![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জাকাত ইসলামি অর্থব্যবস্থার একটি ফরজ (অতীব গুরুত্বপূর্ণ ) বিধান। ঈমান আনা ও নামাজ আদায়ের পর জাকাত নিয়মিত আদায় করেই একজন বিত্তবান ব্যক্তি মুসলিম সমাজের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেন। জাকাতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অপরের জন্য স্বার্থত্যাগের মানসিকতা সৃষ্টি, কৃপণতা বর্জন, দারিদ্র্য বিমোচন ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা।
জাকাত কাকে বলে : ‘জাকাত’ শব্দটির অর্থ পবিত্রকরণ, পরিশুদ্ধকরণ ও প্রবৃদ্ধি। শরিয়তের পরিভাষায়- ‘ইসলাম নির্দেশিত পন্থায় সচ্ছল মুসলিম নারী ও পুরুষ কর্তৃক সামাজিক সহায়তা এবং জনকল্যাণের উদ্দেশ্যে কুরআনে বর্ণিত নির্দিষ্ট আটটি খাতে নির্দিষ্ট সম্পদ থেকে, নির্দিষ্ট পরিমাণ ও নির্দিষ্ট সময়ে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন, আত্মশুদ্ধি ও সম্পদের পবিত্রতার জন্য যে সম্পদ ব্যয় করা হয় তাই জাকাত।’
জাকাত বাধ্যতামূলক : নিসাব [সাধারণভাবে ৫২.৫ তোলা (ভরি) রুপা বা ৭.৫ তোলা স্বর্ণ বা এর সমমূল্যের সম্পদ) পরিমাণ সম্পদের অধিকারী ব্যক্তির ওপর জাকাত বাধ্যতামূলক। কুরআন মাজিদে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ৮২ বার জাকাতের কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো এবং জাকাত দাও’ (সূরা বাকারা : ১১০)।
মহানবী সা: বলেছেন, ‘ইসলামের মূল ভিত্তি পাঁচটি : এই সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ সা: আল্লাহর বান্দা ও রাসূল, নামাজ কায়েম করা, জাকাত আদায় করা, হজ সম্পন্ন করা এবং রমজানের রোজা রাখা’ (মিশকাত)।
জাকাত বাধ্যতামূলক হওয়ার ব্যাপারে সব যুগের এবং সব দেশের মুসলিম উম্মাহ একমত। সুতরাং জাকাত অস্বীকারকারী মুরতাদ হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা জাকাত দেয় না তারা হলো সেসব লোক, যারা আখিরাতের প্রতিও অবিশ্বাসী’ (সূরা হা-মীম আস-সাজদা : ৭)।
যাদের ওপর জাকাত ফরজ : প্রাপ্তবয়স্ক এবং বুদ্ধি-জ্ঞানসম্পন্ন নারী ও পুরুষের মালের ওপর কিছু শর্তসাপেক্ষে জাকাত ফরজ করা হয়েছে। কোনো অমুসলিম ব্যক্তির ওপর জাকাত ধার্য করা যাবে না। অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনো বালক, বালিকা এবং পাগলের মালের ওপর জাকাত ফরজ নয়।
যেসব শর্তসাপেক্ষে উপরোক্ত ব্যক্তির মালের ওপর জাকাত ধার্য হয় তা হলো :
১. মালের ওপর পূর্ণ একটি (চান্দ্র) বছর তার পূর্ণ মালিকানা বিদ্যমান থাকতে হবে,
২. মাল এমন প্রকৃতির হতে হবে যার ওপর জাকাত ধার্য হতে পারে,
৩. মাল নিসাব পরিমাণ বা নিসাবের মূল্যের সমপরিমাণ হতে হবে এবং
৪. ওই নিসাব পরিমাণ মাল তার মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে।
মালিকানা বলতে, ‘কোনো বস্তু ও ব্যক্তির মধ্যকার শরিয়াসম্মত যোগসূত্রকে বুঝায়, যা ব্যক্তিকে ওই বস্তু নিঃশর্তভাবে ভোগ ব্যবহারের অধিকার দেয় এবং অপর লোকের হস্তক্ষেপে বাধা দেয়।’ নগদ অর্থ, সোনা-রুপা, ব্যবসায়িক পণ্য, পালিত পশু, কৃষিজ পণ্য ইত্যাদির ওপর জাকাত ধার্য হয়। ওয়াকফ সম্পত্তি, সরকারি সম্পত্তি, নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবহার্য জিনিস, বাড়িঘর ইত্যাদির ওপর জাকাত ধার্য হয় না। কৃষিজ ফসল, ফলমূল ইত্যাদির ক্ষেত্রে পূর্ণ এক বছর মালিকের দখলে থাকা শর্ত নয়। তা যখন আহরিত হয় তখন তার ওপর জাকাত (উশর) ধার্য হয়।
সম্পদের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ অর্থাৎ শতকরা আড়াই ভাগ জাকাত হিসেবে প্রদান করতে হবে। এ হিসেবে অতিরিক্ত মালের ওপরও জাকাত ফরজ হবে। জাকাত নগদ অর্থ দ্বারাও পরিশোধ করা যায় এবং সংশ্লিষ্ট মাল দ্বারাও পরিশোধ করা যায়।
তৈজসপত্র, অলঙ্কার, বাড়িঘর ও বন্ধকী মালের জাকাত : সাংসারিক কাজে ব্যবহৃত জিনিসপত্র যেমন হাঁড়ি-পাতিল, থালা-বাটি, বিছানাপত্র, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদির ওপর জাকাত ধার্য হবে না। হানাফি মাজহাব মতে, ব্যবহৃত অলঙ্কারপত্রের জাকাত দিতে হবে। মূল্যবান পাথর যেমন- হীরক, মণিমুক্তা ইত্যাদির তৈরি অলঙ্কারের ওপর জাকাত ধার্য হবে না। বাড়ি-ঘর, দালান-কোঠা ও যানবাহনের ওপরও জাকাত ধার্য হবে না। তবে এগুলো ভাড়ায় খাটিয়ে যে আয় পাওয়া যাবে, তা মালিকের অন্যান্য আয়ের সাথে যুক্ত হবে এবং যথানিয়মে এর ওপর জাকাত ধার্য হবে। বন্ধকী মাল বন্ধকমুক্ত হয়ে মালিকের দখলে ফিরে আসার পর এর ওপর জাকাত ফরজ হবে।
ব্যবসায়িক পণ্যের জাকাত : ব্যবসায়ের ইচ্ছায় উৎপাদিত বা ক্রয়কৃত পণ্য দ্বারা বাস্তবে ব্যবসায়িক কার্য সম্পাদিত হলে ওই পণ্যকে ‘ব্যবসায়িক পণ্য’ বলে। ব্যবসায়িক পণ্যের নিসাব স্বর্ণ ও রৌপ্যের নিসাবের সমপরিমাণ হলে তার প্রতি চল্লিশ টাকায় এক টাকা জাকাত ধার্য হবে। ব্যবসায়ের কেবল আবর্তনশীল মূলধনের জাকাত দিতে হবে। ব্যবসায়ের স্থাবর সম্পত্তি যেমন দালান-কোঠা, জমি, যন্ত্রপাতি ইত্যাদির ওপর জাকাত ধার্য হবে না। মসজিদ-মাদরাসা বা অনুরূপ জনকল্যাণমূলক কাজের উদ্দেশ্যে ওয়াকফকৃত সম্পত্তি দ্বারা ব্যবসা করা হলেও তার ওপর জাকাত ধার্য হবে না। যেসব মালের ওপর সাধারণত জাকাত ধার্য হয় না সেসব মাল ব্যবসায়িক পণ্য হলে তার ওপর জাকাত দিতে হবে। যেমন পাথর, মণিমুক্তা, আসবাবপত্র, তৈজসপত্র, যন্ত্রপাতি, যানবাহন ইত্যাদি।
ঋণ ও জাকাত : কোনো ব্যক্তির ঋণমুক্ত হওয়াও তার ওপর জাকাত ফরজ হওয়ার জন্য একটি অপরিহার্য শর্ত। তার ঋণের অংক বিয়োগ করার পর নিসাব পরিমাণ মাল না থাকলে তার ওপর জাকাত ফরজ হবে না। তবে ঋণদাতাকে তার প্রদত্ত ঋণ ফেরত পাওয়ার পর যথারীতি এর জাকাত দিতে হবে। যে ঋণ ফেরত পাওয়ার আশা নেই ওই ঋণ ফেরত পাওয়া গেলে অতীতের বছরগুলোর এমনকি ফেরত পাওয়ার বছরের জাকাত প্রদান করতে হবে না। বরং পরবর্তী বছর থেকে জাকাত দিতে হবে। ঋণ গ্রহণ করে ব্যবসায়ের জমি, দালান-কোঠা, যন্ত্রপাতি ও পণ্য ক্রয় করা হলে কেবল পণ্য ক্রয় বাবদ যতটুকু ঋণ খরচ হয়েছে তা থেকে ততটুকু বিয়োগ করার পর ওই পণ্যের ওপর জাকাত ধার্য হবে।
জাকাত দেয়ার অভিপ্রায় : জাকাতদাতার জাকাত দানকালে বা মাল হতে জাকাতের অংশ পৃথক করাকালে তার অভিপ্রায় থাকতে হবে যে, সে তার জাকাত পরিশোধ করছে। অভিপ্রায়হীন সব মাল দান করলেও জাকাত আদায় হবে না।
জাকাত পরিশোধের সময় : জাকাত ফরজ হওয়ার সাথে সাথেই তা পরিশোধ করা ফরজ হয়। জাকাত ফরজ হওয়ার আগে অগ্রিম পরিশোধ করলে তা ধর্তব্য হবে না। জাকাত ফরজ হওয়ার পর পরিশোধের নির্দিষ্ট সময় আসার আগেই জাকাত দেয়া যায়।
----------------
জাকাত ব্যয়ের খাতসমূহ : মহান আল্লাহ সূরা তাওবার ৬০ নম্বর আয়াতে জাকাত ব্যয়ের সর্বমোট আটটি খাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ‘জাকাত তো কেবল ফকির (নিঃস্ব), মিসকিন (যার মালিকানায় কোনো সম্পদ নেই অর্থাৎ ফকিরের তুলনায় অধিক নিঃস্ব) ও তৎসংশ্লিষ্ট কর্মচারীদের জন্য, যাদের চিত্ত আকর্ষণ করা উদ্দেশ্য তাদের জন্য (অর্থাৎ মন জয় করার মতো লোক বিদ্যমান থাকলে উক্ত খাতে জাকাত ব্যয় করা যাবে), দাস মুক্তির জন্য (বর্তমানে এ খাতে জাকাত ব্যয়ের প্রয়োজন নেই), ঋণে জর্জরিত ব্যক্তিদের জন্য, আল্লাহর পথে (আল্লাহর পথে অর্থাৎ আল্লাহর সন্তোষ ও নৈকট্য লাভে চেষ্টা সাধনায় রত ব্যক্তি দরিদ্র হলে এ খাত থেকে জাকাত গ্রহণ করতে পারে) এবং মুসাফিরদের জন্য (সফরকালে পথিমধ্যে পর্যটকের রসদপত্র ও রাহা খরচ নিঃশেষ হয়ে গেলে এবং তা সংগ্রহের কোনো ব্যবস্থা না থাকলে সে জাকাত গ্রহণ করতে পারবে, নিজ আবাসে সে সম্পদশালী হলেও)।’
জাকাত মূলত ৮ ব্যক্তিকে দেয়া যাবে যা সংক্ষিপ্তাকারে নিম্নে তুলে ধরা হলো-
১. গরিব বা ফকীরঃ যাদের কাছে কিছু না কিছু ধন-সম্পদ আছে কিন্তু তাদের যাবতীয় প্রয়োজন পূর্ণ করার জন্য যথেষ্ঠ নয়, খুবই টানাটানির ভেতর দিয়ে যাদের জীবন অতিবাহিত হয়, তদুপরি কারও কাছে কিছু চাইতে পারে না, এরা গরিব।
২. মিসকীনঃ যে সব লোকের অবস্থা আরও খারাপ, পরের কাছে হাত পাততে বাধ্য হয়, নিজের পেটের অন্নও যারা যোগাড় করতে পারে না তারা মিসকিন।
৩. জাকাত আদায় ও বণ্টন কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গঃ ইসলামী রাষ্ট্র জাকাত আদায়ের জন্য যাদের কর্মচারী নিয়োগ করবে তাদেরকেও যাকাতের অর্থ থেকে বেতন দেয়া হবে।
৪. যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন বা আল্লাহ্র দ্বীনের জন্য যে সব লোকের মন জয় করা প্রয়োজনঃ ইসলামের সহায়তার জন্য কিংবা ইসলামের বিরোধিতা বন্ধ করার জন্য যাদেরকে টাকা দেয়ার প্রয়োজন তারা এর অন্তর্ভুক্ত। সেই সকল নও-মুসলিমও এর অন্তর্ভুক্ত যাদের সমস্যা মুক্ত করা একান্ত অপরিহার্য।
৫. গোলাম ও কয়েদীদের মুক্তি বিধান বা দাসমুক্তকরণ : যে ব্যক্তি দাসত্ব শৃংখলে বন্দী হয়ে আছে এবং যে মুক্তি পেতে চায় তাকেও যাকাতের অর্থ দিয়ে মুক্ত করা যাবে।
৬. ঋণগ্রস্ত লোক : যে সব লোক ঋণী অথবা ঋণ আদায় করার সম্বলও যাদের নেই, তাদেরও যাকাতের টাকা দ্বারা ঋণ ভার থেকে মুক্তি দেয়া যাবে। কিন্তু তাই বলে কারও কাছে হাজার টাকা থাকলেও সে যদি একশ টাকার ঋণ হয় তাহলে তাকে কোন অবস্থাতে জাকাত দেয়া যাবে না।
৭. আল্লাহ্র পথে : আল্লাহর পথে শব্দটি অত্যন্ত ব্যাপক। মুসলমানদের সমস্ত নেক কাজেই যাকাতের টাকা ব্যয় করা যেতে পারে। কিন্তু বিশেষ করে এর অর্থ হচ্ছে-আল্লাহর পথে জিহাদকারীদের সাহায্য করা। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন যে, ধনী ব্যক্তির পক্ষে জাকাত গ্রহণ জায়েয নয় কিন্তু ধনী ব্যক্তিই যদি জিহাদের জন্য সাহায্য গ্রহণ করতে বাধ্য হয, তবে তাকেও জাকাত দিতে হবেঃ কারণ এই যে, এক ব্যক্তি ধনী হতে পারে; কিন্তু জিহাদের জন্য যে বিরাট ব্যয় আবশ্যক, তা শুধু নিজের অর্থ দ্বারা পূরণ করতে পারে না। তার এ কাজের জন্য যাকাতের টাকা সাহায্য করা যাবে। এবং
৮. নিঃস্ব পথিক বা মুসাফিরদেরকে : পথিক বা প্রবাসীর নিজ বাড়িতে যত ধন-সম্পদ থাকুক না কেন, কিন্তু পথে বা প্রবাসে সে যদি অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়ে তবে তাকে যাকাতের টাকা দিতে হবে।
---------------
যে সব সম্পদের যাকাত দিতে হয় না
১. নিসাবের কম পরিমান সম্পদ।
২. নিসাব বছরের মধ্যেই অর্জিত ও ব্যয়িত সম্পদ।
৩. ব্যবহার্য সামগ্রী।
৪. শিক্ষা উপকরণ।
৫. ঘর-বাড়ী, দালান-কোঠা যা বসবাস কিংবা কলকারখানা হিসেবে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি ও সাজ সরঞ্জাম।
৬. ব্যবহার্য যানবাহন।
৭. ব্যবহার্য পশু,ঘোড়া যেহেতু জিহাদের কাজে ব্যবহার করা হয় আর তা যেহেতু বর্ধনশীল নয় তাই এর উপর কোন যাকাত নেই।আবার ক্রীতদাসের উপরও কোন যাকাত নেই।কারণ রাসূল(সাঃ) বলেছেন,ঘোড়া ও ক্রীতদাসের উপর কোন যাকাত নেই।
৮. ওয়াকফকৃত সম্পত্তি।
৯. পোষা পাখি ও হাঁস মুরগী।
শেষ কথা : যেসব মুসলমানের ওপর জাকাত ফরজ হয়েছে তাদের উচিত একমাত্র মহান আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে সম্পদ পরিপূর্ণ হিসাব করে জাকাত দেয়া।
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে জুন, ২০১৬ সকাল ১০:২১
আহলান বলেছেন: সবাই যদি এভাবে হিসাব করে যাকাত আদায় করতো?