![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আবির বড় করে হাই তুলল। বসে থাকতে থাকতে তার পিঠ ব্যথা করছে। কোন রুগী-টুগী নেই। কাজ ছাড়া দীর্ঘক্ষন বসে থাকা যন্ত্রনার। অস্থির অস্থির লাগে। কাজে ব্যস্ত কলিগরা মাঝে মাঝে উঁকিঝুকি দেয়। তাদের চোখের দৃষ্টি বলে- আছেন তো মৌজে। কাজকর্ম নেই। বসে বসে বেতন। অথবা তাদের দৃষ্টিতে এসব কিছুই নেই। বিষয়টা নিজের মনে আছে বলেই হয়তো এরকম মনে হয়।
আবির উঠে দাড়াল। তার পা ঝি ঝি করছে। পা ফেলতেই মনে হল হাজার পাওয়ারের ভোল্টেজ পায়ের নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পা পাথরের মতো ভারী। তোলা যাচ্ছে না। সে কিছুক্ষন দাড়িয়ে হাটাহাটি শুরু করল। বিশাল রুম। একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে কয়েকবার হাটলে সকালের মর্নিংওয়াক হয়ে যাবার কথা। পুরোরুম ফাঁকা। শুধু মাঝখানে দৈত্য আকৃতির একটা এক্সরে মেশিন। এই মেশিন দেখে রোগীদের মুখ শুকিয়ে যায়। ভীত হরিনের মতো তাকিয়ে থাকে। রোগগ্রস্ত অবস্থায় এমনিতেই মন থাকে দূর্বল। তার উপর রোগীর সাথে এখানে কাউকে ঢুকতে দেয়া হয় না। ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। প্রথম প্রথম অপারেট করতে নিজেরই ভয় লাগত। অতি ক্ষুদ্র সময় রশ্মি বিচ্ছুরিত করে শরীরের ভিতরের অংশের ছবি তোলা হয়। যদি কোন কারনে সুইচ বন্ধ করার পরও রেডিয়েশন বন্ধ না হয় তাহলে কি হবে? এমনিতেই বেশী রেডিয়েশন গেলে ত্বকে ক্যানসার, ব্রেন টিউমার, গর্ভের শিশুর জন্মগত ত্রুটি কত কি হতে পারে। তারপরও উইলহেম রনজেন সাহেবের একমহান আবিষ্কার এই এক্সরে। এর আগে ডাক্তাররা মানুষের শরীরে ভেতরের জিনিস দেখতে পেত না। ছুরি চালিয়ে আগে শরীর ফালা ফালা করে কাটতে হত। রনজেন সাহেব এক্সপেরিমেন্টের অংশ হিসাবে প্রথমে তার স্ত্রীর হাতের ছবি তোলেন। তাতে পরিস্কারভাবে ধরা পড়ে হাড় ও আংটি । তিনি আনন্দে চিৎকার করে উঠেন।
আবির চেয়ারে এসে বসল। আজ বোধহয় কোন রুগী-টুগী আসবে না। এক্সরে রুমের ইনচার্জ হিসাবে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতায় সে লক্ষ করেছে-বর্ষাকালে হাড়াভাঙ্গা রুগী বেশী আসে। এসময়ে গ্রামগঞ্জের মানুষ হাড় ভাঙ্গে বেশী
বিকেল চারটার পর তার সময়ই কাটতে চায় না। আজ আখিও নেই। সে থাকলে তিনতলায় গিয়ে চুপে তাকে দেখে আসা যেত। লুকিয়ে লুকিয়ে তার ব্যস্ততা দেখতে ভালোই লাগে। কাজে ব্যস্ত থাকা মানুষকে সুন্দর দেখায়। শ্বেত শুভ্র নার্সের ড্রেসে আখি ছুটোছুটি করে রুগীর সেবাযত্ন করে। তখন তার মুখ থেকে অপার্থিব সৌন্দর্য ফুটে বের হয়। মনে হয় ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল ছুটোছুটি করছে। তবে ভুলেও এই সময়ে তার সামনে পড়া যাবে না। চোখমুখ কুঁচকে এমনভাবে তাকাবে মনে হবে সে বিশাল অপরাধ করে ফেলেছে। তার আজ দিনে ডিউটি নেই।
সে ড্রয়ার থেকে একটা ম্যাগাজিন টেনে বের করল। তার ড্রয়ার ভরতি ম্যাগাজিন। চোখ জ্বালা না করা পর্যন্ত সে একটানা পড়ে। বসে বসে পড়তে তার খারাপ লাগে না। কিন্তু আখি এটা একদম পছন্দ করে না। এ নিয়ে বাসায় প্রায়ই কথা বলে।
তুমি খেয়াল করেছ তোমার পেটে কি পরিমান চর্র্বি জমেছে? সারাদিন বসে থাক। পেটে চর্বি না জমে কি হবে?
সারাদিন বসে থাকি এ তথ্য তোমাকে কে দিল? আমার বুঝি কাজ নেই।
সে মুখ টিপে হাসে।
কি কাজ তা তো বুঝতেই পারি। যতোবার তোমার রুমের সামনে দিয়ে গিয়েছি, দেখি তুমি বসে আছ।
তুমি আবার নিচে নামো কখন?
প্রয়োজন হলে নামি।
আমার সাথে দেখা কর না কেন?
দেখা করতে তো নামি না। কাজে নামি।
আবির মুখ কালো করে ফেলে। আখি মনে মনে হাসে। তিনতলার ওয়ার্ড থেকে সে মাঝে মাঝে নিচে নামে। কোন কাজ ছাড়াই নামে। উদ্দেশ্য এক্সরে রুমে উকি দিয়ে আবিরকে একপলক দেখা। কিন্তু সে এটা কাউকে বুঝতে দেয় না। এমন ব্যস্ততার ভাব করে যেন সবাই মনে করে সে কাজে নেমেছে।
আবিদ প্রায়ই ভাবে তার এক্সরে রুমটা যদি তিনতলায় হতো। সারাক্ষণ তাকে দেখা যেত বা কথা বলা যেত। তবে আখি কথা বলত কিনা সন্দেহ। হঠাৎ হঠাৎ তার সাথে দেখা হলে আবির কথা বলার চেষ্টা করে। কিন্তু সে ‘এখন ব্যস্ত আছি, এখন ব্যস্ত আছি’ বলে দ্রুত চলে যায়।
রাতে মশারি টানাতে টানাতে আবির একদিন জিজ্ঞেস করল, আচ্ছা আখি তুমি হাসপাতালে আমার সাথে কথা বলো না কেন? ওখানে দেখা হলে মনে হয় তুমি আমাকে চিনোই না।
আখি পত্রিকার নারী পাতা উল্টাচ্ছিল। সেটা ভাজ করে রাখতে রাখতে বলল, তোমার সাথে কথা বলতে দেখলে অপরিচিতরা মনে করবে আমরা হাসপাতালে প্রেম করছি। ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে থাকবে। চেষ্টা করবে রহস্য খোঁজার। তারপর বলাবলি করবে এই হাসপাতালের নার্সরা ষ্টাফদের সাথে প্রেম করে বেড়ায়। আমি চাই না আমাদের নিয়ে এসব কথাবার্তা হোক।
মানুষজন কি ভাববে তারজন্য আমার সাথে কথা বলবে না। আশ্চর্য তো।
আখি হাই তুলতে তুলতে বলল, এ বিষয়ে কথা বলতে ভালো লাগছে না। ঘুমাব।
আবির আর কথা বাড়াল না। আখির মুখের দিকে তাকাল। ঠিক মুখে নয়, চোখের দিকে। এই মূহুর্তে বাংলাদেশে যদি কোন সুন্দর চোখের মেয়ে থাকে সে আখি। হঠাৎ বিদ্যু চমকালে যেরকম উজ্জ্বল আলো দেখা যায়,তার চোখ সেরকম উজ্জ্বল আলো। তার এই উজ্জ¦ল চোখের জন্য তাকে এতটা জীবন্ত দেখায়, মনে হয় একজন শক্তিশালী মানবী তার পাশে আছে। হাই তোলার সময় তার চোখদুটো ছোট হয়ে আসছিল। আবার হাই বন্ধ হলে চোখদুটো বড় হচ্ছিল। আবির পলকহীন চোখে তাকিয়ে রইল।
আখি ব্যাপারটা লক্ষ করে বলল, বিয়ের পর তুমি কি কাজে সবচেয়ে বেশি সময় নষ্ঠ করেছ জান?
কি কাজে?
আমার চোখের দিকে তাকিয়ে। এত কি দেখ?
বলব?
বল।
প্রকৃতির গভীরতম সৌন্দর্য দেখি। রোদ আর মেঘের লুকোচুরি দেখি। শরতের স্বচ্ছ আকাশ দেখি। এক টুকরো শুভ্র মেঘ ভাসতে দেখি।
আখি খিলখিল করে হেসে উঠে।
মেশিন অপারেট বাদ দিয়ে তুমি রোমান্টিক কাব্য চর্চা শুরু করেছ কবে থেকে?
রোমান্টিক কাব্য চর্চা করতে হয় না। অপার্থিব সৌন্দর্য দেখলে মানুষ এমনিতেই রোমান্টিক হয়ে যায়।
চোখের সৌন্দর্য তার কাছে একটা বড় ব্যাপার। চোখের সৌন্দর্য বাড়াতে কত মেয়ে কত কিছু করে! কেউ পার্লারে গিয়ে ভ্রু প্লাগ করে, চোখে মাসকারা লাগায়, কেউ রঙিন কন্টাক্ট লেন্স পড়ে, আরো কত কি! কিন্তু সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে যার চোখে সৌন্দর্য দেন, তার এসবের কিছুই প্রয়োজন হয় না।
তাদের বিয়ে হয়েছে নয় মাস। নিজেদের পছন্দ করা বিয়ে না। পারিবারিকভাবে বিয়ে। সময়ের সাথে সাথে মুগ্ধতার ঘোর কমে আসে। কিন্তু যতই দিন যাচ্ছে আবিরের মধ্যে মুগ্ধতা বাড়ছে।
আবির সন্ধ্যার আগে আগে বাসায় ফিরে দেখে আখি হাসপাতালে যাবার জন্য তৈরী হচ্ছে। বেচারীকে সপ্তাহে দুদিন নাইট ডিউটি করতে হয়। এ দুটো দিন তার অস্বস্তিতে কাটে। মনে হয় তার সম্পদ হঠাৎ করে হারিয়ে গেছে। জগতে পরিপূর্ণ সুখ ও স্বস্তি বলে কিছু নেই। সে মনে মনে একটা ছোট্ট নিঃশ্বাস ফেলে।
ভোরবেলা কলিংবেল টিপতেই আবির দরজা খুলে দেয়। রাত জাগরনের ক্লান্তিতে আখির চোখ ঢুলুঢুলু করছে। মনে হচ্ছে- চোখে ঘনকালো মেঘ জমেছে।
আখি হাসিমুখে বলল, একবার বেল টিপতেই তুমি দরজা খুলে দিলে। কি ব্যাপার রাতে ঘুমাওনি।
এই আজকে একটু তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙ্গেছে।
আখি কিছু বলল না। সে জানে তার নাইট ডিউটির সময় তার ভালো ঘুম হয় না। অস্বস্তিতে কাটে। সে ওয়াশরুমে ঢুকল। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে রান্নাঘরে ঢুকল এবং বিস্ময়ে হতভম্ব হয়ে গেল।
সে চিৎকার করে বলল, এই তুমি কি করেছ? কে তোমাকে এসব করতে বলেছে?
এই একটু নুডুলস রাধলাম। ব্যাচেলর থাকতে তো প্রায়ই রাধতাম। আজ আমারটা খেয়ে দেখ!
আনাড়ি হাতের রান্নায় আলাদা এক স্বাদ আছে। সে অনেকট নুডুলস খেল। খেতে খেতে বলল, তুমি তো আমার অভ্যাস খারাপ করে দিলে। এরপর নাইট ডিউটি থেকে ফিরেই আমি তোমার হাতের এই নুডুলস খেতে চাইব। তখন?
খেও। কোন সমস্যা নাই।
আখি রহস্যময় ভঙ্গিতে একটু হাসল। তারপর বলল, একটা সুখবর আছে। আর ভোরে তোমাকে দরজা খুলতে হবে না। নুডুলসও রাধতে হবে না। বসের সাথে কথা বলেছি। আগামী মাস থেকে আমার নাইট ডিউটি অফ।
আবির বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকাল। কিছু বলল না। নাস্তা সেরে সে বাইরে চলে গেল। হয়তো হাটবে। ফেরার সময় বাজার নিয়ে ফিরবে। আখি নাস্তা সেরে বেডরুমে গেল। দু’তিন ঘন্টা ঘুমিয়ে নেয়া দরকার। সে পর্দা টেনে রুম পুরোপুরি অন্ধকার করল। বিছানায় গিয়েও তার ঘুম এলো না। তবুও মন খারাপ লাগছে না। যাক একটা ফাড়া কেটেছে। আর নাইট উিউটিতে যেতে হবে না। আবির মুখে কিছু না বললেও সে বেশ বুঝতে পারে নাইট ডিউটি তার পছন্দ না। সে চাকরিই ছেড়ে দিত যদি একজনের আয়ে সংসার চলত। বাড়িওয়ালাই তো তাদের আয়ের সিংহভাগ থাবা দিয়ে নিয়ে যায়।
চোখ নিয়েও তার ভাবনা হয়। এই ভাবনা আগে ছিল না। আবির তার চোখ এত পছন্দ করে! চোখের এই সৌন্দর্য সারা জীবন থাকবে! নাকি বয়স বাড়ার সাথে সাথে পরিবর্তন হয়ে যাবে। এসব ভাবনায় কিছুক্ষণ পর সে নিজেই বিরক্ত হয়। পরিবর্তন হবে না কেন? বয়স বাড়লে চুল পাকবে। চুলের মতো ভ্রু পাকবে। মুখের পেশি সংকুচিত হবে। সাথে সাথে চোখের নিচের অংশ ঝুলে পড়বে। প্রত্যেক মানুষকে বয়সের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। তবে এ সময়টা তার শ্রেষ্ঠ সময় মনে হয়। ইস এ সময়টা যদি সারাজীবন ধরে রাখা যেত। মানুষকে কেন বৃদ্ধ হতে হবে?
দুপুরে আবির খেতে বসল। আখি সামনাসামনি বসলা না। পাশে বসল। সামনাসামনি বসলে আবির ঠিকমতো খায় না। চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আচ্ছা আখি, হসপিটালে ডিউটি করার সময় তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে রোগীরা প্রেমে পড়ে না?
প্রেমে পড়বে কেন? আমি তো মহিলা ওয়ার্ডে কাজ করি।
মহিলাদের আত্মীয়রা যারা আসেন তারা তো পুরুষ। তারা নিশ্চয়ই পড়েন।
তা জানি না। তবে পড়লে আমি কি করব?
একটা কাজ করলে হয় না। তুমি ডিউটি করার সময় সানগ্লাস পড়ে থাকবে।
আখি হেসে ফেলল।
হাসছো যে।
তোমার ছেলেমানুষি দেখে। রুমের ভেতর সানগ্লাস পরে থাকি। আর তা দেখে সবাই হাসাহাসি করুক। আমাকে নিয়ে হাসাহাসি করলে তোমার ভালো লাগবে?
আবির বৈয়াম থেকে আমের আচার নিল।
আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তুমি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে ঠিকমতো খাও না। সেজন্য একটা সানগ্লাস কিনবো। এখন থেকে তোমার খাবার সময় সানগ্লাস পরে থাকব। যাতে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে না
থাক?
সর্বনাশ। বুদ্ধি দিলাম কি। আর উল্টা দেখি আমাকেই ঘায়েল করছ। তুমি সানগ্লাস পড়ে থাকলে তো একবারেই খাব না।
ঠিক আছে সানগ্লাস পড়ছি না। এখন দয়া করে খাও।
দুই
স্বামী স্ত্রী যারা দু’জনে চাকরি করে একসাথে ছুটি পাওয়া একটা আনন্দের ঘটনা। এই আনন্দের ঘটনা যেদিন ঘটে তারা সেদিন বাসায় থাকে না। সুন্দর সুন্দর জায়গায় ঘুরতে যায়, আত্মীয়-স্বজন বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে দেখা করতে যায় অথবা মার্কেটে ঘুরে ঘুরে শপিং করে। অনেকদিন পর তারা দুজনে একসাথে ছুটি পেল।
আজ তাদের ইচ্ছে মার্কেটে ঘুরে ঘুরে কিছু দরকারী জিনিসপত্র কেনা। সকালবেলা নাস্তা সেরেই তারা বের হয়ে গেল। কিন্ত মার্কেটে এসে দরকারী জিনিসের চেয়ে সৌখিন জিনিস কিনে হাত ভরতি করে ফেলল। আখির খুব পছন্দ ক্রিষ্টালের বিভিন্ন ধরনের মগ, মূর্তি ও স্থাপিত্যশিল্পের শোপিস এবং এগুলো দিয়ে শোকেস সাজানো। আবিরের এসব শোপিসে আগ্রহ নেই। কিন্তু এগুলো দেখলে আখির চোখ-মুখ এমন উজ্জ্বল হয়ে উঠে, তার খুশী দেখার জন্য সে এগুলো কিনে।
দুপুরবেলা তারা একটা চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে খেতে গেল। থাইস্যুপ, প্রন ফ্রাই, চিকেন ফ্রাইড রাইস ভরপেট খেয়ে তারা যখন বের হল তখনো বাইরে প্রচন্ড রোদ। আখি একটা চশমার দোকানে দাড়িয়ে সানগ্লাস দেখছিল।
এই শোন, এই সানগ্লাসটা নেব?
আবির স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আখি তার চাহনী দেখে দ্রুত বলল, যা ভাবছ তা না। খাবার সময় পড়ব না। তখন দুষ্টমি করে বলেছি। বাইরে বের হলেই পড়ব। প্রমিজ।
তাহলে কেনো।
আখি বিশাল আয়নায় কয়েকবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তার মুখের সাথে মানানসই একটা সানগ্লাস কিনল। আবিরের কাছে মনে হল-উজ্জ্বল আকাশ ঘনকালো মেঘে ঢাকা পড়ল।
আখি আদুরে গলায় বলল, তাকিয়ে কি দেখছ? ভালো লাগছে না?
হ্যা ভালো লাগছে। বাইরে বের হলে তোমার সানগ্লাস পড়াই উচিত।
আখি মুখ টিপে হেসে বলল, কেন? অন্যছেলেরা চোখ দেখে পছন্দ করে ফেলবে বলে!
না, তা-না। সৃষ্টিকর্তা তোমাকে এত সুন্দর দুটো চোখ দিয়েছেন। যত্ন নিতে হবে না?
এত যত্নের দরকার নেই। সৃষ্টিকর্তা আমার চোখ এমনিতেই ভালো রাখবেন।
বাইরে এখনও রোদে তেজ। আবিদ বলল, চলো সিনেমা দেখে আসি।
আখি ইতস্তত করে বলল, এখন! ব্যাগট্যাগ হাতে।
কিছু হবে না। ব্যাগগুলো আমার হাতে দাও।
তারা সিনেকমপ্লেক্সে ছবি দেখল। ছবি দেখে তারা যখন বের হল তখন সন্ধ্যা নেমে গেছে।
মার্কেটের কাছ থেকে কোনো রিক্সাই যেতে চায় না। কেউ কেউ বলছে, ঐ এলাকায় গেলে খালি রিক্সা নিয়া ফিরন লাগবো।
তারা দুজনে কিছুক্ষন হাটল। তাদের বাসাও বেশি দুরে না। আবিরের ইচ্ছে করছে হেটেই বাসায় যেতে।
সে বলল, চলো হেটে হেটে যাই। অনেক ভালো লাগবে।
আখিরও হাটতে ইচ্ছা করছিল। হেটে গেলে মজা হতো। কিন্ত এতোগুলো প্যাকেট আবিরের হাতে নিয়ে হাটতে হবে দেখে সে বলল, পাগল হয়েছ। এই রাতে হাটার কোনো ইচ্ছা নেই।
শেষে এক বুড়ো রিক্সাওয়ালা দ্বিগুন ভাড়ায় যেতে রাজি হল। তারা উঠে বসল। আবিরের অস্বস্তি লাগছে। বুড়োদের রিক্সায় উঠলে তার এরকম হয়। রাস্তায় যানবাহন কম। বসন্তের ফুরফুরে হাওয়া বইছে। এই হাওয়া গায়ে লাগলে মনে অকারনে উচ্ছ্বাসিত হয়ে উঠে। আখি হড়বড় করে কথা বলছে। মাতাল হাওয়ায় তার খোলা চুলগুলো উড়ছে।
আখি বলল, চুপ করে আছ কেন? বাতাসটা খুব মিষ্টি না?
হু।
জানো ছোটকালে আমার কি শখ ছিল?
কি?
একটা রিক্সা কেনার। মানুষ টাকা হলে গাড়ি কেনে, বাড়ি করে। আমার ইচ্ছে ছিল- টাকা হলে আমি একটা রিক্সা কিনব।
রিক্সা!!
আখি হাসতে হাসতে বলল, আমি জানতাম তুমি শুনলে খুব অবাক হবে। কিন্তু সত্যি বলছি, আমি যখন নাইন টেনে পড়ি তখন ভাবতাম- আমার বরকে একটা রিক্সা কিনে দিতে বলব। দিনে চলব না। যেই বিকেল বা সন্ধ্যা হবে, রিক্সায় করে সারা শহর ঘুরে বেড়াব।
একা একা?
যাহ, বিয়ের পর একা একা ঘোরা যায়? তোমার যে কি চিন্তা!
আবির মৃদু হাসল।
হঠাৎ পো পো শব্দ করে একটা ট্র্যাক তীব্র গতিতে তাদের পাশ দিয়ে চলে গেল। কিছু গরম বাতাস তাদের চোখে মুখে এসে লাগল। দুজনের বুকটা ধক করে উঠল।
আবির তীক্ষèকন্ঠে বলল, চাচা আরেকটু সাবধানে চালান।
ভালোই বাতাস বইছে। আখির খোলা চুলগুলো বারবার মুখে এসে পড়ছে। সে একটু পরপর মুখ থেকে চুলগুলো সরাচ্ছে। চুলের সাথে সাথে সাথে তার ওড়নাও উড়ছে। আশেপাশে গাড়ি খুব জোরে হর্ন দিচ্ছে।
আখি হড়বড় করে বলল, আবার আমরা দুজনে একসাথে ছুটি পেলে ....
সে কথা শেষ করতে পারল না। হুট করে রিক্সা থেকে নিচে পড়ে গেল। আবির কিছু বুঝে উঠার আগেই রিক্সাটাও উল্টে গেল। সে ধুম করে লাফ দিল। কথা বলতে বলতে কখন যে আখির ওড়নার একটা অংশ চাকার সাথে পেচিয়ে গেছে। নিচে পড়ার সাথে সাথে আখির চোখ জ্বলে উঠল। রিক্সার একটা স্পোক তার বাম চোখে ঢুকে গেছে। সে অজ্ঞান হয়ে গেল।
ছয় মাস চিকিৎসার পর আখি বাসায় ফিরেছে। তার বাম চোখটা পুরো নষ্ট হয়ে গেছে। তখনো ব্যান্ডেজ লাগানো।
সেদিন খেতে বসে আখি বলল, তুমি তো আর আমার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকবে না! তোমার তাকাতে হবে না! ওই সানগ্লাসটা তো ভাঙ্গেনি। আমি ওটা সবসময় পরে থাকব।
----------------
০৭ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:২৭
মায়াবীসময় বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
২| ০৭ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:২৮
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন:
চমৎকার একটি কল্পকাহিনী। ভালো লেগেছে। তবে কাহিনীর আকার একটু বড় হয়েছে। ছোট হলে পড়তে সুবিধে হয়। ধন্যবাদ ভালো থাকুন নিরন্তর।
৩| ০৭ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:৩৭
মায়াবীসময় বলেছেন: পড়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
৪| ১৩ ই জুন, ২০১৬ বিকাল ৪:১৩
বিজন রয় বলেছেন: ভাল গল্প।
++++
ছবিটিও সুন্দর।
©somewhere in net ltd.
১|
০৭ ই জুন, ২০১৬ দুপুর ১২:১৪
নিরব জ্ঞানী বলেছেন: গল্পের শেষেরটা দুঃখের হলেও লিখাটা ভাল লেগেছে।