নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তেমন কিছু বলার নেই!!!

Mahmudul Hasan Milhan

Mahmudul Hasan Milhan › বিস্তারিত পোস্টঃ

নিসফু শা\'বান তথা শবে বরাতের অস্তিত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে একটি তাত্ত্বিক পর্যালোচনা

০২ রা মে, ২০১৮ রাত ১২:২৩

মানবজাতির হিদায়াতের জন্য মহান আল্লাহ্‌ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য নবী-রাসূল প্রেরণ করেছেন।সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হযরত মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁরই উম্মত হচ্ছে একটি মধ্যমপন্থি সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি।অপরাপর উম্মতের চেয়ে তাদের গড় আয়ু অত্যন্ত কম।
অথচ অন্যান্য নবীর উম্মতগণ শত বছর থেকে হাজার মাস বা বছর পর্যন্ত ইবাদতে লিপ্ত থেকে মহান আল্লাহর
নৈকট্য লাভে ধন্য হন।উম্মতে মুহাম্মদীর আয়ু কম হলেও মহান আল্লাহ্ তাদেরকে এমন কিছু রাত,দিন, ক্ষণ ও মুহূর্ত দান করেছেন, যার মাধ্যমে উম্মতে মুহাম্মদী (সা.) শত বছর ও হাজার মাসের ইবাদতের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে পারেন।

লাইলাতুল ক্বদরের ন্যায় কিছু দিন, রাত, ক্ষণ ও মুহূর্ত
এ উম্মতকে মহান আল্লাহ্‌ দান করেছেন।যেমন যিলহজ্ব মাসের প্রথম দশদিন, আশুরার দশদিন, আরাফার দিন, লাইলাতুল বরাআত, জুমার দিন ও প্রতিটি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ ইত্যাদি।উপরোক্ত সময়ের মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব কুরআন ও সহীহ্ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

নিসফু শা'বান তথা লাইলাতুল বরাআতের অস্তিত্ব, শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদা লাইলাতুল ক্বদরের ন্যায় অকাট্য কুরআনের দলিল দ্বারা প্রমাণিত না হলেও সহীহ হাদীস, হাসান হাদীস, সহীহ লিগাইরিহী হাদীস দ্বারা স্বীকৃত ও প্রমাণিত।কিছু যয়ীফ তথা দুর্বল হাদীসেও এ ব্যাপারে বর্ণিত আছে।তবে এগুলো একাধিক সূত্রে বর্ণিত হওয়ায় হাদীসে হাসান এর মর্যাদা লাভ করেছে।

লাইলাতুল বরাআতের অস্তিত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে কয়েকটি হাদীস সনদের পর্যালোচনা সহ পেশ করা হলো:

এক:
হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী করীম (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন শা'বান মাসের মধ্য রাত্রিতে মহান আল্লাহ (রহমতের ভান্ডার নিয়ে) তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং ঐ রাত্রিতে মুশরিক অথবা হিংসুক ব্যক্তি ছাড়া সকলকেই ক্ষমা করে দেন।
(তিবরানী, আল্ আওসাত)

দুই:
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলে করীম (সা.) এরশাদ করেছেন- নিসফু শা'বান তথা শা'বান মাসের মধ্য রাতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। দু'প্রকার লোক তথা হিংসুক ও খুনী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। ( মুসনাদে আহমদ, ৬ষ্ঠ খন্ড, হাদীস নম্বর ৬৬৪২)

তিন:
হযরত আবু মূছা আল আশয়ারী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে করীম (সা.) এরশাদ করেছেন- মহান আল্লাহ নিসফ শা'বানের রাতে আবির্ভূত হন।সেই রাত্রিতে মুশরিক অথবা হিংসুক ছাড়া সকলকেই ক্ষমা করে দেন।( ইবনু মাজাহ, শা'বানের মধ্য রাতের মর্যাদা অনুচ্ছেদ, পৃ. ১০১, হাদীশ নং- ১৩৮৯)

চার:
হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (সা.) বলেছেন : নিসফু শা'বানের রাত যখন আগমন করে, তখন মহান আল্লাহ প্রথম আকাশে গমন করেন।অতঃপর তিনি তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন।তবে যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র সাথে শিরক করে কিংবা আপন ভাইয়ের সাথে হিংসা- বিদ্বেষ পোষণ করে তাকে ক্ষমা করেন না। (বাজ্জার ও বায়হাকী)

পাঁচ:
হযরত আবু সা'লাবা আল খুশানী (রা.) হতে বর্ণিত।নবী করম (সা.) এরশাদ করেছেন - শা'বান মাসের মধ্য রাত্রিতে মহান আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দাদের প্রতি আবির্ভূত হন।অত:পর তিনি মুমিনদেরকে ক্ষ মা করে দেন এবং কাফিরদেরকে ( কুফরীর উপর) অবকাশ দেন। হিংসা ও বিদ্বেষ পোষণকারীকে বিদ্বেষ পরিহার না করা পর্যন্ত ছেড়ে দেন। ( তিবরানী ও বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, পৃ. ৩৮২, হাদীস নং- ৩৮৩২)

ছয়:
হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন : আমি একদা এক রাত্রিতে রাসূলে (সা.) কে হারিয়ে ফেললাম এবং তাঁকে তালাশ করার জন্য বেরিয়ে পড়লাম। খুঁজতে খুঁজতে এক পর্যায়ে জান্নাতুল বাকী তে গিয়ে তাঁকে পেলাম। আমাকে দেখে তিনি বললেন : আয়েশা! তুমি কি মনে করছো যে মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তোমার উপর জুলুম করবেন? হযরত আয়েশা (রা.) বললেন : ওহে আল্লাহ্‌র রাসূল! আমি মনে করেছি হয়তো আপনি আপনার জন্য কোনো স্ত্রীর নিকট গমন করেছেন অতঃপর রাসূল (সা.) বললেন: নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ শা'বান মাসের মধ্য রাত্রিতে প্রথম আকাশে অবতরণ করেন এবং বানু ক্বালবের ছাগলের লোমের চেয়েও অধিক সংখ্যক লোককে ক্ষমা করে দেন। ( জামে তিরমিযী, ১ম খন্ড, পৃ. ১৫৬)


লাইলাতু নিসফে শা'বানের মর্যাদার উপর আল্লামা নাসির উদ্দীন আলবানী (রাহ.) এর সংগৃহীত হাদীস সমূহ:


হাদীস নং- ১১৪৪। রাসূলে করীম (সা.) এরশাদ করেছেন- নিসফু শা'বান তথা শা'বান মাসের মধ্য রাতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। অতঃপর তিনি মুশরিক কিংবা হিংসুক ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন।
আল্লাম নাসির উদ্দীন আলবানী বলেন : "হাদীসটি সহীহ" তিনি আরো বলেন এ বিষয়ে একদল সাহাবী থেকে বিভিন্ন সূত্রে হাদীস বর্ণিত আছে। যা এক হাদীস অপর হাদীসকে শক্তিশালী ও মজবুত করেছে।তাঁরা হলেন, হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.), হযরত আবু সা'লাবা আল খুশানী (রা.), হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রা.), হযরত আবু মূছা আল আশয়ারী (রা.) হযরত আবু হুরায়রা (রা.), হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা.), হযরত আউব বিন মালেক (রা.) এবং হযরত আয়েশা (রা.)। ( সিলসিলাতুল আহাদিস আস্ সহীহা, ৩য় খন্ড, পৃ.-১৩৫)

আল্লাম নাসির উদ্দীন আলবানী (রহ.) তিনি আরো একটি হাদীস গ্রন্থ "সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত তারহীব" নামে সংকলন করেছেন। উক্ত গ্রন্থে বিভিন্ন সূত্রে পাঁচটি হাদীস নিসফু শা'বান তথা লায়লাতুল বরাতের মর্যাদার উপর বর্ণনা করেছেন। তা নিম্নে প্রদত্ত হলো-

হাদীস নং- ২৭৬৭, হাসান সহীহ:
হযরত মুয়াজ বিন জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি নবী করীম (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। রাসূল (সা.) বলেছেন শা'বান মাসের মধ্য রাত্রিতে মহান আল্লাহ (রহমতের ভান্ডার নিয়ে) তাঁর সকল সৃষ্টির প্রতি এক বিশেষ ভূমিকায় অবতীর্ণ হন এবং ঐ রাত্রিতে মুশরিক অথবা হিংসুক ব্যক্তি ছাড়া সকলকেই ক্ষমা করে দেন। হাদীসটি ইমাম তিবরানী তাঁর "আল আওসাত" গ্রন্থে "শু'য়াবুল ঈমান" এর মধ্যে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং- ২৭৬৮, সহীহ লিগাইরিহী:
উক্ত হাদীসটি ইমাম ইবনু মাজাহ (রহ.) হযরত আবু মূছা আল আশয়ারী (রা.) এর সূত্রে বর্ণনা করেছেন।

হাদীস নং- ২৭৬৯, সহীহ লিগাইরিহী:
ইমাম বাযযার ও ইমাম বায়হাকী উক্ত হাদীসটি অনুরূপ শব্দের এমন সনদে বর্ণনা করেছেন, যার মধ্যে কোনো সমস্যা বা অসুবিধা নেই।

অপর দু'টি হাদীস হলো: ২৭৭০ এবং ২৭৭১ নং হাদীস। দু'টিই সহীহ লিগাইরিহী হাদীস।

লাইলাতুল বরাআতের অস্তিত্ব, মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের উপর উম্মতের বিশেষজ্ঞ আলেম, মুহাদ্দিস ও ফকীহদের কিছু অভিমত তুলে ধরছি:

এক: প্রখ্যাত হাদীস বিশারদ মুহাম্মদ আবদুর রহমান আল মুবারকপুরী (রহ.) বলেন:
শা'বান মাসের মধ্য রাত্রির মর্যাদার উপর বিভিন্ন সূত্রে বেশ কিছু হাদীস বর্ণিত আছে। এর থেকে লাইলাতুল বরাতের অস্তিত্ব, মৌলিকত্ব ও মর্যাদা সন্দেহাতীত ভাবে স্বীকৃত। পক্ষান্তরে শা'বান মাসের মধ্য রাত্রির মর্যাদার উপর কোন কিছু প্রমাণিত নেই এমব ধারণা যাঁরা পোষণ করে উক্ত বর্ণিত হাদীসগুলো তাঁদের বিপক্ষে হুজ্জাত তথা দলীল হিসেবে বিবেচিত।( তুহফাতুল আহওয়াজী শরহে তিরমিযী ৩য় খন্ড, পৃ. ৪৪২)

দুই: সহীহ বুখারীর ভাষ্য "ফয়জুল বারী" এর প্রণেতা যুগশ্রেষ্ঠ হাদীস বিশারদ আল্লামা আনোয়ার শাহ্ কাশমিরী (রহ.) বলেন:
এটি লাইলাতুল বরাআত রাতের মর্যাদা সম্পর্কিত বর্ণনা সমূহ সহীহ্ অর্থাৎ বিশুদ্ধ। এ রাত্রির মর্যাদা সম্পর্কিত বর্ণিত হাদীসগুলোকে যারা দুর্বল ও বানোয়াট বলেছেন, তাদের এ বক্তব্যের ভিত্তি নেই।(আল আরফুশ শাযী শরহে জামে তিরমিযী, পৃ.১৫৬)

তিন: বর্তমান বিশ্বের শ্রেষ্ঠ হাদীসবেত্তা ও সমালোচক আল্লামা নাসির উদ্দীন আলবানী (রহ.) বলেন :
সার কথা হলো নিসফু শা'বানের মাসের মর্যাদার ওপর বর্ণিত হাদীসগুলো বর্ণিত হওয়ার কারণে নিঃসন্দেহে সহীহ হাদীস হিসেবে বিবেচিত।অথচ এর চেয়ে কম সূত্রে বর্ণিত হাদীস দ্বারা বিশুদ্ধতা প্রমাণিত হয়। তবে তা যদি সাংঘাতিক পর্যায়ের দুর্বলতা থেকে মুক্ত থাকে।যেমন এই হাদীসটি যা হযরত আয়েশা (রা.)
থেকে বর্ণিত। শায়েখ কাশেমী (রহ.) তাঁর "ইসলাহুল মাসাজিদ" গ্রন্থে শা'বান মাসের মধ্য রাত্রির মর্যাদা সম্বলিত কোন সহীহ হাদীস নেই বলে যে মন্তব্য করেছেন তাঁর উপর নির্ভর করা উচিত নয়।(সিলসিলাতুল আহাদিস আস্-সহীহা, ৩য় খন্ড,পৃ.১৩৮)

চার: ইমাম ইবনুল হাজ্জ আল মালেকী (রহ.) বলেন:
নিঃসন্দেহে এটি একটি বরকতময় রাত এবং মহান আল্লাহর নিকট এ রাতের মর্যাদা অনেক বেশি।সার্বিক বিবেচনায় লাইলাতুল কদর এর মর্যাদায় সমতুল্য না হলেও এ রাতটির মর্যাদা অত্যন্ত বেশি।( আল মাদখাল, ১ম খন্ড, পৃ. ২৯৯)

পাঁচ: আল্লামা শরমবুলালী আল হানাফী (রহ.) বলেন:
লাইলাতুল বরআতের রাতে অধিকাংশ কিংবা কিছু সময় কুরআন-হাদীস তিলাওয়াত বা অধ্যয়ন, তাসবীহ পাঠ করা উত্তম। (মারাকিউল ফালাহ, পৃ.৩২৬)

ছয়:আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী বলেন:
উপরে বর্ণিত হাদীসের ও একদল তাবেয়ীর বক্তব্যের ভিত্তিতে শা'বানের মধ্য রাত্রিতে ইবাদাতের উদ্দেশ্য রাত জাগরণ করা মুস্তাহাব।( মা সাবাতা বিস্ সুন্নাত আইয়্যামিস্ সানাহু, পৃ. ৩৬০)

হে আল্লাহ্‌, আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।
ফিৎনা থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন। এ পৃথিবীতে শান্তির এবং ন্যায়ের প্রতীক ইসলামের পতাকা উড্ডীন করার তৌফিক দান করুন।(আমিন)





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.