নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তেমন কিছু বলার নেই!!!

Mahmudul Hasan Milhan

Mahmudul Hasan Milhan › বিস্তারিত পোস্টঃ

মাযহাব ও আহলে হাদিস নিয়ে ইতিকথা!

১৬ ই জুন, ২০১৮ রাত ১০:০৯

মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন।তন্মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হলেন হযরত মুহাম্মদ (স.)।বর্তমান পৃথীবিতে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ১৭০ কোটি। যারা মুসলিম হিসেবে পরিচিত।

মানবতার অগ্রদূত বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর ইন্তেকালের পর চতুর্দিক থেকে ফিৎনা সৃষ্টি হয়। হিজরী প্রথম শতকে এর সময় যা মহামারি আকার লাভ করে। জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে তৎকালীন সময়ের জগৎবিখ্যাত আলেমগণ এ ফিৎনা নিরসনে এগিয়ে আসেন। এ ফিৎনা নিরসন করতে গিয়ে মাযহাবের উৎপত্তি হয়। সৃষ্টি হয় চার মাযহাবের।

★ এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে কাজ সাহাবীরা করেননি সে কাজ অন্যরা কেন করলেন?

- সাহাবীদের যুগেও অসংখ্য ফিৎনার সৃষ্টি হয়েছিলো। তবে সাহাবীরা আল্লাহর নবীর সান্নিধ্য অর্জন লাভের কারণে তা মহামারি আকার ধারণ করতে পারেনি।কেননা সাহাবীরা আল্লাহর নবীর আমল পদ্ধতি চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সাহাবীরা মাযহাব প্রণয়ন করেনি এর মানে এটা নয় যে তাঁরা যদি থাকতেন তবে মাযহাবের বিরোধীতা করতেন। একটি বিষয় এখানে তুলে ধরিবো ইনশাল্লাহ তাতে আপনাদের এ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মৃত্যুর পর আবু বকর (র.) এর খিলাফতকালীন সময়ে ভন্ড নবী মুসায়লামার বিরুদ্ধে ইয়ামামার যুদ্ধ সংঘটিত হয়।এ যুদ্ধে প্রায় সত্তরজন হাফেজ শহীদ হন। তখন কুরআন সংকলনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। হযরত ওমর (র.) এ বিষয়টি বারবার হযরত আবু বকর (র.) এর কাছে উপস্থাপন করেন।কিন্তু হযরত আবু বকর (র.) প্রাথমিক সময়ে কুরআন সংকলনের ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেন।তিনি বলেন যে কাজ আল্লাহর রাসূল করেননি, করতে বলে যাননি সে কাজ আমি কিভাবে করবো। এর পরে মহান আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে হযরত আবু বকর (র.) এর মনকে উদার করে দেন।এবং তিনি কুরআন সংকলন করেন। হযরত ওমর (র.) এর আমলে তা বহাল থাকে।
তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (র.) এর খিলাফত কালে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ফিৎনার সৃষ্টি হয়।মুসলিম উম্মাহ এর মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। তখন হযরত উসমান (র.) সার্বিক বিবেচনা করে এ ফিৎনা নিরসনে কুরআনে পূর্বের সকল পান্ডুলিপি পুড়ে ফেলেন। এবং পুনরায় কুরআন সংকলন করেন। যা আজও বহাল রয়েছে।

একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, মুসলিমজাতির কল্যাণে বিশেষ প্রয়োজনীয়তার খাতিরে সাহাবীগণ এমন কাজ করেছেন যা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) করেননি এবং করার জন্য নির্দেশ দিয়েও যাননি।

★ মাযহাব উৎপত্তি লাভ করে ফিৎনা নিরসনে বিভক্তি রোধে। চার মাযহাব কি ইসলামকে বিভক্ত করে দেয়নি চার ভাগে? চার মাযহাব কি একে অপরের সাংঘর্ষিক নয়?

- প্রশ্নটির যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে।লা মাযহাবীরা এ প্রশ্নটি করে মানুষের মাঝে সন্দেহের বীজ বপন করে দেয়। চার মাযহাব ইসলাম কে বিভক্ত করে নি। বরং ইসলাম কে সহজ করে দিয়েছে।কিন্তু কিভাবে?

আমরা যখন কোনো অংক সমাধান করতে বসি।তখন দেখা যায় যে একটি অংক কয়েক নিয়মে সমাধান করা যায়।তবে শর্ত হলো তা স্বীকৃত নিয়ম হতে হবে।এখন যদি প্রশ্ন করা হয় কোনটি সঠিক নিয়ম? নিয়মগুলো কি পরস্পর সাংঘর্ষিক নয়? অবশ্যই নিয়মগুলো একে অপরের সাংঘর্ষিক নয়। তবে প্রতিটি নিয়মই স্বীকৃত নিয়ম হতে হবে।

ঠিক তেমনিভাবে মাযহাব ও একে অপরের সাংঘর্ষিক নয়। মাযহাব ইসলামকে বিভক্ত করে নি বরং সহজ করে দিয়েছে।সুতরাং মাযহাব কি ইসলামকে বিভক্ত করেছে এটা একেবারেই অমূলক একটি ধারণা।

★ কোনটি উৎকৃষ্ট মাযহাব?

- এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিনির্ভর একটি প্রশ্ন।করিম উদ্দীন এর কাছে অংকের একটি নিয়ম ভালো লাগবে সলিম উদ্দীন এর কাছে লাগবে আরেকটি। যার কাছে যেই নিয়ম ভালো লাগবে সে সেই নিয়ম অনুসারে সমাধান করবে এটাই তো স্বাভাবিক। ঠিক তেমনি ভাবে মাযহাব ও যার যেটা ভালো লাগবে সে সেটাকে অনুসরণ করবে।

★ সৌদি আরবে শাফেয়ী মাযহাব এর অনুসারী বেশি। তাই আমিও শাফেয়ী মাযহাব অনুসরণ করতে চাই এতে কোনো সমস্যা হবে কি?

- আপনি চাইলে শাফেয়ী মাযহাব অনুসরণ করতে পারেন সমস্যা নেই। তবে সার্বিক বিবেচনায় আপনার দেশ, এলাকা, সমাজে যে মাযহাব প্রচলিত তা অনুসরণ করা উত্তম।

খালেদ ক্লাসের একজন মেধাবী ছাত্র। মোস্তফা স্যার তাদের ক্লাসের অংকের শিক্ষক।একদা ক্লাসে মোস্তফা স্যার ক্লাসে একটি অংকের সমাধান করছিলেন।অংক শেষ হওয়ার পর খালেদ স্যারের কাছে এসে বলিলো স্যার আমি এ নিয়মে(ভিন্ন) অংকটি সমাধান করতেছিলাম।কিন্তু এতটুকু করার পর পরের অংশের সমাধান করতে পারছি না। দেখা গেলো যে, খালেদের অনুসরণ করা নিয়মটি স্যারের অজানা। স্যার তখন তাকে স্যারের নিয়মটি অনুসরণ করার উপদেশ দেন। এহেন অবস্থা দেখিয়া ক্লাসের কিছু ছাত্র খালেদকে কাবিল ও ইত্যাদি নানারকমের
কথা বলিতে লাগিলো।একসময় খালেদের সাথে ঝগড়া বা মনোমালিন্য দেখা দিলো ছেলেগুলোর সাথে।

ঠিক তেমনিভাবে সমাজে প্রচলিত মাযহাব ছাড়া ভিন্ন মাযহাব মানিতে গেলে ফেরকা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।এবং আপনার অনুসারিত ভিন্ন মাযহাবের সকল সমস্যার সমাধান ইমাম সাহেবের জানা নাও থাকতে পারে।তাই সার্বিক বিবেচনা করিয়া প্রচলিত মাযহাব অনুসরণ করাই উত্তম।কেননা ফিৎনা হত্যা হতেও ভয়ংকর অপরাধ।

★ কেনো মাযহাব অনুসরণ করবো? হাদীস অনুসরণ করলে সমস্যা কি? এতে ইসলামের মধ্যের বিভক্তি থাকবে না।

- এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আগে মাযহাব সম্পর্কে জানতে হবে।সাধারণতঃ বর্তমান সময়ে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করার নামে এ যুক্তি দিয়ে বিভক্ত করে দিচ্ছে। হিজরী প্রথম শতকে যখন চারদিকে ফিৎনায় ভরপুর তখন মাযহাবের সূচনা হয়। এখন কথা হচ্ছে তখন কি হাদিস ছিলো না? এমনকি হানাফী মাযহাবের প্রণেতা ইমাম আবু হানীফা (রহ.) একজন তাবেঈ ছিলেন। তিনি কি হাদিস জানতেন না? অন্য ইমামগণ কি হাদীস জানতেন না? কেনো তাঁরা মাযহাব প্রণয়ন করলেন? বরং দেখা যায় যে তৎকালীন সময়ে হাদিস মেনে আমল করার সুযোগ বেশি ছিলো।স্বয়ং ইমাম আবু হানীফা (রহ.) চারজন সাহাবীর সাক্ষাৎ লাভ করেন।যার সমাধান কুরআনে, হাদিসে পাননি বিস্তারিতভাবে, তাতে ইজমার আশ্রয় নিয়েছেন।তারপর কিয়াস করেছেন।এখানে হানাফী মাযহাবের কথা তুলে ধরলাম,

উস্তাদ ইমাম আবু হানীফা (রহ.) তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত চল্লিশজন আলেম নিয়ে ফিকহ বোর্ড গঠন করেন।যার মধ্যে ইমাম আবু ইউসুফ অন্যতম। তিনি যখন কোনো বিষয় কে সঠিক মনে করতেন তখন তিনি তা ফিকহ বোর্ডে তুলে ধরতেন।এবং সেখানে আলেমগণ তা নিয়ে গবেষণা করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি মাসয়ালা প্রণয়ন করতেন।
এভাবে মাযহাব প্রতিষ্ঠিত হয়।সুতরাং মাযহাব হলো কুরআন হাদীস থেকে প্রাপ্ত একটি গবেষণালব্ধ ফলাফল। যারা "এসো হাদিস মেনে জীবন গঠন করি" বলে স্লোগান দেয় ওরা হাদিস কে মাযহাবের সাথে সাংঘর্ষিক করে ফেলে।ইসলামের মাঝে বিভক্ত সৃষ্টি করে।

আমি পূর্বের একটি উদাহারণে বলেছি,
আপনি স্বীকৃত নিয়ম মেনে অংক সমাধান করুন তাহলে শিক্ষক আপনাকে ভালো মার্ক দিবে।যদি আপনি তা না করে নিজে একটি নিয়ম তৈরী করে ফেলেন দেখা যাবে যে, একটি অংক আপনি ঐ নিয়মে সমাধান করলেন বাকি গুলো করা যাচ্ছে না।অথবা আপনার নিয়মটি অন্যগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক করে ফেললেন যা আপনি জানেন না কেননা আপনি অতটুকু গভীরতায় যান নি।সুতরাং আপনি সেই নিয়মগুলোর একটি অনুসরণ করে অংকগুলো সমাধান করুন যা সর্বজনস্বীকৃত।

ঠিক তেমনিভাবে মাযহাব ও স্বীকৃত ও গবেষণাললব্ধ একটি ফলাফল।এখন আপনি কোনটি অনুসরণ গবেষণালব্ধ ফলাফল নাকি গবেষণাহীন ফলাফল?

★ তাহলে ইমাম বোখারী কেনো মাযহাব অনুসরণ করেন নি? তিনি কি কম জানতেন?

- ইমাম বোখারী মাযহাব অনুসরণ করেন নি এর মানে এটা নয় যে তিনি মাযহাব কে অস্বীকার করেছেন। অস্বীকার এক বিষয় অনুসরণ আরেক বিষয় আপনাকে দু'টোর পার্থক্য বুঝতে হবে।

ধরুন, আপনি অংকের চারটি নিয়মের দ্বিতীয়টি অনুসরণ করলেন। এর মানে এটা নয় যে, আপনি বাকি তিনটি নিয়ম অস্বীকার করেছেন।আপনি চারটিই স্বীকার করেন কিন্তু দ্বিতীয়টি আপনার সহজ লেগেছে তাই আপনি সেটি করেছেন।

এবার প্রশ্ন জাগে যে, ইমাম বোখারী (রহ.)
তো চার মাযহাবের কোনোটই অনুসরণ করেন নি? তাহলে কি তিনি ভুল?

একজন নয়া নিউটন লাগবে নিউটনের মতো আরেকটি থিওরি প্রদান করতে।অর্থাৎ নিউটনের মতো আরেকজন বিজ্ঞানীই পারবেন আরেকটি নিয়ম থিওরি প্রদান করতে।

ঠিক ইমাম বোখারী (রহ.) ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী এবং একজন শ্রেষ্ঠ হাদিস সংকলক।
সুতরাং তিনি মাযহাব অনুসরণ না করে নিজস্ব নিয়ম অনুসরণ করেছেন কেননা তিনি ততো বড় জ্ঞানী ছিলেন।

★ আমি ইমাম বোখারীর মতো করে চলতে চাই। তাহলে কি সমস্যা হবে?

- আপনি যদি তাঁর মতো হতে চান তাহলে আপনাকে স্বাগতম।কিন্তু আপনি যদি বলেন আপনি এখন থেকেই তাঁকে অনুসরণ করতে চান তাহলে দুঃখিত যে তিনি কোন নিয়মে কিভাবে চলেছেন তা তিনি বলে যাননি বা কোনো মাযহাব ও প্রণয়ন করেন নি যা আপনি অনুসরণ করবেন। সুতরাং সরাসরি হাদীস দেখে আমল করতে হলে আপনাকে মুহাদ্দিস হতে হবে।মাযহাব প্রণয়ন করতে চাইলে গবেষণালব্ধ ফলাফল হতে হবে।উক্ত বিষয়ের উপর ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমত্য থাকতে হবে।সুতরাং এর আগ পর্যন্ত আপনাকে চার মাযহাব অনুসরণ করতেতে হবে।

এখন আপনি বলবেন আমি সরাসরি হাদিস অনুসরণ করলে সমস্যা কি?

ধরুন, আপনি একটি হাদিস পড়লেন "হে মুসাফির! তোমরা সালাত কসর করো"।

তো আপনি কি করলেন বাড়ি থেকে বের হলেন বাজার করতে রাস্তায় আজান দিলো
আর আপনি সালাত কসর করলেন।কিন্তু মুসাফির হওয়ার শর্ত কসরের নিয়ম জানেন না।তাহলে আপনি ভুলের মধ্যে ছিলেন। আবার মনে করুন, আপনি ইমামতি করতে দাঁড়ালেন এশার নামাজের এখন দু'রাকাত পড়ে আপনি পিছনের একদল কে অদলবদল করে ফেললেন মানে যুদ্ধের সময়কালীন নিয়মনীতি অনুসরণ করলেন।তখন স্পষ্টতঃ আপনি ভুল করলেন এবং ফিৎনা সৃষ্টি করলেন।
এটা আপনার না জানার ফল।তাই বলা যায় যে, আপনার মাযহাব মানা উচিত।
সুতরাং ইমাম বোখারীর মতো চলতে চাইলে ইমাম বোখারীর মতো হওয়া শর্ত।

★ আমি একদিন নিজগ্রামে গিয়েছিলাম। তখন আমার বাল্যকালের এক বন্ধু আমাকে বললো, দোস্ত! আহলে হাদিস মানে কি? ওরা কি সঠিক? আহলে হাদিস মানে কি হাদিসের উত্তম অনুসারী? আমাকে অমুকে বলেছে আহলে হাদিস হলো হাদীসের উত্তম অনুসারী।ওদের মতো করে নামাজ পড়তে বলেছে ওরা।এখন কোনটা সঠিক? আমি কি আহলে হাদিস অনুসরণ করবো? ( বি: দ্র: সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

- আহল শব্দের অর্থ পরিবার। হযরত মুহাম্মদ (স.) এর কথা, কাজ ও মৌনসম্মতি কে হাদিস বলে। আহলে হাদিস অর্থ হাদিসের পরিবার। যেমন, আমরা বলে থাকি লোকটি টাকাওয়ালা, বাড়িওয়ালা ইত্যাদি।ঠিক আহলে হাদিস হলো হাদিসওয়ালা।
এখন আহলে হাদিস অনুসরণ করা যাবে কিনা? আহলে হাদিসের উৎপত্তি দেখতে হবে। হক্কানী ওলামায়ে কেরামের মতামত দেখতে হবে।
আমি পূর্বেই বলেছি যে,
মাযহাব হলো ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রণিত একটি গবেষণা লব্ধ ফলাফল।যার কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের উপর প্রতিষ্ঠিত।
অপরপক্ষে আহলে হাদিস দাবীদারদের সুনির্দিষ্ট কোনো আলেম নেই।গবেষণা লব্ধ এমন কোনো ফলাফল নেই যার উপর ওরা প্রতিষ্ঠিত।হক্কানী ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমত্য নেই।ওদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন করুন ওরা বলবে যে আলেমের কি প্রয়োজন আমরা তো হাদিসের উত্তম অনুসারী। আপনি পাল্টা প্রশ্নকরুন তাহলে মাযহাব কি কুরআন হাদিসের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়? এটাতো জগতশ্রেষ্ঠ আলেমদের গবেষণালব্ধ ফলাফল।ওরা পাল্টা যুক্তি দিবে, আল্লাহর নবী বলছে আমাদের কুরআন হাদিস আঁকড়ে ধরতে।
উপরের আলোচনা থেকে এটা সুষ্পষ্ট যে মাযহাব একে অপরের সাংঘর্ষিক নয়।কুরআন হাদিসের গবেষণালব্ধ ফলাফল।
তো মাযহাব অনুসরণ করলে তো কুরআন হাদিস থেকে দূরে সরে যায় না।বরং সহজভাবে আঁকড়ে ধরা যায়। আহলে হাদিস নামধারীরা এভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। উম্মতে মুহাম্মদী কে বিভক্ত করতে লিপ্ত। সুতরাং যার সুনির্দিষ্ট কোনো আলেম নেই, গবেষণালব্ধ ফলাফল নেই তা অনুসরণ করা অমূলক।

আহলে হাদিসেরা যুক্তি দিয়ে থাকেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কুরআন হাদিস আঁকড়ে ধরে জীবনযাপন করতে বলেছেন।অথচ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন :

আমি তোমাদের নিকট দু'টি বিষয় রেখে যাচ্ছি যা আঁকড়ে ধরলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না, ১. আল্লাহ্‌র কিতাব তথা কুরআন ২. রাসূলের সুন্নাহ।

লক্ষ্য করে দেখুন এখানে রাসূলের সুন্নাহ এর কথা বলেছে হাদীসের কথা বলা হয়নি।
শেষ করবো আহলে হাদিস নামধারীদের সৃষ্টি একটি বিতর্কিত বিষয় দিয়ে,

★ তারাবির নামাজ আটরাকাত নাকি বিশরাকাত?

- জামাতের সহিত তারাবির নামাজ চালু করেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (র.)। তৎকালীন সময়ের জলীলে কদর সাহাবীরা সকলে বিশরাকাত জামাতের সহিত পড়েন। এরপরে হযরত উসমান (র.), হযরত আলী (র.) এর খিলাফত কালেও তা বিদ্যমান ছিলো।সকল তাবেঈ, তাবে তাবেঈন ও চার ইমাম সহ সকল যুগশ্রেষ্ঠ আলেমগণ বিশরাকাত আদায় করেন।এভাবে চৌদ্দশত হিজরী পর্যন্ত ওলামায়ে কেরাম কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন নি।তারাবির নামাজের মূল উদ্দেশ্য হলো জামাতের সাথে কুরআন খতম করা।
কিন্তু আমাদের দেশে একশ্রেণির মানুষ আছে যারা আটরাকাত পড়ে বেরিয়ে যায়।
এতে তারাবির নামাজের মূল উদ্দেশ্য হাসিল হয় না। ওদেরকে জিজ্ঞেস করলে ওরা বলে সৌদি আরবের আরবরা পড়ে তাই ওনারাও আট রাকাত পড়ে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, কাবা শরীফে বিশরাকাত পড়ানো হয়।মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত পড়ানো হয়। বড় মসজিদ গুলো তে বিশরাকাত চালু রয়েছে।যারা আটরাকাত পড়ে বেরিয়ে যায় স্পষ্টতঃ ওদের তারাবির নামাজের মূল উদ্দেশ্য হাসিল হয় না।

তারাবির নামাজ নিয়ে ১৪শত বছর কোনো বিতর্ক ফিৎনা ছিলো না। আট রাকাত বলার পর থেকে ফিৎনার উদ্ভব হয়।তাই আমাদের সকলের উচিত ফিৎনা থেকে বেঁচে থাকা।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেন,
ফিৎনা থেকে ঘোড়ায় আরোহী ব্যক্তি হতে পদব্রজে চলমান ব্যক্তি, পদব্রজে চলমান ব্যক্তি হতে বসে থাকা ব্যক্তি নিরাপদ। সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি কোনো ভাই অপর ভাইকে হত্যা করে তখন কি করণীয়? তিনি বলেন সে যেন চুপ থাকে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।ফিৎনা থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।

মাহমুদুল হাসান মিলহান
মহান আল্লাহ তায়ালা মানব জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করার জন্য যুগে যুগে অসংখ্য নবী রাসূল প্রেরণ করেছেন।তন্মধ্যে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হলেন হযরত মুহাম্মদ (স.)।বর্তমান পৃথীবিতে তাঁর অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ১৭০ কোটি। যারা মুসলিম হিসেবে পরিচিত।

মানবতার অগ্রদূত বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর ইন্তেকালের পর চতুর্দিক থেকে ফিৎনা সৃষ্টি হয়। হিজরী প্রথম শতকে এর সময় যা মহামারি আকার লাভ করে। জাতির এ ক্রান্তিলগ্নে তৎকালীন সময়ের জগৎবিখ্যাত আলেমগণ এ ফিৎনা নিরসনে এগিয়ে আসেন। এ ফিৎনা নিরসন করতে গিয়ে মাযহাবের উৎপত্তি হয়। সৃষ্টি হয় চার মাযহাবের।

★ এখন অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে যে কাজ সাহাবীরা করেননি সে কাজ অন্যরা কেন করলেন?

- সাহাবীদের যুগেও অসংখ্য ফিৎনার সৃষ্টি হয়েছিলো। তবে সাহাবীরা আল্লাহর নবীর সান্নিধ্য অর্জন লাভের কারণে তা মহামারি আকার ধারণ করতে পারেনি।কেননা সাহাবীরা আল্লাহর নবীর আমল পদ্ধতি চাক্ষুষ প্রত্যক্ষ করেছিলেন। সাহাবীরা মাযহাব প্রণয়ন করেনি এর মানে এটা নয় যে তাঁরা যদি থাকতেন তবে মাযহাবের বিরোধীতা করতেন। একটি বিষয় এখানে তুলে ধরিবো ইনশাল্লাহ তাতে আপনাদের এ প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন।

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (স.) এর মৃত্যুর পর আবু বকর (র.) এর খিলাফতকালীন সময়ে ভন্ড নবী মুসায়লামার বিরুদ্ধে ইয়ামামার যুদ্ধ সংঘটিত হয়।এ যুদ্ধে প্রায় সত্তরজন হাফেজ শহীদ হন। তখন কুরআন সংকলনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। হযরত ওমর (র.) এ বিষয়টি বারবার হযরত আবু বকর (র.) এর কাছে উপস্থাপন করেন।কিন্তু হযরত আবু বকর (র.) প্রাথমিক সময়ে কুরআন সংকলনের ব্যাপারে অনীহা প্রকাশ করেন।তিনি বলেন যে কাজ আল্লাহর রাসূল করেননি, করতে বলে যাননি সে কাজ আমি কিভাবে করবো। এর পরে মহান আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে হযরত আবু বকর (র.) এর মনকে উদার করে দেন।এবং তিনি কুরআন সংকলন করেন। হযরত ওমর (র.) এর আমলে তা বহাল থাকে।
তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান (র.) এর খিলাফত কালে আরেকটি উল্লেখযোগ্য ফিৎনার সৃষ্টি হয়।মুসলিম উম্মাহ এর মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। তখন হযরত উসমান (র.) সার্বিক বিবেচনা করে এ ফিৎনা নিরসনে কুরআনে পূর্বের সকল পান্ডুলিপি পুড়ে ফেলেন। এবং পুনরায় কুরআন সংকলন করেন। যা আজও বহাল রয়েছে।

একটু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে, মুসলিমজাতির কল্যাণে বিশেষ প্রয়োজনীয়তার খাতিরে সাহাবীগণ এমন কাজ করেছেন যা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) করেননি এবং করার জন্য নির্দেশ দিয়েও যাননি।

★ মাযহাব উৎপত্তি লাভ করে ফিৎনা নিরসনে বিভক্তি রোধে। চার মাযহাব কি ইসলামকে বিভক্ত করে দেয়নি চার ভাগে? চার মাযহাব কি একে অপরের সাংঘর্ষিক নয়?

- প্রশ্নটির যথেষ্ট যৌক্তিকতা রয়েছে।লা মাযহাবীরা এ প্রশ্নটি করে মানুষের মাঝে সন্দেহের বীজ বপন করে দেয়। চার মাযহাব ইসলাম কে বিভক্ত করে নি। বরং ইসলাম কে সহজ করে দিয়েছে।কিন্তু কিভাবে?

আমরা যখন কোনো অংক সমাধান করতে বসি।তখন দেখা যায় যে একটি অংক কয়েক নিয়মে সমাধান করা যায়।তবে শর্ত হলো তা স্বীকৃত নিয়ম হতে হবে।এখন যদি প্রশ্ন করা হয় কোনটি সঠিক নিয়ম? নিয়মগুলো কি পরস্পর সাংঘর্ষিক নয়? অবশ্যই নিয়মগুলো একে অপরের সাংঘর্ষিক নয়। তবে প্রতিটি নিয়মই স্বীকৃত নিয়ম হতে হবে।

ঠিক তেমনিভাবে মাযহাব ও একে অপরের সাংঘর্ষিক নয়। মাযহাব ইসলামকে বিভক্ত করে নি বরং সহজ করে দিয়েছে।সুতরাং মাযহাব কি ইসলামকে বিভক্ত করেছে এটা একেবারেই অমূলক একটি ধারণা।

★ কোনটি উৎকৃষ্ট মাযহাব?

- এটি সম্পূর্ণ ব্যক্তিনির্ভর একটি প্রশ্ন।করিম উদ্দীন এর কাছে অংকের একটি নিয়ম ভালো লাগবে সলিম উদ্দীন এর কাছে লাগবে আরেকটি। যার কাছে যেই নিয়ম ভালো লাগবে সে সেই নিয়ম অনুসারে সমাধান করবে এটাই তো স্বাভাবিক। ঠিক তেমনি ভাবে মাযহাব ও যার যেটা ভালো লাগবে সে সেটাকে অনুসরণ করবে।

★ সৌদি আরবে শাফেয়ী মাযহাব এর অনুসারী বেশি। তাই আমিও শাফেয়ী মাযহাব অনুসরণ করতে চাই এতে কোনো সমস্যা হবে কি?

- আপনি চাইলে শাফেয়ী মাযহাব অনুসরণ করতে পারেন সমস্যা নেই। তবে সার্বিক বিবেচনায় আপনার দেশ, এলাকা, সমাজে যে মাযহাব প্রচলিত তা অনুসরণ করা উত্তম।

খালেদ ক্লাসের একজন মেধাবী ছাত্র। মোস্তফা স্যার তাদের ক্লাসের অংকের শিক্ষক।একদা ক্লাসে মোস্তফা স্যার ক্লাসে একটি অংকের সমাধান করছিলেন।অংক শেষ হওয়ার পর খালেদ স্যারের কাছে এসে বলিলো স্যার আমি এ নিয়মে(ভিন্ন) অংকটি সমাধান করতেছিলাম।কিন্তু এতটুকু করার পর পরের অংশের সমাধান করতে পারছি না। দেখা গেলো যে, খালেদের অনুসরণ করা নিয়মটি স্যারের অজানা। স্যার তখন তাকে স্যারের নিয়মটি অনুসরণ করার উপদেশ দেন। এহেন অবস্থা দেখিয়া ক্লাসের কিছু ছাত্র খালেদকে কাবিল ও ইত্যাদি নানারকমের
কথা বলিতে লাগিলো।একসময় খালেদের সাথে ঝগড়া বা মনোমালিন্য দেখা দিলো ছেলেগুলোর সাথে।

ঠিক তেমনিভাবে সমাজে প্রচলিত মাযহাব ছাড়া ভিন্ন মাযহাব মানিতে গেলে ফেরকা সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।এবং আপনার অনুসারিত ভিন্ন মাযহাবের সকল সমস্যার সমাধান ইমাম সাহেবের জানা নাও থাকতে পারে।তাই সার্বিক বিবেচনা করিয়া প্রচলিত মাযহাব অনুসরণ করাই উত্তম।কেননা ফিৎনা হত্যা হতেও ভয়ংকর অপরাধ।

★ কেনো মাযহাব অনুসরণ করবো? হাদীস অনুসরণ করলে সমস্যা কি? এতে ইসলামের মধ্যের বিভক্তি থাকবে না।

- এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আগে মাযহাব সম্পর্কে জানতে হবে।সাধারণতঃ বর্তমান সময়ে মুসলমানদের ঐক্যবদ্ধ করার নামে এ যুক্তি দিয়ে বিভক্ত করে দিচ্ছে। হিজরী প্রথম শতকে যখন চারদিকে ফিৎনায় ভরপুর তখন মাযহাবের সূচনা হয়। এখন কথা হচ্ছে তখন কি হাদিস ছিলো না? এমনকি হানাফী মাযহাবের প্রণেতা ইমাম আবু হানীফা (রহ.) একজন তাবেঈ ছিলেন। তিনি কি হাদিস জানতেন না? অন্য ইমামগণ কি হাদীস জানতেন না? কেনো তাঁরা মাযহাব প্রণয়ন করলেন? বরং দেখা যায় যে তৎকালীন সময়ে হাদিস মেনে আমল করার সুযোগ বেশি ছিলো।স্বয়ং ইমাম আবু হানীফা (রহ.) চারজন সাহাবীর সাক্ষাৎ লাভ করেন।যার সমাধান কুরআনে, হাদিসে পাননি বিস্তারিতভাবে, তাতে ইজমার আশ্রয় নিয়েছেন।তারপর কিয়াস করেছেন।এখানে হানাফী মাযহাবের কথা তুলে ধরলাম,

উস্তাদ ইমাম আবু হানীফা (রহ.) তৎকালীন সময়ের বিখ্যাত চল্লিশজন আলেম নিয়ে ফিকহ বোর্ড গঠন করেন।যার মধ্যে ইমাম আবু ইউসুফ অন্যতম। তিনি যখন কোনো বিষয় কে সঠিক মনে করতেন তখন তিনি তা ফিকহ বোর্ডে তুলে ধরতেন।এবং সেখানে আলেমগণ তা নিয়ে গবেষণা করে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে ঐক্যমতের ভিত্তিতে একটি মাসয়ালা প্রণয়ন করতেন।
এভাবে মাযহাব প্রতিষ্ঠিত হয়।সুতরাং মাযহাব হলো কুরআন হাদীস থেকে প্রাপ্ত একটি গবেষণালব্ধ ফলাফল। যারা "এসো হাদিস মেনে জীবন গঠন করি" বলে স্লোগান দেয় ওরা হাদিস কে মাযহাবের সাথে সাংঘর্ষিক করে ফেলে।ইসলামের মাঝে বিভক্ত সৃষ্টি করে।

আমি পূর্বের একটি উদাহারণে বলেছি,
আপনি স্বীকৃত নিয়ম মেনে অংক সমাধান করুন তাহলে শিক্ষক আপনাকে ভালো মার্ক দিবে।যদি আপনি তা না করে নিজে একটি নিয়ম তৈরী করে ফেলেন দেখা যাবে যে, একটি অংক আপনি ঐ নিয়মে সমাধান করলেন বাকি গুলো করা যাচ্ছে না।অথবা আপনার নিয়মটি অন্যগুলোর সাথে সাংঘর্ষিক করে ফেললেন যা আপনি জানেন না কেননা আপনি অতটুকু গভীরতায় যান নি।সুতরাং আপনি সেই নিয়মগুলোর একটি অনুসরণ করে অংকগুলো সমাধান করুন যা সর্বজনস্বীকৃত।

ঠিক তেমনিভাবে মাযহাব ও স্বীকৃত ও গবেষণাললব্ধ একটি ফলাফল।এখন আপনি কোনটি অনুসরণ গবেষণালব্ধ ফলাফল নাকি গবেষণাহীন ফলাফল?

★ তাহলে ইমাম বোখারী কেনো মাযহাব অনুসরণ করেন নি? তিনি কি কম জানতেন?

- ইমাম বোখারী মাযহাব অনুসরণ করেন নি এর মানে এটা নয় যে তিনি মাযহাব কে অস্বীকার করেছেন। অস্বীকার এক বিষয় অনুসরণ আরেক বিষয় আপনাকে দু'টোর পার্থক্য বুঝতে হবে।

ধরুন, আপনি অংকের চারটি নিয়মের দ্বিতীয়টি অনুসরণ করলেন। এর মানে এটা নয় যে, আপনি বাকি তিনটি নিয়ম অস্বীকার করেছেন।আপনি চারটিই স্বীকার করেন কিন্তু দ্বিতীয়টি আপনার সহজ লেগেছে তাই আপনি সেটি করেছেন।

এবার প্রশ্ন জাগে যে, ইমাম বোখারী (রহ.)
তো চার মাযহাবের কোনোটই অনুসরণ করেন নি? তাহলে কি তিনি ভুল?

একজন নয়া নিউটন লাগবে নিউটনের মতো আরেকটি থিওরি প্রদান করতে।অর্থাৎ নিউটনের মতো আরেকজন বিজ্ঞানীই পারবেন আরেকটি নিয়ম থিওরি প্রদান করতে।

ঠিক ইমাম বোখারী (রহ.) ছিলেন অত্যন্ত জ্ঞানী এবং একজন শ্রেষ্ঠ হাদিস সংকলক।
সুতরাং তিনি মাযহাব অনুসরণ না করে নিজস্ব নিয়ম অনুসরণ করেছেন কেননা তিনি ততো বড় জ্ঞানী ছিলেন।

★ আমি ইমাম বোখারীর মতো করে চলতে চাই। তাহলে কি সমস্যা হবে?

- আপনি যদি তাঁর মতো হতে চান তাহলে আপনাকে স্বাগতম।কিন্তু আপনি যদি বলেন আপনি এখন থেকেই তাঁকে অনুসরণ করতে চান তাহলে দুঃখিত যে তিনি কোন নিয়মে কিভাবে চলেছেন তা তিনি বলে যাননি বা কোনো মাযহাব ও প্রণয়ন করেন নি যা আপনি অনুসরণ করবেন। সুতরাং সরাসরি হাদীস দেখে আমল করতে হলে আপনাকে মুহাদ্দিস হতে হবে।মাযহাব প্রণয়ন করতে চাইলে গবেষণালব্ধ ফলাফল হতে হবে।উক্ত বিষয়ের উপর ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমত্য থাকতে হবে।সুতরাং এর আগ পর্যন্ত আপনাকে চার মাযহাব অনুসরণ করতেতে হবে।

এখন আপনি বলবেন আমি সরাসরি হাদিস অনুসরণ করলে সমস্যা কি?

ধরুন, আপনি একটি হাদিস পড়লেন "হে মুসাফির! তোমরা সালাত কসর করো"।

তো আপনি কি করলেন বাড়ি থেকে বের হলেন বাজার করতে রাস্তায় আজান দিলো
আর আপনি সালাত কসর করলেন।কিন্তু মুসাফির হওয়ার শর্ত কসরের নিয়ম জানেন না।তাহলে আপনি ভুলের মধ্যে ছিলেন। আবার মনে করুন, আপনি ইমামতি করতে দাঁড়ালেন এশার নামাজের এখন দু'রাকাত পড়ে আপনি পিছনের একদল কে অদলবদল করে ফেললেন মানে যুদ্ধের সময়কালীন নিয়মনীতি অনুসরণ করলেন।তখন স্পষ্টতঃ আপনি ভুল করলেন এবং ফিৎনা সৃষ্টি করলেন।
এটা আপনার না জানার ফল।তাই বলা যায় যে, আপনার মাযহাব মানা উচিত।
সুতরাং ইমাম বোখারীর মতো চলতে চাইলে ইমাম বোখারীর মতো হওয়া শর্ত।

★ আমি একদিন নিজগ্রামে গিয়েছিলাম। তখন আমার বাল্যকালের এক বন্ধু আমাকে বললো, দোস্ত! আহলে হাদিস মানে কি? ওরা কি সঠিক? আহলে হাদিস মানে কি হাদিসের উত্তম অনুসারী? আমাকে অমুকে বলেছে আহলে হাদিস হলো হাদীসের উত্তম অনুসারী।ওদের মতো করে নামাজ পড়তে বলেছে ওরা।এখন কোনটা সঠিক? আমি কি আহলে হাদিস অনুসরণ করবো? ( বি: দ্র: সত্য ঘটনা অবলম্বনে)

- আহল শব্দের অর্থ পরিবার। হযরত মুহাম্মদ (স.) এর কথা, কাজ ও মৌনসম্মতি কে হাদিস বলে। আহলে হাদিস অর্থ হাদিসের পরিবার। যেমন, আমরা বলে থাকি লোকটি টাকাওয়ালা, বাড়িওয়ালা ইত্যাদি।ঠিক আহলে হাদিস হলো হাদিসওয়ালা।
এখন আহলে হাদিস অনুসরণ করা যাবে কিনা? আহলে হাদিসের উৎপত্তি দেখতে হবে। হক্কানী ওলামায়ে কেরামের মতামত দেখতে হবে।
আমি পূর্বেই বলেছি যে,
মাযহাব হলো ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমতের ভিত্তিতে প্রণিত একটি গবেষণা লব্ধ ফলাফল।যার কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের উপর প্রতিষ্ঠিত।
অপরপক্ষে আহলে হাদিস দাবীদারদের সুনির্দিষ্ট কোনো আলেম নেই।গবেষণা লব্ধ এমন কোনো ফলাফল নেই যার উপর ওরা প্রতিষ্ঠিত।হক্কানী ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমত্য নেই।ওদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন করুন ওরা বলবে যে আলেমের কি প্রয়োজন আমরা তো হাদিসের উত্তম অনুসারী। আপনি পাল্টা প্রশ্নকরুন তাহলে মাযহাব কি কুরআন হাদিসের উপর প্রতিষ্ঠিত নয়? এটাতো জগতশ্রেষ্ঠ আলেমদের গবেষণালব্ধ ফলাফল।ওরা পাল্টা যুক্তি দিবে, আল্লাহর নবী বলছে আমাদের কুরআন হাদিস আঁকড়ে ধরতে।
উপরের আলোচনা থেকে এটা সুষ্পষ্ট যে মাযহাব একে অপরের সাংঘর্ষিক নয়।কুরআন হাদিসের গবেষণালব্ধ ফলাফল।
তো মাযহাব অনুসরণ করলে তো কুরআন হাদিস থেকে দূরে সরে যায় না।বরং সহজভাবে আঁকড়ে ধরা যায়। আহলে হাদিস নামধারীরা এভাবে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। উম্মতে মুহাম্মদী কে বিভক্ত করতে লিপ্ত। সুতরাং যার সুনির্দিষ্ট কোনো আলেম নেই, গবেষণালব্ধ ফলাফল নেই তা অনুসরণ করা অমূলক।

আহলে হাদিসেরা যুক্তি দিয়ে থাকেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) কুরআন হাদিস আঁকড়ে ধরে জীবনযাপন করতে বলেছেন।অথচ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেছেন :

আমি তোমাদের নিকট দু'টি বিষয় রেখে যাচ্ছি যা আঁকড়ে ধরলে তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না, ১. আল্লাহ্‌র কিতাব তথা কুরআন ২. রাসূলের সুন্নাহ।

লক্ষ্য করে দেখুন এখানে রাসূলের সুন্নাহ এর কথা বলেছে হাদীসের কথা বলা হয়নি।
শেষ করবো আহলে হাদিস নামধারীদের সৃষ্টি একটি বিতর্কিত বিষয় দিয়ে,

★ তারাবির নামাজ আটরাকাত নাকি বিশরাকাত?

- জামাতের সহিত তারাবির নামাজ চালু করেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা হযরত ওমর (র.)। তৎকালীন সময়ের জলীলে কদর সাহাবীরা সকলে বিশরাকাত জামাতের সহিত পড়েন। এরপরে হযরত উসমান (র.), হযরত আলী (র.) এর খিলাফত কালেও তা বিদ্যমান ছিলো।সকল তাবেঈ, তাবে তাবেঈন ও চার ইমাম সহ সকল যুগশ্রেষ্ঠ আলেমগণ বিশরাকাত আদায় করেন।এভাবে চৌদ্দশত হিজরী পর্যন্ত ওলামায়ে কেরাম কেউ এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেন নি।তারাবির নামাজের মূল উদ্দেশ্য হলো জামাতের সাথে কুরআন খতম করা।
কিন্তু আমাদের দেশে একশ্রেণির মানুষ আছে যারা আটরাকাত পড়ে বেরিয়ে যায়।
এতে তারাবির নামাজের মূল উদ্দেশ্য হাসিল হয় না। ওদেরকে জিজ্ঞেস করলে ওরা বলে সৌদি আরবের আরবরা পড়ে তাই ওনারাও আট রাকাত পড়ে। লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, কাবা শরীফে বিশরাকাত পড়ানো হয়।মসজিদে নববীতে বিশ রাকাত পড়ানো হয়। বড় মসজিদ গুলো তে বিশরাকাত চালু রয়েছে।যারা আটরাকাত পড়ে বেরিয়ে যায় স্পষ্টতঃ ওদের তারাবির নামাজের মূল উদ্দেশ্য হাসিল হয় না।

তারাবির নামাজ নিয়ে ১৪শত বছর কোনো বিতর্ক ফিৎনা ছিলো না। আট রাকাত বলার পর থেকে ফিৎনার উদ্ভব হয়।তাই আমাদের সকলের উচিত ফিৎনা থেকে বেঁচে থাকা।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) বলেন,
ফিৎনা থেকে ঘোড়ায় আরোহী ব্যক্তি হতে পদব্রজে চলমান ব্যক্তি, পদব্রজে চলমান ব্যক্তি হতে বসে থাকা ব্যক্তি নিরাপদ। সাহাবায়ে কেরাম প্রশ্ন করেন, হে আল্লাহর রাসূল! যদি কোনো ভাই অপর ভাইকে হত্যা করে তখন কি করণীয়? তিনি বলেন সে যেন চুপ থাকে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন।ফিৎনা থেকে বেঁচে থাকার তৌফিক দান করুন।

মাহমুদুল হাসান মিলহান

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.