![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি অসাধারণ এই পৃথিবীতে একজন সাধারণ হয়ে থাকতে চাই.... এবং কেনো জানি সাধারণ হয়ে থাকাটা বেশ কষ্টকর।
#করোনা_কালের_খোলা_চিঠি ৩
প্রিয় মিষ্টি দাদু,
হঠাত করেই আপনার সাথে আমার পরিচয়, বোধকরি খুব ছোটবেলায়। ছোটবেলায় আমার তো টই টই করে ঘোরার স্বভাব ছিল, আর যে সময়টায় আমি বড় হয়েছি, সেই সময়টায় আমাদের স্বাধীনতার উপর তেমন রোলার কোস্টার চলতো নাহ। কিছুটা বড় রাস্তা পার হওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা ছিলো, এছাড়া মোটামোটি বড় পরিচিত কারও সাথে কোথাও চলে গ্যালেও ঠিক সময় মতন ফিরে আসলে আর ঝামেলা থাকতো না। আর আমাদের বাসার সঙ্গেই ছিলো ছাপাখানা, আমার কাজ ছিলো কোনোমতে ঘুম থেকে উঠে ওই ফ্যাক্টরির আশেপাশে ঘোরাঘুরি করা আর বিজ্ঞানীগিরি করা। আর এই কাজে মোটামোটি সবার আস্কারাই পেতাম। খালি আব্বা আসলে আমাকে এক্টু শান্ত শিষ্ট দ্যাখা যেত। তো যাই হোক, আমাদের বাসার খুব কাছেই ছিল মিষ্টির কারখানা (এখনো আছে)। আগেরকার দিনে বাসায় লোক্জন আসলে মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করাই রীতি ছিলো। তো দ্যাখা যেত বাসায় বা অফিসে কেউ হয়তো এসেছে, তাকে আপ্যায়ন করার জন্য মিষ্টি কিনতে দোকানে যেতে হবে। যেহেতু আমি ঘুরতে ভালবাসতাম, আর মিষ্টি ব্যাপারটাও মন্দ না, তাই যে মিষ্টি কিনতে যেত আমিও তার সঙ্গে চলে যেতাম।
এভাবেই কোন এক কুক্ষণে আপনার সাথে আমার পরিচয়, তো যাই হোক মোটামোটি মিষ্টির কারণেই আপনার সাথে আমার পরিচয়। পছন্দের মিষ্টি ছিলো লালমোহন আর কালোজাম, ওই দোকানে গ্যালেই মিষ্টি কেনার পর ফাউ মিষ্টি পেতাম আপনার কাছ থেকে মাঝে মধ্যেই। পরে সেটা অভ্যাসে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। এখনও মিষ্টি কেনার পর একটা তো খাবই।
কিছুটা বড় হওয়ার পর আপনার জীবনাচরন আমার এক্টূ অদ্ভত লাগতে থাকে। এবং অনেক প্রশ্নও এসে জমা হয়। আপনি ছিলে সংসারত্যাগি সাধু মানুষ। ছোট বেলায় তো এতো কিছু বুঝতাম না, খালি আপনার জীবনাচরণ দেখতাম, আর আপনার সব কথাই ক্যামন জানি রহস্যমূলক, জিজ্ঞেস করতাম একটা জবাব দিতেন অন্য কি জানি। মাঝে মধ্যে বিরক্তও হয়ে যেতাম, যে জিজ্ঞেস করি একটা জবাব দ্যায় আরেকটা কি আজব কাহিনি রে বাবা। তবে বড় হওয়ার পর আপনার কথার অর্থ কিছু বুঝেছি আবার অনেকটাই বুঝিনি।
মাঝে মধ্যে অদ্ভুত টোটকা পেতাম আপনার কাছ থেকে… তার কিছু কিছু আসলেই কাজের, বাকিগুলাও হয়তো কাজের, কিন্তু আমি মনে হয় ঠিক মতন ট্রাই করতে পারিনি।
এরপর একদিন আপনার সাথে গল্প করার সময় শেষ হলো, প্রকৃতির নিয়মে হয়ে গেলাম ব্যাস্ত, তবুও দূর থেকে আপনার চোখে চোখ পড়লেই, আপনি আসতেন আমার কাছে, অথবা আমি যেতাম, আর আপনার ছিল সেই চোখভরা হাসি আর মুখে, “কি খবর ভাই? আছো ক্যামন? মিষ্টি খাইবা নিকি একটা?” শেষের দিকে আমি অবশ্য ফ্রি মিষ্টি খেতে চাইতাম না, তাও মাঝে মধ্যে জোর করে দিতেন। আর হঠাত করে একটা রহস্যমূলক কথা। যার উত্তর স্বভাবতই আমার কাছে নেই। আমিও কিছুক্ষন মাথা চুলকিয়ে, বা হেসে বলতাম আচ্ছা দাদু পরে জানাবো উত্তর। আপনিও হেসে বলতেন আচ্ছা…
এভাবে থাকতে থাকতে হঠাত আপনি হারিয়ে গ্যালেন, তাও প্রায় ৫ বছর তো হবেই। কোথায় আছেন জানিনা, শেষের দিকে শরীর ভেঙ্গে গিয়েছিল বয়সের ভারে, আর কাজও ত্যামন করতে পারতেন না। সারাদিন বসে থাকতেন দোকানের একটা কোনায়, দেখলেই হাসি আর সেই এক কথা। হয়ত মালিক পক্ষের বোঝা হয়ে থাকতে চাননি তাই একদিন আবার শুরু করলেন আপনার যাত্রা….
আর আমি খুজে বেরাই সেই জটাধারী অদ্ভুত চোখের মানুষটাকে আমার পরিচিত শহরে, যার মুখে হাসি আর অদ্ভুত ভালোবাসায় ভরা ডাক…“কি খবর ভাই? আছো ক্যামন?”
ভালো কথা, আপনার নিরুদ্দেশ ভ্রমণের মাস ছয়েক আগে (সম্ভবত…) তিনটা প্রশ্ন করেছিলেন আমাকে। অন্তত সেটির ঊত্তর জানার জন্য হলেও আমার আপনাকে খুজে বের করতে হবে… আশাকরি যেখানেই আছেন ভালো আছেন…
ছবিটা সম্ভবত ২০০৯ সালে তোলাঃ তুলে দিয়েছিলো সালমান
আগের পর্ব
০৬ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:২৩
মাসুক আহমেদ বলেছেন: ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১|
০৬ ই জুন, ২০২০ বিকাল ৩:১৯
রাজীব নুর বলেছেন: দাদুকে ভা্লোবাসা নিয়ে স্মরন করেছেন! খুব ভালো।