নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরব্য উপন্যাসের সেই মরুচারী যে সত্যান্বেষণে জীবন উৎসর্গ করে। সেই উপন্যাসের চরিত্র নিজের ভিতরে লালন পালন ও প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে এই পথচলা।

মামুন রেজওয়ান

মামুন রেজওয়ান › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক দু:খী মায়ের সংগ্রাম (আংশিক সত্য)

১২ ই জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:৫৮

(আমরা মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা সব সময় চেষ্টা করি মা বাবার স্বাদ আহ্লাদ পুরন করতে। এরকমই এক সংগ্রামী মায়ের স্বপ্ন পুরন হওয়ার গল্প।)
.
ছেলেটা খুবই গরীব পরিবারের সন্তান যে পরিবারকে নিম্নবিত্ত না বলে বিত্তহীন বললেই বেশী মানানসই হবে। একটা বিত্তহীন পরিবারের ছেলের জীবন যেরকম হয় তার জীবনও ঠিক একই রকম তবে পার্থক্য একটাই। এই ছেলেটা মোটামুটি রকমের একটা নামী স্কুলে পড়াশোনা করে। যেখানে অধিকাংশ বিত্তহীন পরিবারের সন্তানরা পেটের তাগিদে টোকাই হয়ে যায় বা অন্য কাজে লেগে পড়ে।
.
ছেলেটার বাবা একটা সময় ঢাকা শহরে রিক্সা চালাত। কিন্তু ভাগ্যের ফেরে কোন এক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এরপর থেকে ছেলেটার মা সংসারের হাল ধরেন। দুর্বল মাঝি প্রথম হাল ধরলে নৌকার অবস্থা যেরকম হয় অনেকটা সেরকম দোদুল্যমান অবস্থা হয় সংসারের। কিন্তু মা বুঝতে পারেন ছেলেকে মানুষ করতে হবে যেকোন মুল্যে। সেদিন থেকেই মা ঝাপিয়ে পড়েন এই কঠিন অনুর্বর পৃথিবীতে ছেলেকে মানুষ করার লক্ষ্যে।
.
মা অনেক কষ্টে অর্ডারের কাজ নেন একটা শাড়ির শো-রুমে। ভাইদের কাছে পাওয়া কিছু সম্পত্তি বিক্রি করে একটা তাতের মেশিন কিনেন। সেই মেশিনে সুন্দর সুন্দর জামদানী শাড়ি তৈরি করে শাড়ির শো-রুমটাতে দিয়ে আসেন। বাইরের গেট থেকেই দিয়ে আসেন। পরনে শতছিন্ন শাড়ি নিয়ে কি এত দামী শো-রুমে যাওয়া যায়? দরজার গ্লাসে হাত দিলেই সেলস গার্ল আর সেলস ম্যানগুলো কিরকম দৃষ্টিতে তাকায়।যেন ড্রেনের পানির ময়লা তাদের শো-রুমের গ্লাসে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই শাড়ি তৈরি করতে করতে কতবার ইচ্ছা হয়েছে এরকম শাড়ি একটা রেখে দেওয়ার। কিন্তু উপায় কই? এর একটা শাড়ির দাম তার পুরো মাসের সংসার খরচ।
.
ছেলেকে মানুষ করতে হলে যে এরকম শাড়ি পরার ইচ্ছাকে মাটিচাপা দিতে হবে। মা কঠোর হাড় ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দিন কে দিন। এত পরিশ্রম করে তৈরি করা শাড়ি থেকে খুব কম টাকাই পান। মালিক এর দাম ওর দাম এরকম করে করে অনেক টাকা কেটে রাখেন একটা শাড়ি থেকে।
এই সামান্য পরিমান টাকা নিয়ে একবেলা খেয়ে না খেয়ে ছেলেকে মানুষ করে চলেছেন এই মা।
.
১৫ বছর পর.......
ছেলে আজকে টাই কোট পড়ে এসেছে। মাকে ঘুরতে নিয়ে যাবে বলে।
আজ ছেলেটা চাকরীতে জয়েন করেই মাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। এখানে ওখানে ঘোরাঘুরি, খাওয়া দাওয়া শেষে মাকে নিয়ে এসেছে একটা শাড়ির শো-রুমে। মাতো লজ্জাই মরে যাচ্ছেন এটা যে সেই শো-রুম যে শো-রুমে তিনি কিছুদিন আগেও শাড়ি সাপ্লাই দিতেন।
সেলস গার্লগুলো মায়ের মলিন শাড়ির দিকে তাকিয়ে কেমন বাঁকা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সেই আগের মত যেন কীট দেখছে।
.
ছেলে হঠাৎ বলে উঠল মা দেখতো কোন শাড়ি তোমার পছন্দ হয়? মা খুব ভয়ে ভয়ে সাজিয়ে রাখা শাড়িগুলো দেখতে থাকে। খুব কমদামী শাড়ির স্ট্যান্ডগুলোর দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। হঠাৎ তার নিজের হাতে তৈরি একটা শাড়ি নজরে পড়ে। কিন্তু দাম যে আকাশ ছোঁয়া। মাকে সেই দামী শাড়ির দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে সেলস ম্যান আর সেলস গার্ল নিরবে হাসাহাসি করতে থাকে।
.
এটা দৃষ্টি এড়ায় না তার ছেলের। মায়ের তাকিয়ে থাকা শাড়িটা নিজ হাতে নিয়ে এসে ক্যাস কাউন্টারের দিকে হাঁটা দেয় সে। মায়ের গায়ে শাড়িটা রেখে মাকে জিজ্ঞাস করে "পছন্দ হয়েছে তো মা?" দেখেছ তোমাকে কত সুন্দর মানিয়েছে। সেলস গার্লটাকে ডাক দিয়ে শাড়িটা প্যাক করে দিতে বলে।
ছেলেকে মানুষ করতে পেরেছেন এই গর্বে মায়ের চোখ চকচক করে ওঠে। মা তখন ছেলেকে জড়িয়ে ধরেন আর চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন বাবা আমার শাড়ি চাই না তুই যে আমাকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচিয়েছিস এতেই আমি অনেক খুশী।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.