![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুব সাধারণ একটি মেয়ে। আমি একজন বাঙালি মুসলিম। আমি রাজনীতিতে জড়িত থাকতে পছন্দ করিনা, ঝগড়া পছন্দ করিনা। এক কথায় শান্তিপ্রিয় একজন মানুষ। সবার সাথে মিশে থাকতে ভালোবাসি।
-১-
- রাত ১১.৩৫, পাশেই শুয়ে আছে মিমি। যার জন্য আমি আজ আবার চোখের আলো ফিরে পেয়েছি। আমাকে আরেকবার জীবন দিয়েছে এই মেয়েটি। আজ সত্যিকার ভালবাসা অনুভব করতে পারছি এই মেয়েটির প্রতি।
- কাজিন সিস্টার ছিল আমার। ছোটবেলা থেকেই ওকে চিনি, কথা হয়নি কোনদিন। সোশাল নেটওয়ার্কিং এর সুবাদে কথা হত। ধীরে ধীরে ও আমার প্রতি এক্সট্রা কেয়ার নিতে শুরু করেছিল।
ও দেখতে খারাপ না, মোটামুটি। তবে শ্যামলা। আমার থেকে খুব বেশি ছোট না। তাই আমিও এগুইনি। কারণ এই সম্পর্ক বেশিদূর যেতে পারতো না। তাছাড়া এত হ্যান্ডসাম হয়ে ওকে বিয়ে করা থেকে অনেক সুন্দরি মেয়েই পাব আমি।
- একসময় ওকে এভয়েড করতে থাকি। বুঝাতাম যে তোমার সাথে কথা বলতে চাইনা।
প্রথম প্রথম না বুঝলেও পরে আর ও আমাকে মেসেজ দিতনা।
-মাঝে মাঝে আমিই ওকে মিস করতাম, তখন মেসেজে হাই হ্যালো এরকমভাবে চলতে থাকল কিছুদিন।
- একদিন আমি ভার্সিটি থেকে ফিরছিলাম। অসাবধানতার কারণে এক্সিডেন্ট করি।
জ্ঞান হারাবার আগে মনে আছে শুধু ঝাপসা চোখে একটি মেয়েকে দেখলাম, আমার মুখের উপর ঝুকে কিছু জিজ্ঞেস করছে। তারপর আর কিছু মনে নেই।
- জ্ঞান ফিরল তিন দিন অজ্ঞান থাকার পর। কিন্তু চোখে অন্ধকার দেখছি। আমার জ্ঞান ফেরতে দেখে একজন নার্স ডক্টরকে ডেকে আনলেন। কিছু টেষ্ট করে জানা গেল মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পাওয়ায় আমার চোখের আলো নিভে গেছে। তবে কেউ যদি তার একটা চোখ আমাকে দান করে তাহলে আমি দেখতে পাব।
-মিমি এসে আমাকে জিজ্ঞেস করল ও চোখ দিলে আমি রাজি হব কি না। আমি রাজি হলাম না, তারপরো মিথ্যে বলে মিমি আমার সাথে চোখ বদল করল। অপারেশন শেষে আমি দেখতে শুরু করলাম।
- দু'মাস পর জানতে পারলাম ওর পানচিনি। আমাদের দাওয়াত ছিল বিধায় গিয়েছিলাম।
গিয়ে আরেক কাজিনের থেকে জানতে পারলাম মিমিই নাকি আমাকে চোখ দিয়েছে। আর আজ মিমির এক চোখে আলো নেই বলেই বিয়েটা ভেংঙ্গে গেছে।
- কোথা থেকে অনেক সাহস এসে বুকে ভর করল। আম্মাকে ডেকে নিয়ে সব সত্যি বলে বললাম, আম্মা আমার জন্য ওর ভাল বিয়ে আর কোনদিনো হবেনা। আমি মিমিকে বিয়ে করতে চাই, ওর বাবা মা'র সাথে কথা বল।
-ওইদিনই মিমির সাথে আমার বিয়েটা হয়ে যায়। গত একবছর আমরা একসাথে থেকেও জড়তা থেকে কেউ কারো সাথে কথাই বলতে পারিনি। ও বরাবরই লাজুক মেয়ে, নিজে থেকে কথা বলা তো দূরে থাক, তাকাতেও পারেনা।
- আজ রাত ১২টা হলেই আমাদের বিয়ের একবছর পূর্ন হবে। এখন বাজে রাত ১১.৫৫। হাতে বেশি সময় নেই। আস্তে আস্তে উঠে বারান্দায় গেলাম মিমির জন্য রাখা সারপ্রাইজ আনতে।
-২-
-বেদনার রঙ নাকি নীল হয়। এই রংটা ভীষণ প্রিয় মিমির।
এজন্যই বুঝি তার এত কষ্ট!
যে মানুষটাকে সারাজীবন ভালবেসে এসেছে তার সাথে বিয়েটা হয়েছে সত্যি তবে ভালবাসাটা আর পাওয়া হয়নি।
-মাঝে মাঝে মিমির মনেহয় নির্ঝরের জীবনে অন্য কেউ আছে। যদি থেকেও থাকে শুধু শুধু করুণা করে মিমিকে বিয়ে করার কি দরকার টা ছিল?
- এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমটা প্রায় চলে এসেছে তখনই অনেকগুলো কি যেন মিমির উপরে এসে পড়লো!
তড়িঘড়ি করে টেবিল ল্যাম্প টা জালিয়ে দেখলো অনেকগুলো গোলাপের পাপড়ি। আর দরজায় হাসিমুখে দাঁড়িয়ে আছে নির্ঝর।
এক হাতে একটা বক্স আর আরেক হাত ভরতি গোলাপের পাপড়ি।
-- কাচা ঘুমটা ভাঙিয়ে দিলাম বুঝি মিস পাগলি? Oooooppsss!! sorry sorry, মিসেস পাগলি। happy anniversary!
মিমি জড়িয়ে ধরল নির্ঝরকে।
শব্দ করে কেঁদে উঠলো।
অস্পষ্ট করে বলে উঠলো, ভালবাসি.....
-নির্ঝরের মনে হল এর থেকে ভাল বউ সে হাজার খুঁজলেও পেতনা। এত কাছে থেকেও সে আগে বুঝেনি এই মেয়েটা তাকে কতটা ভালবাসে।
-আমিও তোমাকে ভালবাসি। এতদিন কষ্ট দেওয়ার জন্যে সরি মিমি।
যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেব। ভুল হয়ে গেছে এই কান ধরছি দেখ। (নির্ঝর)
- মুচকি হেসে মিমি বলল, "আমার বানানো কেক পুরোটা খেতে পারলেই হবে।"
-- নিজের হাতে বানানো কেক সামনে নিয়ে মোমবাতিতে আগুন ধরাচ্ছিল মিমি। এইপাশে দাঁড়িয়ে নির্ঝর দেখছে, মোমবাতির আলোয় উছলে পড়া এক শ্যামলা মেয়ের সৌন্দর্য। ফরসা মেয়ে বিয়ে করলে এই আশ্চর্যজনক সৌন্দর্য দেখা কোনদিন হতনা।
©somewhere in net ltd.