নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাধারনের মাঝেও অতিসাধারণ

মার্ক টোয়েন

মনের অনুভূতি প্রকাশ করে যাই বিক্ষিপ্ত কিছু শব্দমালায়।

মার্ক টোয়েন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডাক্তার সে-তো কুকুরের চেয় অধম

০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৮:৪২

ছবি- সংগৃহীত

সমাস বাবু তখন সবে মাত্র বঙ্গদেশে সিভিল সার্ভিস পরিক্ষায় উত্তীর্ণ হইয়া সরকারি ডাক্তার হইয়াছে। উপজেলা হাসপাতালে পোস্টিং তাহার। সে সময় ঐ হাসপাতালের দালানের সংস্কার যজ্ঞ চলিতেছিল।একে তো বেশ পুরোনো দালান তার উপর অর্ধেক অংশে সংস্কারের জন্য ভাংগা হইয়াছে।বেশ কষ্ট করিয়াই তখন হাসপাতালের ইমার্জেন্সি, ইনডোর, আউটডোর সামলাইতে হইতেছে। একেতো জনবল সংকট তাহার উপর সংস্কার কাজের জন্য হাসপাতালের অবস্থা যে অগোছালো তাহা বলার অবকাশ রাখে না।

এক বৈকাল পালায় সমাস বাবু জরুরি বিভাগ সামলাইতে ছিলেন।দায়িত্ব জরুরি বিভাগে হইলেও তাহাকে অন্তঃ বিভাগে ভর্তি রগী দেখিবার জন্য যাইতে হয় মাঝে মাঝে।সরকারি হাসপাতাল বিধায় মানুষ জন তাহাদের সমস্যার জন্য সহজেই চলিয়া আসিতে পারে।সকালের তুলনায় রোগীর সংখ্যা কম হইলেও তা নেহায়েত কম নয়।এদের মধ্যে যাহাদের অবস্থা বেশি খারাপ তাহাদের অন্তঃবিভাগে পাঠাইতেছেন আর বাকিদের জরুরি বিভাগ হইতে চিকিৎসা পত্র দিয়া বিদায় করিতেছেন।এমন সময় ভিতর হইতে এক ব্যক্তির উচ্চস্বরে কথার আওয়াজ শোনা যাইতেছে।কান্না উচ্চশব্দে চিৎকার এসকল বিষয় হাসপাতালের নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা।যে কেউ তাহার ইচ্ছা মত এইখানে চিৎকার চেচামেচি করিবার অধিকার রাখেন। তাতে তেমন কর্নপাত না করিয়া সমাস বাবু রোগী দেখিতেছেন।ক্ষণপদে চিৎকারের আওয়াজকে দিগুন করিয়া সেই ব্যাক্তি জরুরী বিভাগে উপস্থিত।

ডাক্তার সাহেব আপনি এখানে বসিয়া কি করিতেছেন?এদিকে যে হাসপাতাল উচ্ছন্নে গিয়াছে তাহার খবর কি আপনার কাছে রহিয়াছে?

সমাস বাবু কিছুটা ভড়কাইয়া গিয়া জিজ্ঞেস করিলেন কেন জনাব কি হইয়াছে?

সেসব দেখিবার কি আপনার সময় রহিয়াছে?রোগীর বিছানায় কুকুর শুইয়া আছে তাহা কি আপনি দেখিয়াছেন।এই তাহলে হাসপাতালের চিত্র।

জরুরি বিভাগ হইতে তো ভেতরের রোগী ভর্তি তো সমাস বাবুই দিতেছেন কিন্তু কোনো কুকুর কে তো তিনি ভর্তি দিয়াছেন বলিয়া তো মনে পড়ে না। কি প্রতিউত্তর দিবে ভাবিয়া না পাইয়া সমাস বাবু বলিলেন, 'ঠিক আছে আমি এখনি দেখিতেছি।'

রাগান্বিত ব্যাক্তি আরও দিগুন রাগান্বিত হইয়া উচ্চস্বরে এমপি মহোদয়ের কাছে নালিশ করিয়া সমাস বাবুর একটা কঠিন বিচার করার হুমকি প্রদান করিতে করিতে চালিয়া গেলেন।

এই হাসপাতালের দায়িত্ব এই সময়ে যখন তাহারই তাই দেখভালের দায়িত্বও তাহার।তিনি জরুরি বিভাগে আগত রোগীদের রাখিয়া ভেতরে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করিতে গেলেন।গিয়া দেখিলেন সত্যিই একখানা কুকুর রোগীর বিছানায় শুইয়া আছেন।এই শীতের দিনে বেচার কুকুর আর শোবার জায়গা পাইলো না।খানিকক্ষণ আগেও যখন ভেতরের রোগি দেখিতে আসিয়াছিল তখনও ত কুকুর ছিল না হঠাৎ কি বুদ্ধি পাকাইয়া হাসপাতালের বিছানা দখল করিবার সাধ হইলো তাহার বোধগম্য নয় ।এই বিছানায় শুইতে গেলে যে জরুরি বিভাগ হইতে ভর্তি হইতে হয় তাহা মনে হয় এই আধমের জানা নাই।মানুষের হাসপাতালে পশুর এমন আয়েশি শয়ন দেখিয়া সমাজ সচেতন ব্যক্তির মগজ উত্তপ্ত হইবে বলিবার অপেক্ষা রাখেনা।সমাস বাবু মুঠোফোনে একটা স্থিরচিত্র ধারণ করিয়া কুকুরকে বিছানা হতে বিদায় করিলেন।

পরক্ষণেই স্থির চিত্রের দিকে তাকাইয়া সমাস বাবু চিন্তা করিলেন আগামীকাল পত্রিকায় যদি এই ছবিখানা ছাপাইয়া শিরোনাম করা হয় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার চিত্র তাহলে সমগ্র বঙ্গদেশের মানুষের মনে কি পরিমাণ না ক্রোধ সঞ্চার হইবে এবং এর মাঝে অনেকে হয়তো ডাক্তারে জাত তুলিয়া গালাগাল করিয়া ক্রোধ নিবারনে সচেস্ট হইবে।

আচ্ছা যে কুকুরকে সমাসবাবু তাড়াইয়া দিলো, নিশব্দে বিছানা হতে চলিয়া গেল তাহার মনে ও কি এই সমাস বাবুর বিরুদ্ধে ক্ষোভ থাকিবে।কই এই কক্ষে তো রোগী সমেত আরও জনা পনের লোক আছে কেউ তো তাকে বাধা দিলো না,যাহারা এই রুমের বাসিন্দা তাহাদের মধ্যে তো একজনের ও কোনো কিঞ্চিৎ সমস্যা হইয়াছে বলিয়া মনে হইলো না।কেও তো তাকে ইশারাতে চলিয়া যাইতে বলিলো না। তাহলে কোথা হতে উড়িয়া আসা এই লোকটার এত সমস্যা কোথায়? তীব্র শীতের রাতে বাহিরে বসিয়া এই অধম কুকুর কি এইসব ভাবিতে ভাবিতে সমাস বাবুকে অভিসম্পাত করিবে?

আজ কেন জানি সমাস বাবুর মনে প্রশ্নের পর প্রশ্ন উদগিরন হচ্ছে কিন্তু কোনো উত্তর তার জানা নাই।আচ্ছা কোন কবি যেন লিখিয়াছিলো
"গাড়ি আমার, বাড়ি আমার রাখছি পরিষ্কার,
নোংরা করছি দেশের মাটি
দেশটা তবে কার?"

তাহলে এই হাসপাতালের কক্ষটা কার?

যে দেশে কুকুরকে ধমক দেয়ার চেয় চিকিৎসককে ধমকানো সহজ,যে দেশে কুকুর তাড়াইবার চেয় এমপির কাছে নালিশ করিয়া হেনস্তা করা করা সহজ সে দেশে তাহার মতো অযোগ্য ব্যক্তির চিকিৎসা করিবার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা সে প্রশ্ন জাগে তার মনে।

আবার চিৎকার শোনা যাচ্ছে।সমাস বাবু আবার জরুরি বিভাগের দিকে হনহন করে ছুটছে।উচ্চশব্দ পরিস্কার কানে আসিতেছে 'জরুরি বিভাগ ফালাইয়া ডাক্তার বাবু কুকুর তাড়াইতে গিয়াছে।চিকিৎসা বাদ দিয়ে কি সরকার কি এখন ডাক্তারদের কুকুর তড়ানোর জন্য রাখিতেছে?

সমাস বাবু জানেন না এই সব প্রশ্নের উত্তর কি হইবে যেমন জানেনা বিলেতের চিকিৎসক হবার সুযোগ থাকা সত্বেও এই বঙ্গদেশের চিকিৎসক হওয়ার সিদ্ধান্ত ভুল ছিলো কিনা?

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৩

রাজীব নুর বলেছেন: ডাক্তার উপর রাগ করা মোটেও ঠিক না।
তারাও মানুষ। তাদেরও ঘর সংসার আছে।
২/১ জন ডাক্তার দুষ্ট হতে পারে। সবাই খারাপ না।

১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১২:১১

মার্ক টোয়েন বলেছেন: মুক্ত হোক ধরনী,শুদ্ধ হোক জীবন ও চিন্তা এই আমাদের কাম্য।

২| ০৯ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ৯:০৪

রাজীব নুর বলেছেন: নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসক-নার্স-অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা রোগীদের পাশে আছেন।
এর প্রতিদান অবশ্যই তারা পাবেন।

৩| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ১:১৪

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
আমেরিকায় ডাক্তারি পড়তে কোটি কোটি টাকা খরচ হয়, নিজের টাকায়।
সব হাসপাতালই বেসরকারি কর্পোরেট। এরপরও কোন হাসপাতাল বা ডাক্তার সেচ্ছাচার চালাতে পারে না, কেউ করোনা চিকিৎসা করতে অস্বীকার করতে পারে না।

কোন ডাক্তার বলতে পারে না "এটা নাই কেন? সেটা নেই কেন? আমি কারো বাপের টাকায় ডাক্তার হইনি যে করোনা চিকিৎসা করতে নিজের জীবন রিস্কে ফেলবো"
কারন সে ভাল করেই জানে এমনটা করলে রাষ্ট্র তার লাইসেন্সটা বাতিল করে দিবে।
তখন বিশাল ডাক্তারি ডিগ্রি থাকলেও বাকি জীবন ভিক্কা করে চলতে হবে।

১০ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:০১

মার্ক টোয়েন বলেছেন: জ্বি জনাব।অপনি মনে হয় ইউএসে তে কয়েক দিন আগে হওয়া ডাক্তার-নার্স দের আন্দোলন দেখেননি।নিজের অজ্ঞতা কে গুজব হিসেবে চালাবেন না।ভাল করে খোজ রাখুন।শুভ কামনা।

৪| ১০ ই এপ্রিল, ২০২০ রাত ২:৫৭

নেওয়াজ আলি বলেছেন: বহুত টাকা কামাই করছে মরে গেলে কে খাবে। তাই বাঁচতে চায় তারা।

১০ ই এপ্রিল, ২০২০ সকাল ১০:০৪

মার্ক টোয়েন বলেছেন: পরশ্রীকাতরতা যে জাতির রক্তে তাদের থেকে আর কি আশা করা যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.