নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেক কথার কিছু কথা

মালেক চৌধুরী

মালেক চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলাম কি এবং প্রকৃত ইসলামি জীবন _ ২

১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:৪৮

আলোচনা চলছিলো একজন মুসলিমের ইসলামি জীবন যাপন কেমন হবে তা নিয়ে।আল্লাহর প্রতি ঈমান ও রাসুলের প্রতি ঈমান(বিশ্বাস)তাঁকে ইসলামের পথে নিয়ে আসলো ঠিকই কিন্তু পরিপূর্ণ ঈমানদার হতে আরো কিছু বিষয় তাঁকে বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে।তাঁকে বিশ্বাস করতে হবে ‘কোরান’ আল্লাহর বাণি।কোরানে বর্নিত সকল কথা,সকল বিষয়,সকল আদেশ মহান আল্লাহর।কোরানের একটি শব্দ,অক্ষর,জের-জবর কেউ পরিবর্তন,সংযোজন করেনি বা কিয়ামত পর্যন্ত করতে পারবেনা।তাঁকে বিশ্বাস করতে হবে রাসুল (সঃ) সর্ব শেষ নবী ও রাসুল,তিনি পৃথিবীতে আল্লাহর প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন ইসলামের কল্যানময় পথে মানব জাতিকে আহবান করার জন্য।আরও বিশ্বাস করতে হবে মহাম্মদ (সঃ) –এর পূর্বে যে সকল নবী-রাসুল গণের আগমনের কথা কোরানে বর্ণিত হয়েছে তাঁদের উপর ।বিশ্বাস করতে হবে ফেরেস্তা গণের উপর,কিয়ামত দিন ও মৃত্যুর পর আবার সেদিনের জীবিত হয়ে শেষ বিচারের জন্য আল্লাহর সম্মুখে হাজীর হওয়ার উপর।বিশ্বাস করতে হবে ভালো-মন্ধ (তকদীর) আল্লাহর দ্বারা নির্ধারিত।আল্লাহ যে সকল গুণাবলী বা বিশেষণ নিজের সাথে যুক্ত করে তাঁর ক্ষমতা,শক্তি ও মহত্ব সম্পর্কে আমাদেরকে ধারনা দিয়েছেন সেসব গুণাবলীকে (ছিফত) মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা ও আস্থা রাখা।এখন তাকে আল্লাহর আদেশ মেনে চলতে হবে,তাই তাঁকে জানতে হবে আল্লাহর আদেশ-নিষেদ সম্পর্কে।প্রথম আদেশ ঈমান।দ্বিতীয় হলো নামাজ কায়েম করা,যেভাবে রাসুল(স) নিজে পড়েছেন বা পড়তে আদেশ করেছেন।তৃতীয় আদেশ হলো বৎসরে নির্দিষ্ট একমাস রোজা রাখা।চতুর্থ আদেশ, জীবণে (সাধ্যের মধ্যে থাকলে)একবার হজ্জ্ব পালন করা।পঞ্চম, ধনিদের জন্য বৎসরের শেষে যাকাত আদায় করা।আর আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুল কর্তৃক নিষিদ্ধ (হারাম) কাজ থেকে বিরত থাকা।এইতো ইসলাম ও ইসলামি জীবন।


একজন মুসলিম যখন পূর্ন ঈমানের সহিত নিজেকে আল্লাহর অধিনে সমর্পন কর লেন তখন আল্লাহ তাঁর কিছু প্রয়োজনীয় চাহিদার (যা আমরা মৌলিক অধিকার বা চাহিদা বলি) দায়িত্ব নিজের সরাসরি তত্বাবধানে নিয়ে নিলেন।আল্লাহ নিজেকে ‘রাজ্জাক’ (রিজেক বা খাদ্যদাতা) ঘোষণা দিয়ে বান্দার (ও সৃষ্টির সকল প্রাণির)খাদ্যের দায়-দায়িত্ব নিয়ে নিলেন;তবে তাকে খাদ্যের জন্য সন্ধান বা কর্ম করতে আদেশ করলেন এবং কর্ম করার পথ ও পন্থা শিখিয়ে দিলেন(ইলম বা শিক্ষা,হিকমা বা কৌশল,বয়ান বা বক্তব্য ইত্যাদি যাবতীয় কর্ম ও কলাকৌশল)।মানব জাতির খাদ্যের চাহিদা মিটানোই যথেষ্ট নয় আরও আনেক চাহিদা আছে তা আল্লাহ জানেন তাই শীত-গরমের উপযোগি বস্ত্রের কৌশল শিখালেন ও প্রাপ্তি নিশ্চিত করলেন ।এবার বাসস্থানের চাহিদা পূরণে আল্লাহর জমিকে সকলের আবাসভূমির জন্য যথেষ্ট ও পর্যাপ্ত করে দিলেন।চিকিৎসার চাহিদা মিটানোর জন্য চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতো জটিল বিষয় শিখিয়ে দিলেন এবং চিকিৎসা সরঞ্জাম ও ঔষদ সামগ্রি তৈরীর কাঁচামাল তাঁর আন্যান্য সৃষ্টির মাঝে থেকে আহরনের কৌশলও শিখিয়ে দিলেন।শিক্ষার চাহিদা মিটানোর দায়িত্ব তাঁর, তিনি যাকে যতোটুকু প্রয়োজন যে বিষয়ে প্রয়োজন ততোটুকু শিক্ষা বা জ্ঞান দান করেন।তিনি দুজন নারী-পুরুষের মধ্যে বিবাহ বন্ধনের মাধ্যমে মিলন ঘটান,তিনি আবার প্রয়োজনে বিচ্ছেদ ঘটান,আবার নতুন সম্পর্ক সৃষ্টি করেন।এসবই করেন আমাদের কল্যানের জন্য আমাদের প্রতি তাঁর দায়িত্ব পালনের ওয়াদা থেকে। তিনি স্বামি-স্ত্রীর সুখময় মিলনের মাধ্যমে আরেক নতুন জীবনের জন্ম দেন।তিনি আবার নির্দিষ্ট সময়ে মৃত্যু ঘটান।এগুলো হলো মানব জাতির প্রতি আল্লাহর নিজের করনীয় দায়িত্ব হিসেবে নিজেই নির্ধারন করেছেন।তবে তিনি মানব জাতিকেও কিছু দায়িত্ব আর্পণ করেছেন,কিছু কর্ম নিষিদ্ধ করেছেন এবং বলেছেন নিষিদ্ধ কাজ গুলো প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে মানুষের নিজেদের জন্যই অকল্যানের। একে অপরের ক্ষতি কারক কোনো কিছু করা থেকে বিরত থাকতে আদেশ করেছেন।নিজে নিজের ক্ষতি করাকেও নিষিদ্ধ করেছেন।জীনা(ধর্ষণ),চুরি-ডাকাতি,আন্যের সম্পদ হরন,হত্যা,অত্যাচার-নির্যাতন,মিথ্যা বলা,অন্যকে কোনো ভাবে হয়রান বা পেরেশান করা ,প্রতারণা ইত্যাদি আন্যায় কাজ গুলোকে ‘হারাম’ বা নিষিদ্ধ করেছেন এবং হারাম কাজ গুলো যারা করবে তাদের জন্য কঠিন শাস্থির ব্যবস্থার কথা বলেছেন।এই শাস্তি দুনিয়াতে হবে বিভিন্ন ভাবে যেমন,যে ‘নিয়ামত’(খা্দ্য,বাসস্থান,সন্তান,সম্মান,সম্পদ,সুস্থতা ইত্যাদি)গুলো দান করেছেন তা কেড়ে নিতে পারেন,কিংবা শারীরিক ও মানসিক পেরেশানি দিতে পারেন।তাছাড়া মৃত্যুর পরে কবরে ও কিয়ামতের বিচারের মাধ্যমে দুযখে নিক্ষেপের মাধ্যমে চুড়ান্ত শাস্থি প্রদান করবেন।আর যাঁরা আল্লাহর আদেশ-নিষেদ মেনে চলবেন তাঁদের জন্য দুনিয়াতে সুখ-শান্তি ও আখেরে বেহেস্তে প্রবেশের নিশ্চয়তা আল্লাহ দিয়েছেন।অনেক তর্ক প্রিয় লোক বলতে পারেন যে,আনেক পহরেজগার লোক বা নবী-রাসুলগন পর্যন্ত দুনিয়াতে দুঃখ-কষ্টে ছিলেন।সাধারণ দৃষ্টিতে কথা ঠিক কিন্তু তাঁরা কেনো অসুখি বা দুঃখ-কষ্টে ছিলেন সে বিষয়ে ইসলামে যুক্তিসঙ্গত জবাব আছে তবে তা আলোচনার উপযুক্ত স্থানে আলোচিত হবে ইনশাল্লাহ।

পূর্ববর্তী আলোচনায় একজন ঈমানদারের জীবন যাপনের মৌলিক চাহিদা গুলোর বিষয় আল্লাহর নিশ্চয়তা প্রদানের কথা ও বান্দার প্রতি আল্লাহর অর্পিত দায়িত্বের কথা কিছুটা আলোচিত হয়েছে;কিন্তু বিষয়টি পূর্ণাঙ্গ ভাবে আলোচনা এই সংক্ষিপ্ত পরিসরে প্রায় অসম্ভব তথাপি আলোচনা এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে এবং বিষয়টির গুরুত্ব বিবেচণায় নিয়ে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত কাঠামোর মধ্যেই মৌলিক ও প্রধান জরুরী দিক গুলো উপস্থাপনের চেষ্টা করছি।

ঈমানদার বান্দা বা মুমিন ব্যক্তির মৌলিক চাহিদা অর্থাৎ ‘অন্ন’ ‘বস্ত্র’ ‘বাসস্থান’ ‘চিকিৎসা’ ‘শিক্ষা’ ‘নিরাপত্তা’ ‘বিবাহ’ ইত্যাদি যাবতীয় প্রয়োজনীয় দায়-দায়িত্ব আল্লাহ গ্রহণ করলেন এবং বিনিময়ে তাকে কিছু দায়িত্ব পালনের আদেশ করলেন।আদেশ গুলোর মধ্যে প্রথমটি আল্লাহর উপর ও তাঁর একাত্বতা,তাঁর অলৌকিকত্বতার উপর বিশ্বাস স্থাপন,তাঁর সর্ব শেষ রাসুল মহাম্মদ(স) সহ সকল নবী-রাসুলগণের উপর বিশ্বাস, ফেরেস্তা গণের উপর বিশ্বাস,কোরান তাঁর বাণি এই বিশ্বাস,ভাল-মন্ধ আল্লাহর দ্বারা নির্ধারিত এই বিশ্বাস,জন্ম-মৃত্যু তাঁর এখতিয়ারভূক্ত এই বিশ্বাস,কিয়ামত দিবস ও শেষ বিচারের উপর বিশ্বাস,বেহেস্ত-দুয়খের উপর বিশ্বাস এবং জীবিকা সহ সকল পার্থিব ও মানবীয় চাহিদা নিবারনের দায়িত্ব আল্লাহর এই বিশ্বাসে আটল থেকে নামাজ আদায় করা,রোযা রাখা,জীবনে একবার হজ্জ করা ,ধনি ব্যক্তিরা যাকাত প্রদান করা,আর হারাম-হালাল চিনে চলা।

এখন কথা হলো, যে কাজ বা দায়িত্ব আল্লাহ বান্দার উপর ন্যস্ত করলেন এবং এই দ্বায়িত্ব পালনে আবহেলা করলে বা আমান্য করলে এতো কঠিন শাস্তি প্রদানের কথা বলে সতর্ক করে দিলেন এই কাজ গুলো আল্লাহর জন্য কি এমন জরুরী?আমরাতো বলিনি আল্লাহ আমাদেরকে দুনিয়াতে পাঠাও,তিনিই পাঠালেন এবং তিনিই আমাদের ভাগ্য লিখলেন,তিনিই ভালো-মন্ধ সব কাজ করালেন আবার তিনিই শাস্তি দেবেন?ঠিক আছে আমরা তাঁর সকল আদেশ মানলাম,সব নিষেদ মেনে চললাম তবু কেনো পৃথিবীতে এতো কষ্ট পাই?যারা তাঁকে অবিশ্বাস করে,তাঁর আদেশ-নিষেদ অমান্য করে তারাতো আমাদের চেয়ে সুখেই আছে!যে শিশু বিকলাঙ্গ হয়ে জন্ম নিলো কেনো তার ভাগ্য এমন করে লিখলেন?যে শিশু এখনও কোনো পাপ করলোনা সে শাস্তি পায় কেনো?কেনো এক জীবের খাদ্য হিসেবে আরেক জীবকে নির্ধারন করলেন?কেনো ছোট মাছ বড় মাছের খাদ্য করলেন?মানুষ মানুষের প্রতি জুলুম করার শক্তি তাঁর কাছ থেকে পায় কেন?কেনো ঈমানদার মোসলমানগণ কাফেরদের দ্বারা নির্যাতিত হয়,আল্লাহ কেনো তাঁদেরকে রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন না?কেনো জ্ঞান-বিজ্ঞানে কাফেরদেরকে মোসল্মানদের চেয়ে অধিক অগ্রসরমান করলেন?জীহাদের মতো সাংঘর্সিক ও হিংসাত্মক বিষয় মোমিনদের জন্য আদেশ করলেন? যেহেতু হেদায়েতের ক্ষমতা তাঁর তবে কানো তিনি সবাইকে হেদায়েত দান করেন না?তাঁর সৃষ্টির সব আয়োজন যেন মানব জাতি বা পৃথিবীবাসিদেরকে ঘিরে তাহলে মহাজাগতিক আন্যান্য গ্রহ-নক্ষত্র ইত্যাদি সৃষ্টির কি প্রয়োজন ছিলো?এতো বড়,এতো বিচিত্র,এতো সুন্দর এই মহাজগতের ধ্বংসের কি প্রয়োজন?অন্যান্য জীবের মত মানব জাতির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে হিসাব-নিকাশ শেষ করে দিলে কি এমন অসুবিধা ছিলো?আল্লাহ সর্ব শক্তিমান এবং সকল শক্তির উৎস কিন্তু তাঁর এই মহা শক্তির উৎস কি? ---এই সমস্ত প্রশ্নের জবাব ঈমানদার মোমিনদের জন্য হয়তো জরুরী নয়,কিন্তু তথাকথিত প্রগতিশীলদের জন্য জরুরী,নাস্তিকদের জন্য জরুরী,যারা ইসলামকে প্রাচীণ বা সেকেলে মনে করেন তাদের জন্য জরুরী,যারা ইসলামি শিক্ষিতদেরকে অশিক্ষিত মনে করেন তাদের জন্য জরুরী,যারা তর্ক করতে পছন্দ করেন তাদের জন্য জরুরী এবং ঈমান্দারদের ঈমান বা বিশ্বাসকে আরও শক্ত ও দৃঢ় করার জন্য জররী।আর এই সমস্ত সকল প্রশ্নের উত্তর মহান আল্লাহ তাঁর পবীত্র বাণি এবং তাঁর রাসুলের মাধ্যমে দিয়েছেন যা পরবর্তী আলোচনায় উপস্থাপনের আশা করছি,যদি মহা জ্ঞানি আল্লাহ আমাকে সেই জ্ঞান দান করেন,সেই তৌফিক দান করেন ইনশাআল্লাহ। ( চলবে )

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.