নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যেই সুন্দর সুন্দরই আমার সৌন্দর্য

মো: মেহেরুল ইসলাম

আমি খুবই সাধারন একটা মানুষ।জ্ঞানের দিক থেকেও অতি ক্ষুদ্র ও নগন্য।তবে স্বপ্ন দেখি অনেক বিশাল।কারন স্বপ্ন দেখতে কোন খরচাপাতি লাগে না।আমি ধর্মের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল।তবে ধর্মান্ধ নই।

মো: মেহেরুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিজয়ের পেছনে মুক্তিযোদ্ধাদের অদম্য ইচ্ছা শক্তিই

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৩১



" ধন ধ্যান্য পুষ্পে ভরা,
আমাদের এই বসুন্ধরা,
তাহার মাঝে আছে দেশ এক সকল দেশের সেরা।"
হ্যা আমার জন্মভূমি বাংলাদেশ সকল দেশেরই সেরা।কেননা এমন সবুজে ঘেরা সৌন্দর্যমন্ডিত দেশ পৃথিবীতে আর একটিও নেই।এ দেশে জন্মে আমি গর্বিত।১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ৩০লক্ষ প্রাণ আর অসংখ্য মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে পাকিস্তানি হানাদারদের পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে জাতি অর্জন করেছিলো বিজয়ের পতাকা।সকল অত্যাচার,অন্যায়,শোষনের হাত থেকে বাচার লক্ষ্য নিয়ে এ জাতি মুক্তিযুদ্ধ করেছিলো, আমাদের উপহার দিয়েছিলো স্বাধীন স্বার্বভৌম একটি মানচিত্র।

আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের ৪৫ বছর পূর্ণ হলো। নতুন প্রজন্ম স্বাধীনতা যুদ্ধের নমুনা, দলিল ও প্রমাণাদি দেখার জন্য যাদুঘরে যায়। বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধের অনেক স্মৃতি-স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কয়েকটি জাদুঘরও প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এসব প্রদর্শনের পাশাপাশি আমাদের সাহিত্যে, দলিলপত্র ও চিঠিপত্রে একাত্তরের যুদ্ধচিত্র নানাভাবে তুলে ধরা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের পাঠানো বা লেখা সে সময়কার চিঠি প্রমাণাদি অমর কথামালায় পরিণত হয়েছে। এসব চিঠি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দলিল হিসেবে চিহ্নিত।

পঁয়তাল্লিশ বছর আগে লেখা এসব চিঠি পাঠ করলে একাত্তরের প্রকৃত অবস্থা, একজন মুক্তিযোদ্ধার মনোভাব বা অনুভূতি এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেয়া যায়।প্রত্যেকটি চিঠি পাঠ করলে মুক্তি যোদ্ধাদের অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও অগাধ দেশপ্রেমের নিগূঢ় পরিচয় ফুটে ওঠে।দেশ তথা স্বদেশভূমিকে শত্রু মুক্ত করতে তাদের শত বাধাও যে কাটা হতে পারেনি তা এসব সংগৃহীত চিঠি পাঠ করলেই বোঝা যায়।মুক্তি যুদ্ধকালীন সময়ে আপন পরিজন কে উদ্দেশ্য করে লেখা এসব চিঠি অধিকাংশই মুক্তিযোদ্ধারা লিখেছে তাদের মাকে উদ্দেশ্য করে।অনেকেই দেশ মাতৃকাকে তাদের মায়ের সাথে তুলনা করে জীবন উতসর্গ করার কথা বলেছেন।এমন মায়া মমতা মাখানো চিঠির প্রত্যেকটি ভাষা আর শব্দে মিশে আছে মুক্তিযোদ্ধাদের দেশমাতৃকার প্রতি গভীর মমত্ববোধ।মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা এসব চিঠি পাঠ করলেই যে কার চোখে অশ্রুধারা নেমে আসবে নিশ্চিত।কি গভীর মমতা মাখা চিঠির প্রত্যেকটি শব্দ।আমাদের নতুন প্রজন্মের সকলেরই এসব চিঠি পাঠের মাধ্যমে জানা দরকার মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত সত্য ঘটনা ,কতো ত্যাগের মধ্যে দিয়ে অর্জিত আমাদের এই স্বদেশ ভূমি।তাদের আরো জানা দরকার কতো মমত্ববোধ হৃদয়ে লালন ধারন করলে শত বাধা পেরিয়ে জীবনের মায়া ত্যাগ করে শত্রুর উপর ঝাপিয়ে পড়া যায়।কতো কষ্ট যন্ত্রনা সহ্য করে হাসিমুখে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া যায় দেশের তরে।
মুক্তিযোদ্ধাদের লেখা কয়েকটি চিঠির চিত্র দেখলেই সহজেই অনুমান করা যায় তাদের দেশ প্রেম ছিলো কতটা গভীর আর গাঢ়।

১৯৭১ সালের ৪ই এপ্রিল তারিখে শহীদ জিন্নাত আলী খান তার “মা”কে লিখেছেন-
“মা,
আমার সালাম গ্রহন করবেন।পর সংবাদ,আমি আপনাদের দোয়ায় এখনো পর্যন্ত ভালো আছি।কিন্তু কতোদিন থাকতে পারবো বলা যায় না।বাংলা মাকে বাঁচাতে যে ভূমিতে আপনি আমাকে জন্ম দিয়েছেন,যে ভাষায় কথা শিখিয়েছেন,সেই ভাষাকে,সেই জন্মভূমিকে রক্ষা করতে হলে আমার মতো অনেক জিন্নার প্রান দিতে হবে।দুঃখ করবেন না,মা।আপনার সম্মান রক্ষা করতে গিয়ে যদি আপনার এই নগন্য ছেলের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়, সে রক্ত ইতিহাসের পাতায় সাক্ষ্য দেবে যে বাঙালি এখনো মাতৃভূমি রক্ষা করতে নিজের জীবন পর্যন্ত বুলেটের সামনে পেতে দিতে দ্বিধাবোধ করে না।“

“মা রাহেলা খাতুন এর হতভাগ্য ছেলে খোরশেদ “-এর ২৩ এপ্রিল ১৯৭১ তারিখে লেখা মাকে লেখা চিঠি এমনঃ-
“মা
দোয়া করো।তোমার ছেলে আজ তোমার সন্তানদের রক্তের প্রতিশোধ নিতে চলেছে।বর্বর পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্টী আজ তোমার সন্তানদের ওপর নির্বিচারে অত্যাচার চালিয়ে যাচ্ছে।যেখানে তোমার সন্তানদের ইজ্জতের উপর আঘাত করেছে,সেখানে তো আর তোমার সন্তানেরা চুপ করে বসে থাকতে পারে না।তাই আজ তোমার হাজার হাজার বীর সন্তানেরা বাঁচার দাবি নিয়ে বাংলাদেশ কে স্বাধীন করবার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছে।তোমার নগন্য ছেলে তাদের মধ্যে একজন।“
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজের লেখা। প্রাপক তাঁর স্ত্রী মার্জিনা, সাকিন: কুজাইল, নাটোর। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল আজিজ তার স্ত্রীকে ফজিলাকে লিখছেন একাত্তরের ১৬ এপ্রিল। তিনি লিখেছেন:
প্রিয় ফজিলা,

জানি না কী অবস্থায় আছ। আমরা তো মরণের সঙ্গে যুদ্ধ করে এ পর্যন্ত জীবন হাতে নিয়ে বেঁচে আছি। এর পরে থাকতে পারব কি না বুঝতে পারছি না। সেলিমদের বিদায় দিয়ে আজ পর্যন্ত অশান্তির মধ্যে দিন কাটাচ্ছি। আবার মনে হয় তারা যদি আর একটা দিন আমাদের এখানে থাকত তাহলে তাদের নিয়ে আমি কী করতাম। সত্যিই ফজিলা, রবিবার ১১ এপ্রিলের কথা মনে হলে আজও ভয় হয়। রাইফেল, কামান, মেশিনগান, বোমা, রকেট বোমার কী আওয়াজ আর ঘরবাড়ির আগুনের আলো দেখলে ভয় হয়। সুফিয়ার বাড়ির ওখানে ৪২ জন মরেছে। সুফিয়ার আব্বার হাতে গুলি লেগেছিল। অবশ্য তিনি বেঁচে আছেন। সুফিয়াদের বাড়ি এবং বাড়ির সব জিনিস পুড়ে গেছে। আমাদের বাড়িতে তিন-চার দিন শোয়ার মতো জায়গা পাইনি। রাহেলাদের বাড়ির সবাই, ওদের গ্রামের আরও ১৫-১৬ জন, সুফিয়ার বাড়ির পাশের বাড়ির চারজন, দুলালের বাড়ির সকলে, দুলালের ফুফুজামাই দীঘির কয়েকজন এসে বাড়িতে উঠল। তাই বলি, সেই দিন যদি আব্বা এবং সেলিমরা থাকত তাহলে কী অবস্থা হতো। এদিকে আমরাও আবার পায়খানার কাছে জঙ্গলে আশ্রয় নিলাম। কী যে ব্যাপার, থাকলে বুঝতে। বর্তমানে যে পরিস্থিতি তা আর বলার নয়, রাস্তার ধারের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা নেই। রোজ গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগি ছাড়াও যুবতী মেয়েদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে।(সংক্ষিপ্ত)

শহীদ কিশোর ফারুকের লেখা। যুদ্ধে যখন সে অংশ নেয় তখন চট্টগ্রাম সিটি কলেজিয়েট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র। সে নোয়াখালীর বামনী বাজারের যুদ্ধে শহীদ হয়। এই চিঠিখানিতে ফারুক তার বাবাকে লিখেছিল:
তাং ২৩-০৫-১৯৭১ইং
জনাব বাবাজান,
আজ আমি চলে যাচ্ছি। জানি না কোথায় যাচ্ছি। শুধু এইটুকু জানি, বাংলাদেশের একজন তেজোদৃপ্ত বীর স্বাধীনতাকামী সন্তান হিসাবে যেখানে যাওয়া দরকার আমি সেখানেই যাচ্ছি। বাংলার বুকে বর্গী নেমেছে। বাংলার নিরীহ জনতার ওপর নরপিশাচ রক্তপিপাসু পাক-সৈন্যরা যে অকথ্য বর্বর অত্যাচার আর পৈশাচিক হত্যালীলা চালাচ্ছে, তা জানা সত্ত্বেও আমি বিগত এক মাস পঁচিশ দিন যাবত্ ঘরের মধ্যে বিলাস-ব্যাসনে মত্ত থেকে যে ক্ষমাহীন অপরাধ করেছি, আজ সেই অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য যাত্রা শুরু করলাম। সমগ্র বাঙালি যেন আমায় ক্ষমা করতে পারেন। আপনি হয়তো দুঃখ পাবেন। দুঃখ পাওয়ারই কথা। যে সন্তানকে দীর্ঘ ষোল বছর ধরে তিল তিল করে হাতে-কলমে মানুষ করেছেন, সে ছেলে আপনার বুকে বারবার শনি কৃপাণের আঘাত হেনেছে, যে ছেলে আপনাকে এতটুকু শান্তি দিতে পারেনি অথচ আপনি আপনার সেই অবাধ্য দামাল ছেলেকে বারংবার ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখেছেন, যার সমস্ত অপরাধ আপনি সীমাহীন মহানুভবতার সঙ্গে ক্ষমা করেছেন। আপনি আমাকে ক্ষমা করেছেন সম্ভবত একটি মাত্র কারণে যে, আপনার বুকে পুত্রবাত্সল্যের রয়েছে প্রবল আকর্ষণ।(সংক্ষিপ্ত)

এসব গভীর মমতা আর দরদ মাখানো চিঠি পড়লেই বোঝা যায় প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দেশপ্রম,মায়ের সমতুল্য এই দেশ মাতার প্রতি তাদের নিখাদ ভালোবাসার চিত্র কতো নিখুত আর শৈল্পিক হাতে আঁকানো। কি প্রবল ইচ্ছাশক্তি তাদের সাহস যুগিয়েছিলো শত্রুর উপর ঝাপিয়ে পড়তে।তাদের এমন নিখাদ ভালোবাসা,মমতা মাখানো কথার ঝুড়ির পুষ্পমাল্য আমাদের ভবিষ্যৎ তরুন প্রজন্মকে জুগিয়ে যাবে অনুপ্রেরনা।জাগ্রত করবে বিবেক আর চেতনা ।ভালোবাসতে শেখাবে দেশ তথা মায়ের সমতুল্য আপন মাতৃভূমি কে।যে কোন সংকূল পরিবেশে দেশকে কিভাবে শত্রু মুক্ত করতে হয়ে সে অনুপ্রেরনা লাভ করতে শেখাবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় লেখা এরকম চিঠি আমাদের ইতিহাসের উপকরণ ও সম্পদ। আমাদের উত্তরাধিকারীরা এসব চিঠি পড়ে একাত্তরের স্মৃতিকে স্মরণ করবে। তারা জানবে স্বাধীনতা যুদ্ধের কথা, মুক্তিযোদ্ধাদের কথা। তারা আরো জানবে এদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল ত্রিশলক্ষ প্রাণের বিনিময়ে।


মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৫:৪২

চাঁদগাজী বলেছেন:


মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল মানসিক শক্তিই জাতিকে মুক্ত করেছে।

২| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩২

কানিজ রিনা বলেছেন: একসাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলার স্বাধীনতা
আনল যারা আমরা তোমাদের ভুলবনা।

আমাদের দেশটারে কত ভালবাসি
সবুজ ঘাসের বুকে সেফালির হাসি।

আমার দেশের মত এমন দেশকি
কোথাও আছে বউ কথা কউ
পাখি ডাকে নিত্য হিজল গাছে। ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.