![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুব সাধারণ একটি মেয়ে। আমি একজন বাঙালি মুসলিম। আমি রাজনীতিতে জড়িত থাকতে পছন্দ করিনা, ঝগড়া পছন্দ করিনা। এক কথায় শান্তিপ্রিয় একজন মানুষ। সবার সাথে মিশে থাকতে ভালোবাসি।
-১-
তিতিরের সাথে ব্রেকাপ হয়েছে সাড়ে সাত মাস হবে। প্রথম সময়টা ছিল অনেক মধুময়। ভালবাসতাম মেয়েটাকে খুব। কিন্তু বছর খানেক যাওয়ার পর আমার তিতিরে সবকিছুতেই খারাপ লাগতো। তাছাড়া তিতির উড়নচণ্ডী মেয়ে। খামখেয়ালিপনা আর ইচ্ছের ঘুড়ি ওড়ানোটাই ছিল ওর কাছে জীবন। তবে আমাকে বড্ড ভালোবাসতো মেয়েটা। ব্রেকাপের কথা বলতেই কান্নাকাটি আর দোষ না হলেও মাফ চাওয়া থেকে হাতে পায়ে ধরার জন্যই অনেকবার ব্রেকাপ হতে হতেও হয়নি।
কিন্তু শেষের দিকে আমি আর পারছিলাম না। ব্রেকপটা হয়েই গেল শেষমেশ। তিতির বুঝে গেছিলো আমার আগ্রহ আর ওর প্রতি নেই। তাই সেবার আর জোরাজুরি করেনি, নিঃশব্দে সরে গেছিলো।
মাসখানেক পরে এক বিয়েতে নীরার সাথে পরিচয় হয়েছিল আমার, নাম্বার দেওয়া নেওয়া অতঃপর প্রেম।
নীরাকে খুব ভালোবেসে ফেলেছিলাম, কিন্তু নীরা আমাকে অবহেলা করতো। ঠিক যেমন আমি তিতিরের সাথে করতাম। অন্ধের মত বিশ্বাস করতাম নীরকে।
নীরা প্রায় সময় আমার থেকে এটা ওটা কিনবে বলে টাকা নিত। আমিও দিতাম খুব বেশি ভালোবাসি বলে না করতাম না।
সেই নীরা আজ আমাদের ৬মাসের রিলেশনশিপ এর তোয়াক্কা না করে বিয়ের পিড়িতে বসতে যাচ্ছে।
বিকেলে শপিংমলে গেছিলাম একটু কাজে। হঠাৎ দেখি নীরা একটা ছেলের হাত ধরে হাটছে। দুজনেরই হাতে অনেকগুলো শপিংব্যাগ।
ফলো করতে লাগলাম তাদের। তারা একটা কফিশপে ঢুকে বসলো।
আমি ওদের ঠিক উল্টো দিকে বসলাম যাতে আমাকে না দেখতে পায়।
যদি ছেলেটা নীরার পরিবারের কেউ হয় আর নীরা যদি বুঝে উঠতে পারে আমি ওকে সন্দেহ করেছি তাহলে আর রিলেশনই রাখবেনা।
- আচ্ছা তোমাকে বিয়েতে নীল রঙের শেরওয়ানীতে বেশ লাগবে, আজকাল একটু আনকমন চলে। (নীরা)
- তোমার লাল শাড়ির সাথে আমার মিলবেনা তো। (লোকটা)
- তাতে কি সোনা? আজকাল সব মিলিয়ে পরতে হয়না। (নীরা)
আমি উঠে দাঁড়িয়ে নীরাকে উদ্দেশ্য করে বললাম, হ্যালো নীরা।
নীরা বুঝে গেল আমি সব জেনে গেছি। কোনো সীন ক্রিয়েট না করেই হাসিমুখে বলল, ভাল আছি ইফফাত। তুমি কেমন আছো?
গতকাল রাতেও কথা হয়েছে অথচ এমনভাবে বলছে জেনো অনেকদিন পরে দেখা হয়েছে। আমিও হাসি মুখ করে বললাম, ভালো আছি।
হঠাৎ পাশ থেকে নীরার সাথে থাকা লোকটা জিজ্ঞেস করল, উনি কে নীরা?
"আমার বন্ধু", এক ঝটকায় উত্তর দিল নীরা।
হাই! পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো। আমি আশরাফুল ইসলাম। এএফ গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির মালিক। আর নীরার হবু স্বামি।
নীরা তখন মাথা নীচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি বললাম, শুনে ভাল লাগলো। আচ্ছা আমার একটু কাজ আছে। আমি আসি।
বুকের ভেতরটা তখন ভেঙে যাচ্ছিল। একরকম পালিয়ে এলাম ওদের থেকে।
- এখন রাত একটা, তিতিরের কথা খুব মনে পড়ছে। ৭মাস আগে এমন কষ্ট আমিও ওকে দিয়েছিলাম।
ফেসবুক লগিন করতেই হোমপেজে এলো নীরা আক্তার got engaged with Md Asraful Islam.
নীরা আক্তার নামটাকে ব্লক করতে গিয়ে ব্লকলিষ্টে চোখে পড়ল একটা নাম ''Titir Khandaker''
তিতিরকে unblock করে message দিলাম, কেমন আছো তিতির?
৫মিনিট পর রিপ্লে দিলো, ভালো, তুমি?
- কাল একবার দেখা করতে পারবে? তাহলে নিজেই দেখতে পারবে কেমন আছি। (আমি)
- সময়? (তিতির)
- সকাল ১১টা, যে রেস্টুরেন্টে আগে যেতাম। শাড়ি পরে এসো। (আমি)
- হুম (তিতির)
-২-
সকাল ১০.৩০, হাতে একগুচ্ছ গোলাপ। একবক্স চকোলেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি রেস্টুরেন্ট এর সামনে।
দূরে দেখা যাচ্ছে মেজেন্টা রং এর শাড়ি পরা তিতির এগিয়ে আসছে। মেয়েটা এই কদিনে অনেক সুন্দর হয়ে গেছে।
- কিজন্য ডেকেছো? (তিতির)
- ইচ্ছে হল তাই।(আমি)
- ভেতরে চল। (তিতির)
- কি খাবে বল? (আমি)
- তুমি যা অর্ডার করবে। (তিতির)
দুটো সুপ অর্ডার করে কোণার দিকের এর টেবিলটায় বসলাম।
- এখন বল, কিজন্য ডেকেছো? (তিতির)
হাটু গেড়ে বসে ফুল গুলো এগিয়ে দিয়ে বললাম, will you marry me?
তিতির হতভম্ব হয়ে বসে আছে।
আমি বললাম কেউ আছে নাকি জীবনে?
তিতির আমার দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে যা বললো আমি এর জন্যে প্রস্তুত ছিলামনা।
যেদিন আমার আরর তিতিরের ব্রেকাপ হয়েছিল, সেদিনই তিতির জানতে পারে তার ব্রেইন টিউমার হয়েছে।
ফাস্ট স্টেজ, তবে অপারেশনে ঝুঁকি আছে। ৫০-৫০ চান্স।
তাই সেদিন ব্রেকাপের কথা বলায় তিতির আর জোর করেনি।
তিতিরের কথা শুনে আমার মাথায় জেনো আকাশ ভেঙে পড়লো। আমি তিতিরের ভালোবাসাকে হারাতে পারবোনা।
জড়িয়ে ধরলাম তিতিরকে। তিতির আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে।
-৩-
আজ তিতিরের অপারেশন। অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর তিতিরের ফ্যামিলির সবাই।
তিন ঘন্টা হয়ে গেছে অলরেডি। আমার তিতির ফিরে আসবে তো?
বুকের ভেতরটা ফাকা ফাকা লাগছে। চোখ দিয়ে অঝোরে ঝরছে জল।
হঠাৎ করে তিতিরের বাবা বললেন, লাল বাতিটা নিভে গেছে। অপারেশন শেষ।
মাথা তুলে দেখলাম একজন ডক্টর বের হয়ে আসছেন।
দৌড়ে গেলাম কাছে।
- ডক্টর পেশেন্ট কেমন আছে? (আমি)
- অপারেশন সাকসেসফুল। (ডক্টর)
- আমারা ওর সাথে দেখা করতে পারি?
(তিতিরের মা)
- অবশ্যই তবে ১২ঘন্টা পরে। (ডক্টর)
১২ ঘন্টার কথা বলা হলেও ১৭ঘন্টা পর জ্ঞান ফেরে তিতিরের।
তিতিরের বাবা মা ওর রুম থেকে চলে গেছে। আমি বসে আছি তিতিরের পাশে।
তিতির কাপা কাপা গলায় বললো, একি অবস্থা হয়েছে তোমার?
-বিয়ে করবে? আজ আর বাহানা করার মত কিন্তু কোন কিছু নেই। (আমি)
- রাজি তবে আগে ভালো হয়ে নেই।
তিতিরের হাতে পরিয়ে দিলাম রিং। হঠাৎ হাততালির শব্দে তাকিয়ে দেখি তিতিরের পুরো পরিবারের সাথে আমার পরিবারও।
আমাদের engagement টা অদ্ভুতভাবে হসপিটালে হলো।
পরে অবশ্য ঘটা করে আরেকবার হবে।
-৪-
আজ আমাদের বিয়ে। দেখে দেখে নতুন বছরের প্রথম দিনটাকে বেছে নিয়েছি আমরা। তিতিরকে সাথে নিয়ে মিঃ আশরাফুল ইসলাম আর মিসেস নীরা আশরাফকে বাসায় গিয়ে ইনভাইট করে এসেছি।
নীরার মুখটা দেখার মত হয়েছিলো।
তিতিরকে সব বলে ক্ষমা চেয়ে নিয়েছি। তিতির বলেছে পুরোনো কথা পুরনো বছরের সাথেই থাকুক।
তিতির আর আমার নতুন জীবন শুরু হয়েছে।
আমার বুকে শুয়ে আছে তিতির। জানালা দিয়ে চাঁদের আলো পড়ছে আমাদের উপর। পুরনো সব ভুলে গেছি আমরা।
নতুন বছরের নতুন রাত আর আমাদের নতুন জীবন একসাথে শুরু হল।
©somewhere in net ltd.