নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(আসসালামু আলাইকুম। আলহামদুলিল্লাহ আমার ক্ষনিকের_ডায়েরী সিরিজের আজ ২০তম পর্ব।)
ছোটবেলায় রিক্সায় চড়াটা বিশাল একটা প্রেস্টিজের ব্যাপার মনে হোত। রিক্সায় চড়ে আব্বুর সাথে যখন পরিচিত রাস্তা দিয়ে যেতাম আর আমার বন্ধুরা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকত তখন নিজেকে বিশাল হনু মনে হোত। আসলে তখন আমরা খুলনা নেভী কলোনীতে থাকতাম। আর অধিকাংশ পরিবারে পিতার সাইকেল থাকতই। আমার আব্বুরও ছিল ইন্ডিয়ান এভোন সাইকেল । তারপরও কদাচিৎ রিক্সায় চড়ার সুযোগ হোত। তখন অবশ্য আজকের মত অটোরিক্সা ছিল না। পায়ে টানা রিক্সাই ছিল একমাত্র ভরসা। আর খুলনার রিক্সা ছিল চারকোনা হুডওয়ালা যদিও ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামে দেখেছি গোল হুডের রিক্সা। আমার বরাবরই রিক্সাচালকদের সুপার হিউম্যান বলে মনে হয়। প্যাসেঞ্জার সমেত একটা রিক্সা টানতে কি পরিমান বল প্রয়োগ করতে হয় যারা কখনও রিক্সা চালানোর ট্রাই করেননি তারা কল্পনাও করতে পারবেন না। আমি কিছুটা অনুভব করতে পেরেছিলাম। কারন আমি প্রায়শই আমাদের কলোনীতে নিয়মিত চলাচল করা একটা রিক্সা, চালক না থাকলে চালানোর চেষ্টা করতাম। তখন সর্বোচ্চ ভাড়াই ছিল ২০ টাকা। অর্থাৎ রিক্সাচালকের সর্বোচ্চ অতিক্রান্ত দুরুত্ব ছিল এখন মোটামুটি ৬০-৭০ টাকার ভাড়ায় যতটুকু দুরুত্ব যায় ততটুকু।
এতক্ষন রিক্সা নিয়ে কিছু বকবক করলাম। এখন সালটা ২০২০ , এখনও রিক্সায় চড়া হয় তবে আব্বুকে আর পাশে পাইনা। একা একাই চড়া হয়। শেষ কবে আব্বুর সাথে রিক্সায় চড়েছি মনে পরেনা। রিক্সায় চড়ার চেয়ে আব্বুর সাইকেলের পিছনে চড়ার আনন্দটা আমার কাছে আরও বেশী মধুর। এটা নিয়ে আগে এক পর্ব লিখেছিলাম (১১তম পর্ব দ্রষ্টব্য)।
যাইহোক বাড়িতে যাব। বাস থেকে নেমেছি , এদিক ওদিক তাকিয়ে রিক্সা খুঁজছি। অনেক রাত হয়ে গেছে দুই একটা রিক্সা চোখে পড়ছে। এক বয়ষ্ক চাচাকে দেখলাম রিক্সা নিয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। তার রিক্সাটা পায়ে চালানো রিক্সা । এখনকার আর সবার মত অটো রিক্সা না। এখন মানুষ খুব ব্যাস্ত,তাই সচারচর কেউ ইচ্ছা করে পায়ে চালানো রিক্সায় চড়তে চায় না। তবে চাচাকে দেখে কেমন যেন মায়া লাগল। আমি ভাড়া ঠিক না করেই উঠে পড়লাম রিক্সাতে। চাচার রিক্সা টানতে প্রচুর কষ্ট হচ্ছে বুঝতে পারলাম। চাচাকে ডাক দিয়ে বললাম অত তাড়াহুড়ার দরকার নেই ধীরে চালান। চাচা আমার কথায় আশ্বস্ত হয়ে সিটে বসে রিক্সা চালাতে লাগলেন।
চিত্রঃ- সংগৃহীত
মৃদু মৃদু বাতাস বইছে কানের পাশ দিয়ে আর চাচার হাপড়ের ওঠানামা করার মত নিঃশ্বাস আমার কানে আসছে। চারিদিকে অন্ধকার, পিচঢালা রাস্তার নিয়ন বাতি আর বন্ধ দোকানের সামনের গুটিকতক আলো ছাড়া আর কোন আলো চোখে পড়ছেনা। অবশ্য মাঝে মাঝে বিপরীত দিক থেকে গর্জন করতে করতে আসা বেঢপ আকৃতির ট্রাকের তীব্র আলো চোখ ধাঁধিয়ে দিচ্ছে। চারিদিকে তাকাচ্ছি আর প্রকৃতিকে অনুভব করার চেষ্টা করছি। একটা টহলরত পুলিশের গাড়ি অতিক্রম করতেই চাচাকে জিজ্ঞাস করলাম,
-“চাচা এই সময়েতো খুব বিপদে পড়ে গেছেন। যেভাবে গাড়ি চলাচল বন্ধ হইছে খাইয়া পইড়া বাঁচাইতো মুশকিল।“
- “কি করব ভাইজতা, আল্লাহ কপালে যা লেখ্যা রাইখ্যাছে তাই হইবে।“
-“তা আপনার বাড়িতে ছেলে মেয়ে কয়জন?”
-“দুইটা ব্যাটা আর তিনটা বেটি আছে।“
-“সবাই কি লেখাপড়া করে?”
-“না বেটি একটা এখনও ছোট , ওকে স্কুলে দেইনি। বাসার সামনে খালি জমি একটু আছে সেখানে তোরি-তরকারী হয়। কিন্তু চাইল-ডাইল কিনতেতো টাকা লাগে।“
আমি আর কথা বাড়ালাম না। আমাদের এই উন্নয়নশীল দেশে সবার চিত্র একই। আমরা যারা এলিট ক্লাশে বড় হই তাদের কাছে উন্নয়ন মানে ওভারব্রীজ হওয়া, মেট্রোরেল হওয়া, মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠানো, সড়কে প্রাইভেট কারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়া ইত্যাদি। এলিট ক্লাশের চেয়ারে বসে খাদ্যের অভাবে ১০ বছর বয়সী আফরোজা খাতুনের গলায় ফাঁস দেওয়া ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা মনে হয়।[১] খাদ্যের অভাবে চুরি করতে যাওয়া লোকটিকে নিকৃষ্ট কীট মনে হয়। ত্রান সামগ্রী সংগ্রহ করতে গিয়ে বৃদ্ধ বয়সে রক্তাক্ত হয়ে ফিরে আসার ঘটনায় আমরা উন্নয়নের রুপরেখা দেখতে পাই।[২]
উন্নয়নের আরেকটি মাইলফলক দেখতে পাবেন ২০১৯ সালের এডিপি এর টোটাল প্রজেক্ট কস্ট। সেখানে ২লক্ষ কোটি টাকার উন্নয়ন দেখানো হয়েছে সারা দেশে। [৩]
[১] এবং [২] নং রেফারেন্সের সাথে [৩] নং রেফারেন্সটা কেমন যেন বেমানান কি বলেন?
যাইহোক দেশটা চিন্তাশীলদের জন্য। কে খেতে পেল আর কে পেলনা এতে এলিট শ্রেণীর কিছু আসবেও না যাবেও না। তবে আমার প্রতিবেশী না খেয়ে থাকলে এর জবাবদিহী আমাকেই করতে হবে। এবং আমার প্রতিবেশী যদি না খেয়ে কষ্ট পাই তবে আমি ঈমানদারের কাতারে থাকার অধিকার রাখিনা ।[৪]
কখন গন্তব্যে চলে এসেছি খেয়াল করিনি। এসব হাবিজাবি ভাবতে ভাবতে বাড়ির গেটে রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে খেয়ালই নেই। চাচার ডাকে বাস্তবে ফিরে আসলাম। পকেটে হাত দেওয়ার আগে চাচাকে জিজ্ঞাস করলাম ভাড়া কত। চাচা ন্যায্য ভাড়াই বললেন ২৫ টাকা। পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে কত টাকা দিয়েছি তা আর খেয়াল নেই। তবে টাকা চাচার হাতে দেওয়ার পর চাচার চোখে অবাক বিস্ময় এবং কৃতজ্ঞতা দেখেছিলাম। বেশীক্ষন সেখানে দাঁড়াইনি কারন এদের কষ্টের চেহারাগুলোর জন্য আমাকে আল্লাহর কাছে জবাবদিহী করতে হবে। দেশ সিংগাপুর হয়ে গেছে বুলি কপচানো আমাদেরকে হয়তো জবাবদিহী করতে হতে পারে আফরোজা খাতুন কেন সিংগাপুরে বসে খাদ্যের জন্য আত্মহত্যা করল? কারন আমিও উন্নয়নের জোয়ারে ভেসে থাকা এক কচ্ছপই ছিলাম।
বিঃদ্রঃ- লেখাটা করোনাকালীন সময়ে লেখা। তবে চিত্র তখনকার থেকে এখন খুব একটা ভালোর দিকে পরিবর্তন হয়েছে বলে আমি মনে করিনা।
সোর্সঃ-
[১]কালের কন্ঠ ১১ই এপ্রিল ২০২০
[২] ঢাকা ট্রিবিউন ১৪ই এপ্রিল ২০২০
[৩] গুগল করলেই পিডিএফ পেয়ে যাবেন
[৪] মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস-২৬৯৯; আল আদাবুল মুফরাদ, হাদীস-১১২
০৯ ই মে, ২০২২ রাত ১০:৫৩
মামুন রেজওয়ান বলেছেন: লিংক যুক্ত করাটা তেমন একটা সুবিধাজনক মনে হয়না আমার কাছে। কারও অথেনসিটি নিয়ে কনফিউশন থাকলে গুগল করে নিবে। আমাদের মস্তিস্ককে কিছুটা কাজ দেওয়া উচিৎ।
২| ১০ ই মে, ২০২২ রাত ১২:১৩
রাজীব নুর বলেছেন: আপনার লেখা পড়ে আমার আব্বার কথা মনে পড়লো। মনে না পড়লেই ভালো ছিলো। দেড় বছর আগে আব্বা করোনাতে মারা গেছে।
আব্বার সাথে রিকশায় করে বাজারে যেতাম।
১০ ই মে, ২০২২ রাত ৯:৫৩
মামুন রেজওয়ান বলেছেন: আল্লাহ আংকেলকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন। প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহন করতে হবে। এই মৃত্যু যেন শেষ বিচার দিবসের পরীক্ষা প্রস্তুতির পরেই হয়।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই মে, ২০২২ রাত ৯:৩৩
ভার্চুয়াল তাসনিম বলেছেন: পোস্টে রেফারেন্স দেয়ার সুন্দর পদ্ধতি। লিংক যুক্ত করার ঝামেলা নাই। ব্লগে লিংক যুক্ত করা আগের বেশ দুর্বোধ্য মনে হচ্ছে।
পোষ্টটি এলিট ক্লাস হয়েছে,