নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

https://mamunrashid.com [Stargazer & Ropestretcher : বাংলা ভাষায় গণিত ও বিজ্ঞান সম্ভার]

এস এম মামুন অর রশীদ

https://mamunrashid.com

এস এম মামুন অর রশীদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শূন্য কেন গোল

২২ শে জুলাই, ২০১৭ ভোর ৪:০৯

শূন্য কেন গোল, মাইনাসে মাইনাসে কেন প্লাস, গণিত মানুষের উদ্ভাবন নাকি উদ্ঘাটন—শীতের দিনে মা-বাবা'র পাশে বসে প্রাণোচ্ছল কত প্রশ্ন আমাদের ছোট গণিতানুরাগীদের! তাদের জন্য এই প্রয়াস, শূন্যের আকৃতির সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

স্থানীয়মানভিত্তিক সংখ্যাপদ্ধতি (উদাহরণস্বরূপ, ১ মানে এক; ১১ মানে এক দশ এক বা এগার; ১০১ মানে এক শত, কোন দশ নেই, এক তথা এক শত এক) সর্বপ্রথম উদ্ভাবন করে প্রাচীন মেসোপটেমিয়া’র (বর্তমান ইরাক) সুমেরীয়গণ, আজ থেকে প্রায় ৫০০০ বছর আগে। তবে আমাদের ১, ২, ৩-এর মতো অঙ্কপ্রতীক ছিল না তাদের। মাত্র দুটি চিহ্ন ব্যবহার করত তারা: Y-আকৃতির ১ ও কোণ আকৃতির ১০:

উত্তর থেকে আসা ব্যাবিলনীয়রা সুমেরীয় গণিত গ্রহণ করে এগিয়ে নিয়ে যায় একে। মনে করো, মারী’র রাজা যিমরিলিম ব্যাবিলনের রাজা হাম্মুরাবিকে এক হাজার দুই শত পঁয়ত্রিশটি স্বর্ণমুদ্রা উপহার দিল। হাম্মুরাবির হিসেবরক্ষকগণ রাজকোষের সম্পদ হিসেবে সংখ্যাটিকে লিখত:

সংখ্যা নিয়ে কাজ করতে করতে ব্যাবিলনীয়রা একসময় দেখল কিছু স্থানে কোনো অঙ্ক রাখা যায় না। ধরো, লাগাশের ব্যবসায়ী দুররিমুশ তার মেয়ে আহুনাতুমের জন্য উরুক নগরী থেকে একটি জামা কিনল যার দাম একশত পাঁচ ব্যাবিলনীয় মুদ্রা। দুররিমুশ একশত ব্যাবিলনীয় মুদ্রার একটি টঙ্কদণ্ড এবং এক ব্যাবিলনীয় মুদ্রার পাঁচটি টঙ্কদণ্ড দিয়ে চলে গেল। বিক্রেতা তার খাতায় কীভাবে অঙ্কে লিখবে লেনদেনটির কথা? আমরা এখন একটানে একে লিখে ফেলব ১০৫, কিন্তু ব্যাবিলনীয়দের তো শূন্যের কোনো প্রতীক নেই। এ সমস্যা দূর করার জন্য ব্যাবিলনীয়রা শূন্যের জায়গাটি, অর্থাৎ যার জন্য কোনো মুদ্রা হিসেব করতে হবে না, ফাঁকা রাখতে লাগল, এভাবে

কিন্তু এতে শুরু হলো নতুন সমস্যা—পরে হিসেবটি যারা পড়ত, কেউ ভাবত সংখ্যাটি ১০৫, কেউ ১৫, কেউ বা আবার ভাবত ১০০৫। এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য ব্যাবিলনীয়রা ফাঁকা জায়গার পরিবর্তে দুটি ছোট, তীর্যক গদার মত চিহ্ণ ব্যবহার করা শুরু করল:

কীশ নগরের লেখক বেল-বান-আপলু (৭০০ খ্রি.পূ.) তিনটি হুকের মাধ্যমে শূন্য লিখতেন। এভাবেই শূন্য প্রতীকের প্রথম প্রচলন ঘটে।

ওদিকে মধ্যআমেরিকায়, প্রথমে ওলমেক, পরে মায়া’রা ২০-ভিত্তিক চমৎকার একটি সংখ্যাব্যবস্হা গড়ে তোলে। ‌ঝিনুকের খোল আকৃতির শূন্য, বিন্দু আকৃতির এক, এবং ক্ষুদ্র রেখাংশ আকৃতির পাঁচ—এই তিনটি মাত্র অঙ্ক নিয়ে অনেক বিশাল বিশাল সংখ্যা লিখে ফেলত তারা। যেমন, মায়াদের ৫১০ ছিল এরকম:

আজকে আমরা ১০-ভিত্তিক চমৎকার যে সংখ্যাপদ্ধতি ব্যবহার করি, তার উদ্ভাবন ঘটে প্রাচীন ভারতে, আনুমানিক ষষ্ঠ খ্রিস্টাব্দে। এর আগেও ভারতে সংখ্যাপদ্ধতি ছিল, তবে তা স্থানীয়মানভিত্তিক ছিল না। আমাদের উপমহাদেশ আয়তনে অনেক বড় হওয়ায় বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন সংখ্যাপদ্ধতি ও প্রতীক ব্যবহৃত হতো, যে পার্থক্য এখনও দৃশ্যমান।

ব্যাবিলনীয়দের মতো ভারতীয়রা শূন্যের জায়গা কখনো ফাঁকা রাখত, কখনো সেখানে একটি ফোঁটা বসাত, কখনও বা তাকে বর্ণ বা শব্দের সাহায্যে বলত—যেমন, আর্যভট্ট একে বলতেন, ‘খ’। তবে ১০-ভিত্তিক সংখ্যায় শূন্যের অঙ্কপ্রতীক ব্যবহারের সবচেয়ে প্রাচীন ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি হচ্ছে ৮৭৬ খ্রিস্টাব্দের। ঝাঁসির রাণী লক্ষ্মী বাঈয়ের শহর গোয়ালিয়রে সে বছর চতুর্ভুজ নামে একটি মন্দির নির্মিত হয়, যার গায়ে এক জায়গায় লেখা ২৭০ হস্ত।

আরব-পারস্যের গণিতবিদগণ ভারতীয় সংখ্যাপদ্ধতি গ্রহণ করেন এবং এর অনেক উন্নতি সাধন করেন। তাঁরা ভগ্নাংশ ও দশমিক বিন্দুর প্রচলন করেন এবং শূন্যকে পরিপূর্ণ সংজ্ঞায়িত করেন। ১০-ভিত্তিক পদ্ধতির পূর্বে আরবগণ অঙ্কপ্রতীক হিসেবে আরবি ভাষার বর্ণ ব্যবহার করত এবং পরে ভারতীয় পদ্ধতি গ্রহণ করলেও প্রতীকগুলো নিজেদের বর্ণমালা থেকেই নেন। আল-মাগরেব (উত্তর আফ্রিকা) এবং আল-আন্দালুসে (স্পেন) এ প্রতীকগুলো গুবারি সংখ্যাপ্রতীক (Ghubari Numeral) হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

স্পেনের কর্ডোভা থেকে পোপ দ্বিতীয় সিলভেস্টার (৯৯৯-১০০৩ খ্রি.) ঘুবারি প্রতীকগুলো ইউরোপে নিয়ে যান। পরে বিভিন্ন বণিক, বিশেষ করে লিউনার্দো ফিবোনাচ্চির (জন্ম ১১৭০ খ্রি.) মাধ্যমে প্রতীকগুলো ছড়িয়ে পড়ে, এবং কিছু পরিবর্তনের মাধ্যমে আধুনিক 1, 2, 3, ..., 9 প্রতীকগুলো গড়ে উঠে। এ জন্য বর্তমানে এরা Arabic Numeral নামে সমধিক পরিচিত।

তবে শূন্য এখন কেন গোল, এ ব্যাপারে এখনও সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ আমাদের হাতে নেই। হতে পারে, বিন্দু (.) লিখলে এটি চোখ এড়িয়ে যেতে পারে বা সময়ের সাথে তাড়াতাড়ি মুছে যেতে পারে; তাই একটু বড় করে ফাঁকা রাখা। আরেকটি তত্ত্ব হচ্ছে, প্রাচীন আরবি ভাষায় শূন্যতা বা খালি অবস্থাকে বলা হতো সিফর (صفر), এবং পরবর্তীতে অঙ্ক-শূন্যের জন্য ঘুবারি প্রতীকে শব্দটির প্রথম বর্ণ ছোয়াদ (ص)-এর গোলাকার অংশটুকু নেয়া হয়। সিফর থেকেই বর্তমান ইংরেজি শব্দ সাইফার ও জিরো'র উৎপত্তি। কেউ আবার দার্শনিকভাবে বলেন, বৃত্ত বরাবর ঘুরতে থাকলে শূন্যতে এসেই শেষ হয় যাত্রা, শূন্যই আদি, শূন্যই অনন্ত, এ কারণে গোল।

তোমরা বড় হয়ে গবেষণার মাধ্যমে হয়তো একদিন আসল কারণটি বের করে ফেলবে। তার আগ পর্যন্ত এটুকু কেবল আমরা সুনির্দিষ্টভাবে বলতে পারি, শূন্য আসলে সবসময় গোল ছিল না।
________________
লেখকের প্রকাশিতব্য গ্রন্থ থেকে সংক্ষেপিত

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.