![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আত্ম-পরিচয় দেবার মতো এখনো কোন পরিচয় জোগাড় করা হয়নি।
"শোনেন ভাই, পয়লা বৈশাখ মালূয়ানদের কাজ। এইসব হইল তাদের একটা পূজা। তাগোর কতো পূজা থাকে.......
আমগোর ধর্মে এইসব উৎসব পালন সম্পূর্ণ নিষেধ,নবী কি এইসব পালন করছিলেন?"
---- পাশ কাটিয়ে যাওয়ার সময় যতটুকু শুনতে পেরেছি, তার সারাংশটা এরকমই।
বক্তা একজন টুপি-লুংগি-পাঞ্জাবি পরিহিত ব্যক্তি,
যিনি একটি জাতির জাতিগত পোষাক(লুঙ্গী) , জাতিগত ভাষা (বাংলা), জাতিগত ভূখণ্ড (বাংলাদেশ) সেই জাতিগোত্রে ভূমিষ্ঠ হবার পর থেকে কোনোরূপ সমস্যা ছাড়াই দেধার্সে ব্যবহার করে আসছেন, সেই তার কাছেই তার জাতির অন্যতম ঐতিহ্য,পরিচয়বাহক জাতীয় অনুষ্ঠান হয়ে দাঁড়ায় ধর্ম পালনের অন্তরাল!!
আসলে আমাদের ব্যাপারগুলোই যেন এরকম!!
যতো আকাজ কুকাজ আছে তা আমরা করি, অথচ যে কাজটা আসলেই করা উচিত, তা নিয়েই আমাদের পান্ডিত্যের জাহাজ একেবারে আটলান্টিক পাড় করে ফেলে!
এজন্যই বোধহয় সম্রাট আকবরের (একজন আপাদমস্তক মুসলমান শাষক) চালু করা সাল গননা, আজ চৌদ্দশ বছর পর এসে কোন এক "স্বীয় বিশালাকার ধার্মিকভাবি" খাটাসের কাছে পূজায় রূপ নিয়েছে!!
তবে এক্ষেত্রে খাটাস শ্রেণীর উপর সম্পূর্ণ দোষ চাপালে সেটাও বেশ খানিকটা দোষের কাতারে পৌছে যাবে।
দোষটা আসলে আমাদের সকলের। তথাপি সমগ্র বাঙালী জাতির।
প্রথমত জাতি হিসেবে আমরা পরনির্ভর্শীল এবং অনুকরণ প্রিয়,তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই স্বগোত্রের কাওকে নয়,ভীন্ন গোত্রের।
আর সেজন্যই বাপ যেখানে লুঙী পরে, সেখানে তার ছেলে পড়ে ফুল প্যান্ট, আবার তার ছেলে তার সময়ের অনুকরন প্রতিভা দেখানোর নমুনাস্বরূপ অঙ্কিয়দেশ ঢাকে থ্রি কোয়ার্টারে।
কথা বলায় বাপ দাদাকে অনুসরণ করে এমনও নিদর্শন হাতে গোনা।
আর রুচিবোধের বেলায় সেটা এ জাতিতে ইতমধ্যেই বিলুপ্ত।
কেবল একটা বেলাতেই এর ব্যতিক্রম চোখে পড়ে, আর সেটা হচ্ছে পয়লা বৈশাখ,
এদিন যে যার বেশভূসা ভুলে সবাই হয়ে উঠে বাঙালী, সকালে না হলেও দিনের একটা বেলাতে চৌদ্দশ বছর আগের চৌদ্দগুষ্ঠির স্মরণে (এটা স্মরণ আদৌ থাকুক আর না থাকুক) একবার চলে পান্তা ইলিশ ভোজ।
বিকেলে চলে মেলায় ঘুরাঘুরি, হাটাহাটি, ছোয়াছুয়ি, ঠেলাঠেলি, লাগালাগি...... বাকিগুলো না হয় নাইবা বললাম (যারা এসব করেন এবং করে মজা পান, তাদের না বললেও তারা তা করবে, কথায় আছে কিনা কুকুরের লেজ কখনো সোজা হয় না) !!
এরপর শুরু হয় অনলাইন আপলোডিং, বৈশাখী সাজে সাজে ভরে যায় সবার প্রোফাইল পিক!!
ধুমধারাক্কা চলে কমেন্ট, পরে লাইকের উপর লাইক।
এভাবে একটা অদ্ভূত ও আশ্চর্যপ্রকার আরম্বরের মধ্য দিয়ে কেটে যায় একদিন, দুদিন, পাঁচদিন কিংবা সর্বোচ্চ একটা সপ্তাহ।
নতুন বৈশাখের নতুন উঠা চাঁদটা পুরাতন হবার সুযোগটি পায় না, তার আগেই ফুরিয়ে যায় আমাদের বাঙালীয়ানা।
আবার ফিরে যাই সেই বানরতত্ত্বের অনুকরণ শিল্পে, ফিরে যাই এক পঙ্গু বিকলাঙ্গ অদ্ভূত কৃষ্টিতে।
অদ্ভূত জাতিই বটে আমরা!!!
তবে এবার এ অদ্ভুততার পালে এক নতুন হাওয়ার ঝাপটা খেলাম!!!
রাত বারোটা পার হবার পরই অনেকের কাছ থেকেই নববর্ষের শুভেচ্ছা পেলাম।
যারা শুভেচ্ছা দিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই শিক্ষিত এবং আত্বসচেতন, তাই বাংলা সালের তারিখগুলো যে রাত বারোটার পর নয়, বরং ভোরের মিস্টি সূর্যের প্রথম ক্বিরনের ছোঁয়ায় শুরু হয়, তারা এটা জানেন না, এটা আমি কোনভাবেই মানতে পারবো না। বরং এই যুক্তি যথেষ্ট সম্ভব যে তারাও হয়তো অনুকরন করতে করতে অন্যের দেয়া কোনো বিষয়ে বিভোর হয়ে গেছেন,যার কিনা নতুন তারিখ শুরু হয় মধ্যরাতের তিমির অন্ধকারে।
তবে সেটাও একদিক দিয়ে ভালোই, তারা একপৃষ্ঠে তো মানিয়ে নিয়েছেন, আমার মতো তো আর গিরগিটি হয়ে ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাচ্ছেন না, যে কিনা নববর্ষে হবে বাঙালী অথচ পরদিনই চলবে পাশ্চাত্যের হোলি!!
কথায় কিন্তু আছে, গিরগিটি টাইপ মানুষ সমাজের পক্ষে ভীষন ক্ষতিকর!!
যা হোক, ভোর হয়ে গেছে, এতোক্ষন যাবত যারা আমার এই অর্থহীন পেচাল (মতান্তরে লেকচার) পড়লেন, তাদের জানাই "শুভ নববর্ষ। "
নিজে ভালো থাকুন,পাশে থাকা মানুষগুলোকে ভাল রাখুন।
আর আরেকটু বাঙালী হবার চেষ্টা করুন।ভাল কাটুক নতুন বৎসর। :-)
শুভ নববর্ষ।