নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনসুর আলী অনেকক্ষণ ধরে আখতারুজ্জামান শপিং কপ্লেক্সের গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছেন। তার ছেলে কি জন্য যেন তাকে ডেকেছে এই বিশাল মার্কেটে। তিনি এদিক ওদিক তাকিয়ে ছেলেকে খুঁজছেন। কিন্তু ছেলের কোন নাম গন্ধ নেই। ভিতরে যে জাঁকজমকপূর্ণ অবস্থা তাতে নিজের এই ময়লা পোশাক নিয়ে ঢুকতেও ভয় করছে।
.
প্রায় অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও যখন ছেলের দেখা পেলেন না তখন মনসুর সাহেব একাই শপিং কমপ্লেক্সের ভিতরে ঢুকে গেলেন। ঢুকেই দেখতে পেলেন চলমান সিঁড়ি। তিনি আগে কখনও এধরনের সিঁড়ি দেখেন নি। দুই তলায় যাবেন চিন্তা করছেন কিন্তু সিঁড়িতে উঠতে আবার ভয়ও পাচ্ছেন।
অনেক সাহস সঞ্চয় করে তিনি সিঁড়ির ধাপে পা দিলেন। আর পা দিতেই পিছলে পড়ার মত অবস্থা হল । প্রায় পিছনের দিকে পড়ে যাবেন এই অবস্থায় কে একজন তাকে পিছন থেকে শক্ত করে ধরে ফেলল।
.
পিছনে তাকাতেই নিজের ছেলেকে দেখতে পেলেন। তার ছেলে শক্ত করে তার হাত ধরে রেখেছে যাতে তিনি পড়ে না যান। হঠাৎ করে মনসুর সাহেবের অনেক আগের কথা মনে পড়ে গেল। তার ছেলে যখন ছোট ছিল তখন একবার রিক্সা থেকে পড়ে গিয়ে মাথা ফাঁটিয়ে ফেলেছিল। সেই থেকে মনসুর সাহেব যখনই রিক্সায় ছেলেকে নিয়ে উঠতেন তখনই শক্ত করে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে রাখতেন। এমনকি রিক্সা থেকে নামার আগ পর্যন্ত তাকে ধরে রাখতেন।
.
মনসুর সাহেব নিরবে চোখের কোনে জমা হওয়া পানি মুছে ফেললেন। তার ছেলে আজ কত বড় হয়ে গেছে ?
--একি বাবা তোমার চোখে কি হয়েছে, চোখে পানি কেন?
--আরে নাহ চোখে কি হবে? কিছু পড়ল মনে হয়।
--কই দেখি দেখি।
--এইত ঠিক হয়ে গেছে। এবার বল কেন ডেকেছিস?
--বাবা আমি আজ বেতন পেয়েছি। তাই চিন্তা করলাম দুই বাপ ব্যাটা মিলে প্রচুর খাওয়া দাওয়া, ঘোরাঘুরি আর কেনাকাটা করব।
--যাহ আমার কি আর সেই বয়স আছে? আমিতো এখন বুড়া হয়ে গেছি। --তাতে কি আমি আছি না? তোমাকে কাঁধে করে নিয়ে ঘুরব। চল প্রথমে খাওয়া দাওয়া।
.
মনসুর আলী আর তার ছেলে সারাদিন মার্কেটে ঘোরাঘুরি করল। ছেলে বাবাকে একটু খুব দামী ফতুয়া কিনে দিল। আর সারাটা সময় ছেলেটা বকবক করতেই থাকল। রিক্সায় করে বাড়ি ফেরার সময় ছেলে শক্ত করে তার বাবার হাত ধরে থাকল। মনসুর সাহেব ছেলের হাসি হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে চিন্তা করছেন উপযুক্ত সন্তান বোধহয় একেই বলে। যে সন্তান বাবা মায়ের হাসির মাঝেই নিজের হাসি খুঁজে পায়।
©somewhere in net ltd.