নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের কথা বলতে চাই

পাখির চোখে বিশ্ব দেখি

পাখির চোখে বিশ্ব দেখি › বিস্তারিত পোস্টঃ

শুঁটকির বাজারে বিড়াল চৌকিদার!

১৬ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:১৭

দুনিয়াতে আমাদের চেয়ে মাথামোটা উজবুক জাতি দ্বিতীয় আরেকটি আছে কি না জানা নেই। আমরা বিড়ালকে শুধু শুঁটকির বাজারের চৌকিদারই বানাই না। শুঁটকি খোয়া গেলে তা তদন্ত করে দেখার দায়িত্বও সেই বিড়ালের ওপরই অর্পণ করে নিজেরা নাকে সরিষার তেল মেখে ঘুমাই।
বর্তমান জমানায় পৃথিবীর এক দেশ অন্য দেশের রাজনৈতিক বা সামরিক শত্রু হওয়ার চেয়ে অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীই বেশি হয়ে থাকে। প্রতিবেশীর সাথে আমাদের রাজনৈতিক বা সামরিক শত্রুতা না থাকলেও এই অর্থনৈতিক কম্পিটিশন অস্বীকার করা যাবে না। একই ধরনের রিসোর্স বা ওয়ার্ক ফোর্স থাকাতে অনেক জায়গাতেই আমরা তাদের জন্য কম্পিটিটর বা হুমকি হয়ে পড়েছি। আমরা দুই আনা, চার আনা থেকে শুরু করে চৌদ্দ আনা পর্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বী থাকি কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে জীবনখানা ষোলআনাই মিছে হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকে অতিসম্প্রতি ঘটে যাওয়া তথাকথিত ‘হ্যাকিং’র ঘটনাটি আমাদের বোধ ও চেতনাকে নতুন করে ধাক্কা দিয়েছে। আমাদের অর্থনৈতিক নিরাপত্তা তথা জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্নের উদয় হয়েছে। আমাদের জাতীয় সম্পদ কতটুকু অরক্ষিত কিংবা সেসবের নিরাপত্তা নিয়ে আমরা কতটুকু নিস্পৃহ বা ড্যাম কেয়ার তা স্পষ্ট হয়েছে। আজ মনে পড়ছে মহান মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিলকে। অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতাÑ এই সতর্ক বাণীটি তিনি অনেক আগেই উচ্চারণ করেছিলেন। তার সেসব কথাই আজ অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। আমরা খুশি মনেই বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সাংস্কৃতিক পঙ্গুত্ব বরণ করে নিয়েছি। রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক গোলামীকে আমরা সাংস্কৃতিক সুষমার ক্যাপসুলে ঢুকিয়ে ফেলেছি। দেশপ্রেমকে আমরা এ দেশের গাছপালা, নদী-নালা নিয়ে দেশাত্মবোধক গানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ করে ফেলেছি। আমাদের মতো এত অধিকসংখ্যক দেশাত্মবোধক গান নাকি পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে নেই। আমাদের কৃতজ্ঞতাবোধও মাত্রা ছড়িয়ে গেছে। ১৯৭১ সালে যে ধর্ষকের হাত থেকে বাঁচিয়েছে তার প্রতি এতটুকু কৃতজ্ঞ হয়ে পড়েছি যে ভুলে গেছি সে-ও একজন পুরুষ। আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার সব স্তরে এই ভ্রমটি জায়গা করে নিয়েছে।
কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি দেশের জীবন কৌটার মতো। জীবন কৌটা মানে যে কৌটার ভেতর একটি জাতির আত্মা রাখা থাকে। একটি জাতির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কিংবা স্বর্ণের মজুদ এখানে গচ্ছিত রাখা হয়। দেশের অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠিও এই ব্যাংকের হাতে থাকে। এই ব্যাংকের সুইফট কোডসহ অন্যান্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর ইনফরমেশন এই ব্যাংকের কর্তাব্যক্তিদের নিয়ন্ত্রণে বা জিম্মায় থাকে। এখন খোদ এই কর্তাব্যক্তিদের বিশ্বস্ততা, দক্ষতা এবং দেশ ও জনগণের প্রতি তাদের আনুগত্য ও দায়বদ্ধতা নিয়ে মারাত্মক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। হ্যাকিংয়ের দোহাই দিয়ে এর দায় তারা এড়াতে পারেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন জানিয়েছেন, ভেতরের সহযোগিতা ছাড়া এ ধরনের চুরি কখনো সম্ভব নয়।
সবচেয়ে বড় কথা হলো, এই চুরির কথা বেমালুম চেপে যাওয়া হয়েছিল। ফিলিপিন্সের সংবাদমাধ্যমে খবরটি প্রকাশিত হওয়াতে মাসখানেক পর তা এ দেশের মানুষের গোচরে এসেছে।
এখানে মজার ব্যাপারটি হলো, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক পরামর্শক হলেন ইন্ডিয়ার নাগরিক রাকেশ আসখানা। অর্থাৎ তার নিরাপত্তার চাদরে থাকার সময়েই এই মহাচুরির ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছে। এখন আবার তারই নেতৃত্বে ওয়ার্ল্ড ইনফরমেটিক্সের একটি ফরেনসিক তদন্তদল এ ঘটনার তদন্ত করছে। তদন্ত করতে গিয়ে কিছু জায়গায় আটকে যাওয়ায় অধিকতর দক্ষতাসম্পন্ন ফায়ারআইকে তিনি তদন্তকাজের সাথে যুক্ত করেছেন বলে জানা গেছে। অর্থাৎ তিনি পেয়েছেন তদন্ত করার মূল কন্ট্রাক্ট এবং আমেরিকান এই কোম্পানিটিকে তিনিই সাব কনট্রাক্টর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন।
জানি না, আজ এগুলো নিয়ে কিভাবে মনের এই কষ্টগুলো প্রকাশ করা যাবে। দেশের মধ্যে একটি দল যেকোনো কিছুর বিনিময়ে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চায়। তজ্জন্য রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে সব ধরনের বিরোধিতাকে খতম করে ফেলেছে। গণতন্ত্রের কবর রচনা করে একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে। এটিকেই আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির হর্তাকর্তারা আন্তর্জাতিক মানের গণতন্ত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন। এখন আমরা সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক মানের গণতন্ত্র ফেরি করতে পারব। আমাদের প্রতিবেশী ঢোল বাজাবেন আর গণতন্ত্রকে খাঁচিতে ভরে মাথায় নিয়ে গ্লোবাল ভিলেজ ঘুরে ঘুরে বলব, গণতন্ত্র লাগব গো, আন্তর্জাতিক মানের গণতন্ত্র। একেবারে গোপালগঞ্জের খাঁটি গণতন্ত্র।
বিএনপির কোমর যতটুকু ভাঙার ভেঙে দিয়েছে। একটি দলের ওপর দশ বছর ধরে রাষ্ট্রীয় শক্তি প্রয়োগ করে ধ্বংসের চেষ্টা চলছে।
দেশের বামপন্থী দলগুলো যারা এসবের প্রতিবাদ করত এবং একধরনের মরাল ব্রিগেডের মতো কাজ করত তারাও আজ নানা বিভ্রান্তিতে পড়ে গেছে। ডানপন্থী দলগুলো তো নিজেরাই দৌড়ের ওপর রয়েছে। আর রাষ্ট্রের বিভিন্ন শাখায় যারা রয়েছেন তারা এটিকে নেহাত চাকরি হিসেবেই গ্রহণ করেছেন। তারাও বিভিন্ন চকোলেট পেয়েই বলতে গেলে সন্তুষ্ট হয়ে পড়েছেন।
ফলে অসহায় হয়ে পড়েছে এ দেশের ষোল থেকে সতের কোটি মানুষ।
এ ক্ষেত্রে দেশের সর্বশেষ আশ্রয় বা বিবেক হিসেবে এ দেশের মিডিয়া যে ভূমিকাটি রাখতে পারত তা-ও আর দেখা যাচ্ছে না। ২০০৭ ও ২০০৮ সালে দুর্নীতির বিরুদ্ধে আমাদের মিডিয়ার যে জেহাদ দেখা গেছে তা-ও আজ মিইয়ে গেছে। ২০০৮ সালে সাধারণ নির্বাচনের দিন বা তার আগে বিশেষ কায়দায় প্রকাশ করা হয়েছিল বিদেশে দুর্নীতি বা মানিলন্ডারিংয়ের একটি তরতাজা খবর। ইউরেকা, ইউরেকা বলে আর্কিমিডিসের মতো ল্যাংটা হয়ে দৌড় দিয়েছিল মিডিয়ার অনেকেই।
সে সময় মাত্র কয়েক কোটি টাকা নিয়ে যে মাতামাতি হয়েছে আর আজ কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে আট শ’ কোটি টাকা খোয়া যাওয়ার পরও এই সুমসাম নীরবতা এসব মিডিয়ার আসল চেহারাটি তুলে ধরেছে। সোস্যাল মিডিয়া না থাকলে এই খবর হয়তো দেশবাসী জানতেও পারত না। কয়েক কোটি টাকার সেই মানিলন্ডারিং নিয়ে সবচেয়ে উৎসাহী পত্রিকাটির আজকের (১২-০৩-২০১৬) অনলাইনে বড় শিরোনাম হলো- দুই নাতিকে নিয়ে রুনা লায়লার উচ্ছ্বাস, প্রিয়াংকাকে বিয়ের প্রস্তাব শাহরুখের, হাসপাতালে সুজানা (চেকআপের জন্য) ইত্যাদি ইত্যাদি।
এরাই নাকি আবার দেশের সর্বোচ্চ প্রচারিত দৈনিক পত্রিকা!
জানি না, কখন জাতির এই মরণ ঘুমটি ভাঙবে? শুঁটকির বাজারে বিড়াল চৌকিদার!
মিনার রশীদ; উপসম্পাদকীয় @ দৈনিক নয়াদিগন্ত
http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/102074

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ৯:৩৬

বিজন রয় বলেছেন: শুঁটকির বাজারে বিড়াল চৌকিদার!

হা হা হা
++++

২| ১৬ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ১২:১৪

রাজু বলেছেন: অরক্ষিত স্বাধীনতাই পরাধীনতা...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.