বোরিং লাগে তার উপর টিভি দেখা হয় না - তাই তিনি ঠিক করলেন ট্রেডমিলের সামনে একটা টিভি রাখবেন। প্রথমে ড্রয়িং রুমের টিভিটা আনতে চাইলেন কিন্তু দেখা গেল সেটা এত নিচু যে হাটার সময় ঠিকমত দেখা যায় না, তাছাড়া ঐ সময় বাসার অন্যরাও টিভি দেখে। সুতরাং তিনি নতুন একটা এল.সি.ডি টিভি কিনে দেয়ালে ঝুলিয়ে দিলেন। আমার বিবেচনায় কাজটা চরম অপচয়/বিলাশিতামুলক হলেও তার কাছে এটা ছিল খুবই প্রয়োজনীয়।
কাজেই আমার মনে হয় এই বিষয়টি সুধুমাত্র ব্যাক্তির নিজের বিচার বিবেচনার উপর ছেড়ে দেয়া মোটেই গ্রহনযোগ্য নয় বরং একটা সুনির্দিস্ট গানিতিক সীমারেখা থাকা উচিত যাতে ভাবাবেগমুক্ত হয়ে প্রত্যেকে তার সর্বোচ্চ সীমাটা অনুধাবন করতে পারে। কথায় বলে মানুষ অভ্যাসের দাস - যে যেদিকে অভ্যস্ত হয়ে যায়(সেটা বিলাশিতা, কৃপণতা বা বৈরাগ্য যাই হোক) সেদিকে ক্রমান্ময়ে অগ্রসর হতে থাকে এবং নিজের অজান্তেই সীমা অতিক্রম করে বহুদুর চলে যায়।
০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ১:২৪
মাহফুজশান্ত বলেছেন: মানুষ অভ্যাসের দাস ঠিকই। কিন্তু তাই বলে বদভ্যাসের দাস বনে যাওয়াও ঠিক নয়। আর যদি বলেন, ভাল অভ্যাস ও বদভ্যাসের পার্থক্য একেক জনের দৃষ্টিতে একেক রকম। তারপরও নিশ্চয় কারো দৃষ্টিতে কোন বদভ্যাস ভাল মনে হলেও তা কখনই ভাল হতে পারেনা। ভাল ও মন্দের মধ্যে যে সীমানা রয়েছে- তা সব সময়ই পরিষ্কার ও শাশ্বত। কারো বোঝার অক্ষমতার কারনে এই সীমানা আমুল বদলে যাবে না। যারা এই সীমানা নির্ধারণ করতে পারেন না বা অনুধাবন করতে চান না, তাদের কাছে কৃপণতা, বৈরাগ্য, বিলাসিতা, অপচয় ইত্যাদি বিষয়গুলোর মাঝে তেমন কোন পার্থক্য নেই। ফলে তারা তাদের ভাবাবেগ দ্বারা চালিত হয়ে এর মধ্যে যে কোন একটিকে বেছে নিতে কুন্ঠিত হন না। তারা যদি আল-কোরআনের এই আয়াতগুলো অনুধাবনের চেষ্টা করেতন, তাহলে নিশ্চয় এরূপ হটকারী বিলাসি সিদ্ধন্ত নিতে পারতেন না। একটু লক্ষ করলেই এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, তাদের বিবেক এসবের সীমানা নির্ধারণে ব্যর্থ হয়েছে অথবা ইচ্ছে করেই তারা অবহেলা করেছেন।
আপনি যার সম্পর্কে বললেন, তিনি যে নিঃসন্দেহে একজন বিলাসি প্রকৃতির তা তিনি নিজে বুঝতে না পারলে বা চাইলেও এটিও যে এক ধরনের বিলাসি পদক্ষেপ তা বুঝতে খুব একটা সমস্যা হবার কথা না। তবে যেহেতু তিনি হাঁটার সুযোগ পান না, তাই তার সামর্থের কারনে ট্রেডমিল কিনে সেই ঘাটতি পূরণের ব্যবস্থা করা হলে এবং ঘন্টখানেক সময় খুবই বরিং ফিল করলে হয়ত অনায়াসে সংগীত শোনার ব্যবস্থা নিতে পারতেন। আমার মনে হয় এর জন্য তাকে এক্সট্রা কোন খরচা করার প্রয়োজন হত না। যদি তিনি এটুকুর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে পারতেন, তাহলে তার অবস্থানের কারনে এটিকে স্বাভাবিকই মনে করা যেত। আপনার মনেও এ নিয়ে প্রশ্ন আসত না। আপনার বিবরণের ঘটনাটাও যে ঘটে তা আমি মানি, কিন্তু যারা এরূপ হটকারী বিলাসিতা করেন তারা যতই সৎ, উদার কিংবা ভাল স্বভাবের মানুষই হোক না কেন, এইরূপ সিদ্ধান্তকে আমি কম/বেশি বিলাসিতার পর্যায়ভুক্তই মনে করি। সাধারনত যারা সৎ থাকতে চান এবং মিতব্যয়ী স্বভাবের, তারা এ ধরনের বিলাসিতা পরিহার করেন।
এবার আমার অভিজ্ঞতা সেয়ার করছি-
আমার কয়েকজন রুগী আছেন যারা ট্রেডমিলে হাঁটার এই সময়টুকু তাদের রুচিমত কেউ গান বা কবিতা আবৃতি শোনেন আবার কেউ কোরআনের অনুবাদও শোনেন। বেশ ধনী হওয়া সত্বেও তাদেরকে মাত্র একঘন্টা সময় কাটানোর অজুহাতে কমপক্ষে ৬০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা খরচ করে এলসিডি টিভি কিনতে হয়েছে- এরূপ অভিজ্ঞতা আমার নেই। আমার রুগীদের মাঝে কিংবা পরিচিত জনদের মধ্যে কাউকে এমনটি করতে দেখলে নিশ্চয় তাদের সাথে অন্তত এ নিয়েও আলোচনা করতাম। আমার যুক্তি কতটুকু মানত কি মানত না, সেটা তাদের বিষয়। কিন্তু আমি ভ্দ্রভাবেই কিছু বলার চেষ্টা করতাম। তবে আপনার উল্লেখিত বিলাসি মানুষ যে সমাজে অনেক আছে, তা আমি স্বীকার করি।
আমিও প্রায়শই আমার কাছে আসা রুগীদের রোগের ধরন, পারিপার্শিক অবস্থা ও সামর্থ অনুসারে জীবনমান উন্নয়নের পরামর্শ দিয়ে থাকি। যেমন ধরুন কারো ব্রঙ্কিয়াল এজমা রোগ আছে। পরিবার বেশ বড় হওয়া সত্বেও কাজের মানুষ কম। তিনি যদি নারী হন এবং পানি ঘাঁটলে বিশেষ করে কাপড় কাচলে তার রোগের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। তাহলে অন্য কোন বিকল্প ব্যবস্থা না থাকলে তার পরিবারের জন্য সম্ভব হলে ওয়াশিংমেশিন কেনার পরামর্শ দেই। আর্থিক সামর্থের কিছুটা ঘাটতি থাকলেও প্রয়োজনে কয়েক মাসের কিস্তিতে কেনার কথাও বলি। এতে করে আমি দেখেছি যে, এই সব রোগী একদিকে যেমন বেশ সুস্থ থাকেন। অপরদিকে চিকিৎসা ব্যয়ও বেশ কমে যায়। আর এই চিকিৎসা খরচের টাকা বাঁচিয়ে সহজেই কিস্তি পরিশোধ করতে পারেন। এর ফলে তিনি নিজে শান্তিতে থাকেন এবং তার কারনে গোটা পরিবারে যে দুশ্চিন্তা ও আতঙ্ক বিরাজ করত তা থেকে অনেকটা মুক্তি ঘটে। এসব পরিস্থিতিতে সামর্থের কিছুটা কমতি থাকলেও প্রয়োজনের নিরিখে একে বিলাসিতা বলা ঠিক কি? এক্ষেত্রে কিন্তু শুধুমাত্র গাণিতিক হিসেব কষে বিচার করা সম্ভব নয়। তারপরও খরচের হিসেবের যে একটা মাত্রা থাকা চাই, সে বিষয়ে আমি একমত। আর এই মাত্রাটা কার জন্য কতটুকু হলে মানানসই হবে, তা তো জাগ্রত বিবেকই ভাল বলে দিতে পারবে।
ধন্যবাদ-
০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:০৪
মাহফুজশান্ত বলেছেন: আমার কর্মক্ষেত্রের তিক্ততার একটি উদাহরন শেয়ার করছি-
দু-এক বছর পর পর কখনো কখনো আমাকে পাঁচতারা হোটেলে দু-তিনদিনের জন্য অফিসিয়াল ডিউটি করতে হয়। সেখানকার শান সওকত ও অভিজ্ঞতা ক্ষণিকের জন্য মন কড়ে নিলেও তা আমাকে আনন্দ দেবার চেয়ে পীড়াই দেয় বেশি। বিশেষ করে ডিউটি থেকে বেরিয়ে ফুটপাতের মানুষগুলোকে দেখলে নিজেকে খুবই অপরাধী মনে হয়। নিজে এবং ঘনিষ্ট জনদের সাথে নিয়ে তাদের জন্য কিছু করার যে চেষ্টা করি না, তা নয়। কিন্তু এসব ব্যয়বহুল বিলাসিতার কাছে তা খুবই নগন্য বলেই অনুভূত হয়। তারপরও অনিচ্ছা সত্বেও পরদিনই ডিউটিতে আমাকে যেতে হয়। চিকিৎসক হবার সুবাদে অনুষ্ঠান পরিচালনার সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে মত বিনিময়ের চেষ্টা করি। তারা যে যথেষ্ট অভিজ্ঞ তা জানা সত্বেও কথায় কথায় নিজের আক্ষেপ প্রকাশও করি। অফিসের নিজস্ব পরিসরে ও ব্যবস্থাপনায়ও যে অনেক কম খরচে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যেত তা বলি। তারা কেউই দ্বিমত করেন না। তৎক্ষণাৎ কাজ খুব একটা না হলেও তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা শুনে মনে হয় যে, তারাও এ বিষয়ে ভাবছেন। ভাবনাটা কবে নাগাদ কর্মে রূপ নেবে তা ভবিষ্যতই বলে দেবে।
ধন্যবাদ-
৯| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ বিকাল ৫:৪৪
কাঙ্গাল মুরশিদ বলেছেন: ধন্যবাদ মুল্যবান অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য।
ইসলামী অর্থনীতিতে গানিতিক হিসেবের একটা বিষয় কিন্তু আছে - যাকাত। এ'ব্যাপারে আপনার বিস্তারিত আলোচনা আশা করছি (এ'নিয়ে ভিন্ন পোস্টও হতে পারে)- যাকাতের মুল চেতনা ও হিসেবের মাধ্যমে বিলাশিতা, কৃপনতা, বৈরাগ্য ইত্যাদির সীমা নির্ধারণ করে মধ্যপন্থাকে সুনির্দস্ট ভাবে বর্ণনা করা যায় কি না।
০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ রাত ১১:৪৩
মাহফুজশান্ত বলেছেন: একজন মুসলিম তার সঞ্চিত সম্পদের কোন কোন অংশ থেকে কিভাবে যাকাত দেবে তার একটি গাণিতিক হিসেব অবশ্যই আছে। এই আলোচনার প্রেক্ষাপটে যাকাত সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রসঙ্গ বলেই আমি মনে করি। কারন কারো বিলাসিতা করার প্রবণতা থাকলে তিনি যাকাত দেবার পরও বিলাসিতা করতে পারেন। আমাদের দেশে সরকারী ব্যবস্থাপনায় যাকাত সংগ্রহের ব্যবস্থাপনা নেই। নিজস্ব উদ্যোগে আমরা এই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক কর্মটি সম্পাদনের চেষ্টা করছি। কিন্তু সৌদিতে সরকারী ব্যবস্থাপনায় যাকাত গ্রহণের ব্যবস্থা আছে। তারপরও সেখানে বিলাসিতার মাত্রা বাড়ছে বৈ কমছে না। আমার তো মনে হয় তারা (শেখ) বিলাসিতার ক্ষেত্রে পশ্চিমাদেরও হার মানাচ্ছে। তবে যাকাত যে ইন্ডাইরেক্টলি কিছুটা সহায়তা করতে পারে- তা ভেবে দেখার অবকাশ রয়েছে। মোদ্দা কথা হলো, সাচ্চা মুসলিম না হতে পারলে আলোচ্য বিষয়গুলোর হাত থেকে আমাদের নিস্তার নেই। আর বিবেকবান সাচ্চা মুসলিম হতে হলে আল-কোরআনের বাণী অনুধাবন এবং সেই অনুযায়ী আমল করা চাই।
ধন্যবাদ-
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:১০
কান্টি টুটুল বলেছেন:
প্রাসঙ্গিক বিষয়ে কোরআন শরীফের আয়াত এর অনুবাদ হুবহু তুলে ধরা আমি পছন্দ করি,
ধন্যবাদ লেখাটির জন্য।