নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষআজিজ

মানুষআজিজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্তদন্ধ

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৫৯

রতন সিদ্দিকী রচনাসমগ্র-১ । আজিজ রহমান



মধ্যবিত্ত মানুষের স্বপ্ন, সাংসারিক জীবনে দন্ধ ,যৌবনের তেজে -শরীরের স্বাদ । অন্ধকার ফুরোলেই আলো দেখার কল্পনায় প্রতিটি চরিত্র মিলে-মিশে একাকার রতন সিদ্দিকীর রচনা সমগ্র-১ ।ব্যক্তি জীবনে যে মানববাদের চিন্তায় সিক্ত থাকতেন সেটার প্রতিছবি হিসেবে উঠে-এসেছে তার লেখনি শক্তিতে । এক-একটি মানুষে হৃদয়ে থেকে বলচ্ছে ইচ্ছের কথা যেন মনগড়া কিছু নয় । তবুও কিছু-মানুষ ভ্রান্তি দিয়েছে যেটা না হলে কষ্টপাওয়া হয় না, চোখের কোনে কালো অভিমান জমে না, ক্রোর্ধ জমে না । তেমনি ‘গন্তব্যের অনুসন্ধান’ উপন্যাসে অনুসন্ধান করতে যেয়ে গভীর থেকে –গভীরতর হয় ..মানব-মানবীর প্রেম ।সাবিহার স্বামী আনিস , সাবিহার কাছে আনিসের কোন গুরুত্বনেই সে তার স্বামীকে কাপুরু মনে করে । এই জন্য আনিসের বড় রাগ হয়, একদিন আনিস ঢাকায় এসে ছেলেবেলার বন্ধু কামালের বাসায় যায় সেখানে কামলের স্ত্রী লিপির সাথে তার পরিচয় হয় –এরপর থেকে শুরু আনিস ও লিপির পরকীয়া - । আনিসের স্ত্রীকে কিছুই বলে না । আনিস কেন ঢাকায় আসে স্ত্রীও জানতে চায় না । শুধু মনে কষ্ট পায় সাবিহা –এই মনোকষ্টকে শান্তনা দেবার জন্য আনিস সাবিহাকে বলে, রাস্তা চলতে ফিরতে বহু-সুন্দরী মেয়ে দেখি কিন্তু বিশ্বাস করো তাদের দেখে আকর্ষন বোধ করি না , আর তোমাকে অবহেলা করার আগে যেন আমার মৃত্যু হয় ।-সাবিহার স্বামীর প্রতি গভীর বিশ্বাসে আত্মতৃপ্তিতে তাকে আরো কাছে টেনে আনে, সে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে এমন স্বামী কয়জনের কপালে জোটে ।উপন্যাশের চরিত্রতে-আনিসকে কাপুরুষ মনে করা আবার নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করা স্বামীকে নিয়ে । প্রতিটি ক্ষণে ক্ষণে রয়েছে অন্তদন্ধ বিশ্বাস রাখা আর না রাখার স্বপ্ন । আনিস আবার সিদ্ধান্ত নেয় লিপিকে নিয়ে সে নতুন জীবন শুরু করবে ।সালাম ও শেলী দম্পত্তিও ..রাগ,অভিমান,চাওয়া –না পাওয়ার কথা গুলো বলে । সালামের স্বাভাবিক রসিকতার জন্য বধু থেকে অফিসের বসের বকা সহ্য করতে হয় ।সালামের দাম্পত্য জীবনের সূচনা লগ্নে বধুর কাটাকাটা কথা তার শরীরে বিধে , তাই সে রাতে ঘুমের মধ্য বারবার মনে করে-শেলীকে বিয়ে করে কি বড় ভুল হয়ে গেল । শেলীর ব্যবহার আচরনের পরিবর্তনে সালাম শেষে এই সিদ্ধান্ত নিল –স্ত্রীকে মাঝরাতে অধিকাংশ পুরুষরাই উঁচু ও বড় বলে ,আসলেই সালাম শেলী সর্ম্পকে পূর্বের ধারণা পরিবর্তন করলো । মানুষ সর্ম্পকে আমরা এক দেখাতেই অনেক কিছু ভেবে-ফেলি তা কতটুকু গ্রহনযোগ্য , আর যখন সেই ধারনা দেখে নিজেকে বের করে আনি তখন মনে হয় নিজের ভেতর কত ভুলে ভরা । সালামের সময়ের সাথে সাথে যে চিন্তার পরিবর্তন এসেছে এটাই বাস্তবতা । আমাদের সামাজিক,পারিবারিক, সাংসারিক জীবনের সাথে যে রাজনীতি জরিয়ে আছে তা ‘গন্তব্যের অনুসন্ধান’ উপন্যাশে পাই । রাজনীতির সাথে একজন মানুষে যুক্ততার ফলে পরিবারের সদস্যরা যে ধরনের ভুক্তভোগীর স্বীকার হয় তা উপন্যাশের আলমের চরিত্রতেই দেখতে পাই , আলমের ভাই আনিস আলমের কমিউনিষ্ট রাজনীতি সহ্য করতে পারে না ,সে বলে রাজনীতি ধনীদের বিলাসিতা, গরীবের অধিকার ভোট দিয়েই খালাস হবে ।আলম রাজনীতির কারনে মাঝে মাঝে বাড়ি থেকে উদাও হয়ে যায়..পারিবারিক কোন দায়িত্ব নিতে চায় না ।পুলিশ মামলায় পড়ে তাকে নানা-জায়গায় পালিয়ে বেড়াতে হয় ।উপন্যাশের শেষের দিকে, শেষ জীবনে বয়সী আবেগের কারণে যে উচ্ছৃংঙ্খল জীবন যাপন করতো আলম সেগুলো একটু কল্পনা করে । তার সেই সহপাটিগুলো কে কোথায় আছে –আলমের মনে পড়ে শিখার কথা ।শিখা বলেছিল- ‘আলম আমি তোমাকে ভালোবাসি, তুমি আমাকে বিয়ে করো এমন কিছু বলছি না তবে এমন একটা ব্যবস্থা কররো যাতে আমাকে কারো কাছে যেতে না হয়’-শিখা পতিতা ছিল যার সাথে আলমের দেহক্রেন্ধিক সর্ম্পক হতো প্রায় । সেই শিখা এখন কোথায় –বহুখোঁজার পরও কোন সন্ধান মেলেনি, মালিহা দুই সন্তানের মা হয়েছে । আনিস-সাবিহা,আমিন,শেলী এরা কেউ আর দেশে নেই সময়ের প্রয়োজনে সবাই যার যার গন্তব্যেতে পাড়ি জমিয়েছে । আলমও দলথেকে বহিস্কার হয়ে অনিতার সাহায্যয় নিশ্চিত আশ্রয়ে নির্ধারিত গন্তব্যেতে পাড়ি দেয় ।

রতন সিদ্দিকীর দ্বিতীয় উপন্যাশ ‘বিশে চৈত্রের সকালে’ উপন্যাশের প্রধান চরিত্র হোসেন আলী প্রথমেই বললো: আজ উনিশে চৈত্র । শিনবার । দুই এপ্রিল, দেয়ালের ক্যালেন্ডারের পাতায় লাল –দাগ দিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো রাত পৌনে এগারোটা , আজ হোসেন আলীর জীবনের সব চা্ইতে আনন্দের রাত কারন হোসেন আলীর আগামী কাল বিয়ে । অবনীকে গত এক বছর ধরে ভালোবেসে হোসেন আলী -তাকে স্ত্রী হিসেবে পেতে যাচ্ছে । অবনী হোসের আলীর সর্ম্পকে চাচাতো বোন হয়, হোসেন আলী কাজের সন্ধানে ঢাকায় এসে অবনীদের বাড়িতেই থাকে, বাড়িতে আরো থাকে চাচা-চাচী,অবনীর ছোট বোন অরণী ও ছোট ভাই অয়ন কিন্তু কাল বিয়ে কারো কোন আনন্দ দেখা যাচ্ছে না । অবনীর এই বিয়েটা ..আনন্দের নয় তাই কারো মুখে আনন্দ নেই ।হোসেন আলী এই বাসায় উঠার পর পেয়েছে চাচীর একঘেয়েমী আচরন, অবনীর দু:ব্যবহার,অয়ন এর উচ্ছৃঙ্খল আচরন । আন্তরিকতা বলতে বাড়িতে কাজের মেয়ে জমিলা আর চাচা এদের কাছ থেকে হোসেন আলী কোন খারাপ ব্যবহার পায়নি । তাই হোসেন আলী ভাবচ্ছে এতদিন চাচার সংসারে সে অতিরিক্ত ছিল , আগামী কাল থেকে আর অতিরিক্ত থাকবে না । সে এই বাড়ির একজন হয়ে যাবে । এই সব কথা ভাবতে ভাবতে হোসেন আলী ঘুমিয়ে পড়ে । সকালে চাচা-চাচী,অরণী,অয়নের কান্নার শব্দে ঘুম ভাঙে হোসেন আলীর। হোসেন আলীর সারা-রাতের স্বপ্নের মৃত্যু হয় , মৃত্যু হয় আরো দুটি-জীবনের এই বিশে চৈত্রের সকালে ।উপন্যাশিক উপন্যাশে একটা জীবনের ছুয়া দিয়েছেন- কিছু হারিয়ে উপলব্ধি করা –যেটা অবনীর পরিবারের হয়েছে ।নিম্ন শ্রেনীর মানুষকে-চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া-যে তুই ছোটলোক,তোর কোন মর্যাদা নেই হোসেন আলীর দাদুর বেলায় তাই হয়েছে অথবা আন্তরিকতা খুজে পাওয়া যায় সমাজের নিচু শ্রেনীর মানুষদের কাছ থেকে যেমন জমিলা ঝিয়ের কাজ ছেড়ে সে –যখন গণিকা পেশায় নাম লেখায়, হোসেন আলীর দুঃখের কথা বুঝতে পেরে তাকে টাকা দিতে চায় । এই আত্মউপলব্ধি মানুষের ভেতরের বিষয় ।তাই যারা এই উপলব্ধি টা করতে পারে না তারা মানুষের জীবন কিভাবে বুঝবে ।

‘তমোঘ্নের কবি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান’ ও ‘হৃষিত নাট্যকার মমতাজউদদীন আহমদ’ এই দুটি রতন সিদ্দিকীর প্রবন্ধের নাম । এই দুই প্রবন্ধটি ব্যক্তি ক্রেন্দ্রিক ।‘তমোঘ্নের কবি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান’ প্রবন্ধে কবি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামানকে নানা ভাবে বিশ্লেষন করতে চেষ্টা করেছেন , কবির রাজনৈতিক মতাদর্শ ভালোলাগা –না লাগার ইচ্ছে, দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধ, প্রাকৃতিক বির্পযয়, সমকালীন মানুষের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে কবিতা লেখা সবই নানা মুর্হুতে ফুটে উঠেছে কবি সর্ম্পকে এই প্রবন্ধে ।

‘হৃষিত নাট্যকার মমতাজউদদীনের’ প্রবন্ধে মমতাজউদদীনের নাট্যকলার ভাব দ্বারা তুলে ধরা হয় ‘সাগর থেকে এলাম’ ,’স্বাধীনতা আমার স্বাধীনতা’ ,’বর্ণচোরা’ প্রভৃতি নাটকে মমতাজউদদীন প্রচুর খ্যাতি অর্জন করেন ।মমতাজউদদীনের নাটক সমূহে হাস্যরস,মুক্তিযুদ্ধ,সমাজ সচেতনতা লক্ষ্য করা যায় ।মমতাজউদদীনের নাটকে গ্রাম-শোষন ও বঞ্চনার চিএ প্রকৃতির লীলাভূমি নয় – তার নাটকে শোষনের –অত্যাচার নির্মম চিএ অংকন করেছেন ।একই সাথে নাবাব সিরাজউদ্দৌলা,বঙ্গবন্ধু,রাজাকারের প্রভৃতি চরিত্রও বানিয়েছেন ।এই প্রবন্ধে মমতাজউদদীনের নাট্য-চিন্তার প্রতিফলন ঘটিয়েছেন ।

রতন সিদ্দিকীর ‘স্মৃতি সংহিতা’ এটি একটি স্মৃতিকথা মুলত তার ব্যক্তিগত জীবনের কথা । স্কুলের স্মৃতি,কৈশোরের স্মৃতি, রাজনীতি,মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি,বিশ্ববিদ্যালয়ের স্মৃতি প্রভৃতি আলোচিত হয়েছে তার এই স্মৃতিকথাতে ।

শিশুসাহিত্যতে –শিশু মনের কথাই বলিয়েছেন গল্পকার, ‘টমের কথা’-তে রিতার সাথে টমের যে সর্চ্ছ-পরিপাটি সর্ম্পক তা যে-কোন পাঠক মনেই নাড়া দিবে ।অন্যদিকে ‘ফেল্টুস ভাই’-গল্পতে মাহবুব ভাইয়ের যে চরিত্র অংকন করেছেন ,যে ছেলেটি প্রতি ক্লাসে দুইবার করে থাকেন এবং ফেল করে আনন্দে আত্ম-হারা হন সেটা অনেকটা অকল্পনীয় বানোয়াট মনে হলেও শিশুদের একটা মজার বিষয় থেকে যায় । সবাই ইচ্ছে করেই ফেল্টুস হতে পারে না ।
রতন সিদ্দিকীর রচনা সমগ্র-১ তিনি দেখিয়েছেন তার প্রতিভার রুপ ।কতগুলো স্বপ্ন নিয়ে মানুষ আশা-বাধেঁ অন্য মানুষের ভেতর , কিন্তু যখন সে দেখতে পায় সামনেই আশার সমাপ্তি হবে-তখন তার হৃদয়ে কষ্ট হয়,নিষ্পেষিত হয়ে যেতে চায় সে ।যেটা রুপকথার মতই অদ্ভূত । এক-একটি অদ্ভুত মানুষের চরিত্র একেছেন রতন সিদ্দিকী তার লেখনিতে কখনো ভালো চরিত্র বা কখনো সমাজের চোখে মন্দ হয়ে ।যেটা মানুষকে ভাবতে শেখায় ।তার নির্মিত চরিত্রগুলো স্বপ্ন খুজে-বুকে আশা নিয়ে । সামনে এগিয়ে যায় যতদুর না গেলে অজানাই থেকে যায় এই পৃথিবী-প্রতিটি জীবনের জগৎ ।

রতন সিদ্দকী রচনাসমগ্র-১
লেখক:ড.রতন সিদ্দিকী
প্রকাশক:তোফাজ্জল হোসেন, বিশ্বসাহিত্য ভবন ।
প্রকাশকাল: বইমেলা ২০১৪
প্রচ্ছদ:নাসিম আহমেদ
দাম:৭০০ টাকা

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টের সাথে বইয়ের প্রচ্ছদ দিলে ভালো হতো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.