নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মাটির বাঙালী আর ইটের বাঙালীর মধ্যে বিশাল ফারাক। দুইটা ঘটনা।
১ম ঘটনা:- আমি আর আমার ফ্রেন্ড চট্টগ্রাম জি ই সির Handi বাংলাতে গিয়েছি হাইদ্রাবাদ বিরিয়ানি খেতে। সেখানে গিয়ে দেখলাম ম্যাকি ফর্মালিটির পশরা সাজিয়ে বসে আছে সবাই। এই পরিবেশ থেকে কিছু ধারনা শেয়ার করি। প্রথমত সেখানে গিয়ে চুপ করে বসে থাকতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ওয়েটার মেন্যু কার্ড নিয়ে না আসে।
খেতে হবে চামচ দিয়ে। আর খাওয়ার সময় প্রচন্ড আওয়াজ তুলতে হবে চামচ দিয়ে কাঁচের প্লেটে। মোটেও হাত দিয়ে খাওয়া যাবে না এতে করে কিছু ভাত প্লেটে থেকে যাক কিংবা কিছু মাংশ হাড়ের সাথে লেগে থাকুক না কেন? যদি হাত ব্যবহার করেন নির্ঘাত আপনার নাম খ্যাতের তালিকায় চলে যাবে।
.
খাওয়া শেষ হলে বিলের সাথে মোটা অংকের টিপস দিতে হবে। যত বেশী টাকার গরম দেখাতে চাইবেন তত বেশী টিপস দিবেন। আপনার টিপস পেয়ে ওয়েটার খুব সুন্দর হাসি দিয়ে "থ্যাংক ইউ স্যার" বলবে। আপনাকেও সুন্দর করে ওয়েলকাম বলতে হবে। আপনার টিপসের পরিমান যত হবে ওয়েটার এর "থ্যাংক ইউ স্যার" বলার সময় মুখের হাসিটাও সে অনুপাতে বাড়বে বা কমবে।
.
২য় ঘটনা :- আমি আর আমার চাচাত ভাই দুপুরে খাওয়ার জন্য হোটেল ছালাদিয়ায় (প্রবেশ পথ ছালা /চটের বস্তা দিয়ে ঢাকা) গেলাম। আমার চাচাত ভাই হোটেলে ঢুকেই হাকডাক দেওয়া শুরু করল।
--মামা কই জলদি গরম গরম ভাত লাগান।
--আইছেন কিছুক্ষণ বন, বইয়া দম লন।
--বসার সময় নাই জলদি ভাত লাগান।
এভাবে হাকডাক করার মাধ্যমে মামা ভাপ ওঠা সাদা ভাত, ডালের বাটি, আর সবজির বাটিটা টেবিলের উপর দিয়ে গেল। আমার চাচাত ভাই আর আমি আয়েশ করে চেয়ারের উপর পা তুলে খাচ্ছি এই সময় মামা চিৎকার দিয়ে বলল মামারা কাঁচা মরিচ দিমু নি খাইয়া মজা পাইবেন। আমরা কথা বলার আগেই দেখলাম মামা মরিচ নিয়ে হাজির। আমরাও মরিচ পেয়ে একেবারে চেটেপুটে প্লেটের সব ভাত সাবার করলাম।
.
বিল বলল মামা। বিলের ব্যাপারে সন্তুষ্ট হতে পারলাম না তাই ভাত, ডাল, সবজি কোনটার দাম কত ধরেছে পুরোপুরি হিসাব নিলাম। বিল পে করে যাওয়ার সময় মামার কাছে গিয়ে বললাম মামা খাবারটা খুব ভাল হয়েছে। কথাটা বলার সাথে সাথে মামার মুখটা হাসিতে ভরে উঠল। যে হাসি ছিল সম্পূর্ণ ম্যাকি মুক্ত হাসি।
মামা হাসি হাসি মুখেই বলল এরপরের বার আইলেও কিন্তু এহান থেইক্কা খাইয়া যাইবেন।
.
প্রথম ইনসিডেন্টের সাথে বড় হওয়া প্রজন্মকেই আমরা স্মার্ট আর আধুনিক বলে থাকি। এই প্রজন্মকেই এগিয়ে রাখি আমরা সর্বক্ষেত্রে কারন তারা টাকা দিয়ে মানুষের ভাল ব্যবহার কিনতে পারে। তারা নিজের ওয়েট বজায় রাখার জন্য প্লেটে কিছু ভাত অপচয় করতে পারে।
.
কিন্তু বড়ই আফসোস তারা হোটেলে কাজ করা এই মামাদের ভালবাসা থেকে বঞ্চিত। আরে শান্তিমত হাত চেটে খাওয়া শেষ করে লম্বা একটা তৃপ্তির ঢেকুর না তুলতে পারলে কিসের বাঙালী? ঘামে ভেজা মামাদের কানের কাছে মুখ নিয়ে যদি বলতে না পারা যায় যে, মামা ডালটা জোস হইছে তাহলে কিসের বাঙালী? খাদ্য অপচয় করা যদি হয় আধুনিকতা, বক্সিসের বিনিময়ে যদি কেনা হয় ভালবাসা তাহলে আমি আধুনিক হতে চাই না।
২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৫৫
মামুন রেজওয়ান বলেছেন: ভালবাসার কাঙাল বাংগালী তো "ভালবেসে ভাল থাকিয়েন " কথাটাতেই সব কিছু পাওয়া হয়ে যায়। যাই হোক ভাল আছেন তো চাঁদগাজী ভাই?
২| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ৮:৩৫
রক্তিম দিগন্ত বলেছেন:
অভিজাত রেস্তোরাগুলোর নিয়মকানুন কিছুটা বাহুল্যবটে - তবে আমার মনে হয় সেগুলোর দরকারও আছে। কিছুটা ম্যানার শিখায় তো কোন বাঁধা নেই। যখন ম্যানারের থেকে ব্যাপারটা আধুনিকায়নে পরিণত হবে - তখন সেটার সমালোচনা করা যায়।
আর, রেস্তোরাগুলোর মাঝে আপনি কোনটায় যাবেন - সেটা আপনার উপর নির্ভর করে। ভাতের ক্ষুধা নিয়ে আপনি অভিজাত জায়গায় গেলে সেটাকে তো ঠিক মানানসই বলা যাবে না। অভিজাত রেস্তোরা যতই উন্নত হোক - ভাতের ক্ষুধা তারা মিটাতে পারবে না। এমনকী সুস্বাদু খাবারও আপনার কাছে স্বাদের মনে হবে না। সে ক্ষেত্রে তাদের সমালোচনা করে তো লাভ নেই।
হ্যাঁ - এটা ঠিক সাধারণ মানের রেস্তোরাগুলোয় বসার যে তৃপ্তিটা আছে, সেটা অভিজাতগুলোয় নেই।
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৩২
মামুন রেজওয়ান বলেছেন: আমার সমস্যা আসলে আধুনিকতায় বড় হওয়া নিয়ে নয়। আমার সমস্যা আধুনিকতায় বড় হওয়া প্রজন্ম যারা টাকাকে সব কিছুর মানদণ্ড হিসাবে বিচার করে। আর আপনি যথার্থই বলেছেন "ভাতের ক্ষুধা কখনও অভিজাত রেস্তোরাঁগুলো মিটাতে পারে না। " কিন্তু গ্রামীন বাংলার অভ্যাস দেখলে সেইসব রেস্তোরাঁর ওয়েটারদের আঁড়চোখে তাকিয়ে মুচকি হাসাটা আমি প্রচন্ডভাবে ঘৃণা করি। সাথে টাকার পরিমাণের উপর নির্ভর করে নিজের ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ।
৩| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:২২
রক বেনন বলেছেন: আমিতো অভিজাত রেস্তোরাতেও হাড্ডি গুড্ডি আয়েশ করে চিবিয়ে চিবিয়ে খাই। কাঁটা চামচের ধার ও ধারি না। খেতে গিয়েছি আর নিজের পকেটের টাকায় খাচ্ছি। মন ভরে আর পেট ভরে খাব। কুরমুর শব্দে হাড্ডি চিবুতে কি যে মজা!!!!
২৪ শে অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৫:৫৭
মামুন রেজওয়ান বলেছেন: আমিও ঠিক এই জিনিসটাই পছন্দ করি। নিজের ওয়েট বজায় রাখার জন্য কাটা চামচ দিয়ে ঠুংঠাং আওয়াজ তুলে আধপেটা খেয়ে বেরিয়ে আসার পক্ষে আমি নেই।
৪| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৫
সায়েদা সোহেলী বলেছেন: রক বেনন বলেছেন: আমিতো অভিজাত রেস্তোরাতেও হাড্ডি গুড্ডি আয়েশ করে চিবিয়ে চিবিয়ে খাই। কাঁটা চামচের ধার ও ধারি না। খেতে গিয়েছি আর নিজের পকেটের টাকায় খাচ্ছি। মন ভরে আর পেট ভরে খাব। কুরমুর শব্দে হাড্ডি চিবুতে কি যে মজা!!!!
১৮ ই নভেম্বর, ২০১৬ সকাল ১১:০৭
মামুন রেজওয়ান বলেছেন: আসলেই অসাধারন এরকম মানুষগুলো ,এদের দেখলেও মনে তৃপ্তি আসে। অন্তত টাকাগুলো অপচয় করতে নারাজ এরা। আমিও রক্তিম দিগন্তের সাথে একমত।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১০:৪৫
চাঁদগাজী বলেছেন:
সস্তা হাততালি চাচ্ছেন? ওকে, হাততালি দিলাম