নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মেহরিন চৌধুরাণীর blog এ আপনাকে welcome

মেহরিন চৌধুরানী

আমি খুব সাধারণ একটি মেয়ে। আমি একজন বাঙালি মুসলিম। আমি রাজনীতিতে জড়িত থাকতে পছন্দ করিনা, ঝগড়া পছন্দ করিনা। এক কথায় শান্তিপ্রিয় একজন মানুষ। সবার সাথে মিশে থাকতে ভালোবাসি।

মেহরিন চৌধুরানী › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'এক ফোঁটা জল\' লেখিকাঃ Mehrin Chowdhury

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৩১



-----"প্যাক করা লাল জুতো জোড়া হাতে নিয়ে পকেটে হাত ঢুকাতেই আতিক সাহেবের চোখমুখ সাদা হয়ে গেলো!"

থতমত হয়ে দোকানিকে জুতো জোড়া ফিরিয়ে দিয়ে করুন মুখ করে বললেন, "ভাই মানিব্যাগটা খুঁজে পাচ্ছিনা, মনেহয় পকেট কাটা গেছে, আরেকদিন নাহয় এসে জুতো জোড়া নিয়ে যাবো।"

দোকানি কিছু একটা বলতে এসেও বলল না।
আতিক সাহেব দোকানির হাতে জুতোর প্যাকেট টা দিয়ে দিলেন।

"ডিসেম্বর মাসের শীত, প্রচন্ড ঠান্ডা পড়ে তখন।
এই শীতের রাতে পাতলা একটা চাদর গায়ে দিয়ে রাস্তায় হাঁটছেন আতিক সাহেব।"

মধ্যবিত্ত লোক থেকে উনি এখন নিম্নমধ্যবিত্ত হয়ে গেছেন।
ছয়মাস আগেও তার সংসার মোটামোটি ভালোই চলতো।
দুই মেয়ে পরী, তরী আর স্ত্রী রেহানাকে নিয়ে ছোট্ট একটা সংসার।

একটি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন আতিক সাহেব।

মাসে ১০হাজার টাকা মাইনে পেতেন। সুখেই কাটছিলো তাদের।

কিন্তু ছয়মাস আগে হঠাত্‍ স্কুলটা বন্ধ হয়ে যায়।

"একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ তার অফিস বানিয়ে নেন ওই স্কুলটিকে।"

এতে স্কুলের সব স্টাফের চাকরি চলে যায়। অনেক অনশন করেও কোনো লাভ হয়নি।

"ওরা প্রভাবশালী যা ইচ্ছে করতে পারে তাদের সাথে কতসময় ই বা আর যুদ্ধ করা যায়।"

চাকরি চলে যাওয়ার ধার দেনা করেই দুইটা মাস পার করেছিলেন পরিবারকে নিয়ে।

গত দুইমাস আগে একটা কারখানায় হিসাব রক্ষকের কাজ পান। ছয়হাজার টাকা বেতন। গতমাসের বেতন দিয়ে কিছুটা ধার শোধ করা হয়েছে এখনও সামান্য বাকি ছিলো।

ভেবেছিলেন এমাসে টাকাটা পেলে শোধ করে দেবেন।
কিন্তু ভাগ্যের দোষে আজ বেতনটা পেয়েও হারিয়ে ফেললেন।

সারা মাসটা এবার কিভাবে কাটবে ভাবতেই বুকের বা পাশে চিনচিনে একটা ব্যথা করতে লাগলো!!

কিন্তু সবচেয়ে বেশি কষ্ট হচ্ছিলো তার বড় মেয়ে পরীর জন্য। আগামী কাল ক্লাস সিক্সের ছাত্রী পরীর জন্মদিন।

তাছাড়া মেয়েটা এবার গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।

আতিক সাহেব পরীকে কথা দিয়েছিলেন যে পিএসসি তে ভালো ফলাফল করলে একটা দামী গিফট দেবেন তার জন্মদিনে। তখন চাকরী ও ছিলো, কিন্তু এখন . . . . . . .

পরী দুমাস আগে ঐ জুতোজোড়ার কথা বলেছিলো কিন্তু অভাবের কারনে তাকে জুতোজোড়া কিনে দেয়া হয়নি।

আজ যখন আতিক সাহেব বাসা থেকে বের হ্চ্ছিলেন তখন দৌড়ে মেয়েটা সামনে এসে দাড়িয়েছিলো, আর মিটিমিটি হাসছিলো।

অভয় দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে এসেছেন, "আজকে বেতনটা পেয়ে যাবো, আসার সময় আনবো"

মেয়েটা পথ চেয়ে বসে আছে সারাটা দিন থেকে।

ভাবতে ভাবতে বাসার রাস্তার পাশে একটা পাথরের সাথে হোচট খেয়ে পড়ে গেলেন আতিক সাহেব। মাথা ফেটে রক্ত বের হয়ে এলো।

ঠান্ডা কুয়াশায় ঘেরা রাত, শীতে ঠকঠকিয়ে কাঁপছে আতিক সাহেবের সারা শরীর।
মনে হচ্ছে জ্বর আসছে।

মাথাটা প্রচন্ড ঘুরছে, উঠে দাঁড়াতে গিয়েও উঠতে পারলেন না আতিক সাহেব।

অনেক রাত হয়েছে তাও আতিক সাহেব বাড়িতে আসছেন না বলে উনার স্ত্রী রেহানা মেয়ে পরীর হাত ধরে বাড়িওয়ালা চাচাকে নিয়ে আতিক সাহেবকে খোঁজতে বের হয়েছেন।

হঠাত্‍ করে আতিক সাহেবের চোখ পড়লো কুয়াশা ভেদ করে এগিয়ে আসছে বাড়িওয়ালা চাচা , পরী আর পরীর মা।

ঐ তো তাদের হাতের টর্চের আলো দেখা যাচ্ছে।

আতিক সাহেবের কাছে বুকের ব্যথাটা এখন অসহ্য লাগছে। মাথার ভেতরটা ঝিমঝিম করছে। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। সবকিছু ঝাপসা লাগছে।
হঠাত্‍ আতিক সাহেবের চোখ থেকে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো, ডিসেম্বর মাসের কুয়াশায় ঢাকা রাতে বরফের মতো ঠান্ডা আবহাওয়ায় এক ফোঁটা উষ্ণ জল আতিক সাহেবের গাল ছুঁয়ে গেলো।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.