ফুটবলার স্বামী

০৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:১১

ইফতি ডান পাটা ভেঙে বাড়ীতে ফিরেছে কিছুক্ষণ আগে।
তাকে সবাই মিলে ধরে খাটের উপর বসিয়ে দিয়ে চলে গেছে।
তার মহারাণী অগ্নি(অগ্নিলা) অগ্নি দৃষ্টিতে তার দিকে আড়ে আড়ে তাকাচ্ছে।
মনে হচ্ছে জ্যান্ত গিলে খাবে।
কারণ ইফতি আজ অগ্নির নিষেধ সত্তেও ফুটবল খেলতে গিয়েছিলো।
ইফতি ফুটবল খেলা ছেড়েছে আরও ১০বছর আগে।
এখন সে শহরে চাকরি করে। আগের চেয়ে একটু মোটা হয়ে গেছে সে।
ঈদের ছুটিতে বৌকে নিয়ে গ্রামের বাড়ীতে ঈদ করতে এসেছিল।
গ্রামের ছোট ভাইয়েরা তাকে ধরেছিল ঈদ উপলক্ষে স্থানীয় প্রাইমারী স্কুল মাঠে আয়োজিত বিবাহিত বনাম অবিবাহিতদের মধ্যে আয়োজিত ফুটবল খেলায় তাকে খেলতে হবে।
তখনই ইফতির চোখে ভেসে ওঠে দশ বছর আগের সৃতি।
সে শেষ ম্যাচটাও খেলেছিল এই বিবাহিত বনাম অবিবাহিত দলের মধ্যকার ম্যাচটিতে।
সেবার সে অবিবাহিত দলের ক্যাপ্টেন ছিল।
সেই ম্যাচে ইফতির ২গোলেই জিতেছিল অবিবাহিতরা।
তখন থেকে এ পর্যন্ত শুধু জিতেছে অবিবাহিতরাই।
এখন ইফতি বিবাহিত তার উচিত বিবাহিত দলের জয়ের ক্ষরা কাটাতে মাঠে নামা।
সে আর কিছু না ভেবেই রাজি হয়ে গেল।
আর তাকেই বিবাহিত দলের ক্যাপ্টেন করে খেলার প্রচার শুরু হয়ে গেল।
ইফতি বাড়িতে ফিরতেই অগ্নির প্রশ্ন
---আচ্ছা আপনি ছাড়া এ গ্রামে আর ইফতি নামে কেউ আছে??
---আমার জানা মতেতো নেই।
---তাহলে মাইকে ফুটবল খেলার বিবাহিত দলের ক্যাপ্টেনের নাম ইফতি বলে প্রচার করছে ঐটা কে?
ইফতি ভেবেছিল ওটা ইফতি নিজেই সুনলে হয়তো খুসি হবে অগ্নি।
সে আনন্দ সহকারে বলেদিল--
---ওটা তো আমি নিজেই।
---কি?
---হ্যা
---আপনি ফুটবল খেলবেন?
---হ্যা খেলবো।ছোট ভাইরা ধরেছে খেলতে হবে আমিও না করতে পারি নি।
---না আপনি খেলবেন না।
---কিন্তু খেললে অসুবিধেটা কেথায়?
---নিজের ওজনের যে সেন্চুরি হতে চলেছে সেদিকে খেয়াল আছে। পড়লে হাত পা ভাঙবে আপনার খেলা লাগবে না।
---কিন্তুু আমি যে ওদের কথা দিয়ে ফেলেছি।
---তার মানে আপনি খেলতে যাবেন??
---হ্যা।
---আচ্ছা।হাত পা ভেঙে ফিরলে সেবা করার জন্য সাথে আপনার ছোট ভাই গুলারে সাথে নিয়ে আইসেন।
এরপর ইফতির দিক থেকে মুখটা ঘুরিয়ে নিয়ে ইফতির দিকে পিঠ দিয়ে সুয়ে পড়ে অগ্নিলা।
৩ বছরের সংসারে আজই প্রথম অগ্নির এই চাওয়াটা পূরণ করতে পারছে না ইফতি।
তারপর আর কোন কথা বলে না অগ্নি।
সকালে উঠেও ইফতি দেখে অগ্নি তার থেকে দূরে দূরে থাকছে।
ইফতি ভাবলো রাগ করেছে ঠিক হয়ে যাবে।
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেল।
ইফতি মায়ের বাকসো খেকে নিজের খেলার ব্যাগটা কোন রকমে খুজে নিয়ে দেখে নিল সব ঠিক আছে কিনা।
সবই ঠিক আছে আগের মতই নতুন।
ব্যাগটা ঘাড়ে নিয়ে ইফতি অগ্নিকে আর মাকে বলে খেলার মাঠে যায়।
অগ্নি সেই কাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত কথা বলেনি ইফতির সাথে।
ইফতি মাঠে পৌছালো।মোজা পরেছে কিন্তুু কেমন যেন আটো আটো লাগছে আর বুট জোড়াতো পায়ে বহু কস্টে পরিয়েছে ইফতি।
খেলা শুরু হয়ে গেছে।
ইফতি তো বলই পাচ্ছে না। পাবে কি করে সে যে দৌড়াতেই পারছে না।
হাফ টাইমের আগে এক এক করে ৩টা গোল খেয়ে গেল ইফতির দল।
ইফতি এই প্রথম গোল শুন্য রয়ে গিয়েছে।আগে যে কয় ম্যাচে খেলেছে সব ম্যাচেই কমপক্ষে দুইটা গোল করেছে।
হঠাৎ করে ইফতির মনে পড়লো তার আগের খেলাগুলোর সৃতি।
হাফ টাইমের পর খেলা আবার সুরু সবাই ধরে নিয়েছে অবিবাহিতরাই জিতবে।তবে তারা আর কটা গোল দেয় সেটা দেখার বিষয়।
হঠাৎ করে মধ্য মাঠে বল পায় ইফতি।
একে একে চারজনকে কাটিয়ে গোলল।
সবাই অবাক ৮৫কেজি শরীর নিয়ে ইফতি এত দ্রুতো কিভাবে ছুটলো??
খেলার আর ৩০মিনিট বাকি জিততে গেলে ইফতিদের করতে হবে এখনও ৩গোল।
৬৫ মিনিটের মাথায় আবারও বল পায় ইফতি এবারও গোল তবে এটা সে দেয়নি।এটা তে সে এসিস্ট করেছে।
৮০ মিনিটের মাথায় আবারও গোল এটা ইফতি নিজেই দিয়েছে।
খেলায় এখন ৩-৩ গোলের সমতা।
বাকি আছে ১০ মিনিট যে দল গোল করবে তারাই জিতবে।
৮৮ মিনিট শেষ কেউ গোল করতে পারে নি।
হঠাৎ ইফতি বল পায়।বল নিয়ে ছুটছে তো ছুটছে।কোথায় পেল ও এই গতি?
একে একে ৩জনকে কাটিয়ে গোলল।
ইফতির হ্যাট্রিক হয়ে গিয়েছে।
কিন্তুু বলে শট করার সময় ব্যালেন্স হারিয়ে পড়ে যায় ইফতি।
সবাই তখন বিবাহিত দলের জয় উল্লাসে ব্যাস্ত।
ইফতি তখন মাঠে পড়ে ছিল সবাই তাকে কাধে করে ঘুরাতে লাগলো।
কেউ ইফতির কথা সুনতে চাইলো না।
তাকে মাটিতে নামানো হলে সে আর দাড়াতে পারলো না।
সবার আর বুঝতে বাকি রইলো না কি হয়েছে।
শেষ পর্যন্ত অগ্নির আশংকায় ঠিক হলো।
প্রায় ১ঘন্টা ধরে ইফতি ঘরে বসে আছে।
অগ্নি ঘরে আসছে ওর দিকে তাকিয়ে আবার ফিরে যাচ্ছে।কোন কথায় বলছেনা।
রাগ করে আছে।
ইফতি কয়েক বার অগ্নি বলে ডাক দিল কিন্তুু আসছেও না ডাকো সুনছে না।
মেয়েটার খুব রাগ।
হঠাৎ ইফতি চিৎকার দিয়ে ওঠে ---আাআআআ.....
দৌড়ে ঘরে চলে আসে অগ্নি ঘরের কাছেই ছিল মনে হচ্ছে।
অগ্নি--কি হয়েছে ষাড়ের মত চিল্লান কেন?
---বাইরে যাবো একটু ধরোতো।
---পারবো না।আপনার আদরের ভাই গুলারে ডাকুন।
ইফতি ফোনটা কানে নিয়ে বলে---
হ্যালো রিয়া তুমি আমাদের গ্রামের বাড়ীতে চলে আসো। আমি আজই তোমাকে বিয়ে করবো।আমার বউ অগ্নি আর আমাকে ভালবাসে না।
অগ্নি জানে রিয়ার সাথে ইফতির প্রেম ছিল।রিয়ার বিয়ে হয়ে গিয়েছে তবু এখনও ইফতির জন্য পাগল।এগুলো ইফতি ওকে বানিয়ে বলেছিল।
অগ্নি অগ্নি মূর্তি ধারণ করে বলে ওঠে---রিয়া এখানে আসবে কেন??
---আমি ওকে বিয়ে করবো।ও আমাকে অনেক ভালবাসে আমার অনেক কেয়ার করবে।আর তুমিতো আমাকে ভালইবাসনা টেক কেয়ার করবে কি করে?
---না রিয়া এখানে আসবে না।
---অবশ্যই আসবে আমার তো টেক কেয়ার করার জন্য হলেও এক জন এর প্রয়োজন।যেমন আমাকে ধরে নিয়ে বাথরুমে নিয়ে যাবে, গোছল করাবে, খায়িয়ে দিবে, আদর করে ঘুম পাড়িয়ে দেবে।রিয়া ছাড়া কেউ পারবে না।
---তবু্ও রিয়া এখানে আসবে না।
---তাহলে কাজ গুলো কে করবে?
---আমি করবো।
---যাহ তুমি এই ওজনের সেন্চুরি করা দেহটাকে নিয়ে কিভাবে করবে।রিয়া পারবে ওর গায়ে অনেক শক্তি।
---আমার গায়ে শক্তি নেই কে বললো?আমি পারবো।
---আচ্ছা আমাকে জড়িয়ে ধরে বাথরুমে নিয়ে যাও দেখি।
অগ্নি ইফতি জড়িয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
ইফতি---আচ্ছা তুমি আমার এই ভারি শরিরটাকে ধরে কিভাবে নিয়ে যাচ্ছো???কস্ট হচ্ছে না।
---কস্ট হচ্ছে তো আপনার কি?আমাকে কস্ট দেওয়ার জন্যই তো ফুটবল খেলতে গেছিলেন।
---এই কানে ধরছি আর কখনও যাবো না।
অগ্নির চোখে পানি টলমল করছে।
অগ্নি---না আপনি আবার যাবেন পা ঠিক হয়ে গেলে।
---কিন্তু তুমিই তো না করেছিলে যেতে।
---এবার হ্যা বলছি যাবেন।
---আবার যদি পা ভেঙে যায়?
---আপনার অগ্নি আছেতো।
---তোমারতো কস্ট হবে।
---হয় হোক।
----আচ্ছা তুমি কাল না বলছিলে আজ আবার হ্যা বলছো কারণটা কি?
---বলবো?
---হ্যা বলো।
---আপনার ফুটবল খেলা দেখে আমার খুব ভাল লাগছে।কি খেলা রে একে বারে মেসির মতো শর্ট দিছেন।আবার যাবেন খেলতে।
---না আমি যাবো না।
---তাহলে আপনাকে ছেড়ে চলে যাবো।কারণ আমার আর আপনাকে চাই না।আমি অন্য কাউকে ভালো বেসে ফেলছি।
---কি বলছো এসব?? ছেলেটাকে?
---কে আবার আমার ফুটবলার স্বামী ইফতিকে।
তারপর একে অপরকে জড়িয়ে ধরলো।তাদের চোখ বেয়ে তখন নোনা জলের ধারা প্রবাহিত হচ্ছে।
এ জল দুঃখের নয় এ জল সুখের।
এ জল স্বামী স্ত্রীর পবিত্র ভালবাসার জল।

০ টি +০/-০