নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(আলহামদুলিল্লাহ একে একে আমার ধারাবাহিক ক্ষনিকের_ডায়েরীর ১৮তম পর্বে চলে এসেছি। অনেকে মনে করেন হয়তো আগের পর্বগুলো না পড়লে বুঝতে পারবেন না। তাদেরকে বলছি আমার এই ধারাবাহিক আলাদা আলাদা ঘটনার উপর রচিত অর্থাৎ পূর্বের পর্বের সাথে কোন মিল নেই। আলাদা আলাদা ঘটনা, আলাদা আলাদা অনুভুতি।)
গত রবিবার (দুই সপ্তাহ আগে) গিয়েছিলাম জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে । আমার সাপ্তাহিক ছুটি যদিও শনিবার কিন্তু বিশ্ব ইজতিমার আখেরি মোনাজাত রবিবার হওয়ায় আমাদের ইন্ডাস্ট্রি শনিবার কর্মদিবস পালন করে এবং রবিবার ছুটি ঘোসনা করে। আমি আমার আবাসস্থল থেকে রওনা দিয়েছি খুব সকালেই, প্রায় ১১টার দিকে। সকাল বলছি কারন তখন প্রকৃতি যে রুপ ধারন করেছিল আসলেই গরমের সময় হলে ভোর ৫টা বলে চালিয়ে দেওয়া যেত। যাইহোক সকাল ১০টার দিকে গোসল সেরে রুম থেকে বের হলাম নিম্নোক্ত দো’আ পড়ে।
بِسْمِ اللّٰهِ، تَوَكَّلْتُ عَلَى اللّٰهِ، وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلاَّ بِاللّٰهِ
অর্থাৎঃ-আল্লাহ্র নামে (বের হচ্ছি)। আল্লাহর উপর ভরসা করলাম। আর আল্লাহর সাহায্য ছাড়া (পাপ কাজ থেকে দূরে থাকার) কোনো উপায় এবং (সৎকাজ করার) কোনো শক্তি কারো নেই।
রেসিডেন্স থেকে লিফটে করে নিচে নামছি। লিফটে প্রবেশ করেই চোখে পড়ল লিফটের এক সাইডের ওয়ালে একটা কাগজ লাগানো। সেই কাগজে উপরের দিকে একটা এরো চিহ্ন দেওয়া আছে এবং লেখা আছে “আল্লাহু আকবার” অর্থাৎ উপরে উঠার সময় “আল্লাহু আকবার” বলুন এবং নিচের দিকে একটা এরো চিহ্ন দেওয়া আছে এবং লেখা আছে “সুবহানাল্লাহ” অর্থাৎ নিচে নামার সময় “সুবহানাল্লাহ” বলুন। যে ভাইটি এই কাজটি করেছেন তাকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন।
।
নিচে নেমে হোটেল থেকে সকালের নাস্তা সারলাম। রিক্সাতে উঠেই হাতে নিয়ে নিলাম শাইখ আব্দুল মালিক আল-কাসিমের “আদ-দুনইয়া যিল্লুন যাইল” , অনুবাদ করেছেন আরিফ আবদাল চৌধুরি । ভাষান্তরের পরে বইটির নাম হয়েছে “যে জীবন মরিচিকা” । বইটি নিয়ে আমার মন্তব্য হল,বইটির এক কপি প্রত্যেকের কাছে রাখা উচিৎ। কারন বইটি একটি রিমাইন্ডারের মত কাজ করবে। বারবার আপনাকে মনে করিয়ে দিবে “ You are just a traveler in this world. Your lifetime will be ended as soon as possible.” আমার অনুরোধ থাকবে বইটি প্রত্যেকে নিজের কাছে এক কপি রেখে দিবেন এবং সর্বক্ষন নিজের সাথে নিয়ে ঘুরবেন। যাইহোক ঘটনায় ফিরে আসি। রিক্সা থেকে নেমে বাসে উঠতে হবে। বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। উঠে পড়লাম ইতিহাস নামক বাসে । সরাসরি যাব বাইপাইলের মোড়ে। সেখানে আমার বন্ধুর অপেক্ষা করার কথা। বাসে বসে আছি জানালার পাশের সিটে। যথারিতী মাথা নিচু করে “যে জীবন মরিচিকা” পড়ছি। কয়েকজন আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে অদ্ভুত ভঙিতে আঁচ করতে পারছি। হয়তো ভাবছে এই যুগে মোবাইলে মাথা না গুঁজে কেউ বইয়ের প্রতি এরকম এক দৃষ্টিতে আত্মমগ্ন হয়ে থাকতে পারে! পাশে এসে বসল আমার চেয়ে বয়সে ছোট এক ভাই। আমাকে জিজ্ঞাস করল আমি কোথায় যাব? আমার গন্তব্যের কথা বলার পর তাকে জিজ্ঞাস করলাম সে কোথায় যাবে?
এভাবে আমাদের দুইজনের মধ্যে কথা শুরু হল। তার কাছে শুনলাম সে হেফজখানায় পড়েছিল ছোট থাকতে। বুক চিড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসল যখন সে বলল যে, হিফজ কমপ্লিট করতে পারেনি।
।
কিছুদুর যাওয়ার পর ছেলেটা বাস থেকে নেমে পড়ল। আমি আবার ডুবে গেলাম বইয়ের পাতায়। কিছুক্ষন পরে বাচ্চা একটা ছেলের কথা কানে আসতে লাগল। পিছনে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাতেই দেখতে পেলাম নিপাট কালো কালারের একটা শার্ট এবং ডার্ক ব্লু কালারের জিন্স পরা এক ব্যাক্তি একটি ছোট ছেলের হাত ধরে কি যেন বুঝাচ্ছে। কথা শুনে বুঝতে পারলাম এরা পিতা পুত্র। ছেলেটা একেবারে ছোট। হয়তো ছয় বা সাত বছর হবে। আমি কান খাড়া করে শোনার চেষ্টা করলাম কি বলছে বাবা তার পুত্রকে। একটু খেয়াল করতে শুনতে পেলাম বাবা ছেলেকে খাওয়ার নিয়ম শিখাচ্ছে। বাবার ভাষাতেই এখানে উল্লেখ করছি। “ শোন আব্বু, তুমি কিছু খেলে প্রথমে কি বলে খাওয়া শুরু করবে জানো? খাওয়ার হাতে নিয়ে মুখে দেওয়ার আগেই বিসমিল্লাহ বলবে। আস্তে আস্তে খাওয়া শেষ করবে। আর খাওয়া শেষে অবশ্যই আলহামদুলিল্লাহ বলবে। “ বাচ্চা ছেলেটা ঠিক তখন বলে উঠল, ‘’আলহামদুলিল্লাহ কেন বলব আব্বু?”
পিতা খুব নরম সুরে বলতে লাগলেন, “ তোমাকে আমাকে আমাদের মালিক আল্লাহ এত সুন্দর করে বানিয়েছেন। আমাদের খাবারের ব্যবস্থা করেছেন। তুমি যে খাবার খাচ্ছো এর ব্যবস্থা আল্লাহ করে দিয়েছেন । তোমাকে যদি কেউ খাবার দেয়, কেউ যদি তোমাকে চকলেট দেয় তাকে কি তুমি ধন্যবাদ দিবে না?,” “হুম, দিব”। আল্লাহ তোমাকে খাওয়াচ্ছেন তাই আলহামদুলিল্লাহ বলে তুমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাচ্ছো। আর এটা ভুলা যাবে না কিন্তু। “
।
আমি মুচকি একটা হাসি দিয়ে আবার বইয়ের দিকে নজর দিলাম। এই বাবার চেয়ে উত্তম বাবা আর কে হতে পারে, যে তার সন্তানকে তার প্রভুর সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। এই বাবার চেয়ে আর কোন বাবা উত্তম হতে পারে যে তার সন্তানকে তার আসল গন্তব্য চিনিয়ে দেয়। একটা সময় আলেম বিবেচনা করা হোত তার পোশাক দেখে। আলেম শব্দটাই ছিল সাদা জুব্বা পাঞ্জাবীর একক সম্পত্তি। অথচ জ্ঞানের আলো পোশাকের ভেদাভেদ ছিন্ন করে পৌঁছে যাচ্ছে মানুষের অন্তরে। এখন কোন হাফেজকে যখন দেখি সার্ট প্যান্ট পরে মহানবী (সাঃ) এর সুন্নাহ নিয়ে কোন ডকুমেন্টারিতে অভিনয় করতে তখন আর অবাক হইনা। যখন কোন হুজুরকে দেখি কমপ্লিট স্যুট পরে জুম্মায় খুৎবা দিচ্ছেন তখন আর অবাক হইনা। ইসলামী জ্ঞানের রোসনায় স্নাত হতে চাইলে প্রথম পাঠ্য একটাই । সেটা হল আল-কোর’আন। আপনি কোর’আন পড়েননি অথচ কোর’আনকে ভালোবাসা ব্যাক্তিদের শুধুমাত্র পোশাকের কারনে হেয় করছেন তবে জেনে রাখুন আপনার জ্ঞান একটা অপচয় ছাড়া কিছুই না।
ভালবাসি সেই সকল মানুষগুলোকে যারা এই ভয়ংকর প্রতিকুল পরিবেশে লম্বা পাঞ্জাবী, মুখে দাঁড়ি নিয়ে সমাজে মাথা উঁচু করে বেঁচে আছেন। ভালবাসি সেই সকল বাবাকে যারা তাদের সন্তানকে সবার প্রথমে আল্লাহ এবং কোর’আনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন।
বিঃদ্রঃ দুই বছর আগের ঘটনা প্রবাহ
ছবিটি গুগল হতে সংগৃহীত
#ক্ষনিকের_ডায়েরী
#পর্ব_১৮
২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১১:০২
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার প্রিয় লেখক কি আল মাহমুদ?
৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০২১ ভোর ৫:২১
নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: বিসমিল্লাহ বলে পড়ে ফেল লাম।
©somewhere in net ltd.
১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০২১ রাত ১০:২৬
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: ছোটকাল থেকেই বাচ্চাদের ধর্মের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টির চেষ্টা করা উচিত।