নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডায়েরীটা খুব বড় হয়ে যাচ্ছে নিজের কথাতেই। তবে ডায়েরী বলতে সাধারনত আমরা এমন একটা মলাট বদ্ধ খাতাকে বুঝি যেটাতে নিজের কথাই লেখা থাকে। কিন্তু আমারটা যেহেতু উন্মুক্ত ডায়েরী তাই বিভিন্ন মহান মানুষের কথাও থাকবে এতে।
আজকে সেরকম একটা মানুষের ঘটনা থাকবে। মানুষটার নাম আমি বলব না। তবে লেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য শামীম নামটা ব্যবহার করব।
.
শামীম আর রাশেদ দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এদের বন্ধুত্ব একই এলাকায় বসবাসের দরুন সৃষ্টি হয়েছে। শামীম একটা মাদ্রাসায় পড়ে এবং রাশেদ একটা স্কুলে তবে দুজনেই একই শ্রেনীতে। তাদের বন্ধুত্ব তৈরী হওয়ার একটা ঘটনা আছে। একদিন শামীম আসরের নামায পড়তে মসজিদে যাচ্ছে তখন হঠাৎ রাশেদকে দেখতে পেল। রাশেদ তখন তার কিছু বন্ধুর সাথে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ধুমপান করছিল। শামীম রাশেদের দিকে এগিয়ে গেল এবং সালাম দিয়ে বলল
--একটু এদিকে আসবেন?
--হুম। কি বলবেন বলেন।
--আমার নাম শামীম।
--আমি রাশেদ।
--চলেন ভাই আমরা একসাথে আসরের নামায পড়ে আসি।
--দু:খিত ভাই। আমার পোশাক নোংরা। সেদিন শামীম রাশেদকে মসজিদে নিতে না পারলেও আশা ছাড়ল না। যখনই নামাযের সময় রাশেদের সাথে দেখা হত তখনই সে রাশেদকে নামাযে আসার আহবান জানাত। বিভিন্ন অজুহাত দিতে দিতে একসময় ক্লান্ত হয়েই রাশেদ শামীমের সাথে নামাযে আসা শুরু করল এবং এভাবে নিয়মিত নামায পড়তে পড়তে তাদের খুব ভাল বন্ধুত্ব হয়ে গেল।
.
কিছুদিন অতিবাহিত হওয়ার পর শামীম কোন এক কাজে রাশেদের বাসায় গেল। বাসায় ঢুকে অবাক হয়ে গেল এদের প্রাচুর্যতা দেখে। দেওয়ালে বিভিন্ন পশু পাখির পেইন্টিং, মার্বেল পাথরের মেঝে, খুব বড় একটা এল ই ডি টিভি। কি নেই? আসবাব দেখেই বুঝা যায় আধুনিক পরিবার। কিছুক্ষণ হা করে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই একটা মডার্ন পোশাক পড়া যুবতী মেয়ে এসে জিজ্ঞাস করল আপনি কে? কাকে চাই? শামীম সাথে সাথে চোখ নিচে নামিয়ে ফেলেই বলল আমি রাশেদের বন্ধু। ও কি বাসায় আছে? ভাইয়া তো বাসায় নেই। আচ্ছা আসলে বলবেন যে শামীম এসেছিল। শামীম সাথে সাথে চোখ নিচু করেই বিদায় নিল।
.
সেদিন সন্ধ্যায় রাশেদের বাসায়...
--ভাইয়া শামীম নামের তোর কোন ফ্রেন্ড আছে?
--হুম আছে তো, কেন?
--হোয়াট। এরকম আনকালচার্ড ক্ষ্যাত একটা ছেলে তোর ফ্রেন্ড হয় কি করে?
--কি যাতা বলছিস। শামীম খুবই ভাল মনের এবং ভদ্র একটা ছেলে।
--আমার সাথে কথা বলার সময় একটা বারও আমার মুখের দিকে তাকাল না, এটাকে তুই ভদ্রতা বলছিস? আমারতো এটা অহংকার ছাড়া কিছু মনে হয় না।
--তাই নাকি? আচ্ছা আমি দেখব।
.
তারপর থেকে শামীমের সাথে রাশেদের অনেকদিন যোগাযোগ হয় নি। হঠাৎ একদিন রাশেদ শামীমকে দেখতে পেয়ে ডাক দিল। কিরে শামীম এতদিন কোথায় ছিলি?আর বলিস না আমাদের পাশের বাসার কাকা হঠাৎ অসুস্থ্য হয়ে গেলেন তাই উনাকে উনার গ্রামের বাড়ি পৌঁছে দিতে গেছিলাম। ও ভাল কথা যে জন্য তোকে খুঁজছিলাম সেটা হল তোর ব্যবহারে আমার বোন খুবই দু:খ পেয়েছে। কি বলিস তুই? আমিতো তার সাথে তেমন কথাই বলি নি। এটাইতো সমস্যা তুই তার দিকে একবারও না তাকিয়ে কথা বলেছিস তাই সে খুব মাইন্ড করেছে। তাই নাকি?
আচ্ছা চলতো তোর বাসায়। তোর বোনের সাথে কথা বলে আসি।
.
দরজা নক করতেই রাশেদের বোন দরজা খুলে দিল সাথে সাথে শামীম সালাম দিয়ে রুমে প্রবেশ করল রাশেদকে নিয়ে। সোফার একটাতে রাশেদ আর শামীম বসে আছে আরেকটাতে রাশেদের বোন বসে আছে। প্রথমে রাশেদের বোনকে উদ্দেশ্য করে শামীম আবারও মাথা নিচু করেই বলা শুরু করল..
--প্রথমেই আমি দু:খিত গতবারে আপনাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।
--আপনিতো এখনও আমাকে অপমান করছেন। একবারও আমার দিকে তাকাচ্ছেন না। আমি কি দেখতে খুবই বিশ্রী? নাকি নামাযী ব্যাক্তিরা অহংকারী হয়?
--না না সেটা না। কারও মনে অহংকার থাকলে তো সে জান্নাতেই যেতে পারবে না। আর আসলে আমাদের ধর্ম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছে চোখের হেফাজত করতে। প্রাপ্ত বয়ষ্কা বেগানা নারীর দিকে প্রাপ্ত বয়ষ্ক পুরুষদের তাকাতে নিষেধ করা হয়েছে।
--তাই বলে দরকারি কথা বলার সময়ও কি তাকানো যাবে না?
--হুম যাবে তবে খারাপ উদ্দেশ্যে তাকানো যাবে না শুধুমাত্র কথা বলার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু। যেমন আমি যদি আপনার কাছে কিছু জিজ্ঞাস করতে চাই তবে আপনার দিকে ফিরতেই হবে। কিন্তু তাতেও শর্ত আছে মেয়ের পোশাক শালীন হতে হবে মানে ইসলামের দৃষ্টিতে শালীন হতে হবে। অর্থাৎ হিজাব পরিধান করতে হবে প্রাপ্ত বয়ষ্ক মেয়েদেরকে। আর এই কারনে আমি নিচের দিকে তাকিয়ে সেদিন কথা বলেছিলাম।
--হুম বুঝতে পেরেছি।
--তারপরেও যদি আপনাকে কষ্ট দিয়ে থাকি তবে আমি দু:খিত।
--না না ভুলতো আমারই।
সেদিন থেকে রাশেদের বোনকে কখনও হিজাব ছাড়া দেখা যায় নি। আর রাশেদও শামীমের মত একজন বন্ধু পেয়ে গর্বিত।
.
এরকম হাজারও চরিত্রবান শামীম দরকার আমাদের সমাজে। যেখানে আজকালকার যুব সমাজ তাদের মুল্যবান সম্পদ চরিত্র খুইয়ে ফেলছে সেখানে নারী সমাজের নিরাপত্তা কিভাবে আশা করা সম্ভব? প্রত্যেকটা মহল্লায় যদি একটা করে শামীম থাকে সে আরও দশটা শামীম তৈরী করতে পারবে। নিজেকে একটু শামীম হিসাবে গড়ে তোলার চেষ্টা করুন।
.
।
ক্ষনিকের ডায়েরী
পর্ব-৭
©somewhere in net ltd.